পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)ჯo আনন্দময়ীকে গোরার বিচ্ছেদশোকে সাস্বনা দিবার অভিপ্রায়ও বিনয়ের মনের মধ্যে ছিল। তাহা বুঝিতে পারিয়া আনন্দময়ীর হৃদয় বিগলিত হইল। কোনো কথা না বলিয়া তিনি সস্নেহে একবার বিনয়ের গায়ে হাত বুলাইয়া দিলেন। বিনয় তাহার খাওয়া দাওয়া সেবাশুশ্রীধা লইয়া বহুবিধ আবদার জুড়িয়া দিল। এখানে তাহার যথোচিত যত্ন হইতেছে না বলিয়া সে মাঝে মাঝে আনন্দময়ীর সঙ্গে মিথ্যা কলহ করিতে লাগিল। সৰ্ব্বদাই সে গোলমাল বকবিকি করিয়া আনন্দময়ীকে ও নিজেকে ভূলাইয়া রাথিতে চেষ্টা করিল। সন্ধ্যার সময় যখন মনকে বাধিয়া রাখা অত্যন্ত দুঃসাধ্য - হইত, তখন বিনয় উৎপাত করিয়া আনন্দময়ীকে তাহার সকল গৃহকৰ্ম্ম হইতে ছিনাইয়া লইয়া ঘরের সম্মুখের বারানায় মাষ্ট্রর পাতিয়া বসিত ; আনন্দমন্ত্রীকে তাহার ছেলেবেলার কথা, তাহার বাপের বাড়ীর গল্প বলাইত ; যখন তাহার বিবাহ হয় নাই, যখন তিনি প্তাহার অধ্যাপক পিতামহের , টোলের ছাত্রদের অত্যন্ত আম্বরের শিশু ছিলেন, এবং পিতৃহীন বালিকাকে সকলে মিলিয়া সকল বিষয়েই প্রশ্রয় দিত বলিয়া তাহার বিধবামাতার বিশেষ উদ্বেগের কারণ ছিলেন, সেই সকল দিনের কাহিনী। বিনয় বলিত, “ম, তুমি যে কোনো দিন আমাদের মা ছিলে না সে কথা মনে করলে আমার আশ্চৰ্য্য বোধ হয়। আমার বোধ হয় টোলের ছেলেরা তোমাকে তাদের খুব ছোটাে এতটুকু মা বলেই জানত। তোমার । দাদামশায়কে বোধ হয় তুমিই মানুষ করবার ভার নিয়েছিলে।” একদিন সন্ধ্যাবেলায় মাছরের উপরে প্রসারিত আনন্দমরীর দুই পায়ের তলায় মাথা রাখিয়া বিনয় কহিল, “ম, ইচ্ছা করে আমার সমস্ত বিদ্যাবুদ্ধি বিধাতাকে ফিরিয়ে দিয়ে শিশু হয়ে তোমার ঐ কোলে আশ্রয় গ্রহণ করি। কেবল তুমি, সারে তুমি ছাড়া আমার আর কিছুই না পাকে।” বিনয়ের কণ্ঠে হৃদয়ভারাক্রান্ত একটা ক্লাস্তি এমন করিয়া প্রকাশ পাইল যে আনন্দময়ী ব্যথার সঙ্গে বিস্ময় অনুভব করিলেন। তিনি বিনয়ের কাছে সরিয়া বসিয়া প্রবাসী । আস্তে আস্তে তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলেন। [ ৮ম ভাগ।

অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন "বিমু, পরেশ বাবুদের বাড়ীর সব খবর ভাল ?” এই প্রশ্নে হঠাৎ বিনয় লজ্জিত হইয়া চমকিয়া উঠিল। ভাবিল, “মার কাছে কিছুই লুকানো চলে না, মা আমার অন্তর্যামী।” কুষ্ঠিতস্বরে কহিল, “হা, তারা ত সকলেই ভাল আছেন।” - আনন্দময়ী কহিলেন, “আমার বড় ইচ্ছা করে পরেণ বাবুর মেয়েদের সঙ্গে আমার চেনা পরিচয় হয়। প্রথমে ত তাদের উপর গোরার মনের ভাব ভাল ছিল না কিন্তু ইদানীং তাকেসুদ্ধ যখন তারা বশ করতে পেরেচেন তখন তারা সামান্ত লোক হবেন না।” বিনয় উৎসাহিত হইয়া কহিল, “আমারো অনেক বা ইচ্ছা হয়েচে পরেশ বাবুর মেয়েদের সঙ্গে যদি কোনো মতে তোমার আলাপ করিয়ে দিতে পারি। পাছে গোর কিছু মনে করে বলে আমি কোনো কথা বলিনি।” আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বড় মেয়েটির নাম কি ?” - এইরূপ প্রশ্নোত্তরে পরিচয় চলিতে চলিতে যখন ললিতার প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়িল তখন বিনয় সেটাকে কোনোমতে সংক্ষেপে সারিয়া দিবার চেষ্টা করিল। আনন্দময়ী বাং মানিলেন না। তিনি মনে মনে হাসিয়া কহিলেন, “শুনেচি ললিতার খুব বুদ্ধি।” বিনয় কহিল, “তুমি কার কাছে শুনলে ?” আনন্দময়ী কহিলেন—“কেন, তোমারি কাছে !” পূৰ্ব্বে এমন এক সময় ছিল যখন ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনে কোনো প্রকার সঙ্কোচ ছিল না। সেই মোহমুক্ত অবস্থায় সে যে আনন্দময়ীর কাছে ললিতার তীক্ষবুদ্ধি লইয়া অবাধে আলোচনা করিয়াছিল সে কথা তাহার মনেই ছিলনা। আনন্দময়ী সুনিপুণ মাঝির মত সমস্ত বাধা বাচাই৷ ললিতার কথা এমন করিয়া চালনা করিয়া লইয়া গেলেন । যে বিনয়ের সঙ্গে তাহার পরিচয়ের ইতিহাসের প্রধান ংশগুলি প্রায় সমস্তই প্রকাশ হইল। গোরার কারা দণ্ডের ব্যাপারে ব্যথিত হইয়া ললিতা যে ষ্টীমারে একাকিনী ৭ম সংখ্যা । ] দিনের সঙ্গে পলাইয়া আসিয়াছে সে কথাও বিনয় আজ লিয়া ফেলিল। বলিতে বলিতে তাহার উৎসাহ বাড়িয়া উঠিল—যে অবসাদে সন্ধ্যাবেলায় তাহাকে চাপিয়া ধরিয়াছিল তাহা কোথায় কাটিয়া গেল ! সে যে ললিতার মত এমন একটি আশ্চর্য্য চরিত্রকে জানিয়াছে এবং এমন করিয়া তাহার কথা কহিতে পারিতেছে ইহাই তাহার কাছে একটা পরম লাভ বলিয়া মনে হইতে লাগিল। রাত্রে ধন আহারের সংবাদ আসিল এবং কথা ভাঙিয়া গেল— ঠখন হঠাৎ যেন স্বল্প হইতে জাগিয়া বিনয় বুঝিতে পারিল তাহার মনের যাহা কিছু কথা ছিল আনন্দময়ীর কাছে তাহা সমস্তই বলা হইয়া গেছে। আনন্দময়ী এমন করিয়া সমস্ত শুনিলেন, এমন করিয়া সমস্ত গ্রহণ করিলেন যে, ইছার মধ্যে যে কিছু লজ্জা করিবার আছে তাহ বিনয়ের নেই হইল না। আজ পর্য্যন্ত মার কাছে লুকাইবার কথা বিনয়ের কিছুই ছিল না—অতি তুচ্ছ কথাটিও সে প্তাহার কাছে আসিয়া বলিত। কিন্তু পরেশ বাবুর পরিবারের সঙ্গে আলাপ হইয়া অবধি কোথায় একটা বাধা পড়িয়াছিল। সেই বাধা বিনয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হয় নাই। আজ ললিতার সম্বন্ধে তাহার মনের কথা সুক্ষদর্শিনী আনন্দময়ীর কাছে একরকম করিয়া সমস্ত প্রকাশ হইয়া গেছে তাহা অনুভব করিয়া বিনয় উল্লাসিত হইয়া উঠিল। মাতার