পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>8 বিবাহের কথা বলিতে পারেন নাই। গোরার কারাবাসসম্বন্ধে তাহার মন বিষম ছিল বলিয়া তিনি নিরস্ত ছিলেন। আজ রবিবার ছিল- গৃহিণী মহিমের সাপ্তাহিক দিবানিদ্রাটি সম্পূর্ণ হইতে দিলেন না। বিনয় নূতন প্রকাশিত বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন লইয়া আনন্দময়ীকে শুনাইতেছিল--পানের'ডিবা হাতে লইয়া সেইখানে আসিয়া মহিম তক্তপোষের উপরে ধীরে ধীরে বসিলেন । প্রথমত বিনয়কে একটা পান দিয়া গোরার উচ্ছৃঙ্খল নিৰ্ব্বদ্ধিতা লইয়া বিরক্তি প্রকাশ করিলেন। তাহার পরে তাহার থালাস হইতে আর কয়দিন বাকি তাহ আলোচনা করিতে গিয়া অত্যন্ত অকস্মাৎ মনে পড়িয়া গেল যে, অন্ত্রান মাসের প্রায় অৰ্দ্ধেক হইয়া আসিয়াছে। কহিলেন “বিনয়, তুমি যে বলেছিলে, অস্ত্রান মাসে তোমাদের বংশে বিবাহ নিষেধ আছে সেটা কোনো কাজের কথা নয়। একেত পাজি পুথিতে নিষেধ ছাড়া কথাই নেই তার উপরে যদি ঘরের শাস্ত্র বানাতে থাক তাহলে বংশ রক্ষা হবে কি করে ?” . বিনয়ের সঙ্কট দেখিয়া আনন্দময়ী কহিলেন “শশিমুখীকে এতটুকু বেলা থেকে বিনয় দেখে আসচে-ওকে বিয়ে করার কথা ওর মনে লাগচে না ; সেই জন্যেই অস্ত্রান মাসের ছুতো করে বসে আছে।” মহিম কহিলেন—“সে কথা ত গোড়ায় বল্লেই হত।” আনন্দময়ী কহিলেন “নিজের মন বুঝতেও যে সময় লাগে। পাত্রের অভাব কি আছে মহিম ! গোরা ফিরে আমুক—সে ত অনেক ভাল ছেলেকে জানে—সে একটা ঠিক করে দিতে পারবে।” মহিম মুখ অন্ধকার করিয়া কহিলেন—“ছ !” থানিকক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন, তাহার পরে কছিলেন—“ম, তুমি যদি বিনয়ের মন ভাঙ্গিয়ে না দিতে তাহলে ও একাজে আপত্তি করত না ।” বিনয় ব্যস্ত হইয়া কি একটা বলিতে যাইতেছিল, আনন্দময়ী বাধা দিয়া কহিলেন—“তা সত্য কথা বলচি মহিম, আমি ওকে উৎসাহ দিতে পারি নি। বিনয় ছেলেমানুষ, ও হয়ত না বুঝে একটা কাজ করে বসতেও পারত, কিন্তু শেষকালে ভাল হত না ।” প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। আনন্দময়ী বিনয়কে আড়ালে রাথিয়া নিজের পরেই মহিমের রাগের ধাক্কাটা গ্রহণ করিলেন। বিনয় তাহ বুঝিতে পারিয়া নিজের দুৰ্ব্বলতায় লজ্জিত হইয় উঠল। সে নিজের অসন্মতি স্পষ্ট করিয়া প্রকাশ করিতে উদ্যত হইলে মহিম আর অপেক্ষ না করিয়া মনে মনে এই বলিতে বলিতে বাহির হইয়া গেল যে, বিমাতা কখনো আপন হয় না। মহিম যে একথা মনে করিতে পারেন এবং বিমাতা বলিয়া তিনি যে সংসারের বিচারক্ষেত্রে বরাবর আসামী শ্রেণীতেই ভূক্ত আছেন আনন্দময়ী তাহা জানিতেন। কিন্তু লোকে কি মনে করিবে একথা ভাবিয়া চলা