পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• নাই ; আমার ভূল २० 8 নিয়োগ করা হইবে। তখনই এই বিষয়ের আলোচনা ও ইহা কার্য্যে পরিণত করিবার জন্য দুইটি বিশেষ কমিটি নিৰ্দ্ধারিত হইল। সমাজসংস্কারের আলোচনার জন্য কংগ্রেসের শেষ দিনটি রাখা হইয়াছিল। এই বিষয়ে ভারতের অনেক করিবার আছে। যদি ভারত আপনার গৃহ-সংস্কারে স্বসিদ্ধ হইতে পারে, তাহা হইলে ভারত আবার গৃহের কর্তৃত্ব ফিরিয়া পাইবে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। সভাপতি বলিলেন, “সমস্ত হিন্দু-সমাজে একটা আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছে বলিয়া বেশ অনুভব করা যায়।” কথাট সত্য। রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, কেশব এই আন্দোলনের স্বষ্টি করিয়াছেন। এই সময়ে, কত লৌকিক সভা— বিশেষত কত ধৰ্ম্ম-সভা যে স্থাপিত হইয়াছে তাহার ঠিকানা নাই ;–আৰ্য সমাজ, ব্রাহ্ম সমাজ, পরামর্শ-সমিতি গঠন করিতেছে, প্রচারের জন্য প্রচারক পাঠাইতেছে, পুস্তিক বিতরণ করিতেছে। সভাপতি বলিলেন, পাচ বৎসর হইল, বর্ণগত কুসংস্কার সত্ত্বেও, তিনি তার বাল-বিধবা কন্যার পুনর্বিবাহ দিতে ভয় পান নাই। তিনি এই বিষয়ে আটঘাট বাধিয়া কাজ করিয়াছিলেন ; তিনি কাশীর পণ্ডিতদের মত আনাইয়াছিলেন। ইহার পর, আর ৫ জন তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়াছেন। ৫ জন মাত্র—তুমি বলিবে, ইহাত তুচ্ছ ব্যাপার! স্থা, কিন্তু মনে থাকে যেন, ইহা আন্দোলনের আরম্ভ কাল মাত্র, এই সবে—সে দিন হিন্দু বিধবারা পতির চিতায় পুড়িয়া মরিত। এই মাত্র আমি বলিয়াছি যে কংগ্রেসে কোন প্রস্তাবের প্রতিবাদ হয় হইয়াছে। একজন ভীষণ-দর্শন ধৰ্ম্মোন্মাদ স্বস্থানে দাড়াইয়া সভাপতির বক্তৃতায় প্রতিবাদ করিতে লাগিল, তারপর তাড়াতাড়ি বক্তৃতার জন্য নির্দিষ্ট বেদীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। প্রথমে উহাকে কেহ কথা কহিতে দিতেছিল না। কিন্তু সে কোন প্রকারে আপনার বক্তব্য শুনাইয়া দিল ; সে মৃগী-রোগীর মত কঁাপিতে কঁাপিতে বুঝাইয়া বলিল যে, সভাপতির কথা শাস্ত্রবিরুদ্ধ। এই কদাকার ভীষণ লোককে দেখিয়া ও তাহার উন্মাদবৎ অঙ্গবিক্ষেপ নিরীক্ষণ করিয়া হঠাৎ মনে হয় যে এ লোকটা তাহার স্ত্রীকে এবং তাহার সহিত যাহাঁদের প্রবাসী । | মতের মিল নাই তাহাদিগকে অনায়াসে আগুনে পূড়ামঃ - পারে—তাহার জন্য উহার কিছুমাত্র পশ্চাত্তাপ হয় না। কিন্তু সভার লোকেরা কি করিল ?