পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫৬ একটা কিছু কাণ্ড বাধাইয়াছে জিজ্ঞায় छूgिrउ डिनि তাহার মুখের দিকে চাহিতেই সে বলিয়া উঠিল, “বাবা, আমি চলে এসেছি। কোনো মতেই থাকতে পারলুম না।" পরেশ বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন কি হয়েচে ?” ললিত কহিল—“গেীর বাবুকে ম্যাজিষ্ট্রেট জেলে দিয়েচে ।” গেীর ইহার মধ্যে কোথা হইতে আসিল কি হইল পরেশ । কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। ললিতার কাছে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনিয়া কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিলেন। তৎক্ষণাৎ গোরার মার কথা মনে করিয়া তাহার হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল। তিনি মনে ভাবিতে লাগিলেন, একজন লোককে জেলে পাঠাইয়া কতকগুলি নিরপরাধ লোককে যে কিরূপ নিষ্ঠুর দণ্ড দেওয়া হয় সে কথা যদি বিচারক অন্ত:করণের মধ্যে অনুভব করিতে পারিতেন তবে মানুষকে জেলে পাঠানে এত সহজ অভ্যস্ত কাজের মত কথনই হইতে পারিত না । একজন চোরকে যে দণ্ড দেওয়া গোরাকেও সেই দণ্ড দেওয়া ম্যাজিষ্ট্রেটের পক্ষে যে সমান অনায়াসসাধ্য হইয়াছে এরূপ বৰ্ব্বরতা নিতান্তই ধৰ্ম্মবুদ্ধির অসাড়তা বশত সম্ভবপর হইতে পারিয়াছে। মানুষের প্রতি মানুষের দৌরাত্ম্য জগতের অন্ত সমস্ত হিংস্রতার চেয়ে যে কত ভয়ানক, তাহার পশ্চাতে সমাজের শক্তি রাজার শক্তি দলবদ্ধ হইয়। দাড়াইয় তাহাকে যে কিরূপ প্রচণ্ড প্রকাণ্ড করিয়া তুলিয়াছে গোরার কারাদণ্ডের কথা শুনিয়া তাহা তাহার চোখের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিল। পরেশ বাবুকে এইরূপ চুপ করিয়া ভাবিতে দেখিয়া ললিতা উৎসাহিত হইয়া বলিয়া উঠিল—“আচ্ছ, বাবা, এ ভয়ানক অন্তায় নয় ?” পরেশ বাবু তাহার স্বাভাবিক শান্তস্বরে কহিলেন— "গৌর যে কতখানি কি করেচে সেত আমরা ঠিক জানিনে ; তবে এ কথা নিশ্চয় বলতে পারি গেীর তার কৰ্ত্তবাবুদ্ধির প্রবলতার বোকে হয়ত হঠাৎ আপনার অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করতে পারে কিন্তু ইংরেজি ভাষায় যাকে ক্রাইম বলে তা যে গোরার পক্ষে একেবারেই প্রকৃতিবিরুদ্ধ তাতে আমার মনে লেশমাত্র সন্দেহ নাই। কিন্তু কি করবে মা-কালের ছায়বৃদ্ধি এখনো সে পরিমাণে বিবেক লাভ করে নি। এখনো অপরাধের যে দণ্ড, ক্রটিরও সেই প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। - ~.-l.--ു. দও ; উভয়কেই একই জেলের একই ঘানি টানতে হয়। এ রকম যে সম্ভব হয়েচে কোনো একজন মানুষকে সে জন্য দোষ দেওয়া যায় না । সমস্ত মানুষের পাপ এজন্তু দায়ী ।” - - হঠাৎ এই প্রসঙ্গ বন্ধ করিয়া পরেশ বাবু জিজ্ঞাসা করি। উঠিলেন, “তুমি কার সঙ্গে এলে ?” ললিতা বিশেষ একটু জোর করিয়া যেন খাড়া হইয় কহিল, "বিনয় বাবুর সঙ্গে।” বাহিরে যতই জোর দেখাক তাহার ভিতরে দুৰ্ব্বলত ছিল। বিনয় বাবুর সঙ্গে আসিয়াছে