পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○o প্রবাসী । ৮ম ভাগ। দয়াঠাকরুণ জহরকে ডাকিয়া বলিলেন, “হ্যা রে জহর, “নিতান্তই ৷” আমি তোর পর, আর তুই আমার গলগ্ৰহ!" “বেশ !” জহর নিরুত্তর হইয়া শুনিল মাত্র । কিন্তু আপন সঙ্কল্প ত্যাগ করিল না। শৈশবে মাতৃস্নেহ লইয়া/উভয় শিশুর মধ্যে যে ঈর্ষা জন্মিয়াছিল, অপেক্ষাকৃত উপেক্ষিত বঞ্চিত জহরের সেই ব্যথা বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়াই চলিয়াছিল, এবং ক্রমশ জহরকে অসহিষ্ণু করিয়া তুলিয়াছিল। তাই সে আজ স্বাধীন হইবার জন্ত, ষষ্ঠীর মার অনুগ্রহ এড়াইবার জন্য অকস্মাৎ বিশেষ ব্যগ্র হইয়া উঠিয়াছিল। ষষ্ঠী থাকিতে না পারিয়া রাত্রে আবার জহরকে বলিল, "জহর ভালো করে ভেবে চিন্তে কাজ কোরো। আজ যে-তোমাকে লোকে যতটা শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে, সেইতোমাকে কাল পুলিসের পোষাক পরা দেখে ততটা শ্রদ্ধা, ততটা বিশ্বাস করতে সঙ্কুচিত হবে, এমন ঘৃণ্য অধম যে জীবিকা তার চেয়েও কি মার মেহদান হেয় ?” "হেয় শ্রেয় আমি জানি না, অত কথার মারপেচও বুঝি না। দেশের হাজারো লোক পুলিসের কাজ করচে, আমিও করব। আর, পুলিসে যে কাজ করে সেই কি বদমাইস, ভালো লোক কি পুলিসে নেই ?”

  • থাকতে পারে। কিন্তু আমি জানি কত লোক দেবতার মত, পুলিসের কাজে গিয়ে পিশাচ হয়েছে। অনেকেই মন্দ বলেই ত’ দুর্ণাম। আমাদের অন্ন যদি এই বারো বৎসর হজম হয়ে থাকে, তবে আরো কিছুদিন হজম হবে, তুমি মেডিকেল কলেজে বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যাও।”

“ও বাবা, পা—আঁচ বচ্ছর ?” “তবে বি, এ, পাশ করে বি, এল, দিয়ে ।” "সেও ত’ চার বচ্ছর।” “তবে পি, এল, পড় ।” “তবু দুবচ্ছর।” “তবে মোক্তারী দেও।” “এফ, এ, পাশ কোরে মোক্তার ?” “ক্ষতি কি। পুলিসের চেয়ে ভালো।” “ছি ! কক্‌খনো না।” “তবে দারোগ হওয়াটা নিতান্তই বাঞ্ছনীয় ?” দুই ভাইয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ বাড়িয়া গেল । এবারে মার বুঝাইবার পালা। দয়ঠাকুরাণী জহরকে বলিলেন, “বাবা, চাকরীই যদি তোর নিতান্তই করতে হয়, অন্ত চাকরী কর না ; আরো ত’ ঢের আপিস আছে।" “অন্ত চাকরীতে মা পয়সা নাই, পুলিসের চাকরীষ্ট্রে দুপয়সা তবু আছে।” “ছি বাবা, একি তোর কথা ? একি আমার ছেলের উপযুক্ত কথা ! মাইনের অতিরিক্ত যে উপরি পাওনা সে ত চুরি ?” “না মা চুরি না করেও পয়সা রোজকার করা যায় অনেক জমিদার বড় লোকে ইচ্ছে কোরে মাঝে মাঝে উপহার দেয়।” - “সে উপহার নয়, ঘুষ।” - "ষ্ট তোমায় এই রকমই বুঝিয়েছে। আমার বন্ধ ; তুমি আর বুঝবে না। যাই হোক, আমি আর ষষ্ঠীর অা । হয়ে থাকচি নে। ষষ্ঠীর অনুগ্রহ পেয়ে জীবন