পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- - - 8.98

  • প্রবাসী।

[ ৮ম ভাগ। -- MMMSMMMMMSMMMMMMSMMSMMSMMSMMSMMSMMSMMMMSMMMMMMSMMMAMMMMMMMS এই সময়ে তাহার প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটিল, এবং নানারূপ মুখকল্পনায় একটি প্রস্ফুট কদম্বকুসুমের মত সে রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিতে লাগিল। তখন তাহার প্রেম, জীবনের আদর্শ-গল্পটির কেন্দ্রস্থল—পবিত্র ভালবাসা । অবশু ব্যাবহারিক জীবনে ব্রহ্মবাসিনীর বিবাহিত জীবন যে ঠিক এই আদশেই সব স্থানে চলিয়া থাকে—তাহা নহে। কিন্তু তাই বলিয়া আদর্শের গৌরব ক্ষুণ্ণ হয় কি ? তা যা হৌক, এখন গল্প বলি। চাউছে গ্রামের ( এখন সহর ) একটি বালিকা “মা সোয়ে-উ” প্রতিবাসী বালক "কে সোয়ে-মং"কে বড় ভালবাসে। অবশু বালকও তাহাকে তাহা অপেক্ষা কম ভালবাসে না। এমন কি তাহাদের হৃদয়ের ব্রতই হইল এই যে, জীবনে মরণে দুই জনের প্রেমকে অক্ষুণ্ণ রাথিতে হইবে। যৌবনে দাড়াইয়া দুই জনের বিবাহের কথা আসিল । কিন্তু অর্থ ন হইলে জীবন চলিবে কিরূপে ? তাই বিবাহের পূৰ্ব্বেই অর্থোপার্জনের জন্য কে সোয়ে-মং নিম্ন ত্রহ্মে কাঠের ব্যবসা করিতে তাহার ফিরিবার কথা রহিল। কিন্তু যখন ব্রহ্মের পীযুষরূপ "ইরাবতী” প্রাণপ্রিয়কে লইয়া দ্রুত সাগরের দিকে ছুটিল, তখন মা সোয়ে-উর মনে কেমন যেন একটু অসহায়ের মত ভাব আসিল—যেন মনে হইতে লাগিল প্রিয়ের দৈহিক ছবি দেখার এই বুঝি শেষ। তাহার বক্ষপিঞ্জর ভিন্ন করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ইরাবতীর তটতরু-আন্দোলিত বাতাসের সঙ্গে মিশিয়া গেল। চোখের পতনোন্মুখ অশ্রুবিন্দু সান্ধ্য অন্ধকারে কেহ দেখিতে পাইল না ! এক বৎসর কাটিল। দুই বৎসরও যায়। কে সোয়ে মংএর ফিরিবার কোন লক্ষণ নাই। মা সোয়ে-উ সারাদিন इब्रेकाग्र नियूङ धारक। আর প্রত্যেক দিন প্রভাতে মনে করে—তাহার প্রাণপ্রিয় সেই দিন আসিবে । কিন্তু দিন চলিয়া যায়, প্রাণপ্রিয় ত আসে না ! এদিকে সমস্ত ত্রহ্মের উপরে মাসোয়ে-উর সৌন্দর্যাখ্যাতি ছড়াইয় পড়িয়াছে r যৌবনের রূপ-লাবণ্যে তাহার স্বভাবসুন্দর দেহটুকু ভরপুর। কত দেশ দেশান্তর হইতে তাহার পাণিগ্রহণের নিমিত্ত লোক আসিল। কিন্তু মা সোয়ে-উর হৃদয়ত্ৰত অটল। কেহ তাই টলাইতে পারিল না। গেলেন। বৎসরের মধ্যে চাউছে পাহাড়ের দেশ। কত ছোট বড় পাহাড়ে চাউছেকে রমণীয় করিয়া তুলিয়াছে। সন্ধ্যা হইয়া আসে ;সেই সব পাহাড়ের উপরে দিনাস্তের মধুর হাসি দেবশিশুর মত নৃত্য করিয়া চলিয়া যায়। মা সোয়ে-উ আপনার অন্তরে কেমন একটু ভীতিবিভীষিকা লইয়া সেই সব দেখিতে দেখিতে তাহাদের উপরে ঘুরিয়া বেড়ায় । একদিন একটি পাহাড়ের দেবতা (নাট্= নাথ (?) = প্ৰভু =দেবতা, অপদেবতা প্রভৃতি) মাসোয়ে-উর