পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२२ দেওয়া কিছুই শক্ত নহে, মিলন ঘটাইয়া তোলাই কঠিন। বেহারীগণ বাঙালীর প্রতিবেশী এবং বাঙালী অনেক দিন হইতেই বেহারীদের সঙ্গে কারকারবার, করিতেছে কিন্তু বাঙালীর সঙ্গে বেহারীর সৌহৃদ্য নাই সে কথা বিহারবাসী বাঙালীমাত্রেই জানেন। শিক্ষিত উড়িয়াগণ বাঙালী হইতে নিজেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বলিয়া দাড় করাইতে উৎসুক এবং আসামীদেরও সেইরূপ অবস্থা। অতএব উড়িষ্যা আসাম বেহার ও বাংলা জড়াইয়া আমরা যে দেশকে বহুদিন হইতে বাংলা দেশ বলিয়া জানিয়া আসিয়াছি তাহার সমস্ত অধিবাসী আপনাদিগকে বাঙালী বলিয়া কখনো স্বীকার করে নাই এবং বাঙালীও বেহারী উড়িয়া এবং আসামীকে আপন করিয়া লইতে কথনো চেষ্টামাত্র করে নাই বরঞ্চ তাহাদিগকে নিজেদের অপেক্ষা হীন মনে করিয়া অবজ্ঞাদ্বারা পীড়িত করিয়াছে। অতএব বাংলাদেশের যে অংশের লোকেরা আপনাদিগকে বাঙালী বলিয়া জানে সে অংশটি খুব বড় নহে এবং তাহার মধ্যেও যে ভূভাগ ফলে শস্তে উৰ্ব্বর, ধনে ধান্যে পূর্ণ, যেখানকার অধিবাসীর শরীরে বল আছে, মনে তেজ আছে, ম্যালেরিয়া এবং দুর্ভিক্ষ যাহাদের প্রাণের সারভাগ শুষিয়া णग्न नाहे 6जहे अश्शहेि মুসলমানপ্রধান—সেখানে মুসলমান সংখ্যা প্রতি বৎসরে বাড়িয়া চলিয়াছে, হিন্দু বিরল হইয়৷ পড়িতেছে। এমন অবস্থায় এই বাঙালীর বাংলাটুকুকেও এমন করিয়া যদি ভাগ করা যায় যাহাতে মুসলমান-বাংলা ও হিন্দু বাংলাকে মোটামুটি স্বতন্ত্র করিয়া ফেলা যায় তাহা হইলে বাংলা দেশের মত এমন খণ্ডিত দেশ ভারতবর্ষে আর একটিও থাকিবে না। এমন স্থলে বঙ্গবিভাগের জন্য আমরা ইংরেজরাজের প্রতি যতই রাগ করি না কেন এবং সেই ক্ষোভ প্রকাশ করিবার জন্য বিলাতী বর্জন আমাদের পক্ষে যতই একান্ত আবণ্ডক হেৰু না, তাহার চেয়ে বড় আবগুক আমাদের পক্ষে কি ছিল ? না, রাজকৃত বিভাগের দ্বারা আমাদের মধ্যে যাহাতে বিভাগ না ঘটে নিজের চেষ্টায় তাহারই সৰ্ব্ব প্রকার ব্যবস্থা করা। সেদিকে দৃষ্টি না করিয়া আমরা বয়কটু ব্যাপারটাকেই প্রবাসী । ન્ય હોવા এত একমাত্র কর্তব্য বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলাম, যে-কোনে প্রকারেই হোক বয়কটুকে জয়ী করিয়া তোলাতেই আমাদের সমস্ত জেদ এত বেশিমাত্রায় চড়িয়া গিয়াছিল যে, বঙ্গবিভাগের যে পরিণাম আশঙ্কা করিয়া প্লার্টিশনকে আমরা বিভীষিকা বলিয়া জানিয়াছিলাম সেই পরিণামকেই অগ্রসর । হইতে আমরা সহায়তা করিলাম। আমরা ধৈর্য্য হারাইয়া, সাধারণের ইচ্ছা অনিচ্ছা স্ববিধ অসুবিধা বিচারমাত্র না করিয়া বিলাতী লবণ ও কাপড়ের বহিস্কারসাধনের কাছে আর কোনো ভালমন্দকে গণ্য করিতে ইচ্ছাই করিলাম না। ক্রমশ লোকের সম্মতিকে জয় করিয়া লইবার বিলম্ব আমরা সহিতে পারিলাম না, ইংরেজকে হাতে হাতে তাহার কৰ্ম্মফল দেখাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়িলাম। এই উপলক্ষ্যে আমরা দেশের নিম্নশ্রেণীর প্রজাগণের ইচ্ছা ও সুবিধাকে দলন করিবার আয়োজন করিয়াছিলাম সে কথা স্বীকার করিতে আমাদের ভাল লাগে না কিন্তু কথাটাকে মিথ্যা বলিতে পারি না। তাহার ফল এই হইয়াছে, বাসনার অত্যুগ্রতা দ্বার আমরা নিজের চেষ্টাতেই দেশের এক দলকে আমাদের বিরুদ্ধে দাড় করাইয়াছি। তাহাদিগকে আমাদের মনের মত কাপড় পরাইতে কত দূর পারিলাম তাহ জানি না কিন্তু তাহাদের মন খোয়াইলাম। ইংরেজের শক্রতাসাধনে কতটুকু কৃতকাৰ্য্য হইয়াছি বলিতে পারি না, দেশের মধ্যে শত্রতাকে জাগ্রত করিয়া তুলিয়াছি তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই। আমরা যে সকল স্থানেই মুসলমান ও নিম্নশ্রেণীর হিন্দুদের অসুবিধা ঘটাইয়া বিরোধ জাগাইয়া তুলিয়াছি একথা সত্য নহে। এমন কি, যাহারা বয়কটের কল্যাণে বিশেষ লাভবান হইয়াছে তাহারাও যে আমাদের বিরুদ্ধ হইয়াছে এমন প্রমাণও আছে। ইহার কারণ, আমরা ইহাদিগকে কাজে প্রবৃত্ত করিবার চেষ্টার পূৰ্ব্বে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইহাদের মন পাই নাই—মন পাইবার প্রকৃত পন্থা অবলম্বন করি নাই—আমাদের প্রতি ইহাদের অবিশ্বাস ও দূরত্ব দূর করি নাই। আমরা ইহাদিগকে নিজের মতে চালাইবার এবং কাজে লাগাইবারই চেষ্টা করিয়াছি কিন্তু ইহাদিগকে কাছে টানি নাই। সেই জন্য সহসা একদিন ്WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:১৯, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)് ৪র্থ সংখ্যা । ] মুনদের লুপ্তপ্রায় ঘরের কাছে আসিয়া ইহাদিগকে নাড়া দন্তে গিয়া ইহাদের সন্দেহকে, বিরোধকেই জাগাইয়া দিছি। ইহাদিগকে আত্মীয় করিয়া না তুলিয়াই ইয়াদের নিকট হইতে আত্মীয়তা দাবী করিয়াছি। এবং দেউংপাত আপন লোক কোনোমতে সহ করিতে পারে সেই উৎপাতের দ্বারা ইহাদিগকে পূৰ্ব্বের চেয়ে দ্বিগুণ দূরে ফেলিয়াছি। এবারে এতকাল পরে আমাদের বক্তারা ইংরেজি সভার উচ্চমঞ্চ ছাড়িয়া দেশের সাধারণ লোকের দ্বারে আসিয়া দাড়াইয়াছিলেন। দেশের লোকের মনে সহজেই একটা প্রশ্ন উদয় হইল—একি ব্যাপার, হঠাৎ আমাদের জন্ত বাদের এত মাথাব্যথা হইল কেন ? বস্তুতই তাহদের জন্য আমাদের মাথাব্যথা পূৰ্ব্বেও অত্যন্ত বেশি ছিল না, এখনো একমুহূৰ্ত্তে অত্যন্ত বেশি হইরা উঠে নাই। আমরা এই কথা মনে লইয়া তাহাদের কাছে যাই নাই যে “দেশি কাপড় পরিলে তোমাদের মঙ্গল হইবে এই জন্যই আমাদের দিনে আহার নাই এবং রাত্রে নিদ্রার অবকাশ ঘটিতেছে না।” আমরা এই বলিয়াই গিাছিলাম যে, “ইংরেজকে জব্দ করিতে চাই কিন্তু তোমরা আমাদের সঙ্গে যোগ না দিলে বয়কট সম্পূর্ণ হইবে না অতএব ক্ষতি স্বীকার করিয়াও তোমাদিগকে দেশি কাপড় পরিতে হইবে।” কখনো যাহাদের মঙ্গল চিন্তা ও মঙ্গল চেষ্টা করি