পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] এইজন্তেই না তোমার মা-ঠাকরুণ তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে এত ব্যস্ত ।” কথাটা কোথা হইতে কোথায় আসিয়া পড়িল । সুবীর তাড়াতাড়ি অন্ত কথা পাড়িয়া বসিল। বলিল, “ইন্দ্রট ভারি দেরি করছে, উৎসাহের চোটে বেশী জল ধেটে জরজাড়ি না ক’রে বসে। তাহ’লে তার মা আর আমায় আস্ত রাখবেন না ।” দেওয়ানজী জিজ্ঞাসা করিলেন, “ছোক্রাটি সাতার ভালরকম জানে ত ? আমাদের দীঘিটি লম্বা-চওড়ায় কম নয় বড়। মানুষ বিপদে পড়তে পারে।” সুবীর হাসিয়া বলিল, “সে ভয় নেই কিছু। ওর সমান সাতার দিতে পাড়াগায়ের ছেলেরাও পারে কি না সন্দেহ। ***föß ow. Swimming competetion s Gold medal পেয়েছে তার ঠিকানা নেই।” ইন্দ্র ইতিমধ্যে আসিয়া পৌছিল। সুবীরকে জিজ্ঞাসা করিল, “অনেকক্ষণ ব’সে আছেন বুঝি ?” - সুবীর বলিল, “বেশীক্ষণ না। চল, তোমায় একবার আমার রাজত্বটা ঘুরিয়ে আনি। খানিকক্ষণ আগেই যা পেট ঠেসে খেয়েছি ভাত খাবার জায়গা নেই। গাড়ীটা তৈরীই আছে বোধ হয়।” দেওয়ানজী বলিলেন, “হ্যা ঠিকই আছে, যাও। কিন্তু আমি ভাবছি, কালকে তোমায় কোথাও-না-কোথাও একটু বেরিয়ে পড়তে হবে, তোমার কাকার সামনে কথাটা ব'লে ফেলেছি যখন । শিকারে যাওনি দেখলে মহাকাও বাধাবে আর কি ?” স্বধীর বলিল, “যাবার জায়গার অভাব কি ? নৌকায় করে নদীতে বেশ একচেটি ঘুরে আস্ব। বড় বজরাটা ঠিক করতে ব'লে দেবেন।” সুবীর আর ইন্দ্র বেড়াইতে চলিয়া গেল। পরদিন দেখা গেল, দিনটা একটু মেঘ লা। নৌকা করিয়া যাওয়া ঠিক যুক্তিসঙ্গত হইবে না ভাবিয়া সুবীর আর ইন্দ্র গাড়ী করিয়াই বাহির হইয়া গেল। তাহাদের প্ল্যান ছিল মাইল দশ দুরে আর এক গ্রামে জমিদারের এক কাছারী বাড়ী ছিল, সেইখানেই গিয়া উঠিবে। সেখানে খাওয়া দাওয়া, ঘোরা ফের, গ্রাম পরিদর্শন করিয়া বেলাটা কাটাইয়া বিকালে যদি মেঘ কাটিয়া যায় ত নৌকা পরভূতিকা ৩৭৩ করিয়াই ফিরিয়া আসিবে। না হয় আবার গাড়ীরই শরণ লইতে হইবে। যাইতে যাইতে ইন্দ্র বলিল, “আপনার হয়ত মোটেই ভাল লাগছে না, কারণ এসবে আপনারা অভ্যস্ত। আমার কিন্তু সহরের বাইরে এলেই খুব ভাল লাগে। একমনে এত ভাবছেন কি ? উত্তরটা জানিই অবশ্য।” সুবীর বলিল, “মোটেই জান না। আমি ভাবছিলাম আমার মাস্তুতো ভাই সুশীলের কথা। আজ তার আইবুড়োভাতের ধূম লেগে গেছে এতক্ষণ। ছোড়া মনে মনে আনন্দে ডিগবাজী খাচ্ছে, তাই ভাবছিলাম। আমাকে তার কত যে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, তা আর বল্বার নয় ।” ইন্দ্র বলিল, “কেবল তার উপকারের জন্তেই যদি অতটা করতেন, তাহলে ধন্যবাদ দেবার কথা ছিল অবশু।” বেলা দশটা আন্দাজ তাহারা গন্তব্যস্থানে আলিয়া পৌছিল। এখানেও সেই অপ্রত্যাশিত আবির্ভাবের কোলাহল। যাহা হউক, সে সব চুকাইয়া দুই বন্ধুতে আহারাদি সারিয়া, কোথায় কোথায় যাওয়া যাইবে এবং কি কি করিতে হইবে, তাহার প্ল্যান করিতে বসিল । ইন্দ্র বলিল, “এখন ত সংসারী হ’বার দিকে আপনার কোক গিয়েছে, ভাহলে পাকাপাকি রকমই হোন। এতদিন যোধ হয় আপনার জমিদারী কত বড়, তার আয়ই বা কতখানি, কিছুই জানতেন না ?” সুবীর বলিল, “এক রকম তাই বটে। ঘরে মা আর ভবানীদিদি, বাইরে দেওয়ানজী মিলে আমার সব অভাব এমন করে মিটিয়ে রেখেছিলেন যে, কিছু খোজ নেবার দরকারই হয়নি, কিন্তু এবার নানা কারণেই মনে হচ্ছে যে নিজের ভার নিজে নিতে হবে।" হঠাৎ ভেজান দরজায় ঠক্ ঠক্‌ করিয়া শব্দ হইল স্থবীর বলিল, “কে ? ভিতরে এস।” তাহাদের একজন কৰ্ম্মচারী প্রবেশ করিয়া একখানা টেলিগ্রাম তাহার হাতে দিয়া বলিল, “দেওয়ানজী লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।” টেলিগ্রামের হলদে খামটা চোখে পড়িবামাত্র সুবীরের মনের ভিতরটা আশঙ্কায় কালো হইয়া উঠিল। মনকে