পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbペッ লিখিত ইতিহাসেও দেখিতে পাওয়া যায়,--বক্তিয়ার খিলিজি এবং তাহার দিগ্বিজয়ী অনুচরবর্গ লক্ষ্মণাবতীর রাজধানী ছাড়িয়া, উত্তর বঙ্গের সেনানিবাসে,-দেবকোটেই,-অবস্থান করিতে বাধ্য হইতেন। অষ্টাদশ অশ্বারোহীর অলৌকিক দিগ্বিজয় কাহিনীর সহিত ইহার সামঞ্জস্তা দেখিতে পাওয়া যায় না। যাহারা ইতিহাসের অস্পষ্ট ছায়া অবলম্বন করিয়া উপাখ্যান নাটকাদি রচনা করিয়া থাকেন, তাহারা উত্তর বঙ্গের সকল স্থানেই তাহার পর্য্যাপ্ত আখ্যানবস্তু লাভ করিতে পারেন। তাহদের চেষ্টা সে পথে ধাবিত হইলে, উত্তর বঙ্গের অনেক পুরাতন দুর্গ বীরবিক্রমের লীলাভূমি বলিয়া জনসমাজে সুপরিচিত হইতে পরিবে। উত্তরবঙ্গ চিরবিপ্লবের লীলানিকেতন বলিয়া প্রসিদ্ধ। একসময়ে পাৰ্ব্বত্য হনজাতি উত্তর বঙ্গের উপর আপতিত হইয়া অনেক অনর্থ উৎপন্ন করিত। পালবংশীয় এবং সেনবংশীয় নরপালগণের শাসন সময়েও তাহার কিছু কিছু পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। কলিঙ্গ-সমর, কাশী-সমর, কামরূপ-সমর উত্তরবঙ্গের পুরাতন ইতিহাসের বিচিত্র বীরত্বকাহিনীতে পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। কথন হিন্দু-বৌদ্ধ সংঘর্ষ, কখন হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষ উত্তরবঙ্গের পুরাকাহিনীকে রুধিরাক্ত করিয়া রাথিয়াছে তথ্যানুসন্ধানের অভাবে তাহার সকল কথাই ক্রমে ক্রমে জনসমাজ হইতে বিলুপ্ত হইয়া পড়িতেছে। এই সকল রাষ্ট্রবিপ্লবে উপযুপিরি বিপৰ্য্যস্ত হইয়া, মুসলমান শাসনকালের অবসান সময়েও, উত্তরবঙ্গের নানা স্থানে যে সকল পুরাতন বৌদ্ধকীৰ্ত্তি অপেক্ষাকৃত অক্ষত কলেবরে স্বস্থানে বৰ্ত্তমান ছিল, তাহার কথা বিশেষভাবে “আলোচিত হইবার যোগ্য । তাহার যথাযোগ্য আলোচনার অভাবে নানা ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রচারিত হইবার সুযোগলাভ করিতেছে ! মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এসিয়াটিক সোসাইটির প্রসিদ্ধ পত্রিকায় লিপিয়াছেন,–“ভারতবর্ষের অন্যান্ত স্থানে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের ভাগ্যে যাহা ঘটুক না কেন, ভারতবর্ষের পূর্বাংশে বৌদ্ধধৰ্ম্মকে বড়ই নিদারুণ নির্যাতন সহ করিতে হইয়াছিল। এমন কি,—এতদূরও বলা যাইতে প্রবাসী। পারে বলেই তাড়িত হইয়া গিয়াছিল!" উত্তরবঙ্গের ইতিহাস এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করিতে পারে না। ইহাই প্রকৃত তথ্য হইলে, উত্তরবঙ্গে কোনরূপ অক্ষত বৌদ্ধকীৰ্ত্তি বৰ্ত্তমান থাকিতে পারিত না + পালনরপালগণের শাসন সময়ে বৈদিকাচারপরায়ণ ব্রাহ্মণগণ প্রধানামাত্যের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ; হিন্দু ধর্গের পুনঃ সংস্থাপনপরায়ণ সেননরপালগণের সময়ে বৌদ্ধ পুরুষোত্তম দেব রাজসভায় সমাদর লাভ করিতেন।