নাই, বাহাদিগকে আপন লোক বলিয়া কখনো কাছে টানি নাই, বাহাদিগকে বরাবর অশ্রদ্ধাই করিয়াছি; ক্ষতি স্বীকার করাইবার বেলা তাহাদিগকে ভাই বলিয়া ডাক পাড়িলে মনের সঙ্গে তাহাদের সাড়া পাওয়া সম্ভবপর হয় না । সাড়া যখন না পাই তখন রাগ হয়। মনে এই হয়, যে, কোনদিন যাহাদিগকে গ্রাহমাত্র করি নাই আজ তাহদিগকে এত আদর করিয়াও বশ করিতে পারিলাম না। উণ্ট ইহাদের গুমর বাড়িয়া যাইতেছে। বাহার উপরে থাকে, যাহারা নিজেদিগকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া জানে, নীচের লোকদের সম্বন্ধে তাহাদের এইরূপ মধৈর্য্য ঘটে। অশ্রদ্ধাবশতই মানবপ্রকৃতির সঙ্গে তাহাদের মপরিচয় জন্মে। ইংরেজও ঠিক এই কারণবশতই সছুপায় । ミー○ আমাদের দ্বারা তাহার কোনো অভিপ্রায়সাধনের ব্যাঘাত ঘটিলেই কাৰ্য্যকারণ বিচার না করিয়া একেবারে রাগিয়া উঠে ;–আমরা যপন নীচে আছি তখন উপরওয়ালার ইচ্ছা আমাদের ইচ্ছার দ্বারা অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণে বাধা পাইলেও সে বাধাকে অবিমিশ্র স্পৰ্দ্ধা বলিয়া মনে হয়। ময়মনসিং প্রভৃতি স্থানে আমাদের বক্তারা যখন মুসলমান কৃষিসম্প্রদায়ের চিত্ত আকর্ষণ করিতে পারেন নাই তখন তাহারা অত্যন্ত রাগ করিয়াছিলেন। এ কথা তাহারা মনেও চিন্তা করেন নাই যে আমরা যে, মুসলমানদের অথবা আমাদের দেশের জনসাধারণের যথার্থ হিতৈষী তাহার কোন প্রমাণ কোন দিন দিই নাই অতএব তাহারা আমাদের হিতৈষিতায় সন্দেহ বোধ করিলে তাহাদিগকে দোষী করা যায় না। ভাইয়ের জন্য ভাষ্ট ক্ষতি স্বীকার করিয়া থাকে বটে কিন্তু ভাই বলিয়া একজন খামক আসিয়া দাড়াইলেই যে অমনি তখনি কেহ তাহাকে ঘরের অংশ ছাড়িয়া দেয় এমনতর ঘটে না। আমরা যে দেশের সাধারণ লোকের ভাই তাহ দেশের সাধারণ লোকে জানে না এবং আমাদের মনের মধ্যেও যে তাহাদের প্রতি ভ্রাতৃভাব অত্যন্ত জাগরূক আমাদের ব্যবহারে এখনো তাহার প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি সত্য কথাটা এই যে, ইংরেজের উপরে রাগ করিয়াই আমরা দেশের লোকের কাছে ছুটিয়াছিলাম, দেশের লোকের প্রতি ভালবাসাবশতই যে গিয়াছিলাম তাহা নহে। এমন অবস্থায় “ভাই” শব্দটা আমাদের কণ্ঠে ঠিক বিশুদ্ধ কোমল স্বরে বাজে না—যে কড়ি স্বরটা আর সমস্ত স্বরগ্রাম ছাপাইয়া কানে আসিয়া বাজে সেটা অন্যের প্রতি বিদ্বেষ । আমরা দেশের শিক্ষিত লোকের জন্মভূমিকে লক্ষ্য করিয়া ম' শব্দটাকে ধ্বনিত করিয়া তুলিয়াছি। এই শব্দের দ্বারা আমাদের হৃদয়াবেগ এতই জাগিয়া উঠে যে, আমরা মনে করিতে পারি না দেশের মধ্যে মাকে আমরা সত্য করিয়া তুলি নাই। আমরা মনে করি কেবল গানের দ্বারা কেবল ভাবোন্মাদের দ্বারা মা সমস্ত দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়াছেন। এই জন্ত দেশের সাধারণ জন-সমাজ যদি স্বদেশের মধ্যে মাকে অনুভব না করে তবে আমরা