পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢० সময়। এই যুক্তি যুক্তির আভাস মাত্র। ১৮০০ বৎসর হইতে খৃষ্টধৰ্ম্মের আচাৰ্য্যগণ এই শব্দ দিন বলিয়াই অনুবাদ করিয়া আসিয়াছেন, এবং আধুনিক খৃষ্টানদের মধ্যে এখনও অনেকেই এই কথায় বিশ্বাস করিয়া থাকেন । St. Thomas এই বিষয় স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন :–“সৃষ্টির প্রথম দিনটি এক-সংখ্যার দ্বারা স্থচিত হইয়াছে, অর্থাৎ যে দিনের পরিমাণ ২৪ ঘণ্টা সেই দিন স্থচিত হইয়াছে।" St. Augustin, St. Basile, St. Chrysostome এই একই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। মূসার কালনির্ণয়ও ঐরূপ ছেলেমানসি ব্যাপার। কবরের গায়ে মিসরীয় রাজাদের জন্মমৃত্যুর যে তারিখ লেখা আছে তাহাতেই সপ্রমাণ হয় যে, সে সময়ে মনুষ্যের পরমায়ু এখনকার লোকদের অপেক্ষা বেশী ছিল না। এবং সেই সময়ে মিসরবাসীরা, চ্যান্ডীয়েরা, হিন্দুরা ক্রান্তিপাতের গতির কথা অবগত ছিল, সুতরাং তাহাদের কালগণন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপরেই স্থাপিত। অতএব হিব্রু কুলপতির যে বহুশত বৎসর জীবিত ছিলেন, এ কথা নিতান্তই কাল্পনিক । ইহাও সপ্রমাণ হইয়াছে যে, Pentateuque ész যাহা মূসার লেখা বলিয়া কথিত হইয়া থাকে, উহার অধিকাংশই অপ্রামাণিক ; সম্ভবত ঐ গ্রন্থ Josiah রাজার যুগে রচিত হয়। খৃষ্টজন্মের ৬২১ বৎসর পূৰ্ব্বে, দেবালয়ের মহা-পুরোহিত Helkiah ঐ গ্রন্থ পুনঃপ্রাপ্ত হয়েন। “রাজাদের গ্রন্থে”-র ২২ পরিচ্ছেদে এই বিবরণের একটা সুদীর্ঘ ব্যাখ্যা আছে। ইহার দ্বারা আরও এই কথা সপ্রমাণ হয় যে ইহুদি জাতি, বহু শতাব্দী কাল উহাদের আদিম বহুদেব-বাদে ফিরিয়া গিয়াছিল। এখন পুরাতন বাইবেলের প্রামাণিকতার কথা এক পাশে সরাইয় রাখিয়া, পুরাতন গ্রন্থ আসলে যেমনটি তাহাই গ্রহণ করা যাক। খৃষ্টধৰ্ম্মের মধ্যে যে সকল মুখ্য ভ্রম আছে তাহার মধ্যে একটি এই যে, ইহুদি জাতিই নিৰ্ব্বাচিত জাতি-ঈশ্বরের নিৰ্ব্বাচিত জাতি । নিৰ্ব্বাচিত জাতি কেন ?—খৃষ্টীয় আচার্যেরা বলেন, যে হেতু, পুরাকালে শুধু ইহুদি জাতিই একেশ্বরবাদী ছিল, ইহুদিরাই এক অদ্বিতীয় সভ্যতা ঈশ্বরকে জানিত । প্রবাসী। [ ৮ম ভাগ। এরূপ অভিমানের কথা আজিকার দিনে আর গ্রন্থ হইতে পারে না। ইহা সম্পূর্ণরূপে সপ্রমাণ হইয়াছে নে মিসর, চালডিয়া ও ব্যাবিলনের পুরোহিতেরা, তাহদের দীক্ষিত মণ্ডলীর মধ্যে ঈশ্বরের একত্ব সম্বন্ধে উপদেশ দিতেন। বেদ, মানব ধৰ্ম্মশাস্ত্র, প্রভৃতি ভারতের যাবতীয় ধৰ্ম্ম-গ্রন্থ, পারসিকদিগের আবেস্তা—এই সমস্ত হইতে পৰ্য্যাপ্তরূপে সপ্রমাণ হয় যে, হিন্দু ও পারসিকেরা পরব্রহ্মের একত্ব স্পষ্টরূপে প্রতিপাদন করিত। অ্যারিসটটেল তাহার দর্শনশাস্ত্রে স্পষ্ট করিয়া এইরূপ বলিয়াছেন ;–“যে সকল উপদেশ বহু প্রাচীনকাল হইতে চলিয়া আসিতেছে, এবং যাহ। পুরাণের আকারে ভবিদ বংশের নিকট উপনীত হইয়াছে, তাহা হইতে আমরা এই জ্ঞান লাভ করিয়াছি যে ঈশ্বরই জগতের সর্বাদিম মূলতত্ব এবং ঈশ্বরেরই শক্তি সমস্ত প্রকৃতির মধ্যে ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছে। অবশিষ্ট অংশ, ইতর সাধারণকে বুঝাইবার জন্য ও সামাজিক ব্যবস্থা ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষা করিবার উদ্দেষ্ঠেই, গল্পচ্ছলে সংযোজিত হইয়াছে।” এ কথা যেন আমরা বিশ্বত না হই যে, সমস্ত পুরাকালে, ধৰ্ম্মের গুহ মত কেবল অল্পসংখ্যক দীক্ষিত ব্যক্তির নিকটেই ব্যক্ত করা হইত; প্রত্যেক ধৰ্ম্ম সম্প্রদায়ের মধ্যেই, ধর্মের গুহাংশ কেবল দীক্ষিত ব্যক্তিদের জন্ত ও ধৰ্ম্মের বাহাঙ্গ সাধারণ লোকের জষ্ট নির্দিষ্ট ছিল। এমনকি, প্রথম শতাব্দীর খৃষ্টধৰ্ম্মেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নাই। সেন্ট-পিটার ও সেন্ট-পাউলের মধ্যে যে বাদবিসম্বাদ চলিয়াছিল তাহ হইতেই ইহা সপ্রমাণ হয় ; সেণ্টপাউল গুহাধৰ্ম্ম প্রকাশ করিতে চাহিয়াছিলেন, এবং সেণ্টপিটার তাহাতে স্বীকৃত হন নাই--এই কারণে তাহাদের মধ্যে একটা পার্থক্য উপস্থিত হয়। আরও বহুকাল পরে, বিশপ synesius. এইরূপ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন :-“জনসাধারণ নিতান্তই চাহে যে তাহাদিগকে ভুলাইয়া রাখা হয়। তাহদের সহিত এইরূপ ব্যবহার করা ছাড়া আর উপায় নাই। মিসরের পুরাতন পুরোহিতেরা এইরূপ ব্যবহারই করিত ; লোক ভুলাইবার জন্যই তাহারা দেবালয়ের মধ্যে আপনাদিগকে বদ্ধ করিয়া রাখিত এবং সেই থানে থাকিয় লোকের অগোচরে গুহ ব্যাপার সকল প্রস্তুত করিত। এ কথা লোকেরা T. ৫ম সংখ্যা । ] ਾਂ ਵਿਚ পারিত, তাহা হইলে তাঙ্গাদিগকে প্রবঞ্চনা করা হইয়াছে বলিয়া অবশ্যই রুষ্ট হইত। তাই, সাধারণ লোকের সহিত সাধারণ লোকের মতই ব্যবহার করিতে হয়। আমি নিজে চিরকাল তত্ত্বজ্ঞানীর মতই থাকিব, কিন্তু লোকের নিকট আমি কেবলই পুরোহিত।" অতএব পুরাতন মিসরের লোকেরা যে কেবল জীবজন্তুরই উপাসক ছিল এই অসঙ্গত কাহিনীটা নিতান্তই অমূলক সন্দেহ নাই। আমরা আরও একটু বেশী দূর যাইব : ইহুদি জাতিকে যে ঈশ্বরের নির্বাচিত জাতি বলা হয়, আমরা দেখাইব, ইহুদি জাতি সে সম্মানের যোগ্য নহে। যে ঈশ্বরের জন্য ইহুদি জাতি এত গৰ্ব্বিত, সেই ঈশ্বরের সম্বন্ধে তাহাদের ধারণা কিরূপ ছিল ? তাহারা ঈশ্বরকে মানুষের ভাবে দেথিত ; তাহাদের ঈশ্বরের কল্পনা মানব সাদৃশ্বমূলক কল্পনা ; ইহুদিদের ঈশ্বর শরীরী ঈশ্বর। সৃষ্টি-প্রকরণে বর্ণিত হইয়ছে, ঈশ্বর মানুষকে নিজ মূৰ্ত্তির অনুরূপ সৃষ্টি করিলেন ; ঈশ্বর পার্থিব স্বর্গে বিচরণ করেন ; তিনি ক্রুদ্ধ হয়েন, তিনি অনুতাপ করেন, বিষ্কৃত হয়েন, তিনি স্মরণ করেন। মূসার বহির্যাত্রার (Exodus) প্রকরণে, ঈশ্বর, নিয়মাবলী স্বহস্তে লিথিয়াছেন। কি প্রস্তর খোদিত করিয়া, কি চিত্র কৰ্ম্মের দ্বারা, তাহার মূৰ্ত্তির প্রতিমূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করিতে তিনি নিষেধ করিয়াছেন । এই ঈশ্বর উচ্ছেদকারী ঈশ্বর—যিনি পিতা মাতার অপরাধের জন্য, তাছাদের সস্তানের উপর তিন