এ কথাটা ললিতা বেশ সহজে বলিতে পারিল না—কোপা হইতে একটু লজ্জা আসিয়া পড়িল এবং সে লজ্জা মুখের ভাবে বাহির হইয়া। পড়িতেছে মনে করিয়া তাহার লজ্জা আরো বাড়িয় ਚੋਲਿੰਗ | - পরেশ বাবু এই খামখেয়ালি দুৰ্জ্জয় মেয়েটিকে তাহার অন্তান্ত সকল সন্তানের চেয়ে একটু বিশেষ স্নেহই করিতেন। ইহার ব্যবহার অন্তের কাছে নিন্দনীয় ছিল বলিয়াই ললিতার আচরণের মধ্যে যে একটি সত্যপরতা আছে সেইটিকে তিনি বিশেষ করিয়া শ্রদ্ধা করিয়াছেন। তিনি জানিতেন ললিতার যে দোষ সেইটেই বেশি করিয়া লোকের চোখে পড়িবে কিন্তু ইহার যে গুণ তাহা যতই দুৰ্ল্লভ হউক I না কেন লোকের কাছে আদর পাইবে না। পরেশ বাৰু সেই গুণটিকে যত্নপূর্বক সাবধানে আশ্রয় দিয়া আসিয়া ছেন ;–ললিতার দুরন্ত প্রকৃতিকে দমন করিয়া সেই সঙ্গে । তাহার ভিতরকার মহত্ত্বকেও দলিত করিতে তিনি চান নাই। তাহার অন্ত দুইটি মেয়েকে দেখিবা মাত্রই সকলে সুন্দরী বলিয়া স্বীকার করে, তাহাদের বর্ণ উজ্জ্বল, তাহদের মুখের গড়নেও খুৎ নাই—কিন্তু ললিতার রং তাছাদের চেয়ে কালে, এবং তাহার মুখের কমনীয়তা সম্বন্ধে মতভেদ ঘটে। বরদাসুন্দরী সেইজন্ত ললিতার পাত্র জোট লইয়া সৰ্ব্বদাই স্বামীর নিকট উদ্বেগ প্রকাশ করিতেন। কিন্তু । পরেশ বাবু ললিতার মুখে যে একটি সৌন্দর্য্য দেখিতেন তাহা রঙের সৌন্দর্য্য নহে, গড়নের সৌন্দর্য্য নহে তাহ অন্তরের গভীর সৌন্দৰ্য্য। তাছার মধ্যে কেবলমাত্র লালিত্য নহে, স্বাতন্ত্রোর তেজ এবং শক্তির দৃঢ়তা আছে আকর্ষণ করে কিন্তু অনেককেই দূরে ঠেলিয়া রাখে। সংসারে ললিত প্রিয় হইবে না কিন্তু খাটি হইবে ইহাই জানিয়া পরেশ বাবু,কেমন একটু বেদনার সহিত ললিতাকে কাছে টানিয়া লইতেন—তাহাকে আর কেহ ক্ষমা করিতেছে না জানিয়াই তাহাকে করুণার সহিত বিচার করিতেন । যখন পরেশ বাবু শুনিলেন, ললিত একলা বিনয়ের সঙ্গে হঠাৎ চলিয়া আসিয়াছে তখন তিনি এক মুহূর্তেই বুঝিতে পারলেন এজন্ত ললিতাকে অনেকদিন ধরিয়া অনেক দুঃখ সহিতে হইবে ; সে যে টুকু অপরাধ করিয়াছে লোকে তাহার চেয়ে বড় অপরাধের দণ্ড তাহার প্রতি বিধান করবে। সেই কথাটা তিনি চুপ করিয়া ক্ষণকাল ভাবিতেছেন এমন সময় ললিতা বলিয়া উঠিল, “বাবা, আমি দোষ করেছি। কিন্তু এবার আমি বেশ বুঝতে পেরেছি যে, ম্যাজিষ্টেটের সঙ্গে আমাদের দেশের লোকের এমন সম্বন্ধ যে তার আতিথ্যের মধ্যে কিছুই সন্মান নেই কেবলি অনুগ্রহ মাত্র। সেটা সহ করেও কি আমার সেখানে থাকা উচিত ছিল ?” পরেশ বাবুর কাছে প্রশ্নটি সহজ বলিয়া বোধ হইল না। তিনি কোনো উত্তর দিবার চেষ্টা না করিয়া একটু হাসিয়া ললিতার মাথায় দক্ষিণ হস্ত দিয়া মৃদ্ধ আঘাত করিয়া বলিলেন—“পাগলি!” এই ঘটনা সম্বন্ধে চিন্তা করিতে করিতে সেদিন অপরাহ্লে পরেশ বাবু যখন বাড়ীর বাহিরে পায়চারি করিতেছিলেন এমন সময় বিনয় আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিল। পরেশ বাবু গোরার কারাদও সম্বন্ধে তাঙ্গর সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরিয়া আলোচনা করিলেন কিন্তু ললিতার সঙ্গে ষ্টীমারে আসার কোনো প্রসঙ্গই উত্থাপন করিলেন না। অন্ধকার হইয়া আসিলে কহিলেন “চল, বিনয়, ঘরে চল ।” বিনয় কহিল—“ন, আমি এখন বাসায় যাব।” পরেশ বাবু তাহাকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করিলেন না। বিনয় একবার চকিতের মত দোতলার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। উপর হইতে ললিতা বিনয়কে দেখিতে পাইয়াছিল। ধখন পরেশ বাবু একলা ঘরে ঢুকিলেন তখন ললিতা মনে ৭ম সংখ্যা । ] গোরা । NVQ ാ. - ---, ----------------- SAASAASAASAASAASAASAASAASAASSAAAASSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSSS | সেই দৃঢ়তা সকলের মনোরম নহে। তাহ লোকবিশেষকে করিল বিনয় হয়ত আর একটু পরেই আসিবে। আর একটু পরেও বিনয় আসিল না। তখন টেবিলের উপরকার দুটো একটা বই ও কাগজচাপা নাড়াচাড়া করিয়া ললিত ঘর হইতে চলিয়া গেল। পরেশ বাবু তাহাকে ফিরিয়া ডাকিলেন—তাহার বিষঃমুখের দিকে স্নেহপূর্ণ দৃষ্টি স্থাপিত করিয়া কহিলেন—“ললিতা আমাকে একটা ব্ৰহ্মসঙ্গীত শোনাও।” বলিয়া বাতিটা আড়াল করিয়া দিলেন। vరి& পরদিনে বরদাসুন্দরী এবং তাঁহাদের দলের বাকি সকলে আসিয়া পৌছিলেন। হারান বাবু ললিতা সম্বন্ধে তাহার বিরক্তি সম্বরণ করিতে না পারিয়া বাসায় না গিয়া ইহাদের সঙ্গে একেবারে পরেশ বাবুর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বরদাতুনদরী ক্রোধে ও অভিমানে ললিতার দিকে না তাকাইয়া এবং তাহার সঙ্গে কোনো কথা না কহিয়া একেবারে তাহার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিলেন। লাবণ্য ও লীলাও ললিতার উপরে খুব রাগ করিয়া আসিয়াছিল। ললিতা এবং বিনয় চলিয়া আসাতে তাহদের আবৃত্তি ও অভিনয় এমন অঙ্গহীন হইয়া পড়িয়াছিল যে তাহাদের লজ্জার সীমা ছিল না। স্বচরিতা, হারান বাবুর ক্রুদ্ধ ও কটু উত্তেজনায়, বরদাসুন্দরীর অশ্রমিশ্ৰিত আক্ষেপে অথবা লাবণ্যলীলার লজ্জিত নিরুৎসাহে কিছুমাত্র যোগ না দিয়া একেবারে নিস্তব্ধ হইয়া ছিল—তাহার নির্দিষ্ট কাজটুকু সে কলের মত করিয়া গিয়াছিল। আজও সে যন্ত্রচালিতের মত সকলের পশ্চাতে ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। স্বধীর লজ্জায় এবং অনুতাপে সঙ্কুচিত হইয়৷ পরেশ বাবুর বাড়ীর দরজার কাছ হইতেই বাসায় চলিয়৷ গেল-লাবণ্য তাহাকে বাড়ীতে আসিবার জন্স বারবার অনুরোধ করিয়া কৃতকাৰ্য্য না হইয় তাহার প্রতি আড়ি' করিল। হারান পরেশ বাবুর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই বলিয়৷ উঠিলেন—“একটা ভারি অন্তায় হয়ে গেছে!” পাশের ঘরে ললিতা ছিল, তাহার কানে কথাটা প্রবেশ করিব মাত্র সে আসিয়া তাহার বাবার চৌকির পৃষ্ঠদেশে দুই হাত রাখিয়া দাড়াইল এবং হারান বাবুর মুখের দিকে : একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল। | | o