পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|-- মূল বাও ষ্টর উপর প্রভাব প্রকটত করে অল না, পূৰ্ব্বপুরুষেরা দেবতাদের গড়িয়া তুলিয়াছেন।” ○〉ミ পরন্তু উহা অধিকতর সুব্যবস্থিত ও অধিকতর স্থায়ী প্রাকৃতিক ব্যাপার সমূহেরও অনুষঙ্গী ও সেই সকল ব্যাপারকে উত্তেজিত করিয়া থাকে।” খৃষ্টধৰ্ম্মের ( Rogation ) পার্থিব মুখসম্পদের জন্য প্রার্থনা, ঐ একই বিশ্বাস হইতে কি উৎপন্ন নহে ? বামদেবের রচিত মঙ্গে আমরা দেখিতে পাই :-"কৰ্ম্মকার যেমন লৌহকে গড়িয়া তোলে, সেইরূপ আমাদের অতএব বৈদিক মন্ত্রকারেরা স্পষ্টই বলিতেছেন যে তাহারা নিজেই দেবতাদের স্রষ্টা, মুতরাং মন্ত্র ব্যতীত দেবতাদের কোন অস্তিত্ব নাই। ইহা প্রকারান্তরে স্বীকার করা হয় যে, তাহারা দেবতাদিগকে বিশ্বাস করেন না। অতএব, বহুদেববাদের সহিত ইহার অনেক পার্থক্য ; এবং শব্দবাদ কিংবা বাণীবাদ ( Logos ) হইতে ইহার এক-পাদ মাত্র বাবধান। ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম এই ব্যবধান উল্লঙ্ঘন করিয়াছে। কিন্তু “অমুর”-বাদ সম্বন্ধেই অর্থাৎ প্রাণের মূলতত্ত্ব সম্বন্ধেই বৈদিক ধৰ্ম্ম, কুট দার্শনিকতার জালে জড়িত হইয়। পড়িয়াছে।-সংস্কৃত ‘অমু’-শব্দের অর্থ প্রাণ এবং ‘র’-অক্ষর যোগে “প্রাণের উৎপাদক” এইরূপ বুঝায়-ইহাই অসুরশব্দের মূল-অর্থ। আর্য্যেরা লক্ষ্য করিয়াছিলেন,--প্রাণ হইতেই প্রাণের উৎপত্তি। তাহার বলিতেন, প্রাণই প্রাণকে পোষণ করে। প্রাণীরা অন্ত প্রাণীকে আত্মসাৎ করে ; সেই সব প্রাণী আবার, বৃক্ষ লতাদি খাইয়া জীবনধারণ করে ; বৃক্ষ লতারা আবার উদ্ভিজ্জ ও জীবশরীরের পরিত্যক্ত অংশের দ্বারা পরিপুষ্ট ও পরিবর্দ্ধিত হয়। ইহাকেই বলে “চক্র,”—অর্থাৎ প্রাণের চক্রগতি । প্রকৃতি রাজ্যে, প্রাণ ও গতিশক্তি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। ফলত, যাহার গতি-নাশ হয়—তাহারই প্রাণনাশ হইয়া থাকে। যুক্তির সঙ্গতি রক্ষা করিবার জন্যই, আর্য্যেরা ইহা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন যে, অম্বরেরা গতিমান, তাহাদের শরীর দীপ্তিমান—সুতরাং তাহারা সৰ্ব্বব্যাপী ও অমর। স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, এই মতবাদটি, বহুদেব বাদাত্মক ; কিন্তু আৰ্য্যগণের যে স্বাভাবিক প্রবণতা পরম মূলতত্ত্বরূপ দার্শনিক একতার দিকে,—সেই প্রবণতাই প্রবাসী ।


উহাদিগকে একেশ্বরবাদে শীঘ্ৰ উপনীত করিল। ধারণা হইতেই উহার একেশ্বরবাদে আসিয়া পৌছিল। —“সমস্ত জগতের সত্তা তোমা হইতেই ; কি হোম-পাত্রে, কি মানব-হৃদয়ে, কি জলে, কি অগ্নিকুণ্ডে, সমস্ত প্রাণের মধ্যে তোমার মহিমার মধুর লহরী প্রবাহিত হইতেছে।" —এইরূপ বামদেব বলিয়াছেন। অতএব অমূৰ্ত্তভাবাপন্ন (idealised ) অগ্নিই এই বহুদেববাদের পত্তন ভূমি। ভরদ্বাজের বেদমন্ত্র শ্রবণ কর ; “সমস্ত জীবের মধ্যেই তাহার কত্ত্ব-শক্তি বিদ্যমান ; সমস্ত দেবতারা মিলিয়া এই শক্তিমান পুরুষকে বেষ্টন করিয়া আছেন। যখন ভাবি, এই জ্যোতিস্ময় পুরুষ আমার অন্তরে রহিয়াছেন, তখন আমার কর্ণ ব্যথিত