পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२० (অন্নপূর্ণার প্রতি ) ও দিদি, সরো ! [ অলক্ষিত ভাবে, এই সময়ে,স্থির দৃষ্টিতে, ধীর পদক্ষেপে মাধবীর প্রবেশ । আকাশে মেঘ-গর্জন ও তৎসহ সহসা ক্ষণপ্রভার তীব্র দীপ্তি ! ] চিকি । ( শিশুর তমুতে হস্ত দিয়া )–নাই ! বৃথা, আর কেন ? বৃথা শোক! বিশ্বে এই উদাম উচ্ছসি হেন— নিরর্থ আক্ষেপ । দুঃখ-শোক এই দেহ সহে ; তবু জীব কাদে ! সব যায়, পুনঃ সবি রহে ! [ চিকিৎসকের প্রস্থান । ] [ অন্নপূর্ণ ছিন্ন-মূল ব্রততীর স্থায় ভূমিতলে লুষ্ঠিত হইয়া আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিলেন, অজয় চক্ষু বস্ত্রাবৃত করিয়া বালকের ষ্ঠায় রোদন করিতে লাগিলেন ; শুধু দুরে— নিম্পন্দ প্রস্তর-মুৰ্ত্তির ন্যায়, শূন্ত দৃষ্টিতে চাহিয়,--দাড়াইয়। রছিলেন অরবিন্দ। ] মাধ। ( ধীরে অন্নপূর্ণর হাত ধরিয়া, ধীর কণ্ঠে, অৰ্দ্ধ স্বগত ভাবে ) চুপ কর দিদি ! দেখো—কিবা এ মুন্দর রূপ! –যেন শুধু রশ্মি-কণা ! থামে, স্থির হও, চুপ!— দেখি’ছন কত গাঢ় ঘুম ? এত শীঘ্র আর জাগায়ো না! চুপ কর। দেখো, এ ঘুম বাছার ঘুম নহে, জাগরণ । ৭ যে করিতেছে খেলা ! --জাগিয়ে ঘুমের ভাণ! শোনো—চলে। এই বেলা গৃহকায সেরে’ আসি। বাছা স্বপ্নটরে ল’য়ে খেলুক না কিছুক্ষণ হেন ভাবে ভোর হয়ে – কিবা ক্ষতি ? ও ওকি ঘুম,—ন, চেতনা ? ( গম্ভীর স্বরে ) মাধবী, কি কহিছ ?—ক্ষান্ত হও । ( স্বামীর প্রতি ত্রস্ত নেত্রে চাহিয়া, মাথায় কাপড় টানিয়া ) (স্বগত) প্রভু!—এখানে! এখন ! একি ? কেন ?—দিদি কেন হেন করেন রোদন ! মাধ। একি হলো ?— ( ক্ষণ পরে, প্রকাশুে, ক্ৰন্দন সহ ) o থোকা!—যাদু মোর ! অল্প । ডাকিছ এমন ক’ারে চির-হতভাগি ! ওরে, সে বুকের ধন চলে গেছে, চলে গেছে! কর—যতই ক্ৰন্দন, পাবিনে তাহারে আর! প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। মাধ। (মৃত দেহের উপর ঝাপাইয়া পড়িয়া, সচুম্বনে) { ওরে ও বুকের ধন, । ওরে মোর অশ্রুবিন্দু, ও নিধি, নয়নমণি ওরে রে সর্বস্ব মোর, দেখ-আমি যে জননী! কোথা—কোথা গেলি বাপ, ফেলি’ আমারে – কোথায়! : বল, বল ! ( চুম্বন ) s কোথা যাস বল! এই-টুকু হায়,= বড়ই যে ছোট তুই ! এক, এক, কোথা যাবি? কিছু তো জানিনা ধন বল—দুধ কোথা পাবি মায়ের এ বুক ছাড়া! ওরে বোটা-ছেড়া কুঁড়ি, আমারে ফেলিয়া গেলি ?