পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“অদ্ভুত” শব্দের অর্থে আমরা কি বুঝিয়া থাকি ? যাহা সাধারণতঃ দেখিতে পাওয়া যায় না, তাহাই অদ্ভূত। কোনও বিষয় “অদ্ভুত" হইলেই যে তাহ অমানুষিক হইবে, তাহার কোনও অর্থ নাই । কোনও কোনও মামুষের মধ্যে এরূপ শক্তি দেখিতে পাওয়া যায়, যাহা সাধারণ মানুষের মধ্যে দৃষ্ট হয় না। সুতরাং তদ্রুপ শক্তিকেও *অদ্ভুত শক্তি” বলা যাইতে পারে। এইরূপ “অদ্ভুত শক্তি”ই আমাদের অস্থাকার আলোচ্য বিষয়। কিন্তু তৎসম্বন্ধে কিছু বলিবার পূৰ্ব্বে, আমি একটা কথা বলা নিতান্ত আবখ্যক মনে করি। কেহ কোনও “অদ্ভুত” বিষয়ের গল্প করিতে আরম্ভ করিলে, শ্রোতৃবর্গ প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন “মহাশয়, এই ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখিয়াছেন? না, ইহার বৃত্তান্ত কাহারও মুখে শুনিয়াছেন ?” শ্রোতৃবর্গের পক্ষে এইরূপ প্রশ্ন করা অতিশয় স্বাভাবিক। শোনা কথা, মূলতঃ সত্য হইলেও, মুখে মুখে এত রূপান্তরিত হইয়া পড়ে যে, সহজে তাহাতে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না। এই কারণে, শোনা কথা, দৃষ্ট বস্তুর বৃত্তান্তের ন্যায়,

যথার্থ এবং অবিকৃত হইলেও, লোকের মনে সহসা প্রত্যয়

উৎপাদন করিতে সমর্থ হয় না। “অদ্ভুত শক্তি” সম্বন্ধে অদ্য আমি যাহা বলিব, তাহা আমি কাহারও মুখে শুনি নাই ; তাহ আমি প্রত্যক্ষ করিয়াছি, এবং আমার দ্যায় আরও অনেকে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে আমার দেখার প্রণালীর মধ্যে কোনও দোষ ছিল না। পাঠকবর্গ নিম্নলিখিত বৃত্তান্ত পাঠ করিলেই, তাহা বুঝিতে পারিবেন। ১৩১১ সালের ভাদ্র মাসে, আমার পিতাঠাকুর মহাশয় চক্ষুচিকিৎসার জন্ত কলিকাতায় আসেন। তাহার চক্ষুতে ছানি পড়িতেছিল । তাই ছানি কাটাইবার জন্য র্তাহার ইচ্ছা হয়। কিন্তু ছানি তখনও কাটাইবার উপযুক্ত হয় নাই বলিয়া ডাক্তারেরা তখন তাহা কাটাইতে র্তাহাকে নিষেধ করেন। অগত্য, তিনি কলিকাতার বাসাতেই কিছুদিন অবস্থান করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে, আমার ভ্রাতু-পুত্র প্রমান চারুচন্দ্রও কলি প্রবাসী । কাতার বাসাতে থাকিয়া ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্থলে ੰ - পড়িতেছিল। চারুচন্দ্রের শ্বশুর কলিকাতায় থাকেন। [ ৮ম ভাগ। চারুর শ্বাশুড়ীর কোনও কঠিন পীড়া হওয়ায়, সে প্রায় শ্বশুর-বাড়ী যাইত। একদিন সে বাসায়" আসিয়৷ আয়া পিতাঠাকুর মহাশয়কে বলিল, “দাদামহাশয়, একটা সন্ন্যা। আসিয়া আমার শ্বাশুড়ীর চিকিৎসা করিতেছেন। তাছা চিকিৎসার গুণে, আমার শ্বাশুড়ী অনেকট ভাল আছেন। শুনিতেছি, তিনি অনেক লোকের চক্ষু-চিকিৎসা করিয়াঃ চক্ষু ভাল করিয়াছেন। আপনি কি একবার তাছাৰে আপনার চক্ষু দেখাইবেন ?” পিতাঠাকুর মহাশয় পাশ্চাত্ত উচ্চশিক্ষায় মুশিক্ষিত এবং সুপণ্ডিত হইলেও, আমি তাহাকে কোনও দিন সাধুসন্ন্যাসীর উপর আস্থাশূন্ত হইতে দে৷ি নাই। সুতরাং তিনি চারুর কথা শুনিয়াই বলিলেন, "বে: তো ! তাহাকে একদিন এখানে নিয়ে এসো।” আমি পাশ্বস্থ গৃহে বসিয়া কিছু সাহিত্য-চৰ্চা করিান্ত ছিলাম। চারীর প্রস্তাব ও সেই প্রস্তাবে পিতাঠাকু মহাশয়ের সম্মতি-প্রকাশ, এই দুইটাই আমার কর্ণগোচ হইল। আমি বিরক্ত হইয়া চারুকে নিকটে ডাকিলা৷ এবং ভৎসনা করিয়া তাহাকে বলিলাম, “তুমি ডাক্তা। পড়িতেছ ; আর একটা হাতুড়ের দ্বারা বাবার চন্ধ চিকিৎসা করাইতে চাও? চমৎকার তোমাব বুদ্ধি ” গন্ধ । আমার ভৎসনায় কিছু যেন অপ্রতিভ হইল। পরে সে বলিল, “সন্ন্যাসীটি নেহাৎ হাতুড়ে নয়। আমি শুনিয়াছি তিনি অনেকের চক্ষু ভাল করিয়াছেন। দাদামহাশ তাহার দ্বারা চক্ষু-চিকিৎসা নাই বা করাইলেন। তাহাকে একবার চক্ষু দেখাইতে দোষ কি ?” আমি কিছু বিরক্ত হইয়া বলিলাম, “যাহা ভাল বিবেচনা হয়, কর।” পরদিন প্রাতে, চারুচন্দ্র সেই সন্ন্যাসীটিকে সঙ্গে লইয়া বাসায় উপস্থিত হইল। আমি তাছার আকার প্রকার বিশেষরূপে লক্ষ্য করিয়া দেথিলাম। তাহার পরিধানে একটা রক্তবর্ণের চেলী ; গলায় রুদ্রাক্ষমালা বামহস্তে পিত্তলের একটী কমণ্ডলু; দক্ষিণ হস্তে একটা দীর্ঘ ত্রিশূল। পদদ্বয়ে কাষ্ঠপাছক ( খড়ম)। মন্তকে ; কেশরাশি দীর্ঘ ও পৃষ্ঠদেশে আলুলায়িত। কপালে সিঙ্গুরের কতিপয় উজ্জল রেখা। মুখমণ্ডল গুম্ফ ও শ্মশ্রশোভিত। সংখ্যা | ]

ীির বয়ঃক্রম ৪৫ বৎসরের অনধিক বিবেচিত হইল না।

প্লার মূৰ্ত্তি দেখিয়া আমার মনে ভীতি-ভক্তি-মিশ্রিত কেমন ७ी छोरलज्ञ डेलग्न झ्हेश । - পিতাঠাকুর মহাশয় এবং আমিও তাছাকে যথাযোগ্য অভিবাদন করিলাম। তিনি উপবিষ্ট হইয়া পিতৃদেবের চক্ষু পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন। তিনি বলিলেন “আমি পদ্মমধু ও ভীমসেনী কপূরের সহযোগে একটী অঞ্জন প্রস্তুত করিয়া স্থাত লাগাইতে দিই । তদ্বারা অনেকের চক্ষুর উপকার দয়াছে। আপনারও উপকার হইতে পারে। কিন্তু আপনার স্থ যে নিশ্চিত ভাল হইবে, তাহা আমি বলিতে পারি না। আপনি ইচ্ছা করিলে, সেই অঞ্জন লাগাইতে পারেন।” পিতৃদেব ইতঃপূৰ্ব্বে পদ্মমধু ও ভীমসেনী কপূর ব্যবহার স্বারা কিছু উপকার লাভ করিয়াছিলেন। সুতরাং তিনি র্যাসীর প্রস্তুত অঞ্জন ব্যবহার করিতে অনিচ্ছুক হইলেন না। অঞ্জন প্রস্তুত করিতে যে সামান্য অর্থের প্রয়োজন েৈব, তাহা তাহাকে দেওয়া হইল । সন্ন্যাসীর ত্ৰিশূলে কতিপয় স্বর্ণময় চক্ষু খচিত রহিয়াছে দেখিয়া, আমি তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলাম। তদুত্তরে তিনি বলিলেন “যাহাদের চক্ষু ভাল হইয়াছে, তাহারা ভক্তিপূৰ্ব্বক এই ত্ৰিশূলের ফলকে স্বর্ণময় চক্ষু খচিত করিয়া