ধারণ করা আমার অসহ হয়ে উঠেছে।” “ষষ্ঠীর অনুগ্রহ না মনে করে তোর মার মেহদান মনে করলেও ত’ পারিস।” “সে ত’ কল্পনা, সত্য যে অন্তরূপ।” দয়াঠাকুরাণী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া শুধু বলিলেন, "তা কি তা ভগবান জানেন, একদিন তুইও জানবি। জহা, তুই আমার বড় দুঃখের ছেলে, ঈশ্বর তোকে শুভমতি নি। র্তাহার মনে পড়িল এই জহরের জন্ত তিনি কতখানি ত্যাগ কতখানি নিন্দা, কতখানি নিৰ্য্যাতন সহ করিয়াছেন, ীে কথা তিনি ষষ্ঠী বা জহর কাহাকেও জানিতে দেন 蠶 আজ সেই দুঃখপালিত জহরকে বিদ্রোহী দেখিয়া তাহার প্রাণে যে বেদন জাগিয়া উঠিল তাহ অন্তর্যামী ভিন্ন আর কেহ বুঝিতে পারিল না। . 8 জহর চারি বৎসর দরোগ হইয়া ঘুরিতে ঘুরিতে ধন f নবাবগঞ্জে আসিল তখন ষষ্ঠী এম, এ, পাশ করিয়া নবাবগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষক । জহর সুখচর ছাড়িয়া ষষ্ঠী বা তাহার মাতার কোনো বােনই রাখে না। এতদিন পরে ধীকে দেখিয়া বিশেষ সি হইল না। জহর এখন পুরাদপ্তর পুলিস, হৃদয় নামক পাপ প্রশ্ৰয় না পাইয়া কাদিয়া কাদি ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। নবাবগঞ্জ স্বদেশীভাবের প্রধান আডড, জেলার পুলিস সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট জহরকে ডেমি অফিসিয়াল চিঠি লিখিলেন, . ইলিয়ার, জহর প্রত্যুত্তরে লিখিল,যে হুকুম খোদাবন্দ! জহর গোপনে গোপনে বন্দেমাতরম্ প্রভৃতি কাগজের পাঠকের নাম সংগ্ৰহ করিতে লাগিল ; কে কে সাধ্যপক্ষে স্বদেশীব্রত পালন করিতেছে তাহাদের সন্ধান লইল ; এবং বিশেষভাবে ীিচরণ কি করিতেছে তাহ লক্ষ্য করিতে লাগিল । একদিন এক স্বদেশী-দ্রব্য-বিক্রেতা আসিয়া ষষ্ঠীচরণকে বলিল, “মাষ্টার বাবু, শুনেছি দারোগাবাবুর সঙ্গে আপনার আলাপ আছে। আমি বড় বিপদে পড়েছি, আমায় যদি রক্ষা করেন ।” ষষ্ঠীচরণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন, কি হয়েছে ?” দোকানদার বলিল, “দারোগাবাবু আমাকে ডেকে নিয়ে শাসিয়ে বলেছেন, তাকে দুশো টাকা না দিলে তিনি আমার দোকান আর বাড়ী লুট করাবেন।” শুনিয়া ষষ্ঠীচরণের চক্ষু লাল হইয়া উঠিল। ষষ্ঠ জহরের সঙ্গে দেখা করিয়া তীব্র ভৎসনার স্বরে বলিল, “জহর, তুমি t অধঃপাতে গেছ জানি, কিন্তু একেবারে জাহান্নমে গেছ জানতাম না। এ সব কি ব্যাপার ? দুৰ্ব্বল নির্দোষীকে পীড়ন করায় তোমার কি পৌরুষ ?” এ ভৎসনায় জহরও ক্রুদ্ধ হইল, বলিল, “যাও যাও, নিজের চরকায় তেল দেও গে যাও। আমি ত’ আর তোমার ইস্কুলের ছাত্র নই যে চোখ রাঙানি দেখে ডরাব।” ষষ্ঠীচরণ উদ্যত ক্রোধ কিঞ্চিৎ সংযত করিয়া বলিল, "ধষ্ঠীচরণ, নবাবগঞ্জে থাকতে তুমি কোনো জুলুম করতে *ांद्रtद नl ।” জহর একটু হাসিয়া বলিল, “সে দেখা যাবে।" দুই ভাইয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ আরো বাড়িয়া গেল। সেইদিন হইতে জহর সপ্তাহে সপ্তাহে ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিস সুপারিন্টেণ্ডেটের কাছে ষষ্ঠীচরণের নামে নানাবিধ রিপোর্ট করিতে লাগিল। ষষ্ঠ স্কুলের ছাত্রদের লইয়া মা ।