সৌন্দর্ঘ্যে বিমুগ্ধ হইয়া সুন্দর যুবকের বেশে চাউছে আসিয়া উপস্থিত। অন্যান্য বিবাহার্থীর মত তিনিও মাসোয়েউকে টলাইতে পারিলেন না। র্তাহার সমস্ত প্রণয়বাণী, মূল্যবান দানসামগ্রী এবং এমন কি তাহার দৈবী মায়াও বিফল হষ্টয়া গেল। একদিন দেবতাটি আপনার মানসিক বলে ঠিক পাইলেন-কে সোয়ে মং বাড়ী ফিরিতেছেন, কিন্তু দেবতাটি তাহার কোন অনিষ্ট করিতে কোসোয়ে মংএর কৰ্ম্মফল তাহার জীবনচক্র । অন্যভাবে ঘুরাইয়া দিয়াছে, কোন দেবতার বলই তাহার নিজের মতে ফিরাইতে পারে না ! ভাবিয়া চিন্তিয়া পাগলের মত আবার তিনি মা সোয়ে-উর কাছে উপস্থিত। রমণী যে র্তাহার হইবে না—একথা কিন্তু দেবতার মানসিক বল একবারও পরীক্ষা করিল না। মা সোয়ে-উর কৰ্ম্মফল যেমন ছিল—কাৰ্য্যও তেমনি হইতে লাগিল। দেবতাটি এবারও কত অনুনয় বিনয় করিলেন, মা সোয়ে-উ অটল। কতরূপ ভয় দেখান হইল, কিন্তু ভয় কিসের?--মৃত্যুর ? সে ত অবশুম্ভাবী। মা সোয়ে-উ সেজন্য ভীত নহে। তাই সে নিতান্ত নিৰ্ব্বিকার চিত্তে চরকার কাযে নিযুক্ত রহিল। দেবতাটি আর ধৈর্য্য রাথিতে পারিলেন না। সহসা তিনি ক্রোধে ব্যান্ধের মূৰ্ত্তি ধরিলেন এবং শেষে মা সোয়ে-উকে মুখে লইয়া সুদূর পাহাড়ে প্রস্থান করিলেন। প্রস্থান সময়ে মৃতের বুক স্থানে স্থানে প্রস্তরে ঘর্ষিত হইয়া রক্ত পড়িতে পড়িতে গেল। প্রেমের কি আশ্চৰ্য্য শক্তি ! সেই সব রক্তবিন্দু হইতে সুগন্ধি গীত “ইয়েনা” (ইয়েন্‌--বুক, থা—আঘাত ) কুক্ষম উৎপন্ন হইয়া উঠিল। আজও চাউছের কত পাহাড় পৰ্ব্বত সেই ইয়েলগা কুসুমে পরিপূর্ণ। পারবেন না। কারণ " | X. s l ৮ম সংখ্যা । ] সেই মৃত্যু-রাত্রেই আবার কে সোয়ে মং অনেক দিন পরে বাড়ী ফিরিতেছিলেন। তাহার নৌকার পাল বাতাস পাইয়া আনন্দে ফুলিয়া উঠিতেছিল। অপরাহের বাতাস সূর্য্যের মানায়মান তরল কিরণ-মাথা আকাশের উপর দিয়া চুটিয়া আসিতেছিল-সে কি মধুর। নৌকা-প্রতিহত তরঙ্গবীচির কল-কোলাহলে কত রকম চর্যচিন্তা কে সোয়ে মংএর মনে আনিয়া দিতেছিল। তাহার দৃষ্টি বাহিরে আবদ্ধ থাকিলেও মন কিন্তু তাহার ভিতর দিয়া অন্যত্র উড়িয়া গিয়াছে ! কোথায় ? ঐ যে পাহাড়ের কোলে নিদ্রিত শিশুর মত চাউছে গ্রাম শোভা পাইতেছে, ঐথানে কো সোয়ে মংএর মন উপস্থিত। তিনি দেথিতেছেন—গ্রামবৃদ্ধের একটি বাড়ীতে মিলিয়াছেন। চারিদিকে দীপের আলো রাত্রিকে মধুর করিয়া তুলিয়াছে। “তানেথা”র ( একরকম গন্ধদ্রব্য—বৃক্ষবন্ধল বিশেষ ) গন্ধ, ফুলের গন্ধ, চুরুটের গন্ধ মিশিয়া এক অপূৰ্ব্ব গন্ধপুরী কৃষ্টি করিয়াছে। সেইখানে কে সোয়ে মংএর করতল আর একখানি গৌর মুগোল করতলের উপরে ন্যস্ত— বিবাহের জল পড়িবে পড়িবে !—এমন সময় ঐযে মঙ্গলবাণী বাজিয়া উঠিল!