পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ن م رف পদে ক্যাবিনে আসিল ; দ্বারের কাছে দাড়াইয়া সেই হেমন্তের প্রতাষে সেই অন্ধকারজড়িত অপরিচিত নদীদৃশ্বের মধ্যে একাকী নিদ্রিত বিনয়ের দিকে চাহিয়া রহিল ; সম্মুখের দিকৃপ্রাস্তের তারাগুলি যেন বিনয়ের নিদ্রাকে বেষ্টন করিয়া তাহার চোখে পড়িল ; একটি অনিৰ্ব্বচনীয় গাম্ভীর্য ও মাধুর্যে তাহার সমস্ত হৃদয় একেবারে কুলে কুলে পূর্ণ হইয়া উঠিল ; দেখিতে দেখিতে ললিতার দুই চক্ষু কেন যে জলে ভরিয়া আসিল তাহা সে বুঝিতে পারিল না। তাহার পিতার কাছে সে ফেদেবতার উপাসনা করিতে শিথিয়াছে সেই দেবতা যেন দক্ষিণ হস্তে তাহাকে আজ স্পর্শ করিলেন এবং এই নদীর উপরে এই তরুপল্লবনিবিড় নিদ্রিত তীরে রাত্রির অন্ধকারের সহিত নবীন আলোকের যখন প্রথম নিগৃঢ় সম্মিলন ঘটিতেছে সেই পবিত্র সন্ধিক্ষণে পরিপূর্ণ নক্ষত্রসভায় কোন একটি দিব্য সঙ্গীত অনাহত মহাবীণায় দুঃসহ আনন্দ-বেদনার মত বাজিয়া উঠিল । এমন সময় ঘুমের ঘোরে বিনয় হাতটা একটু নাড়িবামাত্রই ললিতা তাড়াতাড়ি ক্যাবিনের দরজা বন্ধ করিয়া বিছানায় শুইয়া পড়িল । তাহার হাত পায়ের তলদেশ শীতল হইয়া উঠিল, অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত সে হৃৎপিণ্ডের চাঞ্চলা নিবৃত্ত করিতে পারিল না। অন্ধকার দূর হইয়া গেল। ষ্টীমার চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। ললিতা মুখ হাত ধুইয়া প্রস্তুত হইয়া বাহিরে আসিয়া রেল ধরিয়া দাড়াইল। বিনয়ও পূৰ্ব্বেই জাহাজের বাশির আওয়াজে জাগিয়া প্রস্তুত হইয়া পূৰ্ব্বতীরে প্রভাতের প্রথম অভু্যদয় দেখিবার জন্ত অপেক্ষা করিতেছিল। ললিতা বাহির হইয়া আসিবামাত্র সে সঙ্কুচিত হইয়া চলিয়। যাইবার উপক্রম করিতেই ললিতা ডাকিল—“বিনয় বাবু!” বিনয় কাছে আসিতে ললিত কহিল, “আপনার বোধ হয় রাত্রে ভাল ঘুম হয়নি।” বিনয় কহিল, “মন্দ হয়নি।” * ইহার পরে দুইজনে আর কথা হইল না। শিশিরসিক্ত কাশবনের পরপ্রান্তে আসন্ন স্বৰ্য্যোদয়ের স্বর্ণচ্ছটা উজ্জল হইয়া উঠিল। ইহারা দুইজনে জীবনে এমন প্রভাত আর কোনো দিন দেখে নাই। আলোক তাহাদিগকে এমন করিয়া কখনো স্পর্শ করে নাই—আকাশ যে পৃষ্ঠ নহে, প্রবাসী ।


১৪:২০, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)১৪:২০, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~~

[ ৮ম ভাগ। তাহা যে বিস্ময়নীরব আনন্দে স্মৃষ্টির দিকে অনিমেষে চালি ! আছে তাহা ইহার এই প্রথম জানিল। এই দুই জনের চিত্তে চেতনা এমন করিয়া জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে যে, সমস্ত, জগতের অন্তর্নিহিত চৈতন্তের সঙ্গে আজ যেন তাহদের একেবারে গায়েগায়ে ঠেকাঠেকি হইল। কেহ কোনো কথা কহিল না। ষ্টীমার কলিকাতায় আসিল । বিনয় ঘাটে একটা গাড়ি ভাড়া করিয়া ললিতাকে