পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○〉o প্রচ্ছন্ন হইয় অবস্থিতি করে, মানুষ অপেক্ষা বানরেরই সহিত উহাদের বেশী সাদৃশু, উহার সমস্ত দাক্ষিণাত্যে পরিবাপ্ত —বিন্ধ্যাচলে উহার পিল পিল্‌ করিতেছে বলিলেও হয়।” –Marians Fontane 5f:f “Yafüz5 vİR&” 32 উহাদের সম্বন্ধে এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। অতএব, আর্য্যের যে এই দুই জাতি অপেক্ষ আপনাদিগকে উৎকৃষ্ট জ্ঞান করিবে তাহাতে আশ্চৰ্য্য কি . এই আর্য্য কাহারা ? কোথা হইতে উহারা আসিল ? Burnout তাহার প্রখ্যাত বেদ-সম্বন্ধীয় প্রবন্ধে এইরূপ বলেন :-“আৰ্য্য শব্দ, চিরকালই ভারতবর্ষে, “শ্রেষ্ঠ”—এই অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। জৰ্ম্মান শব্দ Ehre, যাহা পুরাতন জৰ্ম্মান ভাষায় Ere-এইরূপ লিখিত হইত, উহ বোধ হয় এট আর্য্য শব্দেরই রূপান্তর এবং উহা একই অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। আদিম জৰ্ম্মান শব্দ Ermann—জৰ্ম্মান বীরের নাম-যাহাকে রূপান্তর করিয়া রোমকেরা Arminius বলিত, তাহাও বোধ হয় আৰ্য্য শব্দ হইতে ব্যুৎপন্ন। যুরোপের পুরাতন ও আধুনিক আরও অনেক শব্দের মধ্যে এই আর্য্য শব্দের ছায়া লক্ষিত হয় ; পাশ্চাত্য এসিয়ায় যে সকল শ্বেতবর্ণের লোক সেমিটক্‌ নহে তাহদেরই জাতিবাচক সাধারণ নাম—আর্য্য। বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন আকারের এই আর্য্য নাম, ঐ সকল দেশের লোকের আপনাদেরই দেওয়া ; অন্ত

  • দেশবাসীদিগের অপেক্ষ উহার যে শ্রেষ্ঠ ইহাই ঐ শব্দের

দ্বারা সুচিত হয়। প্রাচ্যখণ্ডের পীতজাতিদিগের সহিত দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব আৰ্য্যদিগেরই যে শুধু নিঃসম্পর্কতা তাহা নহে, ইন্দ-যুরোপীয় অন্তজাতিরাও ঐ পীতজাতিদিগের সম্বন্ধে এই কথা বলিতে পারে। মূলে, আমাদের পূৰ্ব্বপুরুষ ও দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব আৰ্য্যদের পুৰ্ব্বপুরুষ একই।” যে জাতি, সগৰ্ব্বে আপনাদিগকে “আৰ্য্য” বলিত, “বিশুদ্ধ” বলিত, “আলোকের শুক্লবৰ্ণ দুহিতার” বংশধর বলিত, তাছাদের কতকগুলি বিশেষ দৈহিক লক্ষণ ছিল ;– তাহাদের ফর্স রং,তাহাদের কেশ ও শ্মশ্র সুহ্ম, তাহাদের গাত্র কোমল রোমে আচ্ছন্ন, তাহাদের নাসিক সরল (স্বশিপ্র), তাহদের দেহঘষ্টি পাতলা। পামিরের উচ্চ ভূমি হইতে বহির্গত হইয় তাহার বিভিন্ন দিকে ছড়াইয় পড়ে। প্রবাসী । তাহাদের সম্বলের মধ্যে ছিল কতকগুলি সাধারণ বিশ্বাস ও ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় কতকগুলি সাধারণ সাংকেতিক সামগ্ৰী। এই স্বল্প পুজি লইয়াই তাহারা চতুর্দিকে সভ্যতা বিস্তার করিতে প্রবৃত্ত হয়। কোনও কালে প্রবৰ্ত্তিত হয় নাই । দক্ষিণ-পূৰ্ব্বাঞ্চলে,—ভারতবর্ষে, এই আর্য্যেরাই ব্রাহ্ম ণিক সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা । উহাদের বিপুল দার্শনিক ও সাহিত্যিক কীৰ্ত্তি ;—যে দর্শন ও সাহিত্যের সৃষ্টি গ্রীশ ছাড়া আর কাহারও সাধ্যায়ত নহে । পূৰ্ব্বাঞ্চলে, ইরানী আর্য্যেরাই পারস্য-রাজ্যের সংস্থাপক। দক্ষিণে, গ্রীশ ও ইটালী দেশের আদিম আর্য্যেরা (Pelasges)' গ্রীক ও ল্যাটিন সভ্যতা প্রবর্তিত করে ; এবং আর্য্যদের শেষ শাখা গুলি, উত্তরে গিয়া—পাশ্চাত্যপণ্ডে গিয়া—সপ্তসিন্ধুর আর্ঘ্য: দের প্রায় দুই তিন সহস্র কিংবা ততোধিক বৎসর পরে, আবার আপনাদের মধ্যে একটা নূতন সভ্যতা গড়ি৷ তোলে । অতএব সপ্তসিন্ধুর দেশেই, আমাদের আর্য্যশাখার প্রবৰ্ত্তিত সভ্যতা সৰ্ব্বপ্রথমে বিকশিত হইয়া উঠে; যে মহতী কীৰ্ত্তির উপর এই সভ্যত প্রতিষ্ঠিত তাহ-বেদ। এই বেদ-বৈদিক ভাষায় লিখিত ধৰ্ম্মস্তোত্র সমূহের সংগ্ৰহ মাত্র। এই বৈদিক ভাষা হইতেই সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি। বেদ শব্দের অর্থ-বিজ্ঞান, ইহাই আৰ্য্যদিগের পবিত্র গ্রন্থ। ঋক্, সাম, যজুঃ, অথৰ্ব্ব—এই চারি বেদ। ঋগবেদই সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন ও সৰ্ব্বাপেক্ষা পূজা আর তিনটি উহা হইতেই বিকাশ লাভ করিয়াছে। আমাদের আর্য্যশাখার উহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন কীৰ্ত্তি। বুলুস্ক, (Burnout) অনুমান করেন, নুনিকল্পে খৃষ্টান্ধের ১৭০০ বৎসর পূৰ্ব্বে বেদ রচিত হয়, কিন্তু কিংবদন্তী উহাকে আরও পুরাতন বলিয়া প্রতিপন্ন করে ; ঋগ বেদের সমস্ত মন্ত্র হইতে ইহা সহজেই সপ্রমাণ হইতে পারে, কেননা ঐ সকল মন্ত্রে ঋগ রচয়িতাদের পূর্বপুরুষের নাম অবিরত কীৰ্ত্তিত হইয়াছে। “এসিয়াটিক রিসার্চ” গ্রন্থের বিবিধ স্থানে, কোলক্র বেদের প্রামাণিকতা ও প্রাচীনত্ব নিঃসন্দিগ্ধচিত্তে প্রতিপাদন করিয়াছেন :–“বেদগ্রন্থের যে সকল বচন এখন পাওয়া ৮ম ভাগ । I ৬ষ্ঠ সংখ্যা । সেরূপ উন্নত সভ্যতা আর কোন জাতি কর্তৃক ം-ബ്--` বোগ্রন্থ প্রামাণিক ; অর্থাৎ সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর না হউক, অন্তত: শত শত বৎসর ধরিয়া—এই সকল গ্রন্থ, এই সকল রচনা, বেদ নামেই হিন্দুগণ কর্তৃক পূজিত হইয়া আসিতেছে। সম্ভবত এই বেদগ্রন্থ দ্বৈপায়ন কর্তৃক সংকলিত হয়, তাই দ্বৈপায়নের নাম ব্যাস অর্থাৎ সংগ্ৰহকৰ্ত্তা।” কোলক্ৰক বৈদিক জ্যোতিষ সম্বন্ধে গভীর আলোচনা করিয়া, এই সিন্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন —“যৎকালে বেদ-ব্যবহৃত পঞ্জিকার নিয়ম সকল স্থিরীকৃত হইয়াছিল, তখন প্রথম অয়নান্ত, ধনিষ্ঠা নক্ষত্রের আরম্ভভাগে ও দ্বিতীয় অয়নান্ত অশ্লেষা নক্ষত্রের আরম্ভভাগে অবস্থিত ছিল এইরূপ গণনা করা হয় ; অতএব খৃষ্টাব্দের ১৪০০ বৎসর পূৰ্ব্বে, দিগ বিভাগের এইরূপ অবস্থান ছিল। ইতঃপূৰ্ব্বে বেদের একটা বচন হইতে আমি দেখাইয়াছিলাম যে, মাস-পৰ্য্যায়ের সহিত ঋতুপর্যায়ের সম্পূর্ণ মিল আছে এবং জ্যোতিষ হইতে উদ্ধত একটা বচন হইতেও দেখা যায়, দিগভিাগের সহিতও উহার মিল আছে।” সাহিত্যিক দৃষ্টতে দেখিলে,-ঋগ বেদের কবিতাগুলি, বাহ্য প্রকৃতি কিংবা আর্য্যদিগের দৈনন্দিন জীবন হইতে গৃহীত। কিন্তু ঐ সকল বৈদিক মন্ত্রের মধ্যে, বাস্তব বিষয়ের পাশাপাশি, যেন একটা রূপক-কল্পনায় জগৎ অধিষ্ঠিত। মন্ত্রগুলি যেখানে গীত হইত সেই সকল স্থানের ভৌগোলিক বর্ণনা, নৈসর্গিক ঘটনা, শক্ৰ লোকের মধ্য দিয়া