পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

YN প্রবন্ধসংগ্ৰহ করিয়া বাস করেন, আশা করা যায়, তাঁহাদের রচনায় এই রিয়ালিটির রােপ ফটিয়া উঠিবে। আমি খাঁটি বাংলা ভাষার পক্ষপাতী, কারণ সে ভাষা কংক্রিট (বিশেষসংজ্ঞক)-শব্দবহল। প্ৰবোধচন্দ্রকা হইতে আমি খাঁটি বাংলার যে নমনা উদধিত করিয়া দিয়াছি তাহাতে দেখিতে পাইবেন যে, প্রায় প্রতি শব্দই কংক্রিট। এই বিশেয জ্ঞানের অভাব্যবশত আমরা ইউরোপীয় সাহিত্য হইতে সংগহীত সামান্য ভাবগালিও যথাযোগ্য প্রয়োগ করতে পারি না। যে ভাব জীবনসংগ্রামে আমাদের হাতে অস্ত্র হওয়া উচিত, তাহাকে হয়তো আমরা ভূষণস্বরপে দেহে ধারণ করি। এবং যাহা ভূষণমাত্র, তাহারও আমরা অযথা ব্যবহার করি। ইউরোপের পায়ের মল গলার হারস্বরপে বঙ্গ সরস্বতীকে কন্ঠস্থ করতে দেখা গিয়াছে। পরীক্ষা ব্যতীত কোনো বস্তুরই সম্যক পরিচয় পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো বস্তুকেই পরীক্ষা করিবার প্রবত্তি আমাদের নাই। ইহাও আমাদের শিক্ষার দোষে । দিব্যাবদানে দেখিতে পাই যে, বৌদ্ধযাগে জাম্ববদ্বীপে কুলপত্রদিগকে অস্টবিধ বস্তু পরীক্ষা করিবার শিক্ষা দেওয়া হইত। কিন্তু এ যাগে স্কুলকলেজে। আমরাই পরীক্ষিত হই, কিছই পরীক্ষা করিতে শিখি না। আমরা যদি বত্ব পরীক্ষা করিতে শিখিতাম তাহা হইলে আমরা সাহিত্যে কাচকে মণি এবং মণিকে কাচ বলিতে ইতস্তত করতাম। আমাদের পক্ষে পরীক্ষা-বিদ্যা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। আমরা নানা দেশের নানা যাগের নানা শাস্ত্ৰ পড়ি অথচ দেশী বিদেশী নানা মানির নানা মতের মধ্যে কোনটি গ্রাহ্য এবং কোনটি অগ্রাহ্য, তাহা স্থির করিতে পারি না। আমরা বত মান ইউরোপ এবং প্রাচীন ভারতবর্ষ উভয়কেই সম্বোধন করিয়া বলি– ‘ব্যামিশ্রেণ বাক্যেন মোহয়সি মাম’। এ অবস্থায় সকল বিষয়েরই যে দটি দিক আছে, এইমাত্র আমরা জানি; কিন্তু কোনটি যে তাব দক্ষিণ আর কোনটি যে বাম, সে জ্ঞান আমাদের নাই। মাসেরও যে দটি পক্ষ আছে, এই জ্ঞান আমরা পঞ্জিকা হইতেও সংগ্ৰহ করতে পারি, কিন্তু তাহার কোনটি কৃষ্ণ এবং কোনটি শক্লে তােহা জানিবার জন্য চোখ খালিয়া দেখা अदeद5 । বঙ্গ সাহিত্যের পক্ষে মহা আশার কথা এই যে, অন্তত ইহার একটি শাখায এই পরীক্ষার কায আরম্পর্ভ হইয়াছে। বরেন্দ্র-অন-সন্ধান-সমিতির নিকট ইহার জন্য আমরা সকলেই কৃতজ্ঞ।। সহৃদাবর অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয় মহাশয় এবং তাঁহার শিষ্যবৰ্গ বরেন্দ্রমন্ডলের ভূগভে লক্কায়িত দেবদেবীগণকে টানিয়া বাহির করিয়া তাঁহাদিগকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় খাড়া করিয়া আজ প্রশন করিতেছেন, জেরা করিতেছেন। কেবলমাত্র জবানবন্দী লইয়াই তাঁহারা ক্ষান্ত হন না, আবশ্যকমত সওয়ালজবাব করিতেও তাঁহারা প্রস্তুত। এরপ পরীক্ষাকাযে বাঙালির কোমল প্ৰাণে ব্যথা দিতেও যে নব ঐতিহাসিকেরা কুণ্ঠিত নন, তাহার প্রমাণস্বরপ আমি তাঁহাদের কৃত কায্যের কিঞ্চিৎ পরিচয় দিতে চাই মালদহ জেলার অন্তর্গত খালিমপাের গ্রামের উত্তরাংশে হলকর্ষণ করিতে গিয়া এক কৃষক একটি তাম্পট্রলিপি প্রাপ্ত হইয়াছিল, সে তাহকে সিন্দরলিপিত করিয়া আমরণ পজা। করিয়াছিল।