পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] সৰ্ব্বত্রই চীনারা খুব মাংস খায়—তাই নিরামিষ খাবার জন্ত অনেকে বিহারের ভোজনশালায় এসে জাহার ক'রে যান। গুটুকী মাছ,শূকরেরমাংস আর চর্কি, আর বহুদিনের রক্ষিত ডিম-এ-সব না হ’লে চীনাদের ভালো করে খাওয়া হয় না ; এছেন রাজসিক আর তামসিক আহারে প্রবৃত্তি যাদের মজ্জাগত, তাদের অনেককে যে সাত্ত্বিক নিরামিষ আহারে অতি সহজেই আকৃষ্ট করে তুলেছে,—ভগবান বুদ্ধের প্রভাবের, তার অহিংসার অরি জীবদয়ার, মৈত্রী আর করুণার বাণীর পক্ষে এটা কম জয়ের কথা নয়। থেতে বসা গেল । চীনাদের সঙ্গে একত্রে আহার আমাদের পক্ষে এই প্রথম না হ’লেও, চীনাদের সঙ্গে চীনা রুচির খাদ্য চীনা প্রথায় খাওয়া এই আমাদের প্রথম । একজন পরিবেশক আমাদের তিনটে চারটে বড়ো বড়ো বাটি ক’রে তরকারী দিয়ে গেল। আর দিলে ছোটো ছোটাে পাচটী পিরিচে কিছু চীনাবাদাম ভাজা, খোশ শুদ্ধ, মিয়োনো ; আর কিছু খরমুজের বীচি মুন-জল মাখিয়ে ভাজা । আর এলো কয় বাটি ভাত, পানের জন্য লেমনেড। কাটা চামচের বদলে এল, ইটাে ক'রে উল-বোনার কাঠির মতন লম্বা কাঠি, chop stick বলে যাকে । তাতে আমাদের অসুবিধা হবে বুঝে, শেষটা আমাদের জন্ত একটা ক'রে কাটা আর চামচ,যোগাড় ক’রে নিয়ে এল। চীনা খাদ্যের তারের সঙ্গে আমার পরিচয় লণ্ডনে আর পারিসেই বহুবার হয়ে গিয়েছে। তবে এখানে সমস্ত আহাৰ্য্য নিরামিষ, সুতরাং নির্ভয়ে খাওয়া চলে। আহারকালে চীনা ভদ্র সমাজের রীতির সম্বন্ধে, বন্ধুবর কালিদাস নাগ প্রমুথের কাছে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিছু কিছু শোনা গিয়েছিল, পরে দূর থেকে চীনাদের আহার দেখে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাও কিছু করা fitofs" i Forewarned is forearmed. Stal খাওয়ায়, ভাতের বাট যার যার নিজের নিজের থাকে ; বঁ হাতে ভাতের বাট মুখের কাছে এনে, এমন কি মুখে লাগিয়ে ধ’রে থাকে, আর ডান হাতে ক’রে কাঠি ছটা নিয়ে ভাত ঠেলে ঠেলে মুখের ভিতর পুরে দেয়। তারপর, সামনে বড়ো বড়ো বাটতে তরকারী থাকে, (এই বাটগুলো হচ্ছে যৌথ সম্পত্তি), তা থেকে নিজের নিজের কাঠি ছটা দিয়ে এই বাট থেকে তরকারী তুলে নিয়ে সকলে খায়। বন্ধুদের এই রীতির কথা বলে দিলুম ; সুতরাং প্রথমেই আমরা তিন জনে খাবার যোগ্য তরকারী নিজের নিজের আলাদা আলাদা পাত্রে একটু একটু ভুলে নিলুম। এতে চীনা বন্ধুরা একটু আশ্চৰ্য্য হ’লেন। তারপর খাওয়ার পালা। ভাল বা ছোলা ভিজিয়ে রেখে দিলে তার লম্বা লম্বা কোড় বায় হয়, তার তরকারী ; পানীৰূলের ছতিন রকম তরকারী ; জালু আর পোজের