পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- טאמא ২। এক নূতন বিভীষিকা । মৃত্যু ও পরলোকতত্ত্ব অবলম্বন করিয়া যত মসীপত্রের অপব্যবহার ও তর্ককোলাহলের স্বষ্টি হইয়াছে, বোধ হয় অপর কোন বিষয়েই সে প্রকার হয় নাই। কারণ যে তত্ত্ব যত দুরধিগম্য তাহাকে অবলম্বন করিয়া ততই অযথা বাক্যব্যয় করা মানুষের একটা স্বভাবসিদ্ধ ধৰ্ম্ম । বলা বাহুল্য ইহাতে মূল জিনিসটাকে কোন ক্রমেই চেনা যায় না, বরং শত শত বিরোধী মতবাদের কুহেলিক চারিদিকে ঘেরিয়া দাড়াইয়া তাহাকে অস্পষ্ট করিয়া তোলে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তাহার মর্মস্থানে পৌছবার পথটাও দুর্গম হইয় পড়ে। “মৃত্যু” ও “পরলোক তত্বের” ন্যায় পৃথিবীর পরিণামটাও আজকাল বৈজ্ঞানিকদিগের নিকট একটা প্রকাও তর্কের বিষয় হইয়া দাড়াইয়াছে। জগতে কোন বস্তুরই অবস্থা চিরস্থির নয়। সুতরাং নানা পরিবর্তনের ভিতর দিয়া পৃথিবী আজ যেখানে আসিয়া দাড়াইয়াছে, সে যে চিরকাল সেখানে থাকিবে না, তাহ। আমরা সকলেই বুঝি । জীব যেমন জন্মকাল হইতে পলে পলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়, পৃথিবীও সেইপ্রকার প্রতি মুহুর্তেই মৃত্যুপথকে ছোট করিয়া আনিতেছে। মৃত্যু নিশ্চয়। এই মৃত্যু কোন বেশে দেথা দিয়া এই উদ্ভিদপ্রাণিময় সজীব পৃথিবীকে নিজীব করিয়া দিবে, তাহাই তর্কের বিষয়। বৈজ্ঞানিক বৈদ্যগণ পৃথিবীর নাড়ী টিপিয়া তাহার মৃত্যুদিন ও মৃত্যুব্যাধি এখনি ঠিক করিয়া রাথিতে চাহিতেছেন। বৈস্তসঙ্কট হইলে রোগীর মৃত্যুপথ পরিষ্কার হইয়া যায়, এবং সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাযাত্রার মুহূৰ্ত্তটি পর্য্যস্ত জানা দুঃসাধ্য হইয় পড়ে। ভূতত্ত্ববিদ জীবতত্ত্ববিদ রসায়নবিদ ও জ্যোতিব্বিদ প্রভৃতি মিলিয়া সত্যই বৈষ্ঠসঙ্কট উপস্থিত করিয়াছেন। ইহাতে বৈজ্ঞানিকগণ মৃত্যুকে টানিয়া আনিতে পারিতেছেন ন সত্য, কিন্তু মৃত্যুদিন ও মৃত্যুরোগের নির্ণয় ক্রমেই অসম্ভব হইয়া দাড়াইতেছে। ইহঁরা ধূমকেতুর মুণ্ডপাত, নক্ষত্রের সংঘর্ষণ, জলবায়ুর লোপ, ভূজঠরাগ্নি ও স্বর্ঘ্যের নিৰ্ব্বাণ প্রভৃতি নানা মৃত্যুধ্যাধির উল্লেখ করিয়াও ক্ষান্ত প্রবাসী | SAASAASAAAS--১৪:২২, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~ --- --- --l.ു.--l. হন নাই। সম্প্রতি লায়েল নামক জনৈক মার্কিন বৈজ্ঞানিক পৃথিবীকে আর এক নূতন বিভীষিকা দেখাইতেছেন। ভূ-গোলকের (globe) প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে দেখ qtā, to s no oftfos (Tropics of cancer and capricorn) মধ্যে যে বলয়াকার প্রদেশ আমাদেৰ পৃথিবীকে ঘেরিয়া রহিয়াছে, তাহার অনেকটাই অমূৰ্ব্বর। ও জীববাসের অনুপযোগী। ইহারি বিশেষ বিশেষ অংশ অধিকার করিয়া আরব ও মধ্যএসিয়ার মরুভূমি এক আরিজোনা ও সাহারা প্রভৃতি মহামরু-অবস্থান করিতেছে। লায়েল সাহেব এই বলয়াকার ভূভাগের প্রতি অঙ্গুলী নির্দেশ করিয়া বলিতেছেন, ইহাই পৃথিবীর মৃত্যু