১৪:২১, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)১৪:২১, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)----------

לפאא বাজারে লোককে বিলাতীদ্রব্য কিনিতে বাধা দেয়, ক্রীত বস্তু কাড়িয়া জালাইয়া লোকসান করে, বিলাতী পণ্যব্যবসায়ীদিগকে মারপিট ও ঘর জালাইয়া দিবার ভয় দেখায়, এবং সৰ্ব্বোপরি ষষ্ঠী কালাইল সাকুলার অমান্ত করিয়া ছাত্রদিগকে রাজদ্রোহে তালিম করিতেছে। উপর হইতে গোপন হুকুম আসিল যেমন করিয়া পার ষষ্ঠীচরণকে জব্দ কর । জহর চিঠি পড়িয়া মুচকি হাসিয়া গোফে চাড়া দিল। সেই দিন বাজারের মাতব্বর গোলদার সলিম-উল্লা দারোগ সাহেবের আহবানে থানায় গিয়া ঘণ্টা দুই গভীর পরামর্শের পর বড় গম্ভীরভাবে চলিয়া গেল। সেই দিন রাত্রি প্রায় ছটার সময় সলিম-উল্লার বিলাতীপণ্যের দোকানে আগুন লাগিল। দেখিতে দেখিতে আগুন প্রচণ্ড হইয়া উঠিল। বাজারে মহা চীৎকার, ব্যস্ততা ও সোরগোল লাগিয়া গেল, ষষ্ঠীচরণ এই গোলমালে ঘুম হইতে উঠিয়া দিগ্‌দ্রাহকর বহ্নিশিখা দেখিলেন এবং অমনি তুর্য্যধ্বনি করিয়া স্কুলের ছাত্রগঠিত আশাবাহিনীকে আহ্বান করিলেন। স্কুলের প্রথম তিন ক্লাশের ছাত্ৰগণ চকিত মধ্যে ষষ্ঠীচরণের গৃহের সম্মুখে সারি দিয়া দাড়াইল এবং ষষ্ঠীর পশ্চাতে পশ্চাতে বন্দে মাতরম ধ্বনিতে নৈশ গগন ধ্বনিত করিয়া বহিনিৰ্ব্বাণ করিতে ছুটিল। ষষ্ঠীচরণের নেতৃত্বে আশাবাহিনী হাটে পৌছিতে না পৌছিতে জহর আলির আদেশে কনেষ্টবলগণ তাহাদিগকে ঘেরাও করিয়া গ্রেপ্তার করিতে লাগিল। এই অকস্মাৎ বাধা পাইয়া ছাত্রবৃন্দ ক্ষেপিয়া গেল, পুলিশের সহিত “বন্দে মাতরম্ হাকিয়া মারামারি যুড়িয়া দিল। ষষ্ঠ ব্যাপার বুঝিয়া বালকদের থামাইবার চেষ্টা করিতে লাগিল, কিন্তু তাহার কথা শুনিবার পূৰ্ব্বেই উভয় পক্ষেই রক্তপাত হইয় গেছে, এবং সকলে পুলিস ও ক্রুদ্ধ দোকানীদের দ্বারা ধৃত হইয়াছে। বন্দে মাতরম্ ধ্বনি করিতে করিতে গভীর রাত্রে বিলাতী পণ্যব্যবসায়ীর দোকান ঘর জালানো, দোকান লুঠ, মারপিট ইত্যাদি বহুতর অপরাধের নালিশ সহ ষষ্ঠীচরণ ও ছাত্রবৃন্দ জেলায় চালান হইল। ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট বিচার, আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করা হইল। -- দয়া ঠাকুরাণী পুত্রের বিপদের কথা শুনিলেন, তিনি