পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ ছিনাইয়া লইয়া বরের ঘরে পৌছাইয়া দেয়। অনাৰ্য্যদের প্রথার প্রভাবে বঙ্গদেশে একটি রীতি জন্মিয়াছে যে, বধূকে মামাশ্বশুরের মুখ দেখিতে নাই। কন্দ সমাজের মামাশ্বশুরের উক্তবিধ কন্যা সংগ্রহের মূলে, এমন কোন লুকান ইতিহাস নাই ত, যাহার জন্ত ঐ প্রথার উৎপত্তি ? যাহা হউক রাত্রে আহার, মদ্যপান এবং নৃত্যের পর, প্রেমসম্ভাষণে বর কন্যার বিবাহ সমাপ্ত হয়। পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে বিবাহ মাতা পিতা স্থির করেন, কিন্তু পাৰ্ব্বত্য কন্দেরা আপনারাই স্থির করিয়া থাকে। এক গ্রামের অবিবাহিত এবং অন্ত গ্রামের অবিবাহিতাগণ, যাহাতে পূৰ্ব্বরাগে উদ্দীপ্ত হইতে পারে, তাহার জন্ত ব্যবস্থা আছে। উভয় গ্রামের বাহিরে একটি ঘরে বহুসংখ্যক কুমার কুমারী একত্রে রাত্রি যাপন করে। প্রণয় সঞ্চারের পর বিবাহ স্থির হইয় গেলে, "গস্তি” প্রভৃতি দিয়া পূৰ্ব্ব বর্ণিত মতে বিবাহ হয় । শবর বা শহর বিবাহ । আর্য্যের প্রাচীনকালে বিন্ধ্যপ্রদেশের সকল অনাৰ্য্যকেই শবর বলিতেন বলিয়া মনে হয় । সম্বলপুর অঞ্চলের শবরের আপনাদের ভাষা ভুলিয়া গিয়াছে, এবং অনেক বিষয়েই হিন্দু প্রতিবেশীর প্রথা অবলম্বন করিয়াছে। কিন্তু এখনও শবর এবং গোড়ের ব্রাহ্মণাদি বর্ণের জল পৰ্য্যস্ত স্পর্শ করে না। ওড়িষায় জগন্নাথ দেবের ইতিহাসে পাই, যে এই শবরজাতির ঘরেই জগন্নাথ ঠাকুর ছিলেন। যাহা হউক, ওড়িযায় একদল শবর, ঠাকুরের রূপায় এখন প্রায় ব্রাহ্মণ বলিয়াই গণিত। গঞ্জাম প্রদেশের শবরেরা অনাৰ্য্যত্ব সমান বজায় রাখিয়াছে বলিয়া, তাহাদের বিবাহের কথাই বলিব । ১৮৮৮ সালের সোসাইটির পত্রিকায় ফসেট নামক এক ইংরেজ ইহাদের কিঞ্চিৎ বিবরণ লিথিয়াছিলেন। শবর যুবক যুবতীর পূর্বরাগ জন্মে পথে-ঘাটে ; কিন্তু বিবাহার্থী বরকে, কন্যার গৃহে গিয়া বিবাহের প্রস্তাব করিতে হয়। বিবাহাৰ্থ বর, আপনার মনোনীতা পাত্রীর গৃহে, তাঁর ধনুক, এক ছাড়ি মদ, এবং এক জোড়া পিতলের খাড়, লইয়া উপস্থিত হয়। কষ্ঠার পিতা আসিয়া বলেন, “বাপু, যদি আরো মদ দিতে পার, তবে তোমার সঙ্গে কথা কহিব।” প্রবাসী। ੇ, কিছুক্ষণ যুদ্ধের পরে বরের शङ्कन আসিয়া ੇ यांश शेक,४* हैड़ि ३लाई সকলকে তোলে। \ ? বিবাহাৰ্থ তথন ঘরের চালে তীর বিধাইয়া দিয়া কছা | মাতার হাতে খাড়, পরাইয়া দেয়। তাঁর বিধাইবার স্ব ভূতের উপদ্রব নাশ করা, প্রেমশর নিক্ষেগের অভিনয় না। ইহার পর বিবাহাৰ্থ আর একদিন পাত্রীর গৃহে যায় ; সেদিন । কন্যার পিতা উহাকে ছ এক ঘ প্রহার করিয়া বিদায় করি । দেয়। তাহার পর বিবাহের নির্দিষ্ট দিনে, বর কয়েকজন । যুবক সঙ্গ লইয়া পাত্রীর