হয়, আমার চক্ষু কঁাপিতে থাকে, আমার মন সন্দেছে বিক্ষিপ্ত হয়। আমি কি বলিব ? আমি কি চিন্তা করিব।” তবেই দেখ, ভৌতিক অগ্নি অমূর্তভাবাপন্ন হইয়া, তাম্বিন্ধ স্বঙ্গ ধারণার খুবই কাছাকাছি আসিয়া পৌঁছিয়াছে। কিং, কাল পরে এই অগ্নির আর বিশেষ অস্তিত্ব রহিল না ; পুংলিঙ্গ বাচক পরম পুরুষ ব্ৰহ্মা ই হার স্থান অধিকার করিলেন। দীর্ঘতম ঋষির (Dirghatamas) মহামন্ত্র ঈশ্বরের একত্ব প্রতিপাদন করিতেছেঃ “যাহার শরীর নাই তাহাকে অগ্নি শরীর বিধান করিতেছেন—ইহা কি জন্মকালে কেহ দেখিয়াছে। পৃথিবীর মন, রক্ত, আত্মা কোথায় ছিল ? এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার জন্য এই ঋষির কাছে কে আসিয়াছিল ? আমি । দুৰ্ব্বল ও অজ্ঞ—আমি এই সকল রহস্ত উদ্‌ভেদ করিতে চাহিতেছি।...আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, পৃথিবীর আরম্ভ কোথায়, পৃথিবীর মধ্য কোথায় ? আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা কুরি, ফলবান অশ্বের মূলবীজট কি ? আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, বাক্যের আদিম আশ্রয় কে ? এই পবিত্র ঘেরটিই পৃথিবীর আরম্ভ এবং এই যজ্ঞ হোমই জগতের কেন্দ্র। এই সোমই ফলপ্রস্থ অশ্বের বীজ। এই পুরোন্তিই বাক্যের আদিম আশ্রয়। আমি জানি না, কাহার সহিত এই জগতের সাদৃশু আছে। আমি হতবুদ্ধি হইয়াছি, এবং আমি চিন্তাশূঙ্খলে জড়াইয়া পড়িয়াছি.মৃত্যুর মধ্যেই অমৃত অবস্থিত ; এই দুই নিত্য বস্তু সৰ্ব্বত্রই গমনাগমন করে ; কেবল লোকে একটি না জানিয়া অল্পটিকে জানে: যে ব্যক্তি পরমপুরুষকে জানে না, সে এ মন্ত্রের কিছুই বুঝিন্তে ৮ম ভাগ । I ৬ষ্ঠ সংখ্যা । ] o উত্থাপন করিয়া তাহার মীমাংসায় পারবে না ; যে র্তাহাকে জানে, সে মৃত্যু ও অমৃতের সন্মিলনও অবগত আছে..“যে দেবতা সমস্ত আকাশে পরিভ্রমণ করেন, লোকে তাহাকে মিত্র বলে, বরুণ বলে, অগ্নি বলে ; সবিপ্রেরা এই অদ্বিতীয় পুরুষকে,—অগ্নি, যম, মান্তরিখন—এইরূপ বহুনামে ব্যক্ত করেন।” অবশেষে প্রজাপতি জগতের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন প্রবৃত্ত হষ্টলেন : তখন কিছুই ছিল না, সংও ছিল না, অসৎও ছিল না। ভূও ছিল না, ভূবও ছিল না, স্বও ছিল না। এই আচ্ছাদনটি কোথায় ছিল ?—কোন জলগর্ভের মধ্যে নিহিত ছিল ? এই আকাশের গভীরতম প্রদেশ-সকল কোথায় ছিল ? তখন মৃত্যুও ছিল না অমৃতও ছিল না। দিবা ও রাত্রির স্বচনা করে এমন কিছুই ছিল না। একমাত্র তিনিই আপনার মধ্যে লীন থাকিয়া, বায়ুহান নিঃশ্বাস নিঃশ্বসিত করিতেছিলেন। তখন একমাত্র তিনিই ছিলেন। সেই আদিকালে অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল ; জলের কোন বেগ ছিল না ; সমস্তই একাকার ছিল। এই বিশৃঙ্খল একাকারের মধ্যে পরমপুরুষ অধিষ্ঠিত ছিলেন, এবং তাহার করুণাতেই এই মহাবিশ্বের জন্ম হইল। আদিতে র্তাহার প্রেম আপনার মধ্যেই ছিল, পরে তাহার জ্ঞান হষ্টতেই আদি বীজ ছুটিয়া বাহির হইল। ঋষিরা তপস্তার বলে সৎ-এর সহিত অসৎএর যোগ স্থাপনে সমর্থ হইয়াছেন.