পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ1] ঐশ্বৰ্য্য-লাভ ૭૧૪ বাড়িয়াছে। পূর্কের মতই গৃহের কোন ব্যাপারেই তাহার সৃষ্টি নাই ; শুধু গৃহে নহে, তাহার চারিদিকে যে সংসার নব নব পরিবর্তনের ভিতর দিয়া, ঘটনার পর ঘটনার ঢেউ তুলিয়া মৃন্ধকল্লোলে, অনন্ত প্রবাহে প্রবাহিত হইতেছিল,— সেদিকেও তাছার নজর ছিল না। মনে হইত, যজ্ঞেশ্বর এই পৃথিবীর সহিত সমস্ত সম্পর্ক চুকাইয়া দিয়া বসিয়াছে। যজ্ঞেশ্বরের কোন পরিবর্তন হয় নাই ? হইয়াছে বই কি! তাহার সবল দীর্ঘ দেহ ত্যুজ হইয়াছে, কপালের রেখা অত্যন্ত পরিস্ফুট হইয়াছে, উজ্জ্বল চোখের জ্যোতি স্নান হইয়াছে। কালো চুলের উপর গুন্ত্র প্রলেপ পড়িয়াছে। ই, যজ্ঞেশ্বর বৃদ্ধ হইয়াছে। একদিন সন্ধ্যার সময় গৃহের দাওয়ায় যজ্ঞেশ্বর বসিয়া ছিল । তাহার চারিদিকে কয়েকটি ছোট ছেলে-মেয়ে কোলাহল করিয়া গেল! করিতেছিল । ষজ্ঞেশ্বরের সেদিকে দৃষ্টি ছিল না চক্রবালের অন্তরালে কোন অজানালোকে তাঙ্কার আঁখি নিবন্ধ ছিল, কে জানে । একটি ছোট মেয়ে যজ্ঞেশ্বরের কোলে চড়িয়া, দুই হাত দিয়া তাহার মুখ এদিকে ফেরাইবার চেষ্টা করির বলিল,— “দাদামশায়, একটা গল্প বল না ।” যজ্ঞেশ্বর আস্তে আস্তে মুখ ফিরাইল । কহিল, “সত্যকার জীবনের চেয়ে আশ্চৰ্য্য গল্প কেহ গুনিয়াছে কি ?” নাতিনী বুঝিতে পারিল কি না সন্দেহ । তবুও বলিল, “তা না শুমুক দাদামশায়,—তুমি একটা গল্প বল ।” - যজ্ঞেশ্বর বলিল, “কি গল্প বলিব, বল ?” নাতিনী বলিল,—“সেই গল্পট,—সেই কত ঘটা ক’রে বিয়ে হ’ল ।” গল্পের নাম শুনির সকলে চারিপাশে আসিয়া ঘেসিয়া বসিল । যজ্ঞেশ্বর আরম্ভ করিল। “বেশী দিনের কথা নয়, আমাদের এইখানেই একজন লোক ছিলেন ; তিনি অসীম ধনশালী।” নাতিনী জিজ্ঞাসা করিল,-"র্তাহার নাম কি দাদামহাশয় ?” 命 যজ্ঞেশ্বর কছিল, “তাহার নাম ?-ৰ্তাহার নাম - নারায়ণ । ই,—নারায়ণের অনেক টাকা ছিল। ষোড়া শালে ঘোড়া, হাতীশালে হাতী, প্রকাও বাড়ীভর লোক জন, সেপাই পিয়াদী গমৃগম্‌ করিত। তাছার অতবড় বাড়ীটায় কত লোক যে প্রতিপালিত হইত, তাহার ইরক্ত নাই। দেশবিদেশ হইতে কত দরিদ্র তাহার নিকট প্রত্যথা হইয়া আসিয়াছে, কাহাকেও তিনি ফিরান নাই ।” সুদূর দিগন্তের দিকে চাহিয়া যজ্ঞেশ্বর বলিতে লাগিল— “কেনই বা ফিরাইবেন ? তাহার অসীম ঐশ্বৰ্য্য ! অনন্ত সম্পদ ! লোকে বলিত র্তাহার টাকায় ছাত ধরিত। তাহাঁদের পরিবারের কেহ কখনও হাত দিয়া টাকা চুইত না। মাটির তলায় নারায়ণের একটি কুঠরী ছিল। সেখানে কেহ কখন প্রবেশ করে নাই। কিন্তু শুনিতে পাওয়া যার, সেই কুঠরীতে যে-মণিরত্ব ছিল, দিল্লীশ্বরের তোষাখানায় তা ছিল না। যে-কোহিমুর দিল্লীশ্বর নিজের পাগড়ীতে পরিয়াছেন, সেইরকম হীরা তাহার খড়মের বোলোয় ছিল । এক একদিন গভীর রাত্রিতে নারায়ণ সেই কুঠরীতে যাইতেন । একটি মাত্র দীপের আলোয় সে কুঠরী অতি অদ্ভুত দেখাইত। সাদা হীরাগুলা স্বৰ্য্যের মত ঋক্ বক্‌ করিত ; জয়ন্ধান্ত, নীলা, পদ্মরাগ, চুণীর প্রভায় অন্ধকার ঘর ঝলমল করিত। প্রকাও বড় বড় নিরেট সোনার সিন্দুকগুলা হইতে সুবর্ণ আলোক প্রতিফলিত হইত। সেরূপ কেহ কখনও কল্পনাও করিতে পারে না ?” - নাতিনী সুর করিয়া বলিল,—“গল্পট বল না, দাদা মহাশয় ওকি বলিতেছ,—ভাল লাগিতেছে না।” যজ্ঞেশ্বর স্বপ্নোখিতের মত বলিল,—“হঁ, এই বলিতেছি। নারায়ণের একটি নাতিনী ছিল ।”— নাতিনী বাধা দিয়া সাগ্রহে কহিল, “কত বড় ?– কত বড়, দাদা মহাশর ?” - “তোমারই মত মাথায় হইবে। আর অমনিই অনেকটা দেখিতে। নারায়ণের ইচ্ছা ছিল নাতিনীকে গৌরীন্ধান করিবে। কত সম্বন্ধ আসিল, কত পাত্র দেখা হুইল,— কাহাকেও আর তাহার মনেই ধরে না। অবশেষে একটি পাত্র মিলিল,- সে কোথাকার রাজার ছেলে । তাহাকে । নারায়ণের পছন্দ হইল। তখন বিয়ের যোগাড় মুরু हहेज । “সে বিয়ে কি কম ধূম হইয়াছিল! নারায়ণের মত