8 লক্ষ্মণসেন দেবের তাম্রশাসনে যে সকল ভূমির চতুঃসীম উল্লিখিত আছে, তাহার পাশ্বেই বৌদ্ধবিহার বর্তমান থাকিবার কথাও উল্লিখিত আছে। ইহা কখনও সম্ভৰ হইতে পারিত না | উত্তরবঙ্গের নানাস্থানের অক্ষত বৌদ্ধমূৰ্ত্তি, প্রস্তর চৈত্য, সাধনগুহা “অগ্নি এবং তরবারি” প্রয়োগের আখ্যায়িকাকে অলীক বলিয়াই প্রতিপন্ন করিতে পারে। অল্পকাল পূৰ্ব্বেও দিনাজপুরের অন্তর্গত পত্নীতলা থানার অধিকার মধ্যে এই শ্রেণীর একটি প্রস্তরচৈত্য বর্তমান

  • Whatever might have been the fate of Buddhism

in other parts of India, in the provinces of Eastern India, it had to suffer serious persecution; nay, it may be said, that Buddhism was expelled from Eastern India by fire and sword.—J. A. S. B. vol. LXIV. р, 55. + কেবল উত্তরবঙ্গে কেন, প্রশান্ত মহাসাগরের প্রাচ্য দ্বীপপুঞ্চেও বৌদ্ধকীৰ্ত্তির পাশ্বদেশেই শৈবকীৰ্ত্তি—উভয় কীৰ্ত্তিই অক্ষতকলেবরে বৰ্ত্তমান । - { ভট্টগুরুষের গরুড় স্তস্তলিপিতে ইহার অভ্রান্ত প্রমাণ বর্তমান আছে। ৪ লক্ষ্মণসেন দেবের আজ্ঞায় বৌদ্ধ পুরুষোত্তম দেব পাণিনীয় লৌকিক সুত্রের "ভাষাবৃত্তি" রচনা করিয়াছিলেন, তাহার পঠন পান অল্পদিন পূর্বেও উত্তরবঙ্গে প্রচলিত ছিল। | গৌড়েশ্বর লক্ষ্মণসেন দেবের বিজয় রাজ্যের সপ্তমবর্ষের তৃতীয় ভাদ্রদিনে যে তাম্রশাসন প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহ দিনাজপুরের অপর্ণীবির নিকট আবিষ্কৃত হইয়াছিল। মিষ্টার ওয়েষ্টমেকট কর্তৃক তাহ ১৮৭ খৃষ্টাব্দের সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাহাতে "পূৰ্ব্বে বুদ্ধ বিহারী দেবতা" ইত্যাদি লিখিত আছে। মিষ্টার ওয়েষ্টমেকট তাহাৰ wold of fasol fossa,—bounded on the East by the eastern ail of the rent free aman and given to the god Buddha-Bihari, which is sown with an arha of seed, - - —প্রাচ্যভারত হইতে বৌদ্ধধৰ্ম্ম অগ্নি এবং তরবারি । কেট তাহা স্থানান্তরিত করিয়া লইয়া গিয়াছেন। তাহার ত্রিপটের প্রতি দৃষ্টিপাত করিব মাত্র দেখিতে পাওয়া বাইবে,–“অগ্নি বা তরবারি” তাহাকে স্পর্শ করিবার জন্য একবারও চেষ্টা করে নাই ; কোনও আকস্মিক কারণে চৈত্যচুড়া ভাঙ্গিয়া গিয়া থাকিবে, কিন্তু বুদ্ধমূৰ্ত্তি অক্ষুণ্ণ রহিয়া গিয়াছে - এরূপ একটি মাত্র প্রত্যক্ষ প্রমাণ অনেক জল্পনা কল্পনা অপেক্ষা অধিক বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া স্বীকৃত হইতে পারে। উত্তরবঙ্গে এরূপ বৌদ্ধচৈত্যের অভাব ছিল না ; —যাহা বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, তাহা যে “অগ্নি বা তরবারি” বলে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, এরূপ অনুমানের অবতারণা করিবার উপযুক্ত প্রমাণ অদ্যাপি প্রাপ্ত হওয়া যায় নাই ! যাহা বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, তাহা