পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b" ............................--.۔ মুহূৰ্ত্ত পরেই আমার মৃতা পিশিমার আত্ম তাহার শরীরে আবির্ভূত হইলেন। তৎপরেই আমার আত্মীয় উন্মাদিনীর ন্তায় জোরে বলিতে লাগিলেন, “আর সহ হয় না ; তোরা বিশ্বাস করিস না, কোথায় বড় দাদা, কোথায় বাবা, কোথায় প্রিয় কেশব ( ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন ), কোথায় রামমোহন ? নব বিধান, ব্রাহ্ম ধৰ্ম্ম" এরূপ কত মুসংলগ্ন অসংলগ্ন কথা ! শেষে সস্নেহ স্বরে বললেন, “জীবেন, জীবেন, তুইও বিশ্বাস করলি না—” এ রূপ আরও কত কি। এমতাবস্থায় প্রায় আধ ঘণ্টা কাটিয়া গেল। তারপর নানা ঔষধ পত্রাদি ব্যবস্থার পরে আমার আত্মীয়া প্রকৃতিস্থা হইলেন ; কিন্তু প্রাগুক্ত ঘটনার কিছুই তখন তাহার স্মরণ ছিল न 1 ।। - আমরা জাগ্রত অবস্থায় সেই রাত্রি কাটাইতে লাগিলাম, আমার আত্মীয়া প্রথম রাত্রে প্রগাঢ় নিদ্রায় ছিলেন ; তাহার পর রাত্রি যখন ১২ ঘটিকা, তখন তিনি হঠাৎ জাগিয়া উঠিলেন এবং বলিতে লাগিলেন “আমার হাত পা অবশ হইয়া পড়িতেছে, আমার ডানহাতের মধ্য দিয়া যেন কি একটা শক্তি আমার শরীরে প্রবেশ করিতেছে”। অল্পক্ষণ পরেই তাহাৰ শরীরে আমার পিসীমার প্রেতাত্মাটা পুনরায় আবির্ভত হইলেন, এবং আমাদের পারিবারিক অনেক কথা বলিতে লাগিলেন, যাহা এখানে উল্লেখ করা যুক্তিসঙ্গত মনে করি না। কিন্তু এইটুকু বলা আবশ্বক যে, সেই অশরীর আস্থাটা কয়েকটা ব্ৰহ্মসঙ্গীত করিয়া প্রভূত তৃপ্তিলাভ করেন, তারপর তিনি আমাদের সকলের নিকট যথাযোগ্য অভিবাদনাদি করিয়া বিদায় লন। বলা বাহুল্য, এ কার্য্যটা আমার আত্মীয়ার দেহদ্বারাই সম্পন্ন হইয়াছিল। তিনি আমারও মস্তকে হাত দিয়া আশীৰ্ব্বাদ করেন । তারপর আমার কনিষ্ঠ ভাই শ্ৰীমান স্বর্ণকুমারকে বলিলেন “সংসার দুঃখময়, আমি আশীৰ্ব্বাদ করিতেছি তুমি সুখী হইবে, ভবিষ্যতে তুমি একজন সুগায়ক হইবে, এবং তোমার দ্বারা দেশের অনেক কাজ সাধিত হইবে।”... সে আনন্দে উৎফুল্ল হইল। আমার পিসীমার প্রেতাত্মার পরে আমার পিতামহ, পিতামহী এবং সৰ্ব্বকনিষ্ঠ সহোদরের প্রেতাত্মা একে একে উক্ত আত্মীয়ারশরীরে আবির্ভত হইলেন, এবং তাহাদিগের - + - + প্রবাসী। { ৮ম ভাগ। অভিলষিত গুটিকতক কথা বলিয়া প্রস্থান করেন। তাহাদিগের নিকট হইতেও আমি পূৰ্ব্বোক্ত প্রকার আশীৰ্ব্বাদ বা ভবিষ্যদ্বাণী শ্রবণ করিয়াছিলাম ! যাহা হউক তাহার পর হঠাৎ আর একটী প্রেতাত্মার আবির্ভাব হয় । আমি তখন জিজ্ঞাসা করিলাম “তুমি কে?" সে বলিল “আমাকে চিনিতে পারিবে না, আমি একজন মহা পাপী ।” আমি—তথাপি নাম জানিতে চাই । সে-প্যারী। ( আমাদের অতি বিশ্বস্ত পুরাতন মৃত ভৃত্যু ) আমি এই উত্তরে