—বাপ ! ( মূৰ্ছা ) (সবেগে অগ্রসর হইয়া ) ফেলো দূরে ছড়ি ওই ও শিশুর ওই তুচ্ছ, বিনশ্বর দেহ ! কেহ ওরে চিনিয়াছ ? জেনেছ কি আজো কেহ— কে দু’দিন তরে হেথা আসিয়াই গেল চলি’ ? দেবদূত ! মোর প্রতি আজি গিয়াছে ও বলি’— বিধির নির্দেশ-বাণী, সে অপুৰ্ব্ব মহাদেশ ! ক্ষাস্ত হও! মিশাইয়া দাও—এই, এই শেষ উপলক্ষ চিহ্নটরে ওই মৃত্তিকার সনে কেঁদোনা বিমূঢ় সম।—আসে নাই অকারণে। কি জন্ত ও এসেছিল, আমি জানি । এবে তবে, যাও—ওরে নিয়ে যাও দূরে হেথা হ’তে। হ'বে এবে হেথা নিরজনে, এই পুণ্য-ক্ষণে, মোর এ জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কৰ্ত্তব্য-পালন। ( ছুটিয়া মাধবীর সমীপবৰ্ত্তী হইয়া, তাহার শির স্বীয় জামুদেশে উঠাইয়া লইলেন । ) ওরে, ও অজয়,শোন—শোনু, দেখ,-কি হ’ল আবার! দুঃসহ এ দৃপ্ত যেরে দেখিতে পারিনে আর! ভগবান, হে শ্ৰীহরি, আজে নেৰে নাকি এই— এই চির-দুঃখিনীরে ?—দয়া এটুকুও নেই! | [ গৃহ-বহির্গত হইলেন । ] } অরবিন্দ, তুমিও কি হেন হইবে উতলা ? বন্ধু, প্রিয়বর ! অর। —যাও এবে হেথা হ’তে ! ( মাধবীর প্রতি ) বালা, মাধবী, উঠিয়া দেখো—আজি কে ডাকে তোমারে! k --আমি, হীন অরবিন্দ তব। এতদিন ধারে } চাহিয়া, সাধিয়া, ভালো বাসিয়া অনন্ত মনে,— কিছুতেই পাও নাই ; আজি দেখো—সে কেমনে তব রূপা, ক্ষমা-প্রার্থী ! প্রিয়ে,— অর অন্ন । অজ ৪র্থ সংখ্যা । ] অজয় । ( মৃত কায়াটি বস্ত্রাবৃত করিয়া, কোলে উঠাইয় গৃহ নিষ্ক্রান্ত হইতে হইতে স্বগত ) হে মঙ্গলময়, এ কেমন লীলা প্রভু, তব ? জয় তব জয়। -- [ নিস্ক্রান্ত হইয়া গেলেন । ] অর। প্রিয়ে, আমি স্বামী তব। হের কহি পুনঃ পুন: ওঠ, চেয়ে দেখো—আমি ! মাধবী। অর। —প্রাণনাথ, তুমি! やエー আমি চিরদিন অয়ি দেবি, তোমারে—তোমারে —আমার সৌভাগ্য-লক্ষ্মী ওই স্বর্ণ-প্রতিমারে করিয়াছি অবহেলা—অকারণে ! কেন জানো ? —এত দিন অন্ধ, মূঢ় ; ছিল না আমার প্রাণে ; এত দিন অচেতন আছিলাম আত্ম-মোহে ; তাই, রত্ন চিনি নাই। তুমি সে সকলি সহে দেবীত্বে উন্নীতা আজি । আর, আমি ?—আজি হায়, দাড়াইয় চাহি ক্ষমা ঘৃণ্য অপরাধী প্রায় ! ক্ষম কি করিলে দেবি, করিবে কি কৃপা মোরে ? তেমনি অতুল ধৈৰ্য্যে দিবে স্থান বক্ষপরে ? চাহে নাকি আর মোরে ? বল! বলিতেই হ’বে— করিবে না ক্ষমা মোরে ? মাধ। ( চরণ-ধারণ করিয়া, বাস্পরুদ্ধ কণ্ঠে ) —সৰ্ব্বস্ব আমার ! —তবে, এসো—এসো বক্ষে এসে হে নিখিল-দিব্য-জ্যোতি ; এসে আলিঙ্গন-পাশে সতি, সতি, সতি, সতি! [ মাধবী আলিঙ্গন-বদ্ধ হইলেন। ] [ যবনিকা-প্রক্ষেপ । ] সমাপ্ত । শ্ৰীদেবকুমার রায়চৌধুরী। সদুপায়। বরিশালের কোনো একস্থান