পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭২ শুনিনি ?” সুবীর বলিল, “এখানে আর তার খবর কে দিতে যাবে ? খুবই অমুখ, এবার আর টিকৃবে না মনে হচ্ছে!” উদয় মুখটা একটু বিষণ্ণ করিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিয়া বলিল, “সে গেলে তোমাদের একটু মুস্কিলে ফেলে যাবে। এখানে থাকৃতে ত দেখতাম, বৌঠাকরুণ কিছুই দেখতেন না, ওই সব চালাত।” সুবীর বলিল, “হ্যা, ওখানেও তাই চলত। আমায় মানুষ করার কাজটাও সে যতটা করেছে, মা ততটা করেননি ।” উদয় বলিল, “যাক্, কথায় কথায় আসল কথাটা ভুলেই যাচ্ছিলাম। তোমাদের ওখানে ত রান্না-বান্না করবার লোক নেই কেউ, সব তীখি করতে গেছে। তা যা হয় দুটো ডাল ভাত, আমার এখানেই থেও।” সুবীরের মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞ মনে পড়িল। সে বলিল, “দেওয়ানজী বাড়ীতে সব রান্না-বান্না করাচ্ছেন, সেখানেই খাব বলেছি।” উদয় বলিল, “তা আজ না হয় কালই হ’বে। আমি এখানে থাকৃতে, পরের বাড়ী খেয়েই বিদায় হবে, সেটা কি ভাল দেখায় ? তোমার কাকীমা বড় দুঃখ করবেন তা হ’লে ।” কাকীমাটিকে সুবীর দুই এক বারের বেশী চোখেও দেখে নাই। কাজেই তিনি ষে মুবীরের পরের বাড়ী খাওয়ার দুঃখে একান্ত কাতর হইয়া পড়িবেন তাহা মনে করিবার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু সেকথা বলিয়া উদয়ের হাত হইতে নিস্কৃতি পাওয়া যাইবে না। মুবীর ভাবিতে লাগিল, মিথ্যা কথা একটা বলিতেই হইবে, সেটা মায়ের কাছে না বলিয়া কাকার কাছে বলাই ভাল । যাই হোকৃ, দেওয়ানজী তাঁহাকে বাচাইয়া দিলেন। বাহির হইতেই খুড়া-ভাইপোর কথোপকথনের কিছু অংশ তিনি শুনিয়া থাকিবেন বোধ হয়। ঘরে ঢুকিয়াই বলিলেন, “তোমার শিকারে যাবার ব্যবস্থা সব ক’রে এলাম। কাল সকাল বেলাই বেরিয়ে পড়তে পারবে।” [ ২৮শ ভাগ, ১ম খণ্ড ം്.-ാ সুবীরের শিকারে যাওয়া যে একেবারে নিষেধ তাহা দেওয়ানজী ভাল করিয়াই জানিতেন। কিন্তু উদয়ের বাড়ী খাওয়া যে আরো বেশী করিয়া নিষেধ, তাহাও তিনি জানিতেন। সুতরাং তাড়াতাড়িতে উদয়কে নিরস্ত করিবার আর কোনো উপায় ভাবিয়া না পাইয়া সুবীরকে শিকারেই চালান করিবার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন । স্থবীর ব্যাপারটা আন্দাজে বুঝিয়া বুদ্ধিমানের মত চুপ করিয়া রহিল। উদয় বলিল, “তা হ’লে কি আর হবে ? তোমার সুবিধা হ’বে না, তোমার কাকীমাকে বলব এখন । কিন্তু তুমিও শেষে এই খেয়ালে মঙ্গলে, বাবাঙ্গী ? তোমাদের কম সৰ্ব্বনাশ ত এতে হয়নি।” সুবীর বলিল, “সবরকম খেয়ালই কারো-না-কারো পক্ষে মারাত্মক হয়েছে। ছাড় তে হ’লে তাহলে সব কিছুই ছেড়ে দিতে হয়। আচ্ছ, বিকেলে যাব এখন কাকীমার সঙ্গে দেখা করতে।” উদয় উঠিয়া পড়িয়া বলিল “হঁ্য, একবার যেও। আমার শরীরটা আজকাল মোটেই ভাল যাচ্ছে না । সন্ধ্যার পরেই শুয়ে পড়ি একটু বেলা থাকৃতে থাকৃতে যেও ” উদয় বাহির হইয়া যাইতেই দেওয়ানজী বলিলেন, “যাক, চট্‌ ক’রে কথাটা মাথায় এল, তাই। তা না হ’লে যা নাছোড়বান্দা মানুষ, তোমাকে বাগিয়ে না নিয়ে ছাড়ত না।” সুবীর বলিল, “নিতান্ত মায়ের কাছে কথা দিয়ে এসেছি, তা না হ’লে আমি যেতামই। কবে কি শক্রতা করেছিলেন ব’লে এখন অবধি অতটা শক্রতার ভাব বজায় রাখা আমার ভাল লাগে না । বিশেষ ক’রে এখন শক্রতা ক’রে লাভই বা কি ? তার ছেলেপিলেও নেই কিছু, চেহারা দেখে মনে হয় না যে, নিজেও আর বেশী দিন টিকৃবেন।” দেওয়ানজী বলিলেন, “অতটা নিরীহ হ’য়ে গেছেন মনে কোরো না। যে ক'টা দিন বেঁচে আছেন, সেই কাটা দিনই ফুৰ্ত্তি করতে পারলে কি ছেড়ে দেবেন ? তোমার অনিষ্ট করতে পারলে এখনও তার ভাল বই মন্দ নয়।