পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ess প্রবাসী-ভ্রাবণ, ১৩৩৫ [ ২৮শ ভাগ, ১ম খণ্ড আজ অনেকদিন পরে খাতাখানা দেরাজ হইতে বাহির করিয়, সে লিখিতে বসিল । পাশের ঘরে আসিয়া প্রতিভ, তড়িৎ, মহা কোলাহল সহকারে সাজ করিতেছিল। রেজুনের বাড়ীতে ইটা ঘরের মধ্যে কখনও পুরা দেওয়াল থাকে না, সব কাঠের বা ইটের আধা পাটিলন, কোনো কথাই পাশের ঘর হইতে কাহারও শুনিতে বাকি থাকে না। কাজেই নিজের সম্বন্ধে অনেকপ্রকার কথাই মাঝে মাঝে কৃষ্ণার কানে আসিতে লাগিল। গৃহিণী মাঝে জাসিয়া একবার বলিলেন, “দেখ গো বউমার, আজ যার যত গহনা অাছে সব প’রে যাবে । ওসব মেমসায়েবা পোষাক তোমাদের থিয়েটার বায়োস্কোপের জন্যে রাখ, আমাদের বাঙালীর মধ্যে ওসব ভাল দেখায় না। এ রকম ক’রে গেলে, ওরা মনে করবে শ্বশুর-শাশুড়ী এদের কিছু দেয়নি বুৰি।" খানিক পরে শাশুড়ীর আদেশ মত সাজসজ্জা সমাপ্ত করিয়া কৃষ্ণার ঘরের সন্মুখ দিয়া সকলে চলিয়া গেল। কৃষ্ণ লেখার ব্যস্ত দেখিয়া আর কেহ তাহার কাজে ব্যাঘাত কল্পিল না । আধঘণ্ট খানিক পরে দরজার সাননে আবার পায়ের শৰ শোনা গেল। কৃষ্ণ মুখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিল, fবপিন দাড়াইয়া আছে। জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি যে নেমস্তন্ন খেতে গেলেন না বড় ।” বিপিন বলিল, “খাওয়া ত রাত্রে, এত আগে গিয়ে কি করব ? জ্যাঠামশায় তাস্ খেলবেন, জ্যাঠাইমা নিজের বড়মামুৰীয়,পরিচয় দেবেন, বৌদিরা গহনা দেখবেন এবং দেখাবেন। আমার ত কিছুই করবার নেই, কাজেই গেলাম না। তাছাড়া বাড়ীতে একটু দরকারও ছিল।” খানিক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, “ারকারটা আপনার সঙ্গে ।” কৃষ্ণ কিছুই বলে না দেখিয়া বিপিন জিজ্ঞাসা করিল, “খুব কি ব্যস্ত জাছেন ? আপনার মিনিট দশ স্বারোর বেশী লাগবে না।” 咀 কৃষ্ণার বুকের ভিতর তখন চিপ, চিপ করিতেছিল। অস্বস্তিতে তাহার মন ভরিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু এখন না গুলিয়াই বা উপায় কি ? বাক একেবারে চুকাইয় ফেলা যাক, মনে করিয়া কৃষ্ণ চেয়ার ছাড়িয়া উঠির পড়িল। দরজার বাহিরে জাসিয়া বলিল, “ন, এমন কিছু কাজ নয়, আজ না হয় কাল লিখলেও ক্ষতি নেই।” সিড়ির মুখে যে জায়গাটাতে কৃষ্ণার চা খাইত বিপিন সেইখানে আসিয়া দাড়াইল। কৃষ্ণার মুখের দিকে চাহিয়া একখানা চেয়ার অগ্রসর করিয়া দিয়া বলিল, “বমুন”। কৃষ্ণ বসিয়া বলিল, “আপনি ত দাড়িয়েই রইলেন ।” বিপিন একটা চেয়ারের পিঠে তর দিয়া দাড়াইয়া বলিল, “বস্লে যেটুকু সাহস কোনো রকমে জোগাড় করেছি, তাও জল হয়ে যাবে। দাড়িয়েই থাকি। কি ক’রে যে কথা আরম্ভ করব, কিছু বুঝতে পারছি না।” উপায় থাকিলে কৃষ্ণ তাহার কথার অপেক্ষা না করিয়া, তখনি পলায়ন করিত। কি কথা যে বিপিন বলিতে চায়, তাহা জানিতে তাহার বাকি ছিল না। এ ধরণের কথা যে তাহাকে শুনিতে হইবে, তাহার জবাবও দিতে হইবে, তাহা কৃষ্ণ কিছুদিন হইতে নিশ্চয় করিয়া জানিত। তবু ব্যাপারটা একেবারে সম্মুখে আসিয়া পড়ায় তাছার মন অত্যন্ত কুষ্ঠিত হইয়া উঠিল। মাথা নীচু করিয়া সে চুপচাপ বসিয়াই রহিল। বিপিন বলিল, “কি বলতে চাই, হয়ত আপনি জানেনই। তবু আমার পরিষ্কার ক’রে বলা উচিত। জ্যাঠামশায় এবার ফিরে যাবার সমর সঙ্গে ক’রে আমাদের এক ভাইকে নিয়ে যেতে চান। যদি আমাকে নিয়ে যান, তাহলে অনেক দিনের মত আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। কাজেই যে কথাটা আরো-কিছুদিন পরে বললে হয়ত তাল হ’ত, আজই আমায় তা বলতে হচ্ছে। আপনি হয়তো বুঝতে পেয়েছেন, আপনাকে আমি কি চোখে দেখি। আমার আপনাকে স্ত্রীরূপে পাবার কোন যোগ্যতাই নেই, তা আমি খুব ভাল ক’রেই জানি। তবু ভালবাসাই একমাত্র যোগ্যতা অযোগ্যতার বিচার করে ন, সেই আশায় আপনার সামনে দাড়িয়ে এ কথা বলতে পারছি। আমার কি কোনো আশা আছে ?” বিপিনকে এ ধরণের কোনো আশা দেওয়া কৃষ্ণার পক্ষে অসম্ভব ছিল। তাহার হৃদয়ের সিংহাসন যদি আর