হইতে বিশ্বস্তস্থত্রে খবর পাইলাম যে, যদিও আজকাল করকচ লবণ বিলাতী লবণের চেয়ে শস্ত হইয়াছে তবু আমাদের সংবাদদাতার পরিচিত মুসলমানগণ অধিক দাম দিয়াও বিলাতী লবণ খাইতেছে। তিনি বলেন যে সেখানকার মুসলমানগণ আজকাল সুবিধা বিচার করিয়া বিলাতী কাপড় বা লবণ ব্যবহার করে না, তাহারা নিতান্তই জেদ করিয়া করে। অনেকস্থলে নমশুদ্রদের মধ্যেও এইরূপ ঘটনার সংবাদ পাওয়া যাইতেছে। অর। সদুপায় । ミミン আমরা পার্টিশন ব্যাপারে বিরক্ত হইয়া একদিন দেশকে বিলাতি কাপড় ছাড়াইব ইহাই পণ করিয়াছিলাম, ইহা অপেক্ষা বড় কথা এবং দূরের কথা আমরা ভাবি নাই। যদি জিজ্ঞাসা কর ইহা অপেক্ষ বড় কথাটা কি তবে আমি এই উত্তর দিব যে—বাংলাদেশকে দুইভাগ করার দ্বারা যে আশঙ্কার কারণ ঘটয়াছে, সেই কারণটাকেই দূর করিবার প্রাণপণ চেষ্টা করা—রাগপ্রকাশ করাটা তাহার কাছে গৌণ । পার্টিশনে আমাদের আশঙ্কার কারণ কি ? সে কথা আমরা নিজেরা অনেকবার আলোচনা করিয়াছি। এমন কি, আমাদের মনে এই ধারণা আছে যে, সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই কর্তৃপক্ষ বাংলাকে পূৰ্ব্ব অপূৰ্ব্ব এই দুইভাগে বিভক্ত করিয়া বঙ্গকে ব্যঙ্গ অর্থাৎ বিকলাঙ্গ করিয়াছেন। ংলাদেশের পূর্বভাগে মুসলমানের সংখ্যাই অধিক। ধৰ্ম্মগত ও সমাজগত কারণে মুসলমানের মধ্যে হিন্দুর চেয়ে ঐক্য বেশি—সুতরাং শক্তির প্রধান উপকরণ তাহাদের মধ্যে নিহিত হইয়া আছে। এই মুসলমান অংশ, ভাষা সাহিত্য শিক্ষা প্রভৃতির একত্ববশতঃ হিন্দুদের সঙ্গে অনেকগুলি বন্ধনে বদ্ধ আছে। যদি বাংলাকে হিন্দুপ্রধান ও মুসলমানপ্রধান এই দুই অংশে একবার ভাগ করা যায়, তবে ক্রমে ক্রমে হিন্দু মুসলমানের সকল বন্ধনই শিথিল করিয়া দেওয়া সহজ হয়। ম্যাপে দাগ টানিয়া হিন্দুর সঙ্গে হিন্দুকে পৃথক করিয়া দেওয়া কঠিন। কারণ বাঙালী হিন্দুর মধ্যে সামাজিক ঐক্য আছে। কিন্তু মুসলমান ও হিন্দুর মাঝখানে একটা ভেদ রহিয়া গেছে। সেই ভেদটা যে কতখানি তাহ উভয়ে পরম্পর কাছাকাছি আছি বলিয়াই প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করা যায় নাই ;—দুই পক্ষে একরকম করিয়া মিলিয়াছিলাম। কিন্তু যে ভেদটা আছে রাজা যদি চেষ্টা করিয়া সেই ভেদটাকে বড় করিতে চান এবং দুই পক্ষকে যথাসম্ভব স্বতন্ত্র করিয়া তোলেন তবে কালক্রমে হিন্দুমুসলমানের দূরত্ব এবং পরস্পরের মধ্যে ঈর্ষ বিদ্বেষের তীব্রতা বাড়িয় | চলিবে তাহাতে সন্দেহ নাই। আসল কথা, আমাদের দুর্ভাগ্য দেশে ভেদ জন্মাইয়া