যবদ্বীপের পথে 8br☾ কলির তরকারী ;ীবাশের কোড়ের তরকারী ; আর উদ্ভিজ্জ তেলে ভাজা ত্ব একটা সব জী। ধীরেন বাৰু আর সুরেন বাবুর এসব জিনিস বরদাস্ত হ’ল না, কারণ এদের স্বাদ একেবারে আলাদা ; ধী নেই মশলা নেই, লঙ্কা-হলুদ, নেই, soya bean বলে এক রকম কড়াইয়ের তেলে সাতলানো তরকারী। আমার কাছে এর স্বাদ অপরিচিত না থাকায় চীনা বন্ধুদের সঙ্গে আমি বেশ পাল্লা দিয়ে চললুম। কিন্তু ধীরেনবাবু আর সুরেনবাবুর অবস্থা হ’ল, ঈসপের গল্পে বর্ণিত বকের নিমন্ত্রণে শেয়ালের মতন বা শেয়ালের নিমন্ত্রণে বকের মস্তন । দু একটী চীনাবাদাম খোসা ছাড়িয়ে বা ছু একটা খরমুজের বীচি নিয়ে দাতে করে কার্টুতে লাগলেন। চীনেরা খরমুজের বীচি ভাজা আমাদের দেশের চালকড়াই ভাজার মতন খায়। এইরূপে আহার শেষ হ’ল, আমরা টেবিল * ছেড়ে উঠলুম, তারপর খাবারের দাম দেবার জন্ত পকেটে হাত দিচ্ছি, এমন সময়ে আমাদের পরিবেশক ফ্যঙ-কে কি ব’ল্লে, তাতে ফ্যঙ আমাদের বললেন, পাশে রান্না-বাড়ীর আঙিনায় মুখ ধোবার জল আছে, খাওয়-দাওয়ার পর মুখ ধোওয়া দপ্তর। কথাটী বেশ লাগ ল। ভারতের আর আরব পারপ্ত তুরস্ক প্রভৃতি মুসলমান দেশগুলির বাইরে আহারের পরে মুখ ধোয়ার রেওয়াজ যেন কম। অন্ততঃ যেখানে যেখানে হালের “ইউরামেরিকার” দস্তুর গৃহীত হচ্ছে। আমাদের কাছে—হিন্দু মুসলমান নিৰ্ব্বিশেষে ভারতীয়দের কাছে—এটা একটা ম্লেচ্ছাচার । চীনে ভদ্রম্বরে কি দস্তুর জানি না ; ইউরোপের ভদ্রঘয়ে বা হোটেলে খাওয়ার পর আঁচাতে যাওয়াটা বিরল। তবে সিঙ্গাপুরে চীনেদের মধ্যে সোনা দিয়ে দfত বাধানোর বাহুল্য দেখে মনে হয়, এখন এদের মধ্যেও ইউরোপের মতনই এই ম্লেচ্ছাচারই বিদ্যমান। বৌদ্ধ বিহারের এই স্বাস্থ্যকর সদাচার পালনের ব্যবস্থা দেখে মনটা বড়ই পুলকিত হ'ল। বোধ হয় এটা প্রাচীন ভারতীয় ভিক্ষুদেয়ই প্রবর্তিত একটী “বিনয়” ব্যবস্থা ; আর এর থেকে এরূপ অনুমান করা বোধ হয় অসঙ্গত হবে না, যে ভারতের বৌদ্ধ আর ব্রাহ্মণ ধৰ্ম্মপ্রচারকের ভারতের বাইরে গিয়ে এইরূপ খুটিনাটি বিষয়েও নানা সদাচার শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে সব সদাচার এখনও বহির্ভারতের নানা দেশে অস্তুতঃ সম্প্রদায়বিশেষে বিদ্যমান আছে । ভোজনশালার পাশে আর একটি ছোটো আঙিনা, তার চার পাশে ঘর—সেই আঙিনায় একটা মস্ত জালার মতন মুখ খোলা পাত্রে হাতমুখ ধোবার জল রয়েছে। ঠিক যেন কোনো সাবেক চালের, জলের কলের-প্রবেশ যেখানে হয়নি এমন জায়গায়, ভারতীয় বাড়ীর উঠোন I জামাদের খাও য়ার দাম দিতে গেলুম, এরা निरख्. চাইলে না, একরকম : জোর ক’রেই উপযুক্ত অর্থ হাতে ও জে দিলুম।