-বাণী ? কই, বঁাশী,ত নহে। যেন কতকগুলি রৌপ্যঘণ্টানিনাদ জল-কোলাহলের সঙ্গে মিশিয়া আসিল । কে সোয়ে মং চমকিয়া উঠিলেন। কই, সে মধুর স্বপ্নদৃগু কই ? সব ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গেল! তিনি দেখিলেন, তাহার নৌকা পূৰ্ব্বমত তীরবেগে ছুটিতেছে। দুষ্ট তটের সান্ধ্য অন্ধকার হাত বাড়াইয়া নদীটাকে জড়াইয়া ধরিতেছে! আকাশে তারা ফুটিতেছে, দূরে কোলাহল থামিয়া যাইতেছে ! কিন্তু ও আবার কি ? শৃষ্ঠে সঙ্গীত হয় কোথায় ? পার্থীরা বুঝি ডাকিয়া যাইতেছে! কিন্তু না, এ সঙ্গীত যে একস্থান হইতেই উখিত! ঢালু আকাশের উপর দিয়া তবে কি ইহা তারকার মুখ হইতে গড়াইয়া পড়িতেছে ? . কি আশ্চৰ্য্য! শুনিতে শুনিতে নদীর শাদা জল অন্ধকারে মিশিয়া গেল—তটতরুশ্রেণী অন্ধকারে একটা বৃহৎ কালো রজুর মত দেখাইতে লাগিল । আবার ওকি আশ্চৰ্য্য ! একটা জমাট কুঙ্কটিক রাত্রির অন্ধকারে নৌকার উপরে আসিয়া বসিল। কুঙ্কটিকা ? জাপানে স্ত্রী-শিক্ষা। - 896. না, ন',-এযে মূৰ্ত্তি! কে সোয়ে মং ধরিতে গেলেন, পৃষ্ঠ মুষ্টির মধ্যে হা-হা করিয়া উঠিল! কিন্তু মূৰ্ত্তিত অপস্থত হয় নাই –এ কি রকম ? আবার তাহার চারিদিকে জোনাকীর মত কতকগুলা জ্যোতিমূৰ্ত্তি ! তারপর কুয়াটিকাবৎ মূৰ্ত্তিটা হাত উঠাইল—তাহার মুখখান যে মা সোয়ে-উর মত !—বলিল, “এস”। আর নাই। সে জোনাকীর মত—সে কুঙ্কটিকার মত মূৰ্ত্তি কোথায় ? সব অন্তৰ্হিত। শুধু অভিনব একটা গন্ধে সে স্থানটি পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল।—সেটা ইয়েনা কুসুমের গন্ধ। কো সোয়ে মং বুঝিলেন—ম সোয়ে-উ আর মর্ত্যজীবনে নাই। তাহার মুখের একটি কথা “প্রিয়ে যাই” আর দীর্ঘনিশ্বাস নৌকার অন্তান্ত আরোহীরা শুনিতে পাইল— তারপর সহসা তাহারা দেখিল তাহার জীবনশূন্ত দেহটি নৌকার উপরে লুষ্ঠিত হইতেছে। - - - - - সেই দিন হইতে কত পথভ্রান্ত পথিক দেখিতে পাইয়াছে—রাত্রির অন্ধকারে, চাউছের পাহাড়ে, ইয়েনগাপুষ্পবিকীর্ণ পথে দেবদেহ দুইটি যুবক ও যুবতী ঘুরিয়া বেড়াইতেছে! এবং তখনি মা সোয়ে-উ ও কো সোরে মংএর মরণজয়ী প্রেমের কথা তাহাদের মনে পড়িয়াছে। শ্ৰীকুমুদ্ৰনাথ লাহিড়ী। জাপানে স্ত্রী-শিক্ষা । অপরাপর প্রাচ্য দেশসমূহের রমণীগণের অবস্থা হইতে জাপানের নারী-সমাজের অবস্থার গুরুতর পার্থক্য পরিলক্ষিত হইয় থাকে। জাপানের সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বের ইতিহাসেও, ভারতবর্ষের গাগী, মৈত্রেী প্রভৃতির ন্তায় তীক্ষুধীশক্তিসম্পন্ন স্থবিখ্যাত রমণীর পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। জাপানী বীরের পাশ্বে জাপানী রমণীকেও সমর-ক্রীড়ানিরত দেখা গিয়াছে। বহুতর স্ত্রী-কবি, ঔপন্যাসিক ও শিল্পী জাপানের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল স্থান অধিকার করিয়া আছেন। জাপানের ভূতপূর্ব মন্ত্রিপ্রবর লিখিয়া গিয়াছেন যে, খৃষ্টীয় নবম শতাব্দী