কাছে তাহার জীবনের এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিবেদন করিতে না পারিলে কথাটা কোনোমতেই নিৰ্ম্মল হইয়া উঠিত না-ইহা তাহার চিন্তার মধ্যে কালীর দাগ দিতে शंक्ठि । - রাত্রে আনন্দময়ী অনেকক্ষণ এই কথা লইয়া মনে মনে আলোচনা করিয়াছিলেন। গোরার জীবনের যে সমস্ত উত্তরোত্তর জটিল হইয়া উঠিতেছিল, পরেশ বাবুর ধরেই তাহার একটা মীমাংসা ঘটতে পারে এই কথা মনে করিয়া তিনি ভাবিতে লাগিলেন যেমন করিয়া হউক্‌ মেয়েদের সঙ্গে একবার দেখা করিতে হইলে । ভারতীয় ইতিহাস প্রসঙ্গ । SiAMMMMMMAiMAMMMMMMMMMMMM MMMMMMMAMMMMMMS ○どう - ভারতীয় ইতিহাস প্রসঙ্গ । ভারতবর্যের ইতিহাস সাধারণতঃ তিন ভাগে বিভক্ত : স্বাধীনকাল, মুসলমান শাসনকাল এবং ব্রিটিশ শাসনকাল । ভারতবর্ষের স্বাধীন যুগ এবং মুসলমান শাসনাধীন যুগের মধ্যে স্বগ্ন রেখা টানিয়া দেওয়া সম্ভবপর নহে। কারণ, ভারতবর্ষ মুসলমানের সংস্পর্শে আসিয়াও সুদীর্ঘকাল আপনার স্বাধীনতা রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিল। এই সুদীর্ঘকাল মধ্যে কদাচিৎ কোন স্থানে মুসলমানের অধিকার স্থাপিত হইত ; কিন্তু দুৰ্জয় হিন্দুগণ অচিরে স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার সাধন করিতেন ; কেবল পঞ্জাবের একাংশে মুসলমানের স্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ৬৩৬ খৃষ্টাব্দে আরবদেশীয় মুসলমানগণ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। ইহাই মুসলমান কর্তৃক প্রথম ভারত আক্রমণ। এই প্রথম আক্রমণের পাচশত সাতার বৎসর পরে পাঠানজাতীয় মুসলমানগণ উত্তর ভারতে অধিকার স্থাপন করেন । প্রাগুক্ত সময় মধ্যে কতিপয় আরবা লেখক ভারতবিবরণী লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। এই সকল লেখকের গ্রন্থ হইতে ভারতবর্ষের মধ্য যুগের বিবরণ সঙ্কলন করাই আমাদের উদ্দেশু । আমরা প্রধানতঃ ছয় জন লেখকের গ্রন্থ হইতে এই প্রবন্ধের উপাদান সংগ্ৰহ করিব। এই সকল লেখকের অতি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রথমে প্রদত্ত হইতেছে। " বাণক সোলেমান, ইনি বাণিজ্য উপলক্ষ্যে ভারতবর্ষে আগমন করিয়াছিলেন । ৮৫১ খৃষ্টাব্দ সোলেমানের ভারত ভ্রমণের সময়ৰূপে নির্দিষ্ট হইয়াছে। ইবন খুরদতব, ইনি বোগদাদের খলিফাগণের রাজত্ব কালে বিশিষ্ট রাজকাৰ্য্যে নিযুক্ত ছিলেন। ৯১২ খৃষ্টাব্দে ইবন খুরদতবার মৃত্যু হয়। অলমহুদি, ইহার প্রকৃত নাম আবু হাসন আবি ; অলমহুদি উপাধি মাত্র। অলমহুদির জনৈক পূৰ্ব্বপুরুষ মহাপুরুষ মোহাম্মদের মক্কা পরিত্যাগ করিয়া মদিনীয় গমনকালে তাহার সহযাত্রী ছিলেন। অলমুদ্ধির জীবনের