ভিতরে বসাইয়া নিজে গাড়োয়ানের পাশে গিয়া বসিল । এই দিনের বেলাকার কলিকাতার পথে গাড়ি করিয়া চলিতে চলিতে কেন যে ললিতার মনে উণ্ট হাওয়া বহিতে লাগিল তাহ কে বলিবে! এই সঙ্কটে। সময় বিনয় যে ষ্টীমারে ছিল, ললিতা যে বিনয়ের সঙ্গে এমন এখন বিরক্ত করিস্নে। এখন বাবার কাছে যাচ্চি।” করিয়া জড়িত হইয়া পড়িয়াছে, বিনয় যে অভিভাবকের মন্ত | সতীশ কছিল, “বাবা বেরিয়ে গেছেন, তার আসতে তাহাকে গাড়ি করিয়া বাড়ি লইয়া যাইতেছে ইহার সমস্তষ্ট - দেরি হবে!” তাহাকে পীড়ন করিতে লাগিল। ঘটনাবশত: বিনয় নে শুনিয়া বিনয় এবং ললিতা উভয়েই ক্ষণকালের জন্ত তাহার উপরে একটা কর্তৃত্বের অধিকার লাভ কৰিছে । একটা মারাম বোধ করিল। ললিতা জিজ্ঞাস করিল— ইহা তাহার কাছে অসহ্য হইয়া উঠিল। কেন এমন হইল! I ‘কে এসেচে ?" রাত্রের সেই সঙ্গীত দিনের কৰ্ম্মক্ষেত্রের সম্মুখে আসি৷ সতীশ কহিল “বলব না! আচ্ছা, বিনয় বাবু বলুন কেন এমন কঠোর স্বরে থামিয়া গেল ! দেখি কে এসেচে। আপনি কথখনোই বলতে পারবেন না। তাই দ্বারের কাছে আসিয়া বিনয় যখন সসঙ্কোচে । কস্থখনো না, কথখনো না!” জিজ্ঞাসা করিল—“আমি তবে যাই" তখন ললিতার রাগ বিনয় অত্যন্ত অসম্ভব ও অসঙ্গত নাম করিতে লাগিল— আরো বাড়িয়া উঠিল। সে ভাবিল যে, “বিনয় বাৰু মনে ; কখনো বলিল, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, কখনো বলিল রাজা করিতেছেন তাহাকে সঙ্গে করিয়া পিতার কাছে উপস্থিত - নবকৃষ্ণ, একবার নন্দকুমারেরও নাম করিল। এরূপ অতিথিহইতে আমি কুষ্ঠিত হইতেছি।” এ সম্বন্ধে তাহার মনে । সমাগম যে একেবারেই অসম্ভব সতীশ তাহারই অকাট্য যে লেশমাত্র সঙ্কোচ নাই ইহাই বলের সহিত প্রমাণ - কারণ দেখাইয়া উচ্চৈঃস্বরে প্রতিবাদ করিল—বিনয় হার করিবার এবং পিতার নিকট সমস্ত জিনিষটাকে সম্পূর্ণভাবে 1 মানিয়া নম্রস্বরে কহিল, "তা বটে, সিরাজউদৌলার যে উপস্থিত করিবার জন্য সে বিনয়কে দ্বারের কাছ হইতে এবাড়িতে আসার কতকগুলো গুরুতর অসুবিধে আছে অপরাধীর দ্যায় বিদায় দিতে চাহিল না। সেকথা আমি এপর্য্যন্ত চিন্তা করে দেখিনি। যাহোক BBB BB BBBBB BBBBB BB BBBDD DD S DDDD DD D BBB BBB BBB BBB BB BB DD ফেলিতে চায়— মাঝখানে কোনো কুষ্ঠ, কোনো মোহের | প্রয়োজন হয় আমাকে ডাক দিলেই আমি যাব।” জড়িমা রাখিয়া সে নিজেকে বিনয়ের কাছে থাটো করিতে সতীশ কহিল, "না, আপনারা দুজনেই আমুন।” 5ांग्न नां । ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কোন ঘরে যেতে হবে ?” সতীশ কহিল, “তেতালার ঘরে।” তেতালার ছাদের কোণে একটি ছোট ঘর আছে, তাহার দক্ষিণের দিকে রৌদ্র বৃষ্টি নিবারণের জন্ত একটি ৬ষ্ঠ সংখ্যা । ] , --WikitanvirBot (আলাপ)--- ------- উভয়ের হাত ধরিয়া কহিল—“কই, বড় বিনয় পকেট চাপড়াইয়া এবং চারিদিকে চাহিয়া কহিল —“বড় দিদি ! তাই ত, কি হল! হারিয়ে গেছেন।” সতীশ বিনয়কে ঠেলা দিয়া কহিল—“ইস্, তাই ত, কম্বন না! বল না, ললিতা দিদি!” ললিত কহিল “বড় দিদি কাল আসবেন।” বলিয়া পরেশ বাবুর ঘরের দিকে চলিল। সতীশ ললিতা ও বিনয়ের হাত ধরিয়া টানিয়া কহিল— “আমাদের বাড়ি কে এসেচেন দেবে চল!” ললিত হাত টানিয়া লইয়া কহিল, “তোর যে আস্বক দিদি এলেন - ৩২ বিনয় ও ললিতাকে দেখিবামাত্র কোথা হইতে সতীশ ছুটিয়া আসিয়া তাহদের দুইজনের মাঝখানে দাড়াইল । গোরা ।


১৪:২০, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)

ව්ය ) ঢালু টালির ছাদ। সতীশের অনুবর্তী দুইজনে সেখানে গিয়া দেথিল ছোট একটি আসন পাতিয়া সেই ছাদের নীচে একজন প্রৌঢ় স্ত্রীলোক চোথে চঘমা দিয়া কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়িতেছেন। তাহার চষমার একদিককার ভাঙা দণ্ডে দড়ি বাধা, সেই দড়ি তাহার কানে জড়ানো। বয়স পয়তাল্লিশের কাছাকাছি হইবে। মাথার সাম্নের দিকে চুল বিরল হইয়া আসিয়াছে কিন্তু গৌরবর্ণ মুখ পরিপক্ক ফলটির মত এখনো প্রায় নিটোল রহিয়াছে ;—দুই ভ্রর মাঝে একটি উল্পীর দাগ-গায়ে অলঙ্কার নাই, বিধবার বেশ। প্রথমে ললিতার দিকে চোখ পড়িতেই তাড়াতাড়ি চষমা খুলিয়া বই ফেলিয়া রাপিয়া বিশেষ একটা ঔৎস্থক্যের সহিত তাম্বর মুখের দিকে চাছিলেন ; পরক্ষণেই তাহার পশ্চাতে বিনয়কে দেখিয়া দ্রুত উঠিয়া দাড়াইয়া মাথায় কাপড় টানিয়া দিলেন এবং ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিবার উপক্রম করিলেন। সতীশ তাড়াতাড়ি গিয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “মাসিমা পালাচ্চ কেন ? এই আমাদের ললিত দিদি, আর ইনি বিনয় বাবু। বড়দিদি কাল আসবেন।” বিনয় বাবুর এই অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয়ই যথেষ্ট হইল ; ইতিপূৰ্ব্বেই বিনয় বাবু সম্বন্ধে আলোচনা যে প্রচুর পরিমাণে হইয়া গিয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই। পৃথিবীতে সতীশের যে কয়টি বলিবার বিষয় জমিয়াছে কোনো উপলক্ষ্য পাইলেই তাহা সতীশ বলে এবং হাতে রাখিয়া বলে না। “মাসিমা” বলিতে যে কাহাকে বুঝায় তাহা না বুঝিতে পারিয়া ললিতা অবাক হইয়া দাড়াইয়া রহিল। বিনয় এই প্রৌঢ়া রমণীকে প্রণাম করিয়া তাহার পায়ের ধূলা লইতেই ললিতা তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিল। মাসিমা তাড়াতাড়ি ঘর হইতে একটি মাদুর বাহির । করিয়া পাতিয়া দিলেন এবং কহিলেন—“বাবা বোস, মা বোস ।" বিনয় ও ললিত বসিলে পর তিনি তাহার আসনে বসিলেন এবং সতীশ তাহার গা ঘেষিয়া ঝুসল। তিনি সতীশকে ডান হাত দিয়া নিবিড়ভাবে বেষ্টন করিয়া ধরিয়া কহিলেন, “আমাকে তোমরা জান না, আমি সতীশের মাসী হই—সতীশের মা আমার আপন দিদি ছিলেন।”. এইটুকু পরিচয়ের মধ্যে বেশি কিছু কথা ছিল না কিন্তু