মুহূৰ্ত্ত স্তম্ভিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম । “তুমি কেমন আছ ?” সে-আহে ! কোথায় শাস্তি, কোথায় তৃপ্তি, চারিদিকে ধূ-ধূ-চিতা জলিতেছে। আমি দ্বিতীয়বার দ্বারপরিগ্রহ করিয়াছিলাম, কত আশা করিয়াছিলাম, কত সাধ হইয়া ছিল, কিছুই পূর্ণ হইল না। আমি কতবার চেষ্টা করিয়াছি, তোমাদিগের এই আত্মীয়ার শরীরে প্রবেশ করিব, কিন্তু ইনি শুদ্ধচরিত্রা বলিয়া আমি এতদিন তাহাকে স্পর্শ করিতে পারি নাই। আজ দেখিলাম সকলেই একে একে আসিতেছে, আমিও আসিলাম, আমি আর কিছুতেই যাইব না।!-- আমি-( বাধাদিয়া ) যাইতেই হইবে। মৃে-( সঙ্গোরে) যাইব না ; আমার শসা খাইতে ইচ্ছা করে, মিঠা কুমড়া থাইতে ইচ্ছা করে, থিয়েটার দেখিতে ইচ্ছা করে, সার্কাস দেখিতে ইচ্ছা করে, অহে কি জালা, কি পিপাসা, আমায় একটু চিনি কিম্বা মিত্রর সরবৎ দাও।” অচিরে আমার আদেশে উভয় সরবতই প্রদত্ত হইল! সে-( পান করিয়া ) আহে। কি তৃপ্তি ! কি তৃপ্তি ! তথন আমার আত্মীয়া হঠাৎ প্রকৃতিস্থা হইয়া বলিলেন “কি দুর্গন্ধ, কি দুর্গন্ধ !” কিন্তু পর মুহূর্তে আবার ঐ প্রেতাত্মাটা আসিয়া বলিল—“তোমরা ভূত বিশ্বাস কর কি না বল ; নচেৎ আমি যাইব না। এই তোমাদের আত্মীয়ার দাত ভাঙ্গিয়া দিতেছি ।" আমি--সাধ্য থাকে ভাঙ্গ । দেখিলাম দাত গভীররূপে নিষ্পেষিত হইতেছে ; কিন্তু

৮ম সংখ্যা । ] প্রেতাত্মার চেষ্টা সফল হইল না। তারপর সে পুনরায় বলিতে লাগিল—“আমি তোমাদের কাছে ঋণী, বল তাহ মাপ করিয়াছ কিনা ?” আমি আমাদের পরিবারের প্রতিনিধি স্বরূপে, বলিলাম “তোমার সমস্ত ঋণ, সমস্ত অপরাধ, ক্ষমা করিতেছি, তুমি শাস্তিলাভ কর।” সে—কি শান্তি ! কি শান্তি ! আমি চলিলাম। রাত্রি তখন প্রায় প্রভাত হইয়া আসিয়াছে, আমার আত্মীয়া জ্ঞানলাভ করিলেন ; কিন্তু তিনি অত্যন্ত দুৰ্ব্বলী হইয়া পড়িয়াছেন। - এস্থলে একটি কথা বলা আবশুক । আমার আত্মীয়াট আমার মাতৃদেবীর সহিত এক শয্যাতেই শুইয়াছিলেন। প্রেতাত্মার প্রথম আবির্ভাবেই মাতৃদেবী অভিভূত হইয়া পড়েন। আমরা তাহার জন্ত ব্যস্ত হইয়া উঠিলে, প্রেতাত্মা আমাদিগকে আশ্বাস দিয়া বলেন, “তোমাদের কোন ভয় নাই, আমি চলিয়া গেলেই ইনি সংজ্ঞা লাভ করিবেন। এক্ষণে প্রিয় আত্মীয়াটার এই অবস্থা দেখিয় তাহার কষ্ট হইবে বলিয়া আমিই র্তাহাকে মুছিতা করিয়া রাখিয়াছি। তোমরা তাহাকে একটু বাতাস কর।” তার পর যথাসময়ে সেই প্রেতাত্মাট প্রস্থান কালে আমার মাতৃদেবীর বক্ষে হাত দিয়া “ঈশ্বর, ঈশ্বর, বৌদী, বৌদী, উঠ, জাগ" বলিয়া জ্ঞানদান করিয়া গিয়াছিলেন। অপর প্রেতাত্মাগুলির কার্য্যকলাপ সময়ে তিনি বেশ সজ্ঞানেই অবস্থিতি করিতেছিলেন । ইহার কিছুদিন পর আমার উক্ত আত্মীয়া স্বগৃহে ফিরিয়া