পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

f . গোৱা কহিল—“সেটা इएक है .ை ব্ৰহ্ম, যিনি নিৰ্ব্বিশেষ, তিনি বিশেষের মধ্যেই ব্যক্ত। কিন্তু তার বিশেষের শেষ নেই। জল তার বিশেষ, স্থল তার বিশেষ, বায়ু তার বিশেষ, অগ্নি তার বিশেষ, প্রাণ র্তার বিশেষ, বুদ্ধি, প্রেম, সমস্তই তার বিশেষ—গণনা করে কোথাও তার অন্ত পাওয়া যায় না—বিজ্ঞান তাই নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে মরচে। যিনি নিরাকার তার মোকারের অন্ত নেই—হ্রস্ব দীর্ঘ স্থল স্বগের অনন্ত প্রবাহই তার —যিনি অনন্ত বিশেয তিনিই নিৰ্ব্বিশেষ, যিনি অনস্তরূপ তিনিই অরূপ। অন্তান্ত দেশে ঈশ্বরকে নুনাধিক পরিমাণে কোনো একটি মাত্র বিশেষের মধ্যে বাধতে চেষ্টা করেচে—ভারতবর্ষেও ঈশ্বরকে বিশেষের মধ্যে দেখবার চেষ্টা আছে বটে কিন্তু সেই বিশেষকেই ভারতবর্ষ একমাত্র ও চূড়ান্ত বলে গণ্য করে না। ঈশ্বর যে সেই বিশেষকেও অনন্তগুণে অতিক্রম করে আছেন একথা, ভারতবর্ষের কোনো ভক্ত কোনোদিন অস্বীকার করেন না।” মুচরিত কহিল—“জ্ঞানী করেন না কিন্তু অজ্ঞানী?” গোরা কহিল “আমি ত পূৰ্ব্বেই বলেছি অজ্ঞানী সকল দেশেই সকল সত্যকেই বিকৃত করবে।” মুচরিতা কহিল—“কিন্তু আমাদের দেশে সেই বিকার কি বেশী দূর পর্যন্ত পৌছয়নি?” • গোরা কহিল—“তা হতে পারে। কিন্তু তার কারণ, ধৰ্ম্মের স্থল ও স্বঙ্গ, অন্তর ও বাহির, শরীর ও আত্মা এই দুটো অঙ্গকেই ভারতবর্ষ পূর্ণভাবে স্বীকার করতে চায় বলেই যার স্বল্পকে গ্রহণ করতে পারে না তার স্থলটাকেই নেয় এবং অজ্ঞানের দ্বারা সেই স্থলের মধ্যে নানা অদ্ভূত বিকার ঘটতে থাকে। কিন্তু যিনি রূপেও সত্য অরূপেও সত্য, স্থলেও সত্য, স্বগোও সত্য, ধ্যানেও সত্য, প্রত্যক্ষেও সত্য, তাকে ভারতবর্ষ সৰ্ব্বতোভাবে দেহে মনে কৰ্ম্মে উপলব্ধি করবার যে আশ্চৰ্য্য, বিচিত্র ও প্রকাও চেষ্টা করেচে তাকে আমরা মূঢ়ের মত অশ্রদ্ধা করে যুরোপের অষ্টাদশ শতাব্দীর নাস্তিকতায় আস্তিকতায় মিশ্রিত একটা সঙ্কীর্ণ নীরস অঙ্গহীন ধৰ্ম্মকেই একমাত্র ধৰ্ম্মবলে গ্রহণ করব এ হতেই পারে না। সুমি যা বলচি তা আপনাদের আশৈশবের সংস্কার বশত ভাল করে বুঝতেই পাৰ্ব্বেন না, মনে করবেন প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ । । এলোকটার ইংরেজি শিথেও শিক্ষার কোনো ফল হয়নি ; } কিন্তু ভারতবর্ষের সত্য-প্রকৃতি ও সত্য-সাধনার প্রতি যদি আপনার কোনো দিন শ্রদ্ধা জন্মে, যদি ভারতবর্ষ নিজেকে সহস্র বাধা ও বিকৃতির ভিতর দিয়েও যে রকম করে প্রকাশ করচে সেই প্রকাশের গভীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন তাহলে—তাহলে, কি আর বলব, আপনার ভারত- | বর্ষীয় স্বভাবকে শক্তিকে ফিরে পেয়ে আপনি মুক্তিলাভ করবেন।” - স্বচরিতা অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল দেখিয়া গোরা কহিল—“আমাকে আপনি একটা গোড়া ব্যক্তি বলে মনে করবেন না। হিন্দুধৰ্ম্ম সম্বন্ধে গোড়া লোকেরা, বিশেষতঃ যারা হঠাৎ নতুন গোড়া হয়ে উঠেছে তারা যে ভাবে কথা কয় আমার কথা সে ভাবে গ্রহণ করবেন না। ভারতবর্ষের নানা প্রকার প্রকাশে, এবং বিচিত্র চেষ্টার মধ্যে আমি একটা গভীর ও বৃহৎ ঐক্য দেখতে পেয়েছি, সেই ঐকেী আনন্দে আমি পাগল। সেই ঐক্যের আনন্দেই আমি আমার এই ভারতবর্ষের জন্যে প্রাণ দেব বলে ঠিক করেছি। সেই ঐক্যের আনন্দেই, ভারতবর্ষের মধ্যে যারা মূঢ়তম তাদের সঙ্গে এক দলে মিশে ধূলোয় গিয়ে বস্তে আমার মনে কিছুমাত্র সঙ্কোচ বোধ হয় না। ভারতবর্ষের এই বাণী কেউবা বোঝে কেউবা বোঝে না—তা নাই হল— আমি আমার ভারতবর্ষের সকলের সঙ্গে এক—তারা আমার সকলেই আপন—তাদের সকলের মধ্যেই চিরন্তন ভারতবর্ষের নিগুঢ় আবির্ভাব নিয়ত কাজ করচে সে সম্বন্ধে আমার মনে কোনো সন্দেহমাত্র নেই।” গোরার প্রবলকণ্ঠের এই কথাগুলি ঘরের দেয়ালে টেবিলে, সমস্ত আসবাব পত্রেও যেন কঁাপিতে লাগিল। এ সমস্ত কথা স্বচরিতার পক্ষে খুব স্পষ্ট বুঝিবার কথা নহে–কিন্তু অনুভূতির প্রথম অস্পষ্ট সঞ্চারেরও বেগ অত্যন্ত প্রবল। জীবনটা যে নিতান্তই চারটে দেয়ালের মধ্যে বা একটা দলের মধ্যে বদ্ধ নহে এই উপলব্ধিটা স্বচরিতাকে যেন পীড়া দিতে লাগিল । এমন সময় সিঁড়ির কাছ হইতে মেয়েদের উচ্চহাস্তমিশ্ৰিত দ্রুত পদশব্দ শুনা গেল। পরেশ বাৰু, বরদাসুন্দরী ও মেয়েদের লইয়া ফিরিয়াছেন। সুধীর সিড়ি দিয়া উঠিবার ১ম সংখ্যা | লইয়া এই হান্তধ্বনির স্বষ্টি । লাবণ্য, ললিতা ও সতীশ ঘরের মধ্যে ঢুকিয়াই গোরাষ্ণুে দেখিয়া সংস্থত হইয়া দাড়াইল। লাবণ্য ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল—সতীশ বিনয়ের চৌকির পাশে দাড়াইয়া কানে কানে তাহার সহিত বিশ্রস্তালাপ শুরু করিয়া দিল। ললিতা স্বচরিতার পশ্চাতে চৌকি টানিয়া তাহার আড়ালে -অদৃশুপ্রায় হইয়া বসিল। পরেশ আসিয়া কহিলেন—“আমার ফিরতে বড় দেরি হয়ে গেল। পামু বাবু বুঝি চলে গেছেন ?” সুচরিতা তাহার কোনো উত্তর দিল না—বিনয় কহিল—“ই, তিনি থাকতে পারলেন না।” গোরা উঠিয়া কহিল—“আজ আমরাও আসি” বলিয়া পরেশ বাবুকে নত হইয়া নমস্কার করিল। - পরেশ বাবু কহিল—“আজ আর