গ্রামের কোন জলাশয়ের তীরে বসিয়া থাকে। পাত্রী কলসী কাকে জল আনিবার ছন্ন করিয়া যায়, এবং বর ও বরযাত্রীরা তাহাকে ধরিয়া লই। পলাইয়া যাওয়ার অভিনয় করে। গ্রামের লোক "ধর ধর" বলিয়া পিছনে ছোটে ; কিন্তু ধরে না। ছুটিতে ছুটতে সকলে বরের গ্রামে উপস্থিত হইয়া আমোদ প্রমোদ করে। বিবাহের সময়ে অবিবাহিতা মেয়ের গায়ে জল ছিটাইয়াদে, সধবারা কন্যাকে নূতন কাপড় পরায়, এবং গ্রামের যুবকের অমঙ্গল নাশের জন্য চারিদিকে শর পুতিয়া দেয়। বিবাহের পর বর কন্যা তাঁর ছুড়িয়া চালে বিধাইয়া গৃহে প্রবেশ করে। মালজাতির বিবাহ । গোদাবরী জেলায় মালজাতির মধ্যে সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ কন্যাহরণ প্রচলিত আছে। যুবতী কুমারীকে পথে ঘাট ধরিয়া বাড়িতে লইয়া যে বিবাহ হয়, তাহাতে কুমারীর সন্মতি থাকে না। বিবাহের পর কুমারীর পিতামাতাকে শুদ্ধ ন দিলে বিবাহ সিদ্ধ হয় না, এই পর্যন্ত। অল্প দিন পূৰ্ব্বে, বিদেশী পুলৗশ, উছার একটা ঘটনা দণ্ডবিধির অপরাধ মনে ৮ম ভাগ। ৫ম সংখ্যা । গদবা বিবাহ । রিগাপত্তনের গদব জাতির বিবাহের রীতি এই, যে দিবাং প্রস্তাবের পুর বরকন্যাকে একটি জঙ্গলে যাইতে হয়। কাটি সেখানে একথান কাঠে আগুন ধরাইয়া বরের গায়ে মপিয়া ধরে ; এ দাহ সহ করিয়াও যদি বর চীৎকার না করে, তবে বিবাহ হয় ; নচেৎ নহে। হাড় জালাইবার পূৰ্বেই কুমারীরা যে এই অনুষ্ঠান করেন, সেটা ভাল । ষ্টেতে পারে যে কন্যার অভিরুচি অনুসারে এই দাহ-প্রক্রিয়া কোথাও অল্প হয়, কোথাও বা চীৎকার করাইবার জন্ত বেশি शांबांग्न श्ध्न । পল্লন বিবাহ । পল্লনের তামিল-কৃষক। বিবাহ সভায় বরকে কৃত্রিম অভিমান দেখাইয়া সভা হইতে উঠিয়া যাইতে যাইতে বলিতে হয়, “আমি আর সংসারে থাকিব না ; এবারে বনবাসে চলিলাম।” কন্যার পিতা তখন আসিয়া বলেন,—“যাক্‌, বনে গিয়া কাজ নাই ; আমার মেয়েটিকে তোমায় দান করিতেছি।” রাগ মিষ্টিয়া যায় ; এবং বিবাহ সম্পন্ন হয়। হিন্দুভাবাপন্ন কমসলা জাতির মধ্যেও এই প্রথা আছে ; সম্ভবত, উহারা মূলত: পল্লনের মত কোন জাতি। কমসলা বর একটা ভাঙ্গা ছাতা এবং একটি ঘটি হাতে করিয়া বলে, "আমি ব্রহ্মচৰ্য্য করিতে কাশী চলিলাম।” হেগ্গড়ে বিবাহ। কাণাড়া (কর্ণাট ) দেশের এই জাতিটার নাম বড় টুটে ; কিন্তু ইহাদের বিবাহে একটুখানি কবিত্ব আছে। করিয়া বরকে ফৌজদারীতে চালান দিয়াছিল। কোইম্বার্টুরের ওড্রডে এবং উরালি জাতির মধ্যে এই প্রকার বিবাহের নিদর্শন পাওয়া যায়। বাদাগ। বিবাহ । নীলগিরির বাদাগা জাতির বিবাহাৰ্থ প্রথমে গ্রামের লোককে জানায়, যে যদি অমুক কুমারীকে সে বিবাহ করিতে না পারে, তবে সে আত্মহত্যা করিবে। গ্রামের লোকে তাহাকে সঙ্গে