পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> abー প্রথমে তাহারা অর্থের প্রতি কোনও লোভ প্রদর্শন না করিলেও শেষে পাকে চক্রে কিছু অর্থ বাহির করিয়া লইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। সুতরাং সাধারণ সন্ন্যাসীদলের প্রতি আমার তাদৃশ শ্রদ্ধা ছিল না। অর্থের প্রতি এই সন্ন্যাসীঠাকুরের কোনও লোভ না দেখিয়া আমি তৎপ্রতি একটু শ্রদ্ধান্বিত হইয়াছিলাম। কিন্তু সহসা মা'র পূজা করিবার প্রস্তাব শুনিয়া আমি ভাবিতে লাগিলাম, সন্ন্যাসীঠাকুর নিশ্চয়ই আজ নিজ মুখোস খুলিবেন। এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে আমি পিতৃদেবের সন্নিহিত হইলে, তিনি আমাকে বললেন, “ইনি কাল আমাদের বাসায় পূজা করিবার প্রস্তাব করিতেছেন।” আমি বলিলাম, “আমি সে প্রস্তাব শুনিয়াছি।” সন্ন্যাসীঠাকুর আমার কথা শুনিয়া সহসা হাসিয়া বলিলেন, “বাবাজি, এই পুজার জন্য তোমাদিগকে কোনও অর্থব্যয় করিতে হইবে না। তোমার পিতা আমার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। এই জন্ত, ইহার ও তোমাদের মঙ্গলসাধনের জন্ত তোমাদের এই বাসায়-মা'র পূজা করিবার জন্য আমার ইচ্ছা হইয়াছে। তোমাকে এই পূজার জন্ত বিশেষ কিছু আয়োজনও করিতে হইবে না। কেবলমাত্র তোমাদের ঐ ঠাকুরদালানটি গঙ্গাজল দিয়া ধোয়াইবে ও একঘটা গঙ্গাজল আনাইয়া রাখবে। একটা কম্বলের আসন, একটা প্রদীপ ও কিছু ধূপ ধূনার প্রয়োজন । এতদ্ব্যতীত, তোমাদের দুই থানা পশমী আলোয়ান ও একখানা রেশমী কাপড় হইলে ভাল হয়। এই দ্রব্যগুলি সংগ্ৰহ করিলেই চলিবে। আর কিছু চাই না। আমি আগামী কল্য ठिंद् সন্ধ্যার সময় আসিব ।” আমি সন্ন্যাসী ঠাকুরের কথা শুনিয়া কিছু অপ্রতিভ এবং পিন্মিতও হইলাম। আমি ভাবিতে লাগিলাম, সন্ন্যাসীঠাকুর আমার মনের কথা জানিতে পারিয়াছেন কি ? চারু স্কুল হইতে প্রত্যাগত হইলে, আমি তাহাকে সন্ন্যাসীর প্রস্তাবের বিষয় বলিলাম। চারু তাহ শুনিয়াই কিছু আনন্দিত হইল। সে বলিল, “ভালই হইয়াছে। সন্ন্যাসী ঠাকুরের পূজার সময় বোধ হয় কিছু অদ্ভূত ব্যাপার দেখা যাইবে । আমি আমার শ্বশুর মহাশয়ের মুখে শুনিয়াছি যে, ইনি বিশেষ অদ্ভূত ব্যাপার দেখাইতে পারেন। প্রবাসী । | কিন্তু তাহাতে আমার বিশ্বাস ৮ম স্থা। - --১৪:১৮, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~ সাবধান ও মনোযোগী হইয়া পূজার ব্যাপার দেটি হইবে।” চারুর কথা শুনিয়া আমারও কৌতুহল উদ্দীপিত হয়। ঠাকুর দালান হইতে আমি সকল দ্রব্য সরাইলাম ৫ পরদিন গঙ্গা হইতে জল আনিবার জন্য ভূতাকে আলে করিলাম। বাড়ীর মেয়ের চারুর মুখে পূজার সময় ক্ষু ব্যাপার দেখার কথা শুনিয়াছিল। সুতরাং তাহারাং পূজা দেখিবার জন্য আগ্রহাম্বিত হইল। পরদিন, আমার স্ত্রী ও কস্তারা গঙ্গাজল দিয়া স্বহস্তে ঠাকুরদালান ট্যু রাথিল এবং সন্ধ্যার প্রাকালে সেখানে একটা আল্প বিছাইয়া, তাহার সম্মুখে এক ঘটী