চারি পুরুষ পৰ্য্যন্ত, প্রতিশোধ লয়েন ; এই ঈশ্বর ইহুদি জাতিরই ঈশ্বর, অন্য জাতির ঈশ্বর নহেন। এবং যখন তিনি ইহুদি জাতির প্রতি রুষ্ট হইলেন, মূসাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন,--“আমাকে নিরস্ত করিও না, আমার প্রজ্জ্বলিত রোষানল ইহুদি জাতিকে একেবারে ধ্বংস করিয়া ফেলুক।” এইত ইহুদিদিগের একেশ্বরবাদের ধারণা ; তাছাড়া একেশ্বরবাদের ধারণাকে তাহারা বজায় রাথিতে পারে নাই। প্রতি মুহুর্তেই তাহারা বিদেশী দেবতাদের নিকট বলি দিত, ইহুদিদিগের ভবিষ্যদবক্তারা ও ইহুদিদিগের ঈশ্বর স্বয়ং বলিয়াছেন যে ইহুদিদের “মাথাগুলা নিরেট।” ইহুদি জাতি অতীন্দ্রিয় ঈশ্বরের ভাব এতই কম বুঝিত যে, ওলটােষ্টমেণ্ট খুজিয়া আত্মার অমরত্ব সম্বন্ধে একটা কথাও l পাওয়া যায় না ; পুরাকালের সমস্ত সভ্য জাতির মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা । SSASASMSMSMSMSMSMSMS ネQ> এরূপ আর কোথাও দেখা যায় না। সৃষ্টিপ্রকরণ হইতে আরম্ভ করিয়া, ইহুদিদের ইতিহাস,—চৌর্য্য, দস্তাবৃত্তি, খুন, লোকহত্যা, আরও অন্যান্য জঘন্য আচরণের সুদীর্ঘ বিবরণ ভিন্ন আর কিছুই নহে। যাহারা ইহুদি জাতিকে জানে না তাহারা যদি ওলড়টেষ্টেমেন্টের একটা প্রতিলিপি করে এবং তাহা হইতে ইহুদি নাম গুলা বাদ দেয়, তাহা হইলে তাহার দ্যায্য রূপে মনে করিতে পারে, যে জাতির উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহারা অসভ্য জাতি, বৰ্ব্বর জাতি। ইহুদি জাতির উৎপত্তির কথা ধরিতে গেলে, ইহা ভিন্ন আর কি হষ্টতে পারে ? উহার কোথা হইতে আসিয়াছে ? এ বিষয় সম্বন্ধে কোন প্রকার সংশয় হইতে পারে না। মূসার সময়ে, ছিল। মিসরের আদিম কালের ইতিহাস রচনা করিবার as Ptolemee Philadelph štzt: Botā sta দিয়াছিলেন, সেই মিসরের পুরোহিত Manethon এইরূপ বলেন ;–“ইহুদি জাতির পূর্বপুরুষের বিভিন্ন জাতীয় লোকের সংমিশ্রণে—এমন কি মিসরের পুরোহিত জাতি সমূহের সংমিশ্রণে উৎপন্ন। উহাদের অনাচার, উহাদের অপবিত্র আচরণ, উহাদের কুষ্ঠ রোগ—এই সকলের দরুণ, teatfors stel Amenoph মিসর হইতে বহিস্কৃত করিয়াছিলেন।” উহাদিগকে Jacobএর বংশধর বলা নিতান্তই অসঙ্গত ।

  • * * +

এক্ষণে ইহুদি জাতির ঈশ্বরের ধারণার সহিত, আর্য্যজাতির ঈশ্বরের ধারণার তুলনা করিয়া দেখা যাক। ভারতীয় আর্য্যদের মধ্যে ব্রহ্ম, ক্লীবলিঙ্গ, নামহীন, মনের অগম্য, ইন্দ্রিয়াদির অগ্রাহ। মমুর লক্ষণানুসারে,—“যিনি স্বয়ন্থ স্বপ্রকাশ, বহিরিত্রিয়ের অগম্য, নিত্য, বিশ্বের অন্তরাত্মা তিনিই ব্রহ্ম।” তিনিই পরিপূর্ণ, নিৰ্ব্বিকার, উপাধিহীন, নিৰ্ব্বিশেষ। স্মৃষ্টির মধ্যে আপনাকে প্রকাশ করিবার জন্তই তিনি আপনাকে স্মৃষ্টি করিতে বাধ্য হইল্লেন, জগৎ সৃষ্টি করিয়াই তিনি ব্রহ্মা নামের বাচা হইলেন ; পুংলিঙ্গবাচক এই ব্ৰহ্ম স্বজনশক্তিরূপে অনন্ত-স্বরূপ ব্ৰহ্ম হইতে নিস্ত। পারস্ত দেশীয় আর্যাদের মধ্যেও ঈশ্বরের স্বরূপ-সম্বন্ধে এই একইরূপ ধারণা –zervane–Ackerne ইনিও