পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চটকি সমালোচকেরা আমার রচনার এই একটি দোষ ধরেন যে, আমি কথায়-কথায় বলি ‘হচেছ'। এটি যে একটি মহাদোষ সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই, কেননা ও কথা বলায় সত্যের অপলাপ করা হয়। সত্য কথা বলতে গেলে বলতে হয়, বাংলায় কিছ হচ্ছে না”। এ দেশের কম জগতে যে কিছ হচ্ছে না, সে তো প্রত্যক্ষ; কিন্তু মনোজগতেও যে কিছ হচ্ছে না। তার প্রমাণ বর্ধমানের গত সাহিত্যািসন্মিলন। উক্ত মহাসভার পণ্য সভাপতি সমস্বরে বলেছেন যে, বাংলায় কিছ হচ্ছে নানা দর্শন, না বিজ্ঞান, না সাহিত্য, না ইতিহাস । শ্রীযন্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয়ের প্রধান বক্তব্য এই যে, আমরা না পাই সত্যের সাক্ষাৎ, না করি সত্যাসত্যের বিচার। আমরা সত্যের স্রষটাও নই, দ্রস্টাও নই ; কাজেই আমাদের দশনচচা রিয়ালও নয়, ক্লিটিকালও নয়। অধ্যাপক শ্রীযন্ত যোগেশচন্দ্র রায়ের মতে, কি মত-বিজ্ঞান, কি অমাতা-বিজ্ঞান, এ দায়ের কোনোটিই বাঙালি অদ্যাবধি আত্মসাৎ করতে পারে নি। অর্থাৎ বিজ্ঞানের যন্ত্রভােগও আমাদের হাতে পড়ে নি, তার তন্ত্রভােগও আমাদের মনে ধরে নি। আমরা শােধ বিজ্ঞানের সস্থল সত্ৰগলি কণ্ঠস্থ করেছি, এবং তার পরিভাষার নামতা মখস্থ করেছি। যে বিদ্যা প্রয়োগপ্রধান, কেবলমাত্র তার মন্ত্রের শ্রবণে এবং উচ্চারণে বাঙালি জাতির মোক্ষলাভ হবে না। এক কথায়, আমাদের বিজ্ঞানচর্চা রিয়াল নয়। শ্রীযন্ত যদ্যনাথ সরকার মহাশয়ের মতে ইতিহাসচর্চার উদ্দেশ্য সত্যের আবিস্কার এবং উদ্ধার ; এ সত্য নিত্য এবং গপত সত্য নয়, অনিত্য এবং লগত সত্য। অতএব এ সত্যের দশ নলাভের জন্য বিজ্ঞানের সাহায্য আবশ্যক। অতীতের জ্ঞান লাভ করবার জন্য হীরেন্দ্রবাবার বাণিত বোধির (intuition) প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন আছে শািন্ধ শিক্ষিত বদ্ধির। অতীতের অন্ধকারের উপর বদ্ধির আলো ফেলাই হচ্ছে ঐতিহাসিকের একমাত্র কতব্য, সে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া নয়। অথচ আমরা সে অন্ধকারে শািন্ধ ঢিল নয়, পাথর ছড়িছি। ফলে পােব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণের ঐতিহাসিকদের দেহ পরস্পরের শিলাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ছে। এক কথায়, আমাদের ইতিহাসচর্চা ক্ৰিটিকাল নয়। অতএব দেখা গেল যে, সম্মিলনের সকল শাখাপতি এ বিষয়ে একমত যে, কিছ হচ্ছে না। কিন্তু কি যে হচেছ, সে কথা বলেছেন স্বয়ং সভাপতি। তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যে যা হচ্ছে, তার নাম চুটকি। এ কথা লাখ কথার এক কথা। সকলেই জানেন যে, যখন আমরা ঠিক কথাটি ধরতে না পারি। তখনই আমরা লাখ কথা বলি। এই চুটকি নামক বিশেষণটি খাঁজে না পাওয়ায় আমরা বঙ্গসরস্বতীর গায়ে "বিজাতীয়’ ‘অভিজাতীয়’ ‘অবাস্তব’, ‘অবান্তর” প্রভাতি নানা নামের ছাপ মেরেছি, অথচ তার প্রকৃত পরিচয় দিতে পারি নি। তার কারণ, এ-সকল ছোটাে ছোটাে বিশেষণের অর্থ কি, তার ব্যাখ্যা করতে বড়ো