চিহ্ন। দুষ্ট ক্ষত প্রাণিদেহের স্বচ্যগ্র প্রমাণ স্থান অধিকার করিয়া যেমন ক্রমে ক্রমে সমগ্ৰ দেহটিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, ঐ মরুভূমিগুলিও লায়েল সাহেবের মতে কালক্রমে পৃথিবীর সৰ্ব্বাঙ্গ অধিকার করিয়া ফেলিবে । ইহারাই পৃথিবীর মৃত্যুর স্বচনা করিয়া দিয়াছে, এবং আমাদের অলক্ষিন্তে ইহারাই পরিসরযুক্ত হইয়া সংহারকার্য্যকে অগ্রসর করি। দিতেছে। মরুভূমির গ্রাস হইতে পৃথিবীকে উদ্ধার করিবার ; আর উপায় নাই । লায়েল সাহেব কিপ্রকারে পূৰ্ব্বোক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন এখন দেখা যাউক । ইনি বলেন, আমেরিকার আরিজোনা মরুপ্রদেশে ভ্রমণ করিতে গেলে, বড় বড় শাখা প্রশাখা সহ বৃক্ষকাও ভ্রমণকারী মাত্রেরই চোখে পড়ে। হঠাৎ দেখিলে সেগুলিকে সপ্তশিল্প দেখায়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহা নয় ইহাদের সকলেই শিলাময়। বহুকাল মৃৎপ্রোথিত থাকায় বৃক্ষের কণ্ঠময় দেহ শিলায় পরিণত হইয়া গেছে। কাজেই বলিতে হয়, সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বে এই মরুভূমির অধিকাংশই উৰ্ব্বর ছিল, এবং সেই সময়ে এই সকল মহাতরু জন্মগ্রহণ করিয়া কোন আকস্মিক দৈব উৎপাতে ভূশায়ী ও মৃৎপ্রোথিত হইয়া পড়িয়াছিল। এই সকল প্রদেশের বর্তমান অনুৰ্ব্বরতার কারণ অনুসন্ধান করিলে বৃষ্টিহীনতা ব্যতীত অপর কোন কারণ খুজিয়া পাওয়া যায় না। মুজলা প্রদেশও যে ক্রমে স্বল্প পরিসর হইয়া মরুর প্রসার বৃদ্ধি করিতেছে, তাহা এই ৷ সকল প্রদেশের প্রাস্তবৰ্ত্তী ভূভাগ পরীক্ষা করিলে বেশ [ ৮ম ভাগ। | ৭ম সংখ্যা । ] | w বুঝা যায়। ইহাদের নানা অংশে আধুনিক বৃক্ষদির চিহ্ন ভূগর্ভে বর্তমান রহিয়াছে। প্রদেশের উচ্চতা লইয়া হিসাব করিলেও মরুভূমির ক্রমপ্রসারণের আরো স্বম্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। লায়েল সাহেব দেখাইয়াছেন, আমেরিকার আধুনিক মরুভূমির অন্তর্গত যেসকল স্থানের উচ্চতা দেড় হাজার ফিট্‌ মাত্র, এ অঞ্চলে তাহাতে প্রচুর বারিপাত হইত। ভূপ্রোথিত বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরীভূত বৃক্ষ অস্থাপি তাহার সাক্ষ্য দিতেছে। কিন্তু আধুনিক যুগে সেই সকল প্রদেশেরই সাড়ে ছয় হাজার ফুট উচ্চ স্থানে বৃষ্টি হয় না। ইহা যে আকস্মিক ভূবিপ্লবের ফল নয়, তাহ লায়েল সাহেব প্রমাণ করিয়াছেন। কাজেই বলিতে হয়, যুগযুগান্তর ধরিয়া ভূবায়ু ধীরে ধীরে শুদ্ধ হইয়া এখন এপ্রকার হইয়া দাড়াইয়াছে যে, পূৰ্ব্বের তুলনায় চারি হাজার ফুট উচ্চস্থানেও এখন বারিপাত হইতেছে না।. লেখক কেবল এক আমেরিকার এক মরুপ্রদেশ লইয়৷ পূৰ্ব্বোক্ত কথাগুলি বলিয়াছেন। পৃথিবীর অপর অংশের মরুভূমি গুলি এই প্রকারে বিস্তারলাভ করিতেছে কি না, সে সম্বন্ধে কোন কথাই শুনা যায় নাই । ৩। বৃহস্পতির অষ্টম উপগ্রহ । গ্রহরাজ বৃহস্পতির কেবল চারিটি উপগ্রহের সহিতই আমাদের পরিচয় ছিল। আধুনিক জ্যোতিষ শাস্ত্রের জনক গালিলিয়াে ১৬৯ খৃষ্টাব্দে