পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ই আগষ্ট কলিকাতায় বিদেশবর্জন ও স্বদেশীপ্রতিষ্ঠা উৎসবে সভাপতি শ্ৰীযুক্ত আবদুল হালিম গজনবী । Kux rat.INI. "It'ss, CA touri A. ৫ম সংখ্যা । দিীর প্রজাদিগকে নিজের সম্পত্তির অঙ্গমাত্র বলিয়াই গণ্য করবে, আমাদের দেশের প্রবল পক্ষ দুৰ্ব্বলকে পদানত করিয়া রাখাই সনাতন রীতি বলিয়া জানিবে, উচ্চবর্ণ নিম্ন~শকে পশুর অপেক্ষা ঘৃণা করিবে, ততক্ষণ পর্য্যস্ত আমরা েৈরজের নিকট হইতে সদ্ব্যবহারকে প্রাপ্য বলিয়া দাবী করিতে পারিব না ; ততক্ষণ পৰ্য্যন্ত ইংরেজের প্রকৃতিকে আমরা সত্যভাবে উদ্বোধিত করিতে পারিব না এবং ভারতকেবলি বঞ্চিত অপমানিত হইতে থাকিবে। ভারতবর্ষ আজ সকল দিক হইতে শাস্ত্রে ধৰ্ম্মে সমাজে নিজেকেই নিজে বঞ্চন ও অপমান করিতেছে ; নিজের আত্মাকেই তোর দ্বারা ত্যাগের দ্বারা উদ্বোধিত করিতেছে না, এই জগুই মন্সের নিকট হইতে যাহা পাইবার তাহ পাইতেছে না। ঐ জন্যই পশ্চিমের সঙ্গে মিলন ভারতবর্ষে সম্পূর্ণ হইতেছে ন, সে মিলনে পূর্ণ ফল জন্মিতেছে না, সে মিলনে আমরা অপমান এবং পীড়াই ভোগ করিতেছি। ইংরেজকে ছলে বলে ঠেলিয়া ফেলিয়া আমরা এই দুঃখ হইতে নিস্কৃতি পাইব না। ইংরেজের সঙ্গে ভারতবর্ষের সংযোগ পরিপূর্ণ হইলে, এই সংঘাতের সমস্ত প্রয়োজন সমাপ্ত হইয়া যাইবে । তথন বর্তমানে ভারত ইতিহাসের ষে পৰ্ব্বট চলিতেছে, সেটা শেষ ইষ্টয়া যাইবে। ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিবিধ প্রসঙ্গ । ভারতবর্ষের সকল প্রদেশে এখন ভয়ের দ্বারা শাসন করিবার চেষ্টা চলিতেছে, রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত লোকদিগকে অত্যন্ত কঠিন শাস্তি দেওয়া হইতেছে। ইহাতে গবর্ণমেণ্টের কি ক্ষতি তাহ বলিবার আমাদের কোন প্রয়োজন নাই। সরকার নিজের ভালমন্দের বিচার নিজেই করেন, আমাদিগকে পরামর্শ দিবার জন্ত ডাকেনও না, আমাদের পরামর্শের অপেক্ষাও রাখেন না। বরং আমরা গায়ে পড়িয়া পরামর্শ দিলে ভাবেন, লোকগুলা ভয় পাইয়াছে, তাই আমাদিগকে লৌহদণ্ড তুলিয়া রাখিতে বলিতেছে। অতএব কঠিন শাস্তিতে আমাদের ক্ষতিলাভ কি, কেবল তাহাই আমাদের বিচাৰ্য্য। মানুষ যখন অসাড় হইয় পড়ে, তখন তাহাকে আঘাত করিলে হয় সে সংজ্ঞালাভ করে, সচেতন হয়, জাগে, নয় মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এই দুইয়ের এক বা অন্ত ফল জীবনীশক্তির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। যাহার জীবনীশক্তি প্রায় নিঃশেষ হইয়াছে, সে আঘাতে মরে, যাহার কিছু জীবনীশক্তি আছে, সে জাগিয়া উঠে। আমরা কঠিন শাস্তির আঘাতে মরিব, না জাগিব, তাহাই বিচাৰ্য্য। যদি বিবিধ প্রসঙ্গ । ఇన(t না জাগি, তাহ হইলে তিলক, চিদাম্বরম্ প্রভৃতির উপর অবিচার আমাদের কোন উপকার করিবে না ; তিলক যে বলিয়াছেন যে “এক মহাশক্তি জাতিসমূহের ভবিতব্যের বিধাতা, তিনি আমার মুক্তি অপেক্ষ হয়ত আমার শাস্তি দ্বারাই আমার জাতির অধিক উপকার করিকেন”, তাহ হইলে সেই'মহাশক্তি আমাদিগকে নিজ হস্তের উপায় স্বরূপে ব্যবহার করিবেন না, আমাদিগকে বাদ দিয়া কাজ করিবেন। কিন্তু আমাদের আশা হইতেছে, ক্ষণিক ভয় যাহার যত হউক, আমরা জাগিব। তেষটি বৎসর বয়স্ক দিনাজপুরের সন্ত্রান্ত উকীল, “বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাস” নামক উৎকৃষ্ট পুস্তকের লেখক; শ্ৰীযুক্ত দুর্গাচন্দ্র সান্তাল রেলগাড়ীতে উঠিয়া অকারণ দুজন ইংরেজের প্রাণবধ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, হয় ত বা চুরি করিতে গিয়াছিলেন, এই অপরাধে হাইকোর্টের দুইজন জজ তাহাকে চারি বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়াছেন । তিনি কোন রাজনৈতিক অপরাধ করেন নাই ; কিন্তু সকলেই মনে করিতেছে যে বিচারটা রাজনৈতিক রকমেরই হইয়াছে। এই তথাকথিত “বিচারে” আমাদের যেরূপ মৰ্ম্মান্তিক ক্লেশ ও অপমানবোধ হইয়াছে, তাহ বলিয়া লাভ কি ? রোদন, এবং প্রতিকারে অসমর্থের ক্ষোভ ও রোষ প্রকাশ, সমর্থের বিদ্ধপ উৎপাদক কাপুরুষতা মাত্র। আমাদের সমুদয় শক্তি ও সমুদয় হৃদয়ের আবেগ প্রতিকারের চেষ্টার জন্তু সঞ্চিত থাকুক। প্রতিকার আর কিছু নয়, দেশের আইন প্রণয়ন ও দেশের বিচার কার্যাকে আমাদের আয়ত্ত্বাধীন করা। ৭ই আগষ্টের বিদেশী বর্জন ও স্বদেশী প্রতিষ্ঠার উৎসব দেশের নানা স্থানে হইয়াছে। কলিকাতায় খুব উৎসাহ দেখিলাম। কাগজে দেখিতেছি যে মেদিনীপুর ব্যতীত অদ্যান্য প্রধান প্রধান সহরে এই বার্ষিক উৎসব উৎসাহের সহিত সম্পন্ন হইয়াছে। স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদনের চেষ্টা এই আন্দোলনের গোড়া হইতেই আছে, চেষ্টার মাত্র যাহাতে প্রবলবেগে ক্রমাগত বাড়িতে থাকে, তাহার আয়োজন করা কৰ্ত্তব্য। এই আন্দোলনে কোথাও কাহারও , স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় নাই, কাহাকেও জোর করিয়া বিদেশী ছাড়ান এবং দেশী ধরান হয় নাই, কোথাও আইনের সীমা লঙ্ঘিত হয় নাই, ইহা বলা যায় না। কিন্তু আমাদের ধারণা যে মোটের উপর বল প্রয়োগ ও আইন লঙ্ঘন খুব কম স্থলে হইয়াছে। - ক্ষুদিরামের জীবনলীলা সাঙ্গ হইল। আমরা বিচারক হইবার অযোগ্য। কারণ, তাহার কার্য্য ধৰ্ম্মবিরুদ্ধ হইলেও, তাহার হৃদয়ে দেশভক্তি উৎকট বিদেশীদ্বেষে পরিণত হইলেও, ইহা সত্য যে দেশভক্তি যেমন করিয়া তাহাকে গ্রাস করিয়াছিল, উহা তেমন করিয়া আমাদিগকে