আর্য্যদের যাত্রা, জন্ম মৃত্যু বিবাহ ও গোর দিবার কথা, ধৰ্ম্মানুষ্ঠানের প্রত্যেক খুঁটিনাটি—এই সমস্ত বিষয় ঋগ বেদের মধ্যে আছে। বেদ হইতে আমরা আরও জানিতে পাই,-আর্যেরা তখন পিতৃশাসন তন্ত্রের নিয়মানুসারে জীবন যাত্রা নিৰ্ব্বাহ করিত,—তাহারা পৃথক ভাবে একএকটা পরিবারের মধ্যে স্বাস করিত , তাহারা কোন নগর নির্মাণ করিত না ; যখন বিপদ-আপদ উপস্থিত হইত তথন তাহারা সকলে একত্র সম্মিলিত হইয়া সাধারণ শত্রুর সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইত। পিতাই তাহদের গৃহ-কৰ্ত্তা, ও মাতাই তাহদের গৃহ-কত্রী ছিলেন। তাহদের মধ্যে বহুবিবাহ ছিল না। বিবাহের অনুষ্ঠান-পদ্ধতিতে দেখিতে পাওয়া যায়, সে যুগেও বিবাহের অনুষ্ঠানের মধ্যে একটা গম্ভীর আধ্যাত্মিক ভাব বৈদিক ধৰ্ম্ম । গিয়াছে, উহার প্রমাণিকতা আমি সমর্থন করি এই ੇ । ऋडिन अथ बाळी हिनन ८भांdन्ब्र કુનઃ 9>:) ঐ যুগের আর্য-ব্যবস্থাবলী আমাদের মধ্যযুগের সামন্ততন্ত্রের অনুরূপ ছিল। পুরোহিত-সম্প্রদায় মোটেই ছিল না ; তখন পুরোহিতের আধিপত্য ও পিতার প্রভুত্ৰ একত্র মিশ্রিত ছিল,—কেননা, তখন ধৰ্ম্মানুষ্ঠানের মধ্যে কোন গুহভাব ছিল না, সমস্ত অনুষ্ঠান প্রকাষ্ঠভাবে হইত। এবং তখন মন্ত্র সমূহের সহিত ধৰ্ম্মমতও পরিবারের মধ্যে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হইত ; পিতাই নিজ সন্তানের উপদেষ্ট ও দীক্ষাগুরু ছিলেন। - তখন ধর্মের অনুষ্ঠান-পদ্ধতিও খুব সাদাসিধা ছিল : কোন দেবালয় ছিল না, কোন অনাবৃত স্থানে, শুধু একএকটা ঘাসের চাপড়ায় যজ্ঞবেদী নিৰ্ম্মিত হইত, দুই কাষ্ঠ খণ্ডের সংঘর্ষণে হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হইত ; উছাতে ঘৃতাহুতি প্রদত্ত হইত ; পরে যখন আগুন জলিয়া উঠিত, পুরোহিত দেবতাদের উদ্দেশে নৈবেম্বস্বরূপ মোদক-আদি মিষ্টান্ন ও সোমলতা অর্পণ করিত এবং পুরোহিতের সহকারীরা বেদমন্ত্র গান করিত। এই সাদাসিধা অনুষ্ঠান, দিনের মধ্যে তিনবার করিয়া হইত উষাকালে, মধ্যাহ্নকালে ও স্বৰ্য্যাস্তকালে। অনেক দিন পর্য্যস্ত, যুরোপীয় পণ্ডিতের বেদমন্ত্রের মধ্যে প্রাকৃতিক ধৰ্ম্মমত ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পান নাই ;–অর্থাৎ, তাহারা বলিতেন,— প্রাকৃতিক শক্তিদিগকে আহবান করাই ঐ সকল মন্ত্রের একমাত্র কাজ ; এক কথায়, উহা বহুদেব-বাদাত্মক ধৰ্ম্ম ; এই ধৰ্ম্মানুসারে আগুনের নামে অগ্নিদেবকে, আকাশের নামে ইন্দ্রদেবকে, স্বর্য্যের নামে স্থৰ্য্যদেবকে, জলের নামে বরুণ দেবকে উপাসনা করা হইত-সমস্ত মহাভূত ও সমস্ত আস্তরীক্ষিক ব্যাপারই—বৈদিক ধৰ্ম্মের, অন্তৰ্ভত দেব-মণ্ডলী। বৈদিক ধর্মের আদি-যুগে, খুব সম্ভব, আর্যোরা বহুদেব-বাদী ছিল ; যাই হোক বহুদেববাদ ও মহাভূতের উপাসনা—এই দুয়ের মধ্যে অনেকটা বাবধান আছে। স্বকীয় দেবপূজার প্রকৃত মূল্য সম্বন্ধে আর্য্যদের একটা সুস্পষ্ট ধারণা ছিল ; তাহাদের নিকট, বেদমন্ত্র প্রার্থনা বই আর কিছুই নহে। Burnoufবলেন – "মনে হয়, তাহদের বিশ্বাস ছিল তাছাদের যে সুকল প্রার্থনা ৷ মন্ত্রাকারে হৃদয় হইতে নিঃস্থত হয়, উহা যে শুধু পরিবর্তন