পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ψ) ο Ν3 রীতিতে নব-সাহিত্যের অভ্যুদয়। বঙ্গ হইতে বিচ্ছিন্ন হইবার পর তৈলঙ্গের প্রভাবে উৎকল সাহিত্য, এবং রক্ষণশীল মধ্যদেশের প্রভাবে মিথিলার সাহিত্য, নবলব্ধ স্বাধীনতা রক্ষা করিতে পারিল না ; জয়দেবের প্রভাব পাইয়াও হারাইয়া ফেলিল। কিন্তু যাহার গৌড়, মিথিল এবং মগধ হইতে আসিয়া দ্রবিড়জাতিপরিপ্লত বঙ্গদেশটিকে সুসভ্য করিয়াছিলেন, এবং দেশটিকে র্যাহারা যথার্থই দেশসংজ্ঞা-বাচা করিয়া তুলিয়াছিলেন, তাহারা কদাচ জাতিনিষ্ঠ স্বাধীনতা পরিত্যাগ করেন নাই। ব্যক্তিনিষ্ঠ স্বাধীনতা রক্ষা করিতে গিয়া বঙ্গের দায়ভাগ সমগ্ৰ ভারতবর্ষের স্মৃতির ব্যবস্থা নুতনভাবে গড়িয়া লইয়াছিল। চিন্তার স্বাধীনতায় সেকালে একালে বঙ্গদেশের একটা বিশেষত্ব আছে। এই বিশেষত্বের মূল যে ঐতিহাসিক অবস্থায়, এখানে সম্যকরূপে তাহার আলোচনা হইতে পারে না ; কেবল সাহিত্যের হিসাবে একটা দিক দেখাইবার চেষ্টা করিলাম। জয়দেব এবং চণ্ডীদাসের দেশে, কাব্য কখনো একটা নির্দিষ্ট প্রথার নিগড়ে বাধা ' পড়িয়া মলিন হয় নাই। জয়দেব, চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস, মুকুন্দরাম, ভারতচন্দ্র, দাশরণী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ; পরে পরে দেখিয়া যাও, বাঙ্গল সাহিত্য, ছন্দে, আপ্যানবস্তুতে এবং ভাবে, ক্রমাগতই নূতন পথে চলিয়াছে। কোন পরবর্তী কবি পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী কবি অপেক্ষা নিকৃষ্ট রচনা করিতে পারেন, কিন্তু নূতনত্বে সকলেরই বিশেষত্ব আছে। যে কয়েকজন কবির নাম করিলাম, ইষ্ঠার কেহই ইংরাজি প্রথার প্রভাবে কবিতা লেখেন নাই । দেশব্যাপী পরাধীনতার দিনে মহারাষ্ট্রে নব রাষ্ট-নীতির অভু্যদয় হইয়াছে, পঞ্জাব সামরিক দক্ষতা লাভ করিয়াছে, কিন্তু বঙ্গদেশে উত্তরোত্তর কেবল কাব্য চর্চাতেই নূতনত্ব বিকশিত হইয়াছে। সকলেই হয় ত একালে সামরিক গৌরবের পক্ষপাতী ; কাজেই তাহারা ইহা বাঙ্গালার কলঙ্ক বলিয়া ঘোষণা করিবেন। কলঙ্কের কথা হউক, অখ্যাতির কথা হউক, কিন্তু ইহাই যে বঙ্গের বিশেষত্ব তাহ বলিতেই হইবে। সাধারণ লোকের উপভোগের জন্য অতি প্রাচীন কালে লে শ্রেণীর যাত্রা অভিনয় ছিল, লোক বিশেষের জন্য যে শ্রেণীর কথকথা ছিল, মহারাষ্ট্রে এবং উত্তর প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। তাহাই সেই প্রাচীন অবস্থায় বুলি গিয়াছে। কিন্তু বাঙ্গালার যাত্রা, বাঙ্গালার টপ, বাজলা পাঁচালী, বাঙ্গলার কথকতা, একেবারে নূতন ছাচে গল। নিম্নশ্রেণীর দ্রবিড় জাতির “ডাল খাই” এবং " লড়াই এখনো সম্বলপুর অঞ্চলে দূর পল্লীতে কা। প্রাণধারণ করিতেছে ; কিন্তু উহাই একটুখানি (বড় বেশি নয়, ) বিশুদ্ধ করিয়া লইয়া বাঙ্গালায় একদিন কবি গানের নূতন সৃষ্টি হইয়াছিল। কাব্যের জিনিস-আমোদ জিনিস, বাঙ্গালী কখনো ফেলিয়া দিতে জানে না। (২) বাঙ্গালার আর একটা বিশেষত্বের কথা বলিং সেটা কাব্যে হাস্তরস। সংস্কৃত সাহিত্যে প্রহসন এবং ভা ভিন্ন অন্ত কাব্যে হাস্যরসের অবতারণা অধিক