পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२० ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম । (জি-লে-লাঙ্কোর-ফরাসী হইতে ) ধৰ্ম্মও দর্শনের দিক দিয়া দেখিলে—ক্লীবলিঙ্গ ব্ৰহ্ম সম্বন্ধে অতীন্দ্রিয় ধারণা, এবং সমাজ ও রাষ্ট্রনীতির দিক দিয়া দেখিলে-বৰ্ণভেদ প্রথা—এই দুই লইয়াই ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম । ভারতের এই গৌরবোজ্জল যুগে, সভ্যতার যেরূপ বিকাশ ও উন্নতি হইয়াছিল তাহ বাস্তবিকই অতালুত। এই প্রবন্ধের সংকীর্ণ পরিসরের মধ্যে, সবিস্তারে আমি কিছুই বলিতে পারিব না ; এই যুগ সম্বন্ধে শুধু একটা আভাস দিবার জন্য, আমি ঐ যুগের কতকগুলি সাহিত্যিক কীর্তির উল্লেখ করিব মাত্র। মহাকাব্য-বিভাগে, মহাভারত ও রামায়ণ–এই দুইটি প্রধান গ্রন্থ ; মহাভারতে ২৫০,• • • শ্লোক আছে। তাহার পর পুরাণ। নাট্য-বিভাগে, কালিদাস ও ভবভূতির নাটকাবলী, মৃচ্ছকটিক বিশেষরূপে উল্লেখ যোগ্য। তাহার পর গীতি কাব্য—মেঘদূত ও গীত গোবিন্দ ; আখ্যায়িকা—পঞ্চতন্ত্র। পাণিনীয় ব্যাকরণ ও তাহার অনেকগুলি ভাষ্য ; তাছাড়া অলঙ্কার, ছন্দ ও হ্যায়শাস্ত্র সম্বন্ধেও অসংখ্য গ্রন্থের উল্লেখ করা যাইতে পারে। বিজ্ঞান-বিভাগে, জ্যোতিষের অনেকগুলি গ্রন্থ আছে। পাটীগণিত, দাশমিক সংখ্যাঙ্ক, ও বীজগণিতের উদ্ভাবনার জন্য আমরা হিন্দুদিগের নিকট ঋণী। আরবের আমাদের জন্য আর কিছুষ্ট করে নাই, কেবল ঐ সকল বিষ্ঠা হিন্দুদের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়া, আমাদের নিকট প্রচার করিয়াছে মাত্র। সৰ্ব্বশেষে, মনুসংহিতা কিংবা মানব-ধৰ্ম্মশাস্ত্র এবং যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি অন্যান্য ব্যবস্থা-গ্রন্থ ; (ভারতবর্ষে এইরূপ ৫৬টি কিংবা ততোধিক গ্রন্থ পাওয়া যায় ),–এই সকল গ্রন্থ হইতে, ভারতবর্ষের সভ্যতা যে চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হইয়াছিল এবং উহ যে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন—ইহাই সপ্রমাণ হয়। যে জষ্টিনিয়ানের সংহিতা আমরা এক্ষণে অনুসরণ করি, উহার কিয়দংশ মনুসংহিতার আক্ষরিক অনুবাদ মাত্ৰ ; এক্ষণে এই ‘পরমাশ্চর্য সংহিতাথানি, ব্রাহ্মণ্য-মহিমার সাক্ষীরূপে বিদ্যমান রহিয়াছে। মনুসংহিতার বিশোধিত সংস্করণ-William - Jones, Chezy, Loeseleur ' Delonchamps কর্তৃক, আমাদের যুগের পূৰ্ব্বে, ত্রয়ো প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ । দশ শতাব্দী হইতে প্রকাশিত হইতে আরম্ভ হইয়াছে। যে বেদের উপর এই সংহিতা প্রতিষ্ঠিত সেই বেদেরই ষ্ঠায় ইহা ভারতে পূজিত হইয়া আসিতেছে এবং আজিকার দিনেও এই সংহিতাটি একটি পরম পরিত্র শাস্ত্রগ্রন্থ বলিয়৷ পরিগণিত। এই সংহিতা ১২ অধ্যায়ে বিভক্ত এবং ইহার মধ্যে, ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয়, রাষ্ট্রসম্বন্ধীয়, সমাজসম্বন্ধীয় তাবৎ বিষয়ের আলোচনা সন্নিবিষ্ট আছে। আমার বিবেচনায়, এরূপ গুরুতর ও প্রামাণিক গ্রন্থকে শুধু বিশ্লেষণ করিয়া দেখান অপেক্ষা, উহা হইতে বচন সকল উদ্ধত করিয়া দিলে আরও সমুচিত হইবে। আমি যে অনুবাদ অবলম্বন করিয়া বচন সকল উদ্ধত করি: cwfk, stel Loiseleur-Deslonchamps-M statt; William-Jones-R estattFR Fife's Exta foi stig এবং ইহা মূলের যথাযথ অনুবাদ । প্রথম অধ্যায়ে ( প্রকৃত হিন্দু সৃষ্টি প্রকরণ ) ব্রহ্মের অতীন্দ্রিয় স্বরূপ এই বচনে পরিব্যক্ত হইয়াছে :–“এই বিশ্বজগৎ এককালে তমসাচ্ছন্ন ছিল—অচিন্ত্য অবিজ্ঞের রূপে-প্রস্বগু রূপে সৰ্ব্বত্র প্রসারিত ছিল। অনন্তর স্বাস্তু অব্যক্ত ভগবান মহাভূতাদিতে শক্তি প্রয়োগ করিয়া, এই বিশ্বসংসারকে প্রকাশ করিলেন এবং অন্ধকার বিনাশ করিয়া স্বয়ং আবির্ভূত হইলেন। যিনি অতীন্দ্রিয়গ্রান্ত স্বঙ্গ, অব্যক্ত, সনাতন, সৰ্ব্বভূতময়, অচিন্ত্য, তিনি স্বয়ং প্রাছড়ত হইলেন। তিনি স্বকীয় শরীর হইতে বিবিধ প্রজা স্মৃষ্টির ইচ্ছা করিয়া, ধ্যান মাত্রে জলের স্মৃষ্টি করিলেন এবং তাহাতে বীজ অৰ্পণ করিলেন।" তিন সহস্ৰ বৎসর পরে, জাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে Darwin যে মতবাদ প্রকাশ করিয়াছেন, নিম্নলিখিত বচনে তাহার আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায় :-( ১৯, শ্লোক) “মহত্তত্ব, অহঙ্কার তত্ত্ব এবং পঞ্চতন্মাত্র এই সাতটি মহাবীৰ্য্য পুরুষশক্তিবিশিষ্ট পদার্থের সূক্ষ্ম মাত্র হইতে এই জগতের স্বষ্টি হইয়াছে—অব্যয় ও অদ্বয় কারণ হইতেই এই জগৎ উৎপন্ন।” ( ২০ শ্লোক )—“এই সকল মহাভূতের মধ্যে প্রত্যেকে পর-পর পূৰ্ব্ব-পূৰ্ব্বের গুণ গ্রহণ করে-পর্যায়ের মধ্যে যে যত দূর, তাহার গুণ সেই পরিমাণে অধিক।" মনুসংহিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে, দ্বিজদিগের সংস্কার ও T | ৮ম সংখ্যা । ] কথা আলোচিত হইয়াছে। দ্বিজ শব্দের অর্থ– দুইবার জাত। পূত জলে স্নান করাইয়া, মস্ত্রোক্ষারণ সহকারে, মধু ও ঘৃত শিশুর ওষ্ঠে স্থাপন করিয়া, প্রথম তিন বর্ণের দ্বিজত্ব অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়। তাহার পর, তিন বৎসর বয়ঃক্রমকালে, শিশুর চুড়াকরণ, পরে ১৬ হইতে ২৪ বৎসর বয়সে, দ্বিজ জাতির নিয়মানুসারে উপনয়ন হইয়া থাকে। এই তিনটি অনুষ্ঠান কিংবা সংস্কার দীক্ষার জন্ত নিতান্তই আবশুক । বচনগুলি এই –( ২৯ শ্লোক ) “বালক জন্মিবামাত্র নাড়ীচ্ছেদের পূৰ্ব্বে তাহার জাত কৰ্ম্ম নামক সংস্কার করা বিধেয় ; তৎকালে স্বগৃহোক্ত মন্থে তাহাকে স্বর্ণ, মধু ও ঘৃত ভোজন করাইতে হয়।” (২৭ শ্লোক )—“গর্ভকালীন গর্ভাধানাদি সংস্কার, জাতকৰ্ম্ম, চুড়াকরণ ও উপনয়নাদি সংস্কার দ্বারা দ্বিজাতিগণের বীজ ও গর্ভজন্ত পাপসমূহ ক্ষয় হইয়া থাকে।” (৬৬ শ্লোক )—ীলোকদের দেহশুদ্ধির জন্ত সমুদায় সংস্কারই যথাকালে এবং যথাক্রমে বিধেয়-পরস্তু ঐ সকল অনুষ্ঠান আমন্ত্ৰক হইবে। (৬৭ শ্লোক )—“বিবাহ সংস্কারই স্ত্রীলোকের বৈদিক উপনয়ন-সংস্কার ।” এইরূপে, জাতকৰ্ম্ম, চূড়াকরণ, ও বিশেষত উপনয়ন— এই তিনটি দ্বিজ জাতির দ্বিজত্বের চিহ্ন—এবং এই সকল অনুষ্ঠানের দ্বারাই দ্বিজের দেহশুদ্ধি হইয়া থাকে। ব্ৰহ্মচারীর পক্ষে