পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

LH8 দুর্ভিক্ষের বছরে আমার রাস্তার ধারের ঘরের টেবিলে আমার টাকার থলিট রাথিয়া আমি পাঁচ মিনিটের জন্ত অন্ত ঘরে গিয়াছিলাম। ফিরিয়া আসিয়া দেখি থলিটা চুরি গিয়াছে। থলিতে আমার স্কলারশিপের জমানে পচাশি টাকা ছিল ; মনে সংকল্প করিয়াছিলাম আরো কিছু টাকা জমিলে তোমার পা ধোবার জলের জন্য একটি রূপার ঘটি তৈরি করাইয়া দিব। টাকা চুরি গেলে পর যখন চোরের প্রতি ব্যর্থ রাগে জ্বলিয়া মরিতেছিলাম তখন ঈশ্বর আমার মনে হঠাৎ একটা স্ববুদ্ধি দিলেন ; আমি মনে মনে কহিলাম, যে ব্যক্তি আমার টাকা লইয়াছে আজ দুর্ভিক্ষের দিনে তাহাকেই আমি সে টাকা দান করিলাম। যেমনি বলা অমনি আমার মনের নিষ্ফল ক্ষোভ সমস্ত শাস্ত হইয়া গেল। আজ আমার মনকে আমি তেমনি করিয়া বলাইয়াছি যে, আমি ইচ্ছা করিয়াই জেলে যাইতেছি। আমার মনে কোনো কষ্ট নাই, কাহারো উপরে রাগ নাই। জেলে আমি আতিথ্য লইতে চলিলাম। সেখানে আহার বিহারের কষ্ট আছে—কিন্তু এবারে ভ্রমণের সময় নানা ঘরে আতিথ্য লইয়াছি ; সে সকল জায়গাতে ত নিজের অভ্যাস ও আবশুকমত আরাম পাই নাই। ইচ্ছা করিয়া যাহা গ্রহণ করি সে কষ্ট ত কষ্টই নয় ; জেলের আশ্রয় আজ আমি ইচ্ছা করিয়াই গ্রহণ করিব ; যতদিন আমি জেলে থাকিব একদিনও কেহ আমাকে জোর করিয়া সেখানে রাখিবে না ইহা তুমি নিশ্চয় জানিও। পৃথিবীতে যখন আমরা ঘরে বসিয়া অনায়াসেই আহার বিহার করিতেছিলাম, বাহিরের আকাশ এবং আলোকে অবাধ সঞ্চরণের অধিকার যে কত বড় প্রকাও অধিকার তাহা অভ্যাসবশত: অনুভবমাত্র করিতে পারিতেছিলাম না সেই মুহূর্তেই পৃথিবীর বহুতর মানুষই দোষে এবং বিনা দোষে ঈশ্বরদত্ত বিশ্বের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া যে বন্ধন এবং অপমান ভোগ করিতেছিল আজ পর্য্যন্ত তাহাদের কথা ভাবি নাই, তাহদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধই রাখি নাই-এবার আমি তাছাদের সমান দাগ হইয়া বাহির হইতে চাই । পৃথিবীর অধিকাংশ কৃত্রিম ভাল-মানুষ যাহারা ভদ্রলোক সাজিয়া বসিয়া আছে তাহদের দলে ভিড়িয়া আমি সম্মান বঁাচাইয়া চলিতে চাই না। প্রবাসী । --১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)--------১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~~------ মা, এবার পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় হইয়া আমার অনেক শিক্ষা হইয়াছে। ঈশ্বর জানেন পৃথিবীতে যাহারা বিচারের ভার লইয়াছে তাহারাই অধিকাংশ কৃপাপাত্র। যাহার দও পায় না দণ্ড দেয়, তাহাদেরই পাপের শাস্তি জেলের কয়েদিরা ভোগ করিতেছে ; অপরাধ গড়িয়া তুলিতেছে অনেকে মিলিয়া, প্রায়শ্চিত্ত করিতেছে ইহারাই। যাহারা জেলের বাহিরে আবামে ১ মানে আছে তাহাম্বের পাপের ক্ষয় কবে কী - ঘ - - - রয়া হইবে তাহা জানি