তোমাদের সঙ্গে আলাপ করবার সময় পেলুম না। বাবা, যখন তোমার অবকাশ হবে মাঝে মাঝে এস।” গোর ও বিনয় ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় বরদাসুন্দরী আসিয়া পড়িলেন। উভয়ে তাহাকে নমস্কার করিল। তিনি কহিলেন “আপনারা এখনি যাচ্চেন না কি ?” গোরা কহিল “হঁ।” বরদাসুন্দরী বিনয়কে কহিলেন—“কিন্তু বিনয় বাবু আপনি যেতে পারচেন না—আপনাকে আজ থেয়ে যেতে হবে। আপনার সঙ্গে একটা কাজের কথা আছে।” . সতীশ লাফাইয়া উঠিয়া বিনয়ের হাত ধরিল এবং কহিল—“ই, মা, বিনয় বাবুকে যেতে দিয়ে না, উনি আজ রাত্রে আমার সঙ্গে থাকবেন।" - বিনয় কিছু কুষ্ঠিত হইয়া উত্তর দিতে পারিতেছিল দেখিয়া বরদাসুন্দরী গোরাকে কহিলেন—“বিনয় বাবুকে কি আপনি নিয়ে যেতে চান ? ওঁকে আপনার দরকার আছে ?” গোরা কহিল “কিছু না। বিনয় তুমি থাক না—আমি আসচি।” বলিয়া গোর দ্রুতপদে চলিয়া গেল। বিনয়ের থাকা সম্বন্ধে বরদাসুন্দরী যখনি গোরার সন্মতি R গোরা । - > দলের উপর কি একটা উৎপাত করিতেছে, তাই এই সেই মুহুর্তেই বিনয় ললিতার মুখের দিকে না চাহিয়া ' থাকিতে পারিল না। ললিতা মুখ টিপিয়া হাসিয়া মুখ ফিরাইল । - ললিতার এই ছোট খাট হাসি বিদ্রুপের সঙ্গে বিনয় ঝগড়া করিতেও পারে না—অথচ ইহা তাহাকে কাটার মত বেঁধে। বিনয় ঘরে আসিয়া বসিতেই ললিত কহিল— “বিনয় বাবু, আজ আপনি পালালেই ভাল করতেন।” বিনয় কহিল—“কেন ?” • ললিতা। মা আপনাকে বিপদে ফেলবার মতলব করচেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের মেলায় যে অভিনয় হবে তাতে একজন লোক কম পড়চে—ম আপনাকে ঠিক করেচেন। বিনয় ব্যস্ত হইয়া কছিল—“কি সৰ্ব্বনাশ! একাজ আমার দ্বারা হবে না।” ললিত হাসিয়া কহিল—“সে আমি মাকে আগেই বলেচি। এ অভিনয়ে আপনার বন্ধু কখনই আপনাকে যোগ দিতে দেবেন না।” বিনয় খোচ খাইয়া কহিলু—“বন্ধুর কথা রেখে দিন। আমি সাত জন্মে কখনো অভিনয় করিনি—আমাকে কেন?” ললিত কহিল—“আমরাই বুঝি জন্মজন্মান্তর অভিনয় করে আসচি ?” - - এই সময় বরদাসুন্দর ঘরের মধ্যে আসিয়া বসিলেন। ললিত কহিল—“ম, তুমি অভিনয়ে বিনা-বাবুকে মিথ্যা ডাক্‌চ। আগে ওঁর বন্ধুকে যদি রাজি করাতে পার তাহলে—” বিনয় কাতর হইয়া কছিল—“বন্ধুর রাজি হওয়া নিয়ে कथाहे श्रफ़ न । श्रडिनब्र उ कब्ररणहे श्ब्र ना-श्रांबांब्र যে ক্ষমতাই নেই।” বরদাসুন্দরী কহিলেন—“সে জন্তে ভাববেন না— আমরা আপনাকে শিখিয়ে ঠিক করে নিতে পারব। ছোট ছোট মেয়েরা পারবে আর আপনি পারবেন না ?” বিনয়ের উদ্ধারের কোনো উপায় রছিল না। - ক্রমশঃ ।