করিয়া গিয়া কুমারী চুরি করিয়া আনে ; বা বাহুল্য যে কেহ বাধা দেয় না। বরকে কষ্ঠার একটি আংটি চুরি করিয়া পলাইতে হয়। কষ্ঠা লে,যে চোর তাহার অলঙ্কার চুরি করিয়া পলাইয়াছে। তখন বাড়ীর লোককে “চোরের” অনুসন্ধানে বাহির হইতে ইয়। খুজিয়া ত পাইবেই ; যখন চোর ধরা পড়ে, তখন যাকে কম্বার সমক্ষে চুরি কবুল করিতে হয়। বিচারে ৰে সাজা হয়, তাহা আৰ্য্য-অনার্য সকল সমাজেই এক ; এই যাবজ্জীবন কারাবাসের জন্য সকলেই লালায়িত। - শ্ৰীবিজয়চন্দ্র মজুমদার । ববাহবৈচিত্র। ネ○○ সিয়ার-উল-মুতাখখরীন এই গ্রন্থ বাঙ্গলার এক অমূল্য ইতিহাস। ইহাতে ১৭•৭ হইতে ১৭৮০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত পৌনে এক শতাব্দী কালের অতি সুবিস্তৃত বিবরণ আছে। আওরংজীবের মৃত্যু হইতে আরম্ভ করিয়া, মোঘল রাজবংশের দ্রুত অবনতি, বাঙ্গলার নবাবদের স্বাধীনতা অবলম্বন ও ধন-জন-বল-বৃদ্ধি, ইংরাজ বণিকদিগের উন্নতি এবং বঙ্গে রাজার উপর রাজা হওয়া, উত্তরভারত-ব্যাপী মহাযুদ্ধ, এবং শেষে ওয়ারেন হেষ্টিংস কর্তৃক ভারতে ইংরাজশক্তি প্রধান ও স্থায়ী করা,–এই সমস্ত প্রধান প্রধান ও আশ্চৰ্য্য ঘটনা ইহাতে যেমন বর্ণিত হইয়াছে এমন আর কোন মূল গ্রন্থে হয় নাই। ইহার রচয়িত। সৈয়দ ঘোলাম হোসেন ( আল তবা তবাই আল হুসেনী) একজন সন্ত্রান্ত দিল্লীর মুসলমান। তিনি ও তাহার পিতা হেদাএং আলি খা বাঙ্গলার নবাবদের রাজসভায় অনেক বৎসর বাস করিয়াছিলেন। ঘোলাম হোসেন এই ইতিহাসের অনেক ঘটনা স্বচক্ষে দেখেন, এবং আরও অনেকগুলি সেই সেই ঘটনার অভিনেতাদের নিকট শুনেন। (ফারসী গ্রন্থের ভূমিকা)। অনেক ইংরাজ কৰ্ম্মচারীর সঙ্গেও গ্রন্থকারের বন্ধুতা ছিল। সেনাপতি হেক্টর মনরো তাহাকে লেখেন “আপনি যদি যোগাড় করিয়া রোহতাস দুর্গ ইংরাজদের হাতে দিতে পারেন তবে আপনার সহিত আমাদের বন্ধুতা আরো বাড়িয়া যাইবে!” (মূল ফারসী বহির ৩৩৮ পৃষ্ঠা )। গুগীন খার সঙ্গে তাহার কথাবার্তা ৩•৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া হইয়াছে। মুসলমান ও ইংরাজ উভয় পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংশ্ৰব থাকায় সেই শতাব্দীর প্রকৃত ইতিহাস লিখিতে ঘোলাম হোসেন যেরূপ সুবিধা পান সেরূপ সুবিধা আর কাহারই হয় নাই। সুতরাং সমসাময়িকতা ও মৌলিকতার হিসাবে এ গ্রন্থ অমূল্য। দ্বিতীয়তঃ ইহাতে প্রচুর উপাদান আছে। গ্রন্থকার শাহ আলম বাহাদুর শাহ হইতে ৭ জন দিল্লীর বাদশাহের ইতিহাস কতকটা সংক্ষেপে দিয়াছেন বটে, কিন্তু এই সকল অসার অক্ষম রাজ-পুত্তলিকার দীর্ঘ বিবরণ আবস্তক নহে। তাহার পর আলীবর্দি হইতে বাঙ্গলার নবাবদের বিবরণ এত দীর্ঘ এত স্বগ্ন ও বিবিধ ঘটনাপূর্ণ যে তাহা হইতে s