অর্থাৎ “থিয়লজির" ছাত্রের পক্ষে যে সকল কৰ্ত্তব্য নিৰ্দ্ধারিত আছে তন্মধ্যে চিত্তশুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়নিগ্ৰহ সৰ্ব্বপ্রধান। ( ৯৫ শ্লোক )—“যে জন - সমস্ত কামনার বিষয় প্রাপ্ত হইয়াছেন, আর যে জন সমস্ত কাম্য বিষয় ত্যাগ করিয়াছেন,—এই উভয়ের মধ্যে ত্যাগবান পুরুষকেই শ্ৰেষ্ঠ বলা যায়।" (৯৩)—“ইন্দ্রিয়গণের বিষয়ুপ্রসক্তি হইতেই মনুষ্য দূষিত হইয়া থাকে, ইহাতে সন্দেহ নাই ; তাহাদিগকে সংযম করিতে পারিলেই সিদ্ধিলাভ করা বায় " (৯৭)—“বেদ বল, দান বল ; ষজ্ঞ নিয়ম তপস্তাদি যে কোন পুণ্য কাৰ্য্য বল ; এ সকল স্বভাবইষ্ট ব্যক্তিকে কখনই সিদ্ধি প্রদানে সমর্থ হয় না।” হিন্দুদের চক্ষে, একমাত্র জ্ঞানই ( জ্ঞান অর্থে প্রধানত বেদবেদাঙ্গের জ্ঞানকেই বুঝায় ) মমুষ্যের শ্রেষ্ঠতা স্থাপন R ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম । 8、> করে। (১৫৩)—“কারণ, অজ্ঞ ব্যক্তি বৃদ্ধ হইলেও বালক। যিনি জ্ঞানোপদেষ্ট তিনি বালক হইলেও পিতৃবং পূজনীয়। অজ্ঞ ব্যক্তিকে যে বালক বলা যায় এবং দেবতাদিগকে যে পিতা বলা যায়, ইহা অতি পুৰ্ব্বকাল হইতেই প্রসিদ্ধ আছে।” (১৫৪)—“বয়সে, শুক্ল কেশে, ধনে কিংবা বন্ধু বান্ধবে বড় হওয়া যায় না। যিনি বেদ বেদাঙ্গে অভিজ্ঞ, ঋষিরা তাহাকেই মহৎ পলিয়াছেন।” ব্রাহ্মণদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। (১৫৬)–“মস্তকের কেশ পাকিলেই যে বৃদ্ধ হয় ७शन নছে, কিন্তু যিনি যুবা হইয়াও বিদ্বান, দেবতারা তাহাকেই বৃদ্ধ বলেন।” (১৫৭) “যেমন কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত হস্তী, যেমন চৰ্ম্মনিৰ্ম্মিত মৃগ, সেইরূপ বেদহীন ব্রাহ্মণ।” (১৪৫)—“দশজন উপাধ্যায় অপেক্ষা, একজন আচার্যের গৌরব অধিক। একশত আচাৰ্য্য অপেক্ষ পিতার গৌরব অধিক এবং সহস্র পিতা অপেক্ষ মাতার গৌরব অধিক।” '(১৪৬)–“যিনি সংস্কারাদি করেন নাই, কেবল মাত্র জন্মদাতা, এবং যিনি সাঙ্গ বেদ প্রদান করেন—এই উভয়েই পিতা বটেন, কিন্তু তন্মধ্যে বেদপ্রদ পিতাই শ্ৰেষ্ঠ। কারণ দ্বিজগণের দ্বিতীয় জন্ম বা ব্ৰহ্মজন্মই ইহপরকাল সৰ্ব্বত্রই শাশ্বত।” (১৫০)—“যিনি বেদঅধ্যাপনাদি দ্বারা ব্ৰহ্মজন্মের কারণ হন, যিনি বেদাদিব্যাখ্যান দ্বারা স্বধৰ্ম্মের উপদেশ করেন,-বালক হইলেও, তিনি ধৰ্ম্মত: বৃদ্ধের পিতা।” নিম্নলিখিত উপদেশ গুলিতে অতীব উচ্চভাব মুদ্রিত রহিয়াছে। (১৬২)–“ব্ৰাহ্মণ ঐহিক সম্মানকে যাবজ্জীবন বিষের দ্যায় জ্ঞান করিবেন এবং অবমাননাকে সৰ্ব্বদা অমৃতের স্তায় আকাজ করবেন।” (১৬১–“একান্ত পীড়িত হইলেও অন্তের . মৰ্ম্মপীড়ন করা উচিত নয় ; যাহাতে, পরের অনিষ্ট হয়, এমন কোন কৰ্ম্ম বা চিন্তা করিতে নাই এবং ষে কথা বলিলে লোকের উদ্বেগ জন্মে, পরলোক-বিরোধী এমন বাক্য উচ্চারণ করিতে নাই।” (২২৭)-“পিতা মাতা ষে ক্লেশ সহ করেন, পুত্র শত বৎসরেও স্তাহ পরিশোধ করিতে সমর্থ হয় না।” এই অধ্যায়ে, দুইটি খুব উচ্চভাবের শ্লোক আছে :-মাতাপিত অপেক্ষ সহস্ৰগুণুে পূজনীয় এবং শত শত বৎসর সেবা করিলেও, সন্তান সে ধার শুধিতে