—তাহদের ভয়ান আমোদ হইল। এ একটা শুভ চিহ্ন। কিন্তু কুসংস্কারাঞ্জ | ভারতের রমণীরা পুরুষ অপেক্ষা এই দেশাচারকে কেী o আকৃড়িয়া ধরিয়া আছে। অতএব অগ্রে উহাদি। শিক্ষা দেওয়া আবশ্বক। বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করিবার জন্ত, সমাজ-পরিষদ পরামর্শ দিলেন। বিবাহের বৈ{ বয়ঃক্রম ১২ হইতে ১৪ পর্য্যন্ত নিদ্ধারিত হওয়া কর্তৃবা বলিয়া একটি প্রস্তাব সভায় উপস্থাপিত হইয়া:সৰ্ব্বসম্মতি | ক্রমে গৃহীত হইল। - সমাজ সংস্কারের সমস্ত চেষ্টা একস্থানে যাহাতে কেন্দ্রীভূত্ত্ব হয়, ইঙ্গই এই পরিষদের উদ্দেশু। এই পরিষদের প্রন্থ প্রতিপত্তি। এই পরিষৎ নিষেধ-আজ্ঞা কিংবা সমাজ চুতির আদেশ প্রচার করেন না। কিন্তু পরিষদের বস্তৃত কুসংস্কারের অন্ধকার দূরীকৃত করিয়া সমাজ-দিগন্তে জ্ঞান আলোক বিকীর্ণ করে। এই বৃহৎ মন্দিরের চতুর্দিকে যে সকল ছোট ছোট * মন্দির উঠিয়াছে এখন সেই সকল মন্দিরগুলি দেখিা ! আমার বাকী আছে। একটা খোলা জায়গায় আর্য সমাজের একজন প্রচারক ধৰ্ম্মপ্রচার করিতেছিল, আiি { সেইখানে গেলাম। যে দিন কংগ্রেসের কাজ শেষ ইষ্টা গেল সেই দিন সন্ধ্যাকালে চন্দাবকার তাহার ব্রাহ্ম ভ্রাতৃগণে সহিত লাহোর ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে মিলিত হইলেন। আ ি সেথানকার মাজুরের উপর একটা স্থান অধিকার করিা: ছিলাম। সেখানে অনেক ছাত্র ও অধ্যাপক ছিল, আমিং | তাহাদের সহিত, অনন্ত অসীম নিৰ্ব্বিকার অদ্বিতীয় পুরুষে ৯ গৃঢ় রহস্তের উচ্চ আকাশে “উখান” করিলাম। আমার স্মরণ হয়, দক্ষিণ-দেশে বেজওয়াদায় (Ber। wada ) একবার আমি দেখিয়াছিলাম, দুইটি যুবক হাড় ধরাধরি করিয়া যাইতেছে,—একটি তামিল, আর હ ! মারাঠা ; ভাষা ও ধৰ্ম্ম বিভিন্ন হইলেও, ইংরাজি-বিদ্যা 1. উভয়কে একস্থত্রে বাধিয়াছে,—ইংরাজিই উভয়ের সাধা" | ভাষা। এইরূপে ধৰ্ম্ম ও বর্ণঘটিত কুসংস্কার দিন নিয়া হইতেছে । এই সংকীর্ণ ও প্রাচীর-বদ্ধ "| | ન્ય .." so সংখ্যা | ]

  • স্থানে, একটা অপেক্ষাকৃত উদার ও স্বাধীন সভা

স্থাপন করিয়াছে,—জাতীয় সভা স্থাপন করিয়াছে। এই জাতীয়তার ভাব হইতেই কংগ্রেস প্রস্থত হইয়া, দেশের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রাস্ত পৰ্য্যন্ত, জাতীয়ভাবের বীজ দু-হাতে ছড়াইতেছে। সমসাময়িক ভারতের মধ্যে, এই দ্যাশানাল কংগ্রেস যে সৰ্ব্বাপেক্ষা কৌতুহলের জিনিস, তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। আমি পুৰ্ব্বেই বলিয়াছি, হিন্দু-প্রকৃতি পালেমেণ্টী-শাসনতন্ত্রের বিরোধী নহে । তার সাক্ষী, এখানকার গ্রাম্যমণ্ডলীসমূহ ও সেই সব ক্ষুদ্রাকারের পালেমেণ্ট যাহারা “জাতের” উপর কর্তৃত্ব করে। এই সকল পঞ্চায়ৎ-সভার দোষ এই যে উহারা বড়ই সংকীর্ণভাবাপন্ন, “একল-ঘেঁড়ে", পর-প্রবেশরোধী, ও সৰ্ব্বতোভাবে রুদ্ধ-- তাই, উহারাই দেশের দুৰ্ব্বলতার একটা প্রধান কারণ হইয়াছিল। প্রত্যেক মণ্ডলাই, সমবেত গ্রামশাসনের পক্ষপাতী না হইয়া, নিজ গ্রামের স্বতন্ত্র শাসনের পক্ষপাতী ছিল । উহার জাতিচু্যতির দণ্ডাজ্ঞা প্রচার করিত, এবং পুরুষানুক্রমিক প্রাধান্ত বজায় রাথিত। মাটীর প্রাচীরে ঘেরা গওগ্রামগুলি, স্বাতন্ত্র্য সুখ উপভোগ করিত। ভারত, অনন্ত ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল। আজ ভারতে খুব একটা নুতনভাব দেখা দিয়াছে — ইহা জাতীয়তার ভাব। এই জাতীয় ভাবের স্রোত,—জটিল বর্ণভেদ প্রথার বন্ধন একটু শিথিল করিয়াছে, প্রাদেশিক কুসংস্কারকে দূর করিবার চেষ্টা করিতেছে, এবং শুধু বিভিন্ন বর্ণ নয়— সমস্ত সম্প্রদায়কে, সমস্ত জাতিকে, সমস্ত গ্রামকে, সমস্ত প্রদেশকে এক কার্য্যের ছাচে আনিয়া ফেলিয়াছে। উত্তর ও দক্ষিণ, মাদ্রাজ ও কলিকাতা, বাঙ্গালী ও শিখ, এমন কি মুসলমানেরাও কংগ্রেসে প্রতিনিধি পাঠাইয়াছে। যদি একবার ভাবিয়া দেখ, এখানকার কত ভৌগো লিক বাধা, ঐতিহাসিক বাধা, ধৰ্ম্মঘটত বাধা, সামাজিক বাধা,—এই প্রবাহকে প্রতিরোধ করিবার জন্য, আটকাইবার জন্য কত, “বাধ” বাধিয়াছে, তাহা হইলে বুঝিতে পারবে, এই কংগ্রেসের কতটা শক্তি ও কতটা বিস্তার। আমি জানি, এমন লোকও আছে যাহারা চোখ থাকিতেও অন্ধ ; এমন লোকও আছে, যাহারা বালিসের ভারতের মহারাষ্ট্রীয় সভা। । - মধ্যে মুখ লুকাই তের ভর এড়াইতে চাহে। ইহারাই ইংরাজ আমূলাবর্গ। এদেশে দেশভক্তির উদয় হইয়াছে — ইহা যে একটা বৃহৎ সত্য—একটা নূতন ব্যাপার,—ব্রাহ্মণ্যিক আমলে যাহার অস্তিত্বই ছিল না—ইহা ইংরাজ রাজপুরুষেরা দেখিয়াও দেখিবে না। ব্রাহ্মণ্যিক সমাজ এ ভাবের ভাবুক ছিল না, তাহারা এ ভাবট আদে বুঝিত না । কত বিদেশী জাতি ক্রমান্বয়ে আসিয়া ভারত রাজ্য অধিকার করিয়াছে, বন্যার মত ভারতে প্রবেশ করিয়াছে। যেমন যেমন প্রবাহের জল সরিয়া যাইতে লাগিল, নূতন পলি-মাটিগুলা পুরাতন “পলি”গুলাকে আচ্ছন্ন করিল, পরস্পরের পাশাপাশি হইয়া রহিল, কিন্তু মিশিল না, কিংবা পরম্পরের মধ্যে বিলীন হইয়া গেল না। ব্রাহ্মশ্যিক সভ্যতা হইতে,—আর্য্যগণের আক্রমণ হইতে আরম্ভ করিয়া, যে জাতি যখন আসিয়াছে, তাহারা দেশের লোকের সহিত মিশিয়া যায় নাই, একটা নুতন বর্ণরূপে পৃথকভাবেই এখানে অবস্থিতি করিয়াছে ; আজিকার দিনেও, যাহারা নিছক সেকেলে ভাবের রক্ষণশীল লোক, যাহারা বৈরাগ্য ও সন্ন্যাসভাবের ভাবুক, যাহারা পুরুষানুক্রমে ও চিরপ্রথামুসারে, ভারতের রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থের প্রতি উদাসীন, তাহারা এই দেশপ্রীতিকে একটা সংকীর্ণ ও অবিশুদ্ধ ভাব বলিয়া মনে করে। ইহা বিস্তৃত আকারে আত্মম্ভরিতা ও বিষয়মুখের তৃষা ভিন্ন আর কিছুই নহে ; স্বতন্ত্র-শাসনের আকাঙ্গ,-“ভারতের জন্য ভারত” এই ধ্বনির প্রতিধ্বনি—তাহারা অন্তরে অনুভব করে না। সংস্কৃত ভাষার একজন অধু্যাপক আমাকে বলিয়াছিলেন ;—“ইংরাজই আমাদের শাসন করুক, কিংবা আমরা আপনারাই আপনাদের শাসন করি, তাহাতে কিছুই আসিয়া যায় না—শাসন কাৰ্য্যটা চলিলেই হইল !” আর আমার বোধ হয়, একথাটাও তিনি বলিতে পারিতেন, “শাসনকাৰ্য্য চলুক বা না চলুক তাহাতেই বা কি আসিয়া যায় ?” o ইংরাজের উপনিবেশে, এই জাতীয় আন্দোলন ও জাতীয় পালেমেণ্টের নজির আছে। কিন্তু তবু কতটা প্রভেদ । কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়ার যে সব লোক ইংলণ্ডের