গঙ্গাজল রাখিয়ালি যথাসময়ে একটা তৈলের প্রদীপও প্রজালিত হইল এর ঠাকুর দালানটি ধূপ ও ধূনার গন্ধে আমোদিত হয়। দুইখানি পশমী আলোয়ান এবং একখানি রেশমের ব্যঃ ষথা স্থানে রক্ষিত হইল । ঠিক সন্ধ্যার সময় সন্ন্যাসীঠাকুর খড়মের শব্দ 河 করিতে বৈঠকখানায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ঠা বেশভূযা পূৰ্ব্ববৎ ছিল । আমরা তাহাকে অভ্যর্থনা ক৷ি বৈঠকখানায় বসাইলাম। আমি বিশেষ মনোযোগ সহিত তাহার বেশভূষা লক্ষ্য করিতে লাগিলাম। দেখিলা তাহার বস্ত্রের মধ্যে, কিম্বা অন্ত কোথাও কিছু লুকাই রাখিবার সম্ভাবনা নাই। কেবল পিত্তলের কমণ্ডলুৰ খে। একটা পিত্তলের ঢাকনা ছিল। সেই ঢাক্নার নীচেনি আছে, তাহাই জানিবার জন্য আমার কৌতুহল হইত্ত্বে লাগিল । সন্ন্যাসীঠাকুর বৈঠকখানায় বসিয়া পিতৃদেবের সন্ধি গল্প করিতে লাগিলেন ও তামাক থাইতে লাগিলেন। ইত্যবসরে, আমি ঠাকুরদালানে আরও দুই তিনটি হাীি কেন লণ্ঠন জালাইয়। দিলাম। ঠাকুরদালানটির সর্ম উজ্জল আলোকে আলোকিত হইল। সেখানে ীে ৪র্থ সংখ্যা। ] হয় না। মা ! পানী ঠাকুর দিলেন "দি সব ঠিক ইয়া থাকে, প্রদীপটি, হারিকেন লণ্ঠনগুলি, আসন, এক ঘটী গঙ্গাজল, ধুমুচি, আলোয়ান দুইট, ও রেশমী বস্ত্রখানি ব্যতীত আন । কিছুই ছিল না। স্ত্রীলোকেরাও পূজা দেখিবার স্থা উৎসুক হওয়ায়, আমি সদর দ্বার রুদ্ধ করাইয়া দিলাম। ম, পূজায় প্রবৃত্ত হওয়া যাক।” তিনি ত্রিশূল ও কমণ্ডলু য়ন্ত ঠাকুর দালানে প্রবিষ্ট হইলেন ; আমরাও র্তাহার সঙ্গে সঙ্গে তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হইলাম। তিনি আমাকে সম্বোমন করিয়া বলিলেন “বাবাজি আজ কালীঘাটে আমি মা’র পূৰ্ব করিতে গিয়াছিলাম। সেখান হইতে মা'র মানজল লৱৈ আসিয়াছি। এই কমণ্ডলুর মধ্যে তাহ আছে। তোমরা সকলেই সেই স্নানঙ্গল গ্রহণ কর।” এই বলিয়া তিনি আমার হস্তে কমণ্ডলুটি দিলেন। আমি সাগ্রহে কাছ গ্রহণ করিয়া ঢাকনা উত্তোলন পূৰ্ব্বক দেখিলাম, তাহার মধ্যে কিঞ্চিৎ স্নানজল, একটা বিল্বপত্র ও একটা পূৰ্ণ পড়িয়া আছে। সন্ন্যাসীর উপদেশানুসারে আমরা সকলেই স্নানজল গ্রহণ করিলাম । সন্ন্যাসীঠাকুর তাহার পরিহিত বস্ত্র পরিবর্তন করিতে ছুৈক হওয়ায়, আমি স্বয়ং তাহাকে আমাদের রেশমী ধন্থখানি দিলাম। তিনি আমাদের সকলের সাক্ষাতেই বস্ত্র পরিবর্তন করিয়া আসনে উপবিষ্ট হইলেন। আমি তাহার পরিত্যক্ত বস্ত্রখানি অন্তত উঠাইয়া রাখিলাম। তৎপরে, তিনি আলোয়ান চাহিলে, আমি স্বহস্তে তাহাকে দুইখানি আলোয়ান দিলাম। একটার দ্বারা তিনি নিজ দেহ আবৃত করিলেন এবং অপরটির দ্বারা তিনি সম্মুখস্থ গঙ্গাজলের ঘটী ও কটদেশ হইতে নিম্নাঙ্গ পৰ্য্যন্ত সমস্ত আবৃত করিলেন। উৎপরে তিনি বামহস্ত দ্বারা ত্রিশূল গ্রহণ করিয়া, সেই ত্ৰিশূলের ফলকের উপর দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক, আবৃত দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলিদ্বারা