এ সকল বিষয়ের জ্ঞাতাই বা কে ? বক্তাই বা কে ? এই সকল সত্তা কোথা হইতে আসিল ? এই উৎপত্তি-ব্যাপারটা কি ? দেবতারাও র্তাহ কর্তৃক উৎপাদিত হইয়াছেন। কিন্তু তাহার সত্তা কিরূপে হইল ? যিনি এই জগতের আদিস্রষ্ট, তিনিই জগৎকে ধারণ করিয়া রহিয়াছেন। তিনি ভিন্ন ইহা আর কে করিতে পারে ? জালোক হইতে, যাহার চক্ষু জগতের উপর নিপতিত রহিয়াছে তিনিই ইহা জানেন। তিনি বাতীত এ বিজ্ঞান আর কাহার হইতে পারে ?” একজন ঋষি, আর এক মন্ত্রে একমাত্র অদ্বিতীয় ঈশ্বরের অনুসন্ধান করিতেছেন দেখিতে পাই : “যিনি আত্মদা, বলদ, র্যাহার শাসনে বিশ্বসংসার চলিতেছে, দেবতারা র্যাহার শাসন অবনত মস্তকে বহন করিতেছেন, র্যাহার ছায়া অমৃত, র্যাহার ছায়া মৃত্যু, হবি; wa বৈদিক ধৰ্ম্ম । ○>○ দ্বারা আর কোন দেবতার অর্চনা করি ? এই হিমবস্তু পৰ্ব্বত সকল র্যাহার মহিমা, সকল নদীর সহিত সমুদ্র র্যাহার মহিমা, এই দিক সকল র্যাহার বাহু, হবিঃ দ্বারা আর কোন দেবতার অর্চনা করি ? যাহার দ্বারা ছালোক প্রদীপ্ত, পৃথিবী স্বধৃঢ়, যাহার দ্বারা স্বৰ্গলোক, র্যাহার দ্বারা স্বরলোক প্রতিষ্ঠিত, যিনি অন্তরীক্ষে মেঘের নিৰ্ম্মাতা, হবিঃ দ্বারা আর কোন দেবতার অর্চনা করি ? যাহার পালনশক্তির দ্বারা স্বপ্রতিষ্ঠিত ও দীপ্যমান এই ছালোক ও ভূলোক র্যাহাকে দিব্য চক্ষে নিরীক্ষণ করিতেছে, যাহাতে স্বৰ্য্য উদিত হইয়া প্রকাশ পাইতেছে, হবিঃ দ্বারা আর কোন দেবতার অর্চনা করি ? যিনি পৃথিবীর জনরিত, তিনি আমাদিগকে বিনাশ না করুন। যে সত্যধৰ্ম্ম ছালোক স্বাক্ট করিয়াছেন, যিনি আনন্দদায়িনী বৃহৎ জলরাশি স্বষ্টি করিয়াছেন, হবিঃ দ্বারা আর কোন দেবতার অর্চনা করি ?” পরব্রহ্মের একত্ব প্রতিপালন করিয়াই বৈদিক যুগের শেষ হইল ; তাছার পরেই ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্মের আরম্ভ। বেদের ভাৰ্য যে উপনিষদ-সেই সকল উপনিষদে পরব্রহ্মের একত্ব প্রতিপাদিত ও পরিপুষ্ট হইল। তাহার পর ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের আর কিছু করিবার রহিল না, শুধু তাহ হইতে একটা সিদ্ধান্ত বাহির করিয়া সেই সিদ্ধান্তের উপরেই ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম বিশ্বব্রহ্মবাদের বীজমন্ত্রস্থাপন করিল। আমি কেবল উপনিষদ হইতে-যজুৰ্ব্বেদের উপনিষদ হইতে একটা অংশ উদ্ধৃত করিব : “এই জগৎ এবং এই জগতে যাহা কিছু অবস্থিতি করিতেছে, সমস্তই বিধাতাপুরুষের শক্তি দ্বারা পূৰ্ণ ; অতএব, পার্থিব বিষয় হইতে বিমুক্ত হইয়া, অন্তরের মধ্যে র্তাহাকে অৰ্চনা কর।” মানুষ স্বকীয় কৰ্ম্ম সমাধা করিবার জন্ত শত বৎসর জীবিত, থাকিতে ইচ্ছা করে ; হে মনুষ্য ! এই সকল কৰ্ম্ম ছাড়া তোমার মধ্যে এমন কিছুই নাই যাহা কলুষিত না হয়। যাহারা পার্থিব মুখে আসক্ত হইয়া আত্মহত্যা করে, তাহারা অন্ধতমসাচ্ছন্ন অস্বৰ্য্যলোকে গমন করে। - এক অদ্বিতীয় পরম পুরুষ চলেন না, অথচ তিনি মন হইতে বেগবান, তাহাকে দেবতারাও ধরিতে পারে না। তিনি বাহাইজিয়ের অগ্রাহ, তিনি অন্তরিক্রিয়দিগকেও অনন্তগুণে অতিক্রম করেন। তিনি সমস্ত আকাশে অচলভাবে অবস্থিত হইয়া