রাষ্ট্রবিপ্লবের অপরিহার্য্য পরিণাম বলিয়াই উল্লিখিত হইতে পারে। বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবকালে যে সংঘর্ষ প্রবল श्ब्र डे%िग्रांछ्टि, डांश नेौञ्चशे G- :" সামঞ্জস্তসাধনে শাস্তি সংস্থাপিতৃ করিগছিল। তাহার পর ভগবান বুদ্ধ নারায়ণের অবতাররূপে হলুসমাজেও পূজা প্রাপ্ত হইয়াছেন। বৌদ্ধ বিহার শিক্ষা এবং সদাচারের বিশ্রামভূমি বলিয়া পরিচিত アエ এই প্রস্তরচৈত্যের পাদদেশের পোদিত লিপিতে বৌদ্ধবিজয় ধিতি, তাহ। অক্ষুদ্র অবস্থায় বৰ্ত্তমান আছে। É উত্তরবঙ্গের পুরাতত্ত্ব সংগ্রহ। ৩৮৭ - ছিল। দিনাজপুরের ভূতপূৰ্ব্ব কালেক্‌টার মিষ্টার ওয়েষ্ট ছিল ; বৌদ্ধচৈত্য জনসমাজের নিকট সমাদরের সামগ্ৰী বলিয়া বিবেচিত হইত ; বৌদ্ধমূৰ্ত্তি ক্রমন্নানারায়ণ মূৰ্ত্তি বলিয়াই হিন্দুসমাজের নমস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। সুতরাং উত্তর কালের হিন্দু সমাজের পক্ষে বৌদ্ধাচার তাড়িত করিবার জন্য উত্তরবঙ্গে “অগ্নি বা তরবারি” প্রয়োগের কারণ উপস্থিত হইতে পারে নাই। উত্তরবঙ্গের কোন স্থানেই তাহার জনশ্রুতি পর্যান্ত বর্তমান নাই। বরং সমন্বয়সংস্থাপনের কিছু কিছু পরিচয় অস্থাপি প্রাপ্ত হওয়া যায়। বগুড়া জেলার অন্তর্গত বেল আমলা নামক গ্রাম হইতে সম্প্রতি এইরূপ পরিচয় আবিষ্কৃত হইয়াছে। বগুড়ার ডেপুটী কালেক্টার চিরস্নেহাস্পদ ক্রমান রাজেন্দ্রলাল আচাৰ্য বি, এ, তৎসম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনের (রঙ্গপুরের ) প্রথম অধিবেশনে পঠিত হইবার জন্ত প্রেরণ করিয়াছিলেন। বেল আমলা একটি পুরাতন গ্রাম। তথায় কতকগুলি পুরাতন দেবমন্দির বর্তমান আছে। তাহ সমধিক পুরাতন না হইলেও, অনুসন্ধানের যোগ্য বলিয়া, শ্রমান রাজেন্দ্রলাল তথায় উপনীত হইয়া, গ্রামের মধ্যে একটি পুরাতন চতুভূজ মূৰ্ত্তির সন্ধান লাভ করেন। এই মূৰ্ত্তি কোনও পুরাতন মন্দির হইতে আনীত হইয়া, গ্রামের মধ্যে রক্ষিত হইয়াছিল। মূৰ্ছিটি প্রস্তরগঠিত ; তাহার পাদদেশে পুরাতন অক্ষরের একটি খোদিত লিপি বর্তমান আছে। যতদূর পাঠ করিতে পারা যায়, তাছাতে বোধ হয়—“রাজ্ঞী • • শ্ৰীগীতা তারা” লিখিত আছে। হিন্দুদিগের তারামূৰ্ত্তির সহিত এই মূৰ্ত্তির কিছুমাত্র সাদৃশু নাই। ইহা বৌদ্ধ তারামূৰ্ত্তি। তাহাকে কখন “অগ্নি বা তরবারি” স্পর্শ করে নাই ! গ্রামের নিকটে একটি পুরাতন মন্দির ছিল বলিয়া এখনও জনশ্রুতি বর্তমান আছে। তাহার চিহ্নমাত্রও বর্তমান নাই। কবে কিরূপ ঘটনাস্থত্রে সে মন্দির বিলোপ প্রাপ্ত হইয়াছিল, তাহারও তথ্যলাভের আশা নাই। যেখানে মন্দির ছিল, সেখানে এখনও ইষ্টকপ্রস্তরের সমাবেশ দেখিতে পাওয়া যায়। তথায় অনুসন্ধানকার্য্যে নিযুক্ত হইয়া, ক্রমান রাজেন্দ্রলাল একখানি খোদিত প্রস্তর প্রাপ্ত হইয়াছেন। তাহ প্রায় সমচতুষ্কোণ —তাহার-উভয় পুষ্ঠেই নানামুৰ্ত্তি খোদিত অাছে।