নাই। বাঙ্গালা ভিন্ন অন্ত কোন দেশের প্রাকৃত সাহিত্যে ( হাড় দেশনিষ্ঠ গাম্ভীর্যের ফলে ) হাস্যরসের মাধুর্য দেখিছে পাই না । মৰ্হটি নাটক শারদীয় যে শ্রেণীর হাস্তরসে। অবতারণা আছে গুজরাট সাহিত্যেও তাহ পাই, দি বাঙ্গালার হাসি-বৈচিত্র বঙ্গের নিজস্ব । বাঙ্গালায় বীরত্বে আদর আছে কিনা পাঠকেরা জানেন, কিন্তু বাঙ্গালী ীি দেখে যে কোন ব্যক্তির হাস্যরস-অনুভূতির ক্ষমতা জা অমনি তাঙ্গাকে কাট-পোট বলিয়া গালি দেয়। কত । কষ্টের ঝড় মাথার উপর দিয়া বহিয়া গিয়াছে, তবু আন হাসিতে ভূলি নাই। তাই কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত যথার্থী লিথিয়াছেন, “এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গভরা।" ধর্গে মহিমা প্রচারের জন্য লিখিত শ্ৰীধৰ্ম্ম মঙ্গলের বারুই পাড়াতেওঁ এ রঙ্গের অভাব নাই। রুচির কথা লইয়া যদি তর্ক ন করা যায়, তাহা হইলে স্বীকার করিতে হইবে, যে ভারত চন্দ্র বর্ণিত, নারীগণের পতিনিন্দায় যে হাস্যরসের প্রাচুর্য, অন্য কোন তৎসাময়িক প্রাদেশিক সাহিত্যে তাহ নাই। আকবরের সময়ে হিন্দি সাচিতো হাসির আমদানি হইয়াছিন্ন বটে ; কিন্তু সে হাসি লালিকায় ( Parody, ) এবং কথা উত্তর চাপানে ( Pun ) বন্ধ ছিল। যে সভায় পৃষ্ঠা ও তানসেন বাদসাহের প্রশস্তি রচনা করিতেন, সে সন্তা রসিকতা যে ভাড়ামিতে দাড়াইবে, তাহার বৈচিত্র কি ? () মুরুচিসম্পন্নেরাও মুগ্ধ ৷ সকল প্রদেশেই ইংরাজী শিক্ষা সময়ে প্রাদেশিকতায় নামের বিশেষত্ব জন্মিয়াছিল। - চক্রবর্তী বলিলে উত্তর-পশ্চিমের লোক বুঝায় না, কি বৈজনাথ পাড়ে (১) মোগল সম্রাট আকবরের गङाद उन्नन लज्जास्त १ग ছিলেন : একথা ইতিহাসে ও ঐতিহে স্বীকৃত। **I বোঙ্গালী হয় না। ৬ষ্ঠ সংখ্যা। সরস, স্বাধীন, গালভরা হাসি, বাঙ্গালা সাহিত্যেই গাই। দাগুরায় এবং ঈশ্বর গুপ্তের হাসিতে, একালের ংসখাদ্য বাড়াইয়া বাঙ্গালী মোট আৰু বীর হইতে পারবে কি না, কংগ্রেস সভায় তাহার চিার হউক। কিন্তু নিঃসন্দেহে বলিতে পারি, যে বাঙ্গালী দি দুধে ভাতে থাকে, তবে তাহার কার্য্যানুরাগ এবং গালভরা হাসি, বজায় থাকিবে, এবং স্বদেশ বিদেশের লোক খুসি হইয়া বলিবে—চোখের জল ফেলিয়া বলিবে— এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গভরা।” (৩) খ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ বস্থ মহাশয় মধুস্তদনের জীবনচরিতের সমালোচনায় একালের প্রকৃতি এবং বিশেষদ্ধের কথা দক্ষতার সহিত লিখিয়াছেন। পাঠকদিগকে স্থায় পড়িতে অনুরোধ করি। সে বিষয়ে অষ্ঠ ছচারিটি স্থা বলিব। বঙ্গসাহিত্যের সেকাল ও একালের সন্ধিস্থলে, দাশরথি রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, যাহা অলঙ্কার শাস্ত্রে ক্টাব্যের বিষয় নহে বলিয়া উক্ত আছে, তাহা লইয়াও কবিতা ধিয়াছিলেন। সংস্কৃতজ্ঞ পাঠকেরাও, দাগুরায়ের ‘চারি ক্টারি’ সম্ভোগ করিতেন, এবং গুপ্ত কবির “এণ্ডাওয়ালা গ্ৰী মাছ” প্রলোভনের সামগ্রী মনে করিতেন। কবি মধুসূদনের সময় হইতে যখন বঙ্গসাহিত্য সম্পূর্ণরূপে ইংরেজি শিক্ষিতদের নেতৃত্বে চালিত হইতে লাগিল, যখন (উংপৃঙ্খল হইলেও ) নববিধ স্বাধীন ভাবের আঘাতে সমাজে একটা বিপ্লবের স্বষ্টি হইল, তখন সংস্কৃতজ্ঞ কবিও বাসবদত্তার সৌন্দর্য্য ভুলিয়া, প্রকৃতির দিকে চাহিয়া "াণীসব করে রব’ লিখিলেন। এখানেও একটা কথা বুলিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিতেছি না ; ভারতের ব্যাপ্ত হইয়াছিল এবং হইতেছে ; কিন্তু কোথায়ও ভাষার প্রকৃতির সহিত মিলাই, কোন কবি, বঙ্গের মধুসূদনের মত ইউরোপীয় ছাচে বাসস্থান কোথায় ছিল জানা যায় না। গোয়ালিয়রে সঙ্গীত শিক্ষা করার পর, মহম্মদ গেীসের সংসর্গ দোষে ইনি পতিত বলিয়৷ গণ্য উহার যথার্থ নাম লুপ্ত না হইলে, নামের প্রকৃতি ইতেও বাসস্থান অনুসন্ধানের সুবিধা হইতে পারিত . কারণ আকবরের গোপালচন্দ্র কাব্যে বঙ্গদেশের বিশেষত্ব । - - --------------- HO ( অমিত্রাক্ষর রচনা করিয়া, কাব্যবিকাশের নব-পন্থা বাহির করেন নাই । ( 8 ) একালের বঙ্গসাহিত্যের চালক ইংরেজী শিক্ষিতেরা ; একথায় অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করিতে পারেন। কিন্তু কথাটা কি সত্য নয় ? ইংরেজী আমলের বিশেষ ব্যবস্থায়, ইংরেজী শিক্ষা ভিন্ন গতি নাই ; নহিলে অন্নসংস্থান হয় না, মানসন্ত্রন বজায় থাকে না। সম্পদ এবং সন্ত্রমের জন্য কে না লালায়িত ? কাজেই যাহাদের কিছুমাত্র সুবিধা আছে, তাহারা সকলেই ইংরেজী বিদ্যালয়ের ছাত্র। যাহদের বুদ্ধির তীক্ষতা আছে, বিদ্যায় অনুরাগ আছে তাহার যখন প্রধানতঃ ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিল, তখন সংস্কৃত টোলের জন্য যাহারা বাকি রহিয়া গেলেন, তাহাম্বের মধ্যে সরস্বতীর বরপুত্ৰ হইবার ক্ষমতা কজনের রছিল ? যাহারা বুদ্ধিবলে শ্রেষ্ঠ, সম্পদে পুষ্ট, এবং পদমৰ্য্যাদায় জ্যেষ্ঠ, তাহারা লকারার্থ নির্ণয়ে বিশেষ পটু না হইলেও, সমাজের নেতা এবং সাহিত্যের চালক হইলেন। স্বাভাবিকতাকে কেহ উণ্টাইয়া দিতে পারে, না। সমাজে যাহাদের পদ মৰ্য্যাদা অধিক ছিল, তাহারা আদর করিতেন বলিয়াই সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতেরা আদৃত হইতেন। রঘুর সভায় কোৎস হইতে আরম্ভ করিয়া, অতি লঘু সভায় কুৎসিৎ পণ্ডিত পর্যন্ত, সকলের পক্ষেই একই ব্যবস্থা। যে অবস্থায় আজিকালি পদমর্য্যাদা বাড়ে, তাহ ইউরোপ-প্রত্যাগতদিগের অধিক । তাহা ছাড়াও একালে যাহারা ইংরাজি শিক্ষার ফলে পদমর্য্যাদা লাভ করেন, টোলের হিসাবে, তাহাদের মধ্যে অনেকেই অনাচার-দুষ্ট। এই উচ্চপদস্থের একালের স্মৃতির ব্যবস্থাদাতাদিগকে বিস্তাবুদ্ধি বা বহুদৰ্শিতার বড় মনে করেন না বলিয়া, আদর পাইবার যথার্থ স্থান , হইতে পণ্ডিতদের আদর চলিয়া গিয়াছে । মুখে যিনি বাহাই বলুন, কার্যতঃ সকলেই ইংরেজিওয়াল দিগকেই নেতা বলিয়া মানিয়া চলেন। রাষ্ট্রসমস্তায় মুরেন্দ্র নাথ প্রমুখ হিতৈষিবর্গের, বিচারালয়ে রাসফুিারী প্রভৃতি মুম্বীগণের ব্যবস্থা উপেক্ষা করিয়া, কাহারে পক্ষে আর নবদ্বীপ ভাটপাড়ায় যাওয়া চলে না। যে কারণেই যাহা হউক, ফলে যাহা দাড়াইয়াছে তাহাই দেখুইতেছি। একালের শিক্ষায় যাহারা কৃতী হইয়াছেন, সমাজের অন্তৰিৰ