পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|-a- অণউশ ধান SS নন্দরাম দুঃখিত স্বরে বলতে লাগল—দেমাক করতে নেই। আমাদের জমিজমা নেই—গর তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়াই। কিন্তু জমিজমার মজা দেখলি ত হাতে হাতে ? দুটো আগা থেয়েছে ব’লে গালমন্দ করলি, এবার হবে কি ? নেন-লাগা ধান কেটে কেটে যে গরুকে খাওয়াতে হবে। দুলি মুখ নীচু ক’রে দাড়িয়ে আছে। গরুর দড়ি ধরে নন্দরাম এগিয়ে চলল।–চল রে, ছলি, তোদের বাড়ী থেকে একটা কোদাল দিবি আমায় । দুলি তবু নড়ে না। নন্দরাম রীতিমত চটে উঠল। —কোদাল দিতে বললাম, তা রাজকন্যের কথা কানে যায় না বুঝি ? দুলি ঝঙ্কার দিয়ে উঠল—বাধ বাধতে গিয়ে কাজ নেই কারও। খুব হয়েছে। “বাধ ভাঙে নি, শক্ত রর কেটে দিয়েছে। এখন ভালমানুষ সাজতে এসেছে । সে কেঁদে ফেলল । o: 를 + স্বাধ ভেঙেছে অনেকট। জলের বেগ কিছুতে ঠেকান বাদ না । বাশের পোট পুতে ফাকের মধ্যে বোঝা বোঝা বিচালি দেওয়া হচ্ছে । তা-ও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেক কষ্টে অবশেষে থানিকটা আটকান গেল। তখন রাত হয়ে গেছে। নিৰ্ম্মল আকাশ, ফুটফুটে জ্যোৎক্ষ উঠেছে। চরের aiট কেটে জলে ঢালা হচ্ছে ; ঝপাঝপ কোদাল পড়ছে। প্রস্ত জীবধর উপরে উঠে বাবলার গুড়ি ঠেস দিয়ে পড়াল । খবর শুনে কানাইও কখন এসেছে। হঠাৎ asর পড়ল, কোদালওয়ালাদের মধ্যে নন্দরাম । –এই নদী, জল-কাদা মাখছিস-কাল তুই পাচন খেয়ে উঠেছিস না ? নন্দরামের জবাব সঙ্গে সঙ্গে –গরু রাখতে বলেছিলে, দ্যাতে জলকাদা লাগে না বুঝি ? কানাই এদের মতিগতি বুঝতে পারে না। উঠানে ধানের একটা চিটে উঠবে না, তোর এত কোদাল পাড়বার দরকারটা কি বাপু ! জীবধরকে বলল—সর্দার ভাই, চাষবাসের এই ফ্যাসাদ। এত খাটলে,—সমস্ত মাটি। এর চেয়ে অামার দুধের ব্যবসা ভাল। জমি বেচে আমার মত গরু কেনো গে এবার । জীবধর আশা ছাড়ে নি। বলল—নোনা জল কতটুকুই বা ঢুকেছে! এতে কিছু ক্ষতি হবে না। জল দিন পাঁচ-সাতের মধ্যে শুকিয়ে এল। ধানের সবুজ পাতাও সঙ্গে সঙ্গে লাল। ক্ষেত থেকে ফেরবার পথে জীবধর যেন টলে পড়ে যায়। দাওয়ার উপর মাথায় হাত দিয়ে সে বসে পড়ল—কি হবে! ছলি দড়ি ধরে টানতে টানতে একটা গরু নিয়ে এল ; নন্দরামদের রাঙী গরুট। বলতে লাগল—বাবা, শয়তানিটা দেখ। তুমি বাড়ী আসতে আসতে অমনি গরু ছেড়ে দিয়েছে। । আমিও তাকে-তাকে ছিলাম। গরু খোয়াড়ে দিতে হবে— ছেড়ে দেওয়া হবে না। যেমন তেমনি—দও দিয়ে মরুক। - একটু পরেই নন্দরাম এল। সে প্রতিবাদ করে উঠল— ছেড়ে দিয়েছি, না আরও কিছু। দড়ি ছিড়ে গিয়েছিল। - দুলি বলল—তাই বা যাবে কেন ? - নন্দরাম মুখ বাকিয়ে বলল—ক্ষেত আগলে রেখে কি হবে শুনি। নোনা-লাগা ধান—দু-দিন বাদে শুকিয়ে ত খড় হয়ে যাবে। গরুতে খেলে যা হোক ভগবানের জীবের পেটে যাবে। - দুলি আগুন হয়ে উঠল –তা বুঝি, বুঝি গো—পোড়া মুখে ভগবানকে ডেকে ডেকে বার জনে ঘটিয়েছে এইটা। ধান শুকিয়ে খড় হয়ে যাক-আগুন জেলে পুড়িয়ে দেব। তবু যেন কারও গরু সেখানে না যায়— —থাম না, ছলি। বাপের তাড়ায় ছলি চুপ হয়ে গেল। জীবধরের স্বর কপিছে ; বলল—নন্দরাম, তোমার সমস্ত গরু ছেড়ে দাওগে আমার ক্ষেতে। থেয়ে সাফ ক’রে ফেলুক। আমার এত কষ্টের ফসল যে রোপোড়া হয়ে শুকুবে, এ আমি চোখে দেখতে পারব না, বাবা— ভাড়াতাড়ি সে দু-ফোটা চোখের জল মুছে ফেলল । উঠানের আমড়া গাছে রাজীকে বেঁধে নন্দরাম দাওয়ার উপর দিব্য পা ঝুলিয়ে বসেছে। কানাই হুকো খোলোক করছিল, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল খানিকক্ষণ। শেষে আর থাকতে পারল না, বলল—গরুর পেট চিটেপানী হয়ে রয়েছে.এরই মধ্যে ফিরে এলি—ওরে নন্দ ?