না। আমি সেই মারাম ও সম্মানকে ধিক্কার দিয়া মামুষের কলঙ্কের দাগ বুকে চ হৃত কার। বাহর হইব, মা ভূমি আমাকে আশীৰ্ব্বাদ কর, তুমি চোথের জল ফেলিও না। ভৃগু-পদাঘাতের চিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণ চিরদিন বক্ষে ধারণ করিাছেন ; জগতে ঔদ্ধত্য যেখানে যত অন্যায় আঘাত করিতেছে ভগবানের বুকের সেই চিহ্নকেই গাঢ়তর করিতেছে। সেই চিহ্ন যদি তার অলঙ্কার হয় তবে আমার ভাবনা কি, তোমারই বা দুঃখ কিসের ?”— এই চিঠি পাইয়া আনন্দময়ী মহিমকে গোরার কাছে পাঠাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। আছে, সাহেব কোনোমতেই ছুটি দিবে না। বলিয়া গোরার অবিবেচনা ও ঔদ্ধত্য লইয়া তাহাকে যথেষ্ট গালি দিতে লাগিল, কহিল, উহার সম্পর্কে কোনদিন আমার যুদ্ধ চাকরিটি যাইবে। আনন্দময়ী কৃষ্ণদয়ালকে এসম্বন্ধে কোনো কথা বলা অনাবশুক বোধ করিলেন। গোরা সম্বন্ধে স্বামীর প্রতি তাহার একটি মৰ্ম্মাস্তিক অভিমান ছিল - তিনি জানিতেন, কৃষ্ণদয়াল গোরাকে হৃদয়ের মধ্যে পুত্রের স্থান দেন নাই ; - এমন কি, গোরা সম্বন্ধে তাহার অন্ত: করণে একটা বিরুদ্ধ ভাব ছিল। গোরা আনন্দময়ীর দাম্পত্য-সম্বন্ধকে বিন্ধ্যাচলের মত বিভক্ত করিয়া মাঝখানে দাড়াইয়াছিল। তাহার একপারে অতি সতর্ক শুদ্ধাচার লইয়া কৃষ্ণদয়াল এক, এবং তাহার অন্তপারে তাংরি ম্লেচ্ছ গোরাকে লইয়া একাকিনী আনন্দময়ী। গোরার জীবনের ইতিহাস পৃথিবীতে যে দুজন জানে তাহাজের । মাঝখানে যাতায়াতের পথ যেন বন্ধ হইয়া গিয়াছে। এই সকল*কারণে সংসারে গোরার প্রতি আনন্দমীর স্নেহ নিতান্তই তাহার একলার ধন ছিল। এই পরিবারে মহিম বলিল, আপিল । [ ৮ম ভাগ। I ৭ম সংখ্যা । ] | | -~~-l.-l. গোরার অনধিকারে অবস্থানকে তিনি সবদিক দিয়া যত হান্ধা করিয়া রাখা সম্ভব তাহার চেষ্টা করিতেন। পাছে কেহ বলে, তোমার গোরা হইতে এই ঘটিল, তোমার গোরার জন্য এই কথা শুনিতে হইল, অথবা তোমার গোর আমাদের এই লোকসান করিয়া দিল, আনন্দময়ীর এই এক নিয়ত ভাবনা ছিল। গোরার সমস্ত দায় যে তাহারই ! আবার তাহার গোরাও ত সামান্ত দুরন্ত গোরা নয়! যেখানে সে থাকে সেখানে তাহার অস্তিত্ব গোপন করিয়া রাখা ত সহজ ব্যাপার নহে। এই তাহার কোলের ক্ষ্যাপা গোরাকে এই বিরুদ্ধ পরিবারের মাঝখানে এতদিন দিনরাত্রি তিনি সামলাইয় এতবড় করিয়া তুলিয়াছেন – অনেক কথা শুনিয়াছেন যাহার কোনো জবাব দেন নাই, অনেক দুঃখ সহিয়াছেন যাহার অংশ আর কাহাকেও দিতে गांtब्रन मांठे । আনন্দময়ী চুপ করিয়া জালনার কাছে বসিয়া রহিলেন ;-দেখিলেন, কৃষ্ণদয়াল প্রাতঃস্নান সারিয়া ললাটে বাহুতে বক্ষে গঙ্গামৃত্তিকার ছাপ লাগাইয়া মন্ত্র উচ্চারণ করিতে করিতে বাড়িতে প্রবেশ করিলেন, তাহার কাছে আনন্দময়ী যাইতে পারিলেন না। নিষেধ, নিষেধ, নিষেধ, সৰ্ব্বত্রই নিষেধ। অবশেষে নিঃশ্বাস ফেলিয়া