তাহার স্বহস্তনিৰ্ম্মিত দূরবীণে ঐ চারিটি উপগ্রহকে সৰ্ব্বপ্রথমে দেখিয়াছিলেন। সেই সময় হইতে প্রায় তিনশত বৎসর ধরিশ্বা জ্যোতিষিগণ বৃহস্পতির অনুচরের সংখ্যা চারিটি বলিয়াই জানিয়া আসিতেছিলেন। গত ১৮৯২ সালে হঠাৎ সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল, সুবিখ্যাত আমেরিকান জ্যোতিষী বার্নাড সাহেব সেই চারিটি উপগ্রহের নিকটে আর একটি অতি ক্ষুদ্র জ্যোতিষ্কের সন্ধান পাইয়াছেন। গণনায় সেটিকে বৃহস্পতির উপগ্রহ বলিয়া সিদ্ধান্ত করা হইয়াছিল। ইহার পর কয়েক বৎসর আর বৃহস্পতি-পরিবারের নূতন খবর পাওয়া যায় নাই। আজ তিন বৎসর হইল, হঠাৎ একদিন শুনা গিাছিল গ্রহরাজের আরো ছ'টি নুতন অনুচরের সাক্ষাৎ পাওয়া গেছে। এই ষষ্ঠ ও সপ্তম উপগ্রহের আবিষ্কারও ף (אס মার্কিন জ্যোতিষিগণের চেষ্টায় স্বসম্পন্ন হইয়াছিল। প্রসিদ্ধ আমেরিকান জ্যোতিৰী পেরিন (Perrine) সাহেব লিঙ্ক মানমন্দিরের বৃহৎ দূরবীণের সাহায্যে উভয়কেই আবিষ্কার করিয়াছিলেন। অষ্টম উপগ্রহটির আবিষ্কারের গৌরব এবারে ইংলণ্ডের ভাগে পড়িয়াছে। গ্রীনউইছ মানমন্দিরের জ্যোতিী অধ্যাপক কুমেলিন (Crommelin) ইহার আবিষ্কৰ্ত্তা। গ্যালিলিয়োর চারিটি উপগ্রহ আবিষ্কার হওয়ার পরও তিনটি নুতন ক্ষুদ্র উপগ্রহের সন্ধান পাইয়া, বৃহস্পতির আরো ক্ষুদ্র সহচর আছে বলিয়া আধুনিক জ্যোতিষিগণের মনে হইয়াছিল। এজন্য কয়েক বৎসর ধরিয়া বৃহস্পতিক্ষেত্র শত শত জ্যোতিষীর লক্ষ্যস্থল হইয় পড়িয়াছিল। জ্যোতিষিগণ বড় বড় দূরবীণ দ্বারা বৃহস্পতিকে সন্ধান করিয়া যন্ত্রসংলগ্ন ফটোগ্রাফের ক্যামেরায় তাহার ছবি উঠাইতেন। কাচফলকে বৃহস্পতি ও তাহার অনুচরগুলির ছবি উঠিত, এবং সঙ্গে সঙ্গে সেইস্থানের শত শত ছোট বড় নক্ষত্রের চিত্রও অঙ্কিত হইয়া যাইত। চিত্রস্থ বছজ্যোতিদ্ধের মধ্যে কোনটি নক্ষত্র এবং কোনটিই বা উপগ্রহ তাহা স্থির করা কঠিন নয়। আকাশের সর্বাংশের নক্ষত্রগুলির ফোটোগ্রাঙ্ক ছবি প্রত্যেক জ্যোতিষীরই হাতের গোড়ায় থাকে। এই নক্ষত্রচিত্রের সহিত নূতন নক্ষত্রচিত্র মিলাইয়া দেখিলেই কোন নূতন জ্যোতিষ্ক চিত্রে স্থান পাইয়াছে কি না সহজে ধরা যায়। গ্রীনউইচের জনৈক জ্যোতিষী দূরবীন ও ক্যামেরার দ্বারা বৃহস্পতিক্ষেত্রের এক ছবি প্রস্তুত করিয়া, নাক্ষত্রিক চিত্রের সহিত তাহাকে মিলাইতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। উভয় চিত্র ঠিক্‌ মিলিয়া গিয়াছিল, এবং সাতটি উপগ্রহসহ বৃহস্পতিকে চিত্রে স্বম্পষ্ট দেখা গিয়াছিল। কিন্তু একটি . অতিক্ষুদ্র নূতন জ্যোতিষ্কের ছবি কাচফলকে কিপ্রকারে মুদ্রিত হইয়া পড়িল, পৰ্য্যবেক্ষক তাহ স্থির করিতে পারেন নাই। এই সময়ে অধ্যাপক কুমেলিন ছবিখানিকে লইয়৷ অনুসন্ধান আরম্ভ করিয়াছিলেন, এবং ইহারি পরীক্ষায় ছবির জ্যোতিষ্কটি যে সত্যই বৃহস্পতির একটি নূতন উপগ্রহ তাহা নিঃসন্দেহে স্থির হইয়া গিয়াছিল। ক্রমেলিন সাহেব প্রথমে মনে কুরিয়াছিলেন, সম্ভবতঃ নূতন জ্যোতিষ্কটি কোন ক্ষোষ্টি-গ্ৰহ (Asteroids)