পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] কবি-চতুষ্টয়ের হাতে পড়িয়া লীলার বারমালী যে শুধু বিভিন্ন শাখায় রূপান্তরিত হইয়াছে, তাহা নহে। পরন্তু তাহাতে কবিগণের স্বস্ব কল্পিত বিরুদ্ধ ভাব স্থান পাইয়াছে। এই বিরুদ্ধ ভাব দ্বারা কবির জীবন-অখ্যায়িকার প্রকৃত ইতিহাসের মর্য্যাদা অনেক পরিমাণে ক্ষুণ্ণ হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। লীলার বারমাসীর একমাত্র অবলম্বন লীলা । এই লীলা আবার কঙ্কর জীবনকথার সারা অংশ জুড়িয়া আছে । এক্ষণে দেখা যাউক লীলার জীবন প্রকৃত না, কবিকল্পিত । কবির নিজকৃত বিদ্যাসুন্দর গ্রন্থে লীলার পরিচয় পাওয়া যায় । কবি তাহাকে স্নেহের ভগিনী, ভক্তির জননী বলিয়া বনানা করিয়াছেন। কবির জীবন যদি সত্য হয় তবে লীলার বাস্তব জীবন আমরা মানিয়া লইতে বাধ্য। কিন্তু কবিচতুষ্টর লীলাকে কঙ্কের মানস প্রতিমারূপে চিত্রিত করিয়া নিজেরাই একটু গোলে পড়িয়াছেন। লীলার বারমাসীয় কবি একস্থানে গাহিয়াছেন । “আইস আইস বন্ধুরে বইস মোর কাছে, দেখিব তোমার মুখে কত মধু আছে । তুমি হও তরুরে বন্ধু আমি হইম লতা— বেইড়া রাখম যোগল চরণ ছাইডু যাইবা কোথা । তোমারে গুইতে দিবরে বন্ধু অঞ্চল বিছান, মুখেত তুলিয়া তোমায় দিব ল চৌপান ।” এগুলি প্রেমের চিরপ্রচলিত বাধা গৎ । কবিগণ এগুলি বারমাসীতে স্থান দিয়া ধস্ত হইয়াছেন। কিন্তু কঙ্কের বন্দনা-গীতির "স্নেহের ভগিনী, ভক্তির জননী” সঙ্গে একথাগুলি কিছুতে একাসনে স্থান পাইতে পারে नी । - লীলার বিলাপ নাচারীর আর-একস্থানে তাহারাই গাহিয়াছেন । “সোদর সাক্ষাৎ বেশী তা হতে অধিক বাসি - হেন ভাই জলেতে ডুবিল, কি মোর কর্শ্বের লিগা অীর না হইব দেখা বিধি মোরে নিদায়ণ হইল।” এই স্থানে ভাইয়ের প্রতি ভগিনীর উচ্ছ্বলিত স্নেহধারাই ব্যক্ত হইতেছে। এই কথাগুলির সঙ্গে নিম্নলিখিত স্থানগুলি পাঠক একটু মন দিয়া পড়িলেই বুৰিতে পারিবেন। - - - táo B t ময়মনসিংহের পল্লী-কবি কঙ্ক (tశిని AMAMeMMAMMAMAMAMAMMAMAAAA ভাবধারা উন্মাদের মত কখন কোন স্রোতে বহিরা গিয়াছে “না যাইও না যাইও বন্ধু জারে বন্ধু চরাইতে ধেনু, অতিগে শুকাইয়া গেছে তোমার সোনার তনু । আইস আইস বন্ধুরে—খাওরে বাটার পান, তালের পাখায় বাতাস করি জুড়াক রে পরাণ। জাহারে পরাণ বন্ধু তুমি ছিলে কৈ, তোমার লাগ্য ছিক্কায় তোলা গামছাবান্ধা দৈ ৷ গামছা বান্ধ দৈরে বন্ধু শালীধানের চিড়া, তোমারে খাওয়াইব বন্ধু সামূনে থাইক্য খাড়া।” আরেক স্থানে লীলা আপন নিরবচ্ছিন্ন দুঃখের কথা ভাবিতে ভাবিতে আপন মনে গাহিতেছে । “জকুলে ডুবিল নাও শিশুকালে মৈল মাও কত দুঃখে পাল্যাভুলে বাপে— হেন বাপ বৈরি হৈল কারে দোষ দিব বল, কপাল পুড়িল ব্ৰহ্মশাপে । মনে চিত্তে নাহি জানি, লোকে বলে কলঙ্কিনী এত ছিল কর্ণে নাহি জানি, দিবস অtঙ্গাইর ঘোর চন্দ্রস্বর্ঘ্য সাক্ষী মোর অার কারে বা সাক্ষী করি আমি।” সরল-হৃদয়া পুণ্যশীলা লীলা নিজের মনের ভিতর খুজিয়া পাপের লেশ মাত্র পাইতেছে না। নিদারুণ দুঃখে অভিভূত হইয়া চন্দ্র স্বৰ্য্যকে সাক্ষী করিতেছে, যে পাপী যে আপন পাপের কথা সম্পূর্ণ জানে, মনে মনে সে কখনো ধৰ্ম্ম সাক্ষী করে না । যদি বা করে তাহা প্রকাগু মানবসমাজে নিজকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করিবার জন্ত । অমৃতপ্ত গর্গের মুখ দিয়াও কবি বলাইয়াছেন— “না জানিয়া না শুনিয়া করিলাম কর্ণ, আজি হতে আমারে ছলিল শাস্ত্ৰ ধৰ্ম্ম ।’’ অধিক বলা বাহুল্য মাত্র। এইরূপ অনবধান কবি ও গায়কের হাতে পড়িয়া এই সুন্দর বারমাসীটির ঐতিহাসিক অবস্থা এতাদৃশ দুর্দশার চরমে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। ইতিহাসে কবির প্রভাব ঐতিহাসিক মৰ্য্যাদা যতই কেন ক্ষুণ্ণ হউক না লীলাকঙ্কের এই প্রণয়-কাহিনী প্রেমিক কবিগণের হাতে পড়িয়া ভাব-মাধুর্য্যে যে-অনিৰ্ব্বচনীয় হইয়া উঠিয়াছে তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। ইতিহাসের উপর কবির একটা প্রভাব চিরকাল আছে—থাকিবে। ইহাই কবির দুৰ্জ্জয় শক্তি। রামীর সঙ্গে চণ্ডীদাসের~বিদ্যপতির সঙ্গে ।