তাহার অভ্যাসই ছিল না। যেদিন তিনি গোরাকে কোলে তুলিয়া লইয়াছেন সেইদিন হইতেই লোকের আচার লোকের বিচার হইতে র্তাহার প্রকৃতি একেবারে স্বতন্ত্র হইয়া" গেছে। সেদিন হইতে তিনি এমন সকল আচরণ করিয়া আসিয়াছেন যাহাতে লোকে তাহার নিন্দাই করে। র্তাহার জীবনের মৰ্ম্মস্থানে যে একটি সত্যগোপন তাহাকে সৰ্ব্বদা পীড়া দিতেছে, লোকনিন্দায় তাহাকে সেই পীড়া হইতে কতকটা পরিমাণে মুক্তিদান করে। লোকে যখন তাহাকে খৃষ্টান বলিত তিনি গোরাকে কোলে চাপি৷ ধরিয়া বলিতেন—ভগবান জানেন খৃষ্টান বলিলে আমার নিন্দ হয় না।—এমনি করিয়া ক্রমে সকল বিষয়েই লোকের কথা হইতে নিজের ব্যবহারকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লওয়া তাহার স্বভাবসিদ্ধ হইয়াছিল। এই জন্ত মহিম তাহাকে মনে মনে বা প্রকাশ্যে বিমাতা বলিয়া লাঞ্ছিত করিলেও তিনি নিজের পথ হইতে বিচলিত হইতেন না। আনন্দময়ী কহিলেন, “বিহু, তুমি পরেশ বাবুদের বাড়ি অনেক দিন যাও নি।” বিনয় কহিল, “অনেক দিন আর কই হল ?” আনন্দময়ী। ষ্টীমার থেকে আসার পরদিন থেকে ত একবারও যাও নি। - সেও ত বেশিদিন নহে। কিন্তু বিনয় জানিত মাঝে পরেশ বাবুর বাড়ী তাহার যাতায়াত এত বাড়িয়াছিল যে আনন্দময়ীর পক্ষেও তাহার দর্শন দুর্লভ হইয়া উঠিয়া, ছিল। সে হিসাবে পরেশ বাবুর বাড়ি অনেক দিন যাওয়া t o -

༨་ཛོམས་ 线 7 o ৮ম সংখ্যা । ] হয় নাই এবং লোকের তাহা লক্ষ্য করিবার বিষয় হইয়াছে तtछे ! বিনয় নিজের ধুতির প্রাস্ত হইতে একটা স্থত ছিড়িতে চিঁড়িতে চুপ করিয়া রহিল। এমন সময় বেহার আসিয়া খবর দিল, “মাজি, কঁহাসে মায়ীলোক আয় ।” বিনয় তাড়াতাড়ি উঠিয় দাড়াইল । কে আসিল, কোথা হইতে আসিল, খবর লইতে লইতেই মুচরিতা ও ললিতা ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। বিনয়ের ঘর ছাড়িয়া বাহিরে যাওয়া ঘটিল না ; সে স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইয়া রছিল। দুজনে আনন্দময়ীর পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল। ললিতা বিনয়কে বিশেষ লক্ষ্য করিল না ; সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া কহিল, “ভাল আছেন ?” আনন্দময়ীর দিকে চাহিয়া কহিল—“আমরা পরেশ বাবুর বাড়ি থেকে আসচি।” আনন্দময়ী তাহাদিগকে আদর করিয়া বসাইয়া কহিলেন, "আমাকে সে পরিচয় দিতে হবে না। তোমাদের দেখি নি, মা, কিন্তু তোমাদের আপনার ঘরের বলেই জানি।” দেখিতে দেখিতে কথা জমিয়া উঠিল। বিনয় চুপ করিয়া বসিয়া আছে দেখিয়া সুচরিতা তাহাকে আলাপের মধ্যে টানিয়া লইবার চেষ্টা করিল ;–মৃদ্ধস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি অনেক দিন আমাদের ওখানে যান নি যে ।” বিনয় ললিতার দিকে একবার দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া লইয়া কহিল,—“ঘন ঘন বিরক্ত করলে পাছে আপনাদের cप्रश् शंद्रांझे भटन ७झे उग्न झग्र ।” স্বচরিতা একটু হাসিয়া কহিল—“স্নেহও যে ঘন ঘন বিরক্তির অপেক্ষ রাখে সে আপনি জানেন না বুঝি ?” আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ও খুব জানে মা! কি বলা তোমাদের—সমস্ত দিন ওর ফরমাসে আর আব্দারে আমার যদি একটু অবসর থাকে!” এই বলিয়া স্নিগ্ধদৃষ্টি দ্বারা বিনয়কে নিরীক্ষণ করিলেন। বিনয় কহিল, “ঈশ্বর তোমাকে ধৈৰ্য্য দিয়েছেন, আমাকে দিয়ে তারই পরীক্ষা করিয়ে নিচ্চেন ।” স্বচরিত ললিতাকে একটু ঠেলা দিয়া কহিল, “শুনচিস গোরা। SAASAASAASAAMSMMASAMMAMMAMMMMMSMMSMMSMMSMMSMSMS 8>(t ভাই ললিত, আমাদের পরীক্ষাটা বুঝি শেষ হয়ে গেল! পাস করতে পারি নি বুঝি ?” ললিতা এ কথায় কিছুমাত্র যোগ দিল না দেখিয়া আনন্দময়ী হাসিয়া কেহিলেন,-“এবার আমাদের বিস্তু নিজের ধৈৰ্য্যের পরীক্ষা করচেন। তোমাদের ওযে কি? চক্ষে দেখেচে সে ত তোমরা - জান না। - সন্ধেবেলায়তোমাদের কথা ছাড়া কথা নেই। আর পরেশ বাবুর কথা উঠলে ও ত একেবারে গলে যায়।” - আনন্দময়ী ললিতার মুখের দিকে চাহিলেন, সে খুব জোর করিয়া চোখ তুলিয়া রাখিল বটে, কিন্তু বৃথা লাল श्ब्रा खेठेिण । আনন্দময়ী কছিলেন, “তোমার বাবার জন্তে ও কক্ত লোকের সঙ্গে ঝগড়া করেচে। ওর দলের লোকেরা ত ওকে ব্রাহ্ম বলে জাতে ঠেলবার জো করেচে। বিহু, অমন অস্থির হয়ে উঠলে চলবে না বাছা-সত্যি কথাই বলচি। . এতে লজ্জা করবারওত কোনো কারণ দেখিনে। কি বল মা !” - এবার ললিতার মুখের দিকে চাহিতেই তাহার চোখ নামিয়া পড়িল । সুচরিতা কহিল, “বিনয় বাবু যে আমাদের আপনার লোক বলে জানেন সে আমরা খুব জানি– কিন্তু সে যে কেবল আমাদেরই গুণে তা নয়, সে ওঁর নিজের ক্ষমতা ।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ঠিক বলতে পারিনে মা। ওকে ত এতটুকুবেলা থেকে দেখচি, এত দিন ওর বন্ধুর মধ্যে এক আমার গোরাই ছিল ; এমন কি, আমি দেখেছি ওদের নিজের দলের লোকের সঙ্গেও বিনয় মিলতে পারে না। কিন্তু তোমাদের সঙ্গে ওর ছ’দিনের আলাপে . এমন হয়েছে যে আমরাও ওর আর নাগাল পাইনে। ভেবেছিলুম এই নিয়ে তোমাদের সঙ্গে ঝগড়া করব কিন্তু এখন দেখতে পাচ্চি আমাকেও ওরই দলে ভিড়তে হবে। তোমরা সক্কলকেই হার মানাবে।” এই বলিয়া আনন্দময়ী একবার ললিতার ও একবার স্বচরিতার চিবুক স্পর্শ করিয়া অঙ্গুলি দ্বারা চুম্বন গ্রহণ করিলেন। - - - সুচরিতা বিনয়ের দুরবস্থা লক্ষ্য করিয়া সদয়চিত্ত্বে