আনন্দময়ী উঠিয়৷ মহিমের ঘরে গেলেন। মহিম তখন মেঝের উপর বসিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছিলেন, এবং তাহার ভূত্য স্বানের পূৰ্ব্বে তাহার গায়ে শেল মালিশ কবিয়া দিতেছিল। আনন্দময়ী তাহাকে কনিলেন, “মশিম, তমি আমার সঙ্গে একজন লোক দাও, রিার কি হল দেখে আসি। সে জেলে যাবে বলে মন স্থির করে বসে আছে ; যদি তার জেল হয় আমি কি তার আগে তাকে একবার দেখে আসতে পারব না ?” মহিমের বাহিরের ব্যবহার যেমনি হউক, গোরার প্রতি তাহার একপ্রকারের স্নেহ ছিল। তিনি মুখে গর্জন করিয়া গেলেন যে, “যাক লক্ষ্মীছাড়া জেলেই যাকৃ—এতদিন যায় নি, এই আশ্চর্যা" এই বলিয়া পরক্ষণেই তাহাদের অনুগত পরাণ ঘোষালকে ডাকিয় তাহার হাতে উকিল খরচার কিছু টাকা দিয়া তখনি তাহাকে রওনা করিয়া দিলেন এবং আপিসে গিয়া সাহেবের কাছে ছুটি যদি পান গোরা । Sogg AMMMAAASAASAASAASAAASSS S SMSSSS এবং বে। যদি সন্মতি দেন তবে নিজেও সেখানে যাইবেন স্থির করিলেন। আনন্দময়ীও জানিতেন, মহিম গোরার জন্য কিছু না করিয়া কখনো থাকিতে পারিবেন না। মহিম যথা-সম্ভব ব্যবস্থা করিয়াছেন শুনিয়া তিনি নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি স্পষ্টই জানিতেন গোরা যেখানে আছে সেই অপরিচিত স্থানে এই সঙ্কটের সময় লোকের কৌতুক কৌতুহল ও আলোচনার মুখে তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবে এ পরিবারে এমন কেহই নাই। তিনি চোপের দৃষ্টিতে নিঃশব্দ বেদনার ছায়া লইয়া ঠোঁটের উপর ঠোট চাপিয়া চুপ করিয়া রছিলেন। লছমনিয়া যখন হাউ হাউ করিয়া কঁাদিতে লাগিল তাহাকে তিরস্কার করিয়া অভম্বরে পাঠাইয়া দিলেন। সমস্ত উদ্বেগ নিস্তব্ধভাবে পরিপাক করাই তাহার চিরদিনের অভ্যাস। মুখ ও দুঃখ উভয়কেই তিনি শান্তভাবেই গ্রহণ করিতেন, তাহার হৃদয়ের আক্ষেপ কেবল অন্তর্যামীরই গোচর ছিল । বিনয় যে আনন্দময়ীকে কি বলিবে তাহ ভাবিয়া পাইল না। কিন্তু আনন্দময়ী কাহারো সাস্বনাবাক্যের কোনো অপেক্ষ রাখিতেন না ;–র্তাহার যে ছঃখের কোনো প্রতিকার নাই সে দুঃখ লইয়া অন্তলোকে তাহার সঙ্গে আলোচনা করিতে আসিলে তাহার প্রকৃতি সঙ্কুচিত হইয়া উঠিত। তিনি আর কোনো কথা উঠতে না দিয়া বিনয়কে কহিলেন, “বিহু, এখনো তোমার স্বান হয় নি দেখছি—যাও, শীঘ্ৰ নেয়ে এস গে—অনেক বেলা হয়ে গেছে।” বিনয় স্নান করিয়া আসিয়া যখন আহার করিতে বসিল তখন বিনয়ের পাশে গোরার স্থান শূন্ত দেখিয়া আনন্দময়ীর বুকের মধ্যে হাহাকার উঠিল ;–গোরাকে আজ জেলের অন্ন থাইতে হইতেছে, সে অল্প নিৰ্ম্মমশাসনের দ্বারা কটু, মায়ের সেবার দ্বারা মধুর নহে, এই কথা মনে করিয়া আনন্দমীকেও কোনো ছুতা করিয়া একবার উঠিয়া যাইতে হইল। - 8סי বাড়ি আসিয়া অসময়ে ললিতাকে দেখিয়াই পরেশ বাৰু , বুঝিতে পারিলেন তাহার এই উদাম মেরেট অভূতপূৰ্ব্বৰূপে