ब्रिांtछ्न।” সন্ন্যাসীঠাকুর তামাক খাইতে থাইতে পিতাঠাকুর মহাশয়ের সহিত গল্প করিতে লাগিলেন। সহসা তিনি পিতৃদেবকে বলিলেন, “মহাশয়, আপনাকে ইহার পূৰ্ব্বে যেন আর কোথায় দেখিয়াছি বলিয়৷ ” মনে হইতেছে। আপনি কি কখনও মেদিনীপুরে ছিলেন ?” পিতৃদেব বললেন, “মেদিনীপুরে ছিলাম বটে ; কিন্তু সে তো অনেকদিনের কথা ! প্রায় ২৭৷২৮ বৎসর হইবে। আমি সেখানে স্কুলের ডেপুটী ইন্সপেক্টার ছিলাম।” সন্ন্যাসী বলিলেন “ঠিক্‌ কথা ! আপনার নাম কি রিবাৰু? আপনি প্রত্যহই হেডমাষ্টার গঙ্গাধর বাবুর বাড়ীতে বেড়াইতে আসিতেন। আমি তখন তাহারই স্বালাতে থাকিয়া স্কুলে পড়িতাম। সে অনেক দিনের কথা বটে। কিন্তু আপনার চেহারার বিশেষ কোনও পরিবর্তন ुनाहे।” অদ্ভুত শক্তি। »ꬃፃ পতাঠাকুর মহাশয় তখন আনন্দিত হইয়া সন্ন্যাসীর সহিত অনেক বিষয়ে কথাবার্তা কহিতে লাগিলেন। সেই কথাবার্তা হইতে বুঝিলাম যে, সন্ন্যাসী ঠাকুরের নাম দুর্গাচরণ ছিল এবং তিনি প্রথম যৌবনেই সংসারত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসগ্রহণ করিয়াছেন। ৮ ভূদেব মুখোপাধ্যায় মহাশয়েরও সহিত তাহার কিরূপ দূর আত্মীয়তা ছিল, ইত্যাদি । এইরূপ আলাপ পরিচয়ের পর, সন্ন্যাসী ঠাকুর দুই তিন দিন অন্তর পিতৃদেবকে প্রায়ই দেখিতে আসিতেন। এস্থলে আমি বলা কৰ্ত্তব্য মনে করি যে, তিনি অর্থের প্রতি কোনও দিন কোনও লোভ প্রদর্শন করেন নাই। তিনি যেন আমাদের কোনও আত্মীয়ের দ্যায় মধ্যে মধ্যে আমাদের বাসায় আসিতেন এবং পিতৃদেবের সহিত কিয়ৎক্ষণ বাক্যালাপ করিয়া চলিয়া যাইতেন । একদিন পিতৃদেব তাহাকে বলিলেন, “আমি কলিকাতায় অনেক দিন রহিয়াছি। মনে করিতেছি, আগামী পরখ বাড়ী যাইব।” সন্ন্যাসী বলিলেন, “আপনি এত শীঘ্রই বাড়ী যাইবেন ? আচ্ছা যদি যান, তাহা হইলে সেখানেও এই ঔষধ ব্যবহার করিবেন। এবং ঔষধ ব্যবহার করিয়৷ কেমন থাকেন, তাহ আমাকে জানাইবেন।" কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া, তিনি আবার বলিতে লাগিলেন, “আমি মনে করিয়াছিলাম, একদিন আপনাদের বাসায় মা'র পূজা করিব। কিন্তু আপনি চলিয়া যাইতেছেন। আগামী কল্য শনিবার। বেশ দিন। যদি বলেন তাহা হইলে কালই মা’র পূজা করি।” পিতৃদেব চিরকালই স্বধৰ্ম্মনিষ্ঠ হিন্দু । সুতরাং তিনি মা’র পূজায় অমত করিবেন কি রূপে ? তথাপি বোধ · হয়, একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করা আবশ্বক মনে করিয়া, তিনি আমাকে আহবান করিলেন। আমি পাশ্বের গৃহ হইতে পিতৃদেব ও সন্ন্যাসীঠাকুরের কথাবার্তা শুনিতেছিলাম। পিতৃদেবের আহবান শুনিয়াই আমি তাহার অভিপ্রায় অনুমান করিয়া লইলাম। কিন্তু সত্য কথা বলিতে কি, সন্ন্যাসীঠাকুরের প্রস্তাব শুনিয়া আমার মনে কেমন একটা খটকা লাগিল। আমি ইতঃপূৰ্ব্বে আরও দুই একটা সন্ন্যাসীর সংসর্গে আসিয়াছিলাম।