পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতায় জীবাত্মা ও পরমাত্মা মহেশচন্দ্র ঘোষ প্রথম প্রবন্ধে আমরা ‘গীতার আত্মতত্ত্ব’ বিষয়ে আলোচনা করিয়াছি। গীতার মতে আত্মা অনাদি ও অনন্ত ; অজ ও অবিনাশী ; নিত্য শাশ্বত ও পুরাণ ; অব্যয় ও অবিকারী ; সৰ্ব্বগত ও সৰ্ব্বব্যাপী ; অব্যক্ত ও অচিন্তা ; অপ্রমেয় ; এক ও অদ্বিতীয়। লোকে সাধারণতঃ ভাবে, এ সমুদায় পরমাত্মারই বিশেষণ। গীতাকারের মতে এ সমুদায় আত্মার বিশেষণ। কিন্তু যে-আত্মাকে এই বিশেষণে বিশেষিত করিয়াছেন, সেই আত্মাকে লোকে জীবাত্মা বলিয়া থাকে। গীতাকার জীবাত্মা’ শব্দ ব্যবহার করেন নাই। তিনি লক্ষ্য করিয়াছেন জীবাত্মাকে, কিন্তু ব্যবহার করিয়াছেন ‘আত্মা’ শব্দ। পরমাত্মার যে সমুদায় বিশেষণ, এই আত্মারও (অর্থাৎ জীবাত্মারও) বিশেষণ সেই সমুদায়ই। ইহা হইতে সিদ্ধান্ত হইতে পারে যে, যিনি জীবাত্মা, তিনিই পরমাত্মা । গীতাকারের মতে এতদুভয়ের মধ্যে কোন ভেদ নাই ; প্রকৃতপক্ষে এ দুই দুই নহে—এ দুই একই। কিন্তু কি অর্থে এই দুই এক, সে-বিষয়ে অনেক মতভেদ षi८छ् । মতভেদ শঙ্কর, শ্ৰীকণ্ঠ, নিম্বার্ক, রামামুজ, বিষ্ণুস্বামী, বল্লভাচার্য্য প্রভৃতি পণ্ডিতগণ জীবাত্মা ও পরমাত্মার একত্ব স্বীকার করিয়াছেন ; কিন্তু এই একত্ব শব্দের অর্থ লইয়া গুরুতর মতভেদ । কেহ কেহ সৰ্ব্বাংশে উভয়ের একত্ব স্বীকার করেন, কেহ বা একত্ব স্বীকার করিয়াও ভেদ স্বীকার করেন। গীতাকার কি ভাবে উভয়ের একত্ব স্বীকার করিয়াছেন, তাহা আলোচনা করিয়া দেখা আবগুক । আমরা কোন সম্প্রদায়ভুক্ত নহি এবং কোন সম্প্রদায়ের মত সমর্থন করিবার জন্ত গীতার ব্যাখ্যা করিব না। আমরা নিরপেক্ষভাবে এ বিষয়ের আলোচনা করিৰ । একত্বের প্রমাণ ( क ) যষ্ঠ অধ্যায়ের ৭ম শ্লোকে জীবাত্মাকে ‘পরমাত্মা’ বলা হইয়াছে। ( १ ) অন্ত এক স্থলে বলা হইয়াছে, এই দেহস্থিত পুরুষ-ই ‘ভৰ্ত্তা’, ‘মহেশ্বর’ এবং ‘পরমাত্মা’ । ( ১৩|২৩ * ) ( 하) আর একটি শ্লোক এই –“ছে কৌন্তেয় ! অনাদিত্ব’ প্রযুক্ত এবং নিগুণত্বপ্রযুক্ত এই অব্যয় পরমাত্মা ( পরমাত্মা জয়ম্ অব্যয়: ) শরীরস্থ হইয়াও (কিছু ) করেন না এবং ( কিছুতে ) লিপ্ত হন না ( ১৩৩২ )। এই সমুদায় অংশ হইতে প্রমাণিত হয় যে, জীবাত্মা এবং পরমাত্মা সৰ্ব্বাংশেই এক । ( १ ) আমরা সাধারণতঃ যে মাত্মাকে জীবাত্ম বলি, সেই আত্মাকে সৰ্ব্বগত বলা হইয়াছে ( ২। ২৪ ) । , পরমাত্ম৷ ভিন্ন কেহ সৰ্ব্বগত হইতে পারে না ; সুতরাং এ স্থলে সম্পূর্ণভাবে জীবাত্মা ও পরমাত্মার একত্ব স্থাপন করা হইল । * (岛) জীবাত্মাকে সৰ্ব্বব্যাপী বলা হইয়াছে। গীতকারের ভাষা এই—“যেন সৰ্ব্বম্ ইদম্ ততম্” (২১৭ ) অর্থাৎ যাহা দ্বারা এই সমুদায় ব্যাপ্ত। একমাত্র পরমেশ্বরই সৰ্ব্বব্যাপী হইতে পারেন। আর গীতাকার অনুরূপ ভাষাতেই পরমাত্মার সর্বব্যাপিত্ব বর্ণনা করিয়াছেন। দৃষ্টান্ত এই : (১) ৮। ২২ অংশে পরমপুরুষকে লক্ষ্য করিয়া বলা • আমাদের গণনায় ত্রয়োদশ অধ্যায়ের লোকসংখ্যা ৩৫ ৷