যেন কিছু জপ করিতে লাগিলেন। সন্ন্যাসীঠাকুরের সম্মুখে তৈলের প্রদীপ জলিতেছিল। পার্থে ধুমুচি হইতে সুরভি ধূম নির্গত হইতেছিল। তাহার দক্ষিণে, বামে ও পশ্চাতে হারিকেন লণ্ঠনগুলি জলিতেছিল। পিতৃদেব ও আমি তাহার অব্যবহিত দক্ষিণ দিকে বসিয়া ছিলাম। চারু ও আমার অপর একটা ভ্রাতুপুত্র তাহার বামদিকে উপবিষ্ট ছিল । মেয়ের তাহদের নিকটেই বসিয়াছিল। পশ্চাতে ভৃত্য, কী ও পাচক ব্রাহ্মণ ছিল। আমার পুত্র আমার নিকটেই বসিয়াছিল। সন্ন্যাসীঠাকুর ত্ৰিশূলের উপর দৃষ্টি স্থাপন করিয়া প্রায় ১৫ মিনিট্‌ কাল জপ করিলেন । সহসা আলোয়ানের ভিতর অদ্ভুত শক্তি। >?s তাহার দক্ষিণ হস্তের ঈষৎ সঞ্চালন দৃষ্ট হইল। সেই সঙ্গে সঙ্গে খড়, খড়, মড়মড় এইরূপ সামান্ত শব্দও শ্রত হইতে লাগিল। তৎপরে ঠং ঠাং এইরূপ ধাতব শব্দ, এবং ঠক্‌ ঠাক এইরূপ কঠিন বস্তুর অভিঘাত শব্দও এত হইতে লাগিল। সন্ন্যাসীর দক্ষিণ হস্তের ক্রিয়া ক্রমশঃ যেন বদ্ধিত হইতে লাগিল ;--অর্থাৎ, আমার মনে হইতে লাগিল, তিনি যেন কতকগুলি দ্রব্যকে দক্ষিণহস্ত দ্বারা সরাইয়া, বা সাজাইয়া, রাখিতেছেন। এস্থলে, ইহা বলা উচিত মনে করি যে, এই সময়ে তাহার বামহস্তটি পূৰ্ব্ববং ত্ৰিশূল ধারণ করিয়াছিল এবং তাহার চক্ষু দুটাও ত্ৰিশূলের উপরেই স্থাপিত ছিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, তিনি গায়ের আলোয়ানটি খুলিয়া ফেলিলেন। দেখিলাম তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়াছে। তৎপরেই, তিনি যে আলোয়ান দ্বারা গঙ্গাজলের ঘটী আচ্ছাদন করিয়াছিলেন, তাছাও তুলিয়া ফেলিলেন। সেই আলোয়ান তুলিবা মাত্র, আমরা যাহা দেখিলাম, তাহাতে সকলেই একান্ত বিস্মিত হইলাম। আমি প্রথমে নিজের চক্ষুকে বিশ্বাস করিতে পারি নাই । কিন্তু সত্য সত্যই দেখিলাম, অদ্ভূত ব্যাপার! দেখিলাম, গঙ্গাজলের ঘটার উপরে প্রায় এক ফুট উচ্চ একটা মার্টার ঘট স্থাপিত রহিয়াছে। তাহার উপরে একট আম্রপল্লব ও গলদেশে একটী সদ্য-প্রস্ফুটিত পুষ্পের মালা। সন্ন্যাসীর দক্ষিণ দিকে, একটা আস্ত কলাপাতার উপর কতকগুলি সদ্য-প্রস্ফুটিত পুষ্প-তন্মধ্যে দোপাট পুষ্পই অধিক—এবং কতকগুলি বিল্বপত্র। বামদিকে, আর একথানি কলাপাতার উপর আতপ-চাউলের একটা সুসজ্জিত নৈবেদ্ধ। তাহার পাশ্বে খোশা-ছাড়ানো কলা, শসা ও অন্তান্ত ফল রহিয়াছে এবং উপরিভাগে এক জোড়া মণ্ডাও রহিয়াছে। নৈবেদ্যটি এরূপ স্থসজ্জিত যে পাশ্বে বা কোথাও একটাও চাউল পড়িয়া নাই এবং চাউলগুলি সমস্তই সিক্ত। এই নৈবেস্তের পাশ্বে একছড়া আস্ত কলা ( তাহাতে অনুন ১০১৫ টা কলা ছিল) এবং একটা আস্ত মধ্যমাকৃতির শসা পড়িয়া আছে। সম্মুখে কোশা, কুশ, শঙ্খ ও ঘণ্টা বিদ্যমান। একথও ক্ষুদ্র কলাপাতার উপর খানিকটা মাড় সিন্দুরও রহিয়াছে। অর্থাৎ পূজা করিবার জন্ত যে যে বস্তু বা উপকরণের প্রয়োজন, সমস্তই প্রস্তুত বা উপস্থিত । মনে বড় ধাধা লাগিল । কিছুই বুঝিয়া উঠিতে