যান। হঠাৎ একদিন তাহার পত্রে জানিলাম তিনি কিছুই আহার করিতে পারিতেছেন না, সকল স্থানে, সকল খাদ্য দ্রব্যে বিষ্ঠার দুর্গন্ধ অনুভব করিতেছেন। আমার পিতা ও পিতৃব্য পত্রোত্তরে উপদেশ দিলেন “একান্ত হৃদয়ে পরমেশ্বরে প্রার্থনাশীল হও।” আমি লিথিলাম “আত্মশক্তিতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন কর।” কিছুদিন পরে তাহার আর এক পত্রে অবগত হইলাম তিনি এখন বেশ স্বচ্ছদে আছেন, তাহার আর কোন কষ্ট নাই। কিন্তু ইতিমধ্যে এক অভূতপূৰ্ব্ব ঘটনা ঘটিয়াছে। তিনি একদিন দেবাচনার্থ পুষ্প আহরণে অনুজ্ঞা করিয়া অতি সামান্ত ফুলই প্রাপ্ত হন । ইহাতে তিনি মনে মনে কিছু অসন্তুষ্ট হইয় গৃহস্তরে গমন করেন। সেখানে অদ্ভূত শরীর-সাধন।' SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAMMSMSMSMS 88s দেখিলেন, একথান ক্ষুদ্র কাগজে লেখা আছে, “তোমার জষ্ঠ ফুল অমুক ঘরে আছে।” তৎপর সেখানে যাইয়। দেখিলেন, যথার্থই কতকগুলি গোলাপফুল সুন্দর ভাবে সাজানো রহিয়াছে ; তৎপর অনুসন্ধানে জানিলেন, এ ফুলগুলি ৩৪ মাইল দূরস্থ এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ আনয়ন করিয়াছেন! সেই দিন প্রাতে উক্ত ব্রাহ্মণের হঠাৎ যেন মনে হইল, অমুক জমিদারের পুত্রবধূর ফুলের আবশ্যক। তারপর তিনি কোন দৈবশক্তির বশীভূত হইয় তাহার সাধের বাগান থানি নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও শূন্য করিয়া বৃষ্টির মধ্যে৪, এত দূরে ফুলগুলি স্বয়ং আনয়ন করিয়াছিলেন। আমার বিশ্বাস, ইহা দৈবশক্তির অভিব্যক্তি, কোন সৎ প্রেতাত্মারই প্রেরণা ।” প্রবাসীতে “ভূত নামানো” শীর্ষক প্রবন্ধ দেখিয়া জীবেন্দ্র বাবু আরও বলেন—“এই সকল প্রবন্ধকে "ভূত নামানো ৷ আখ্যায় অভিহিত করা কর্তব্য নহে ; কেননা আমরা "ভূত শব্দটা কতকটা বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্যের ভাবেই সাধারণতঃ ব্যবহার করিয়া থাকি ; সুতরাং এই সকল ব্যাপারকে ‘অশরীরীর আবির্ভাব’ নামেই প্রকাশ করা সঙ্গত।” আমার দ্বারাও ত্রিপাদ টেবিলে অশরীরী আত্মা আকৃষ্ট হইয়াছিল ; কিন্তু তাহাতে তেমন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ন৷ ঘটায় তাহ এ স্থলে লিখিত হইল না ! আমাদিগের বিশেষ অনুরোধ এষ্ট, যেন কোন মহিলা কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া কোনরূপে অশরীরী আত্মাকে আকর্ষণ না করেন ; কেন না তাহাতে ভবিষ্যতে তাছার সমূহ · অনিষ্টেরই বিশেষ সম্ভাবন । - শ্রীকালীশঙ্কর সেন । অদ্ভুত শরীর-সাধন। আমাদের একটা প্রবাদবাক্য আছে, "শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয় ।” অভ্যাস ও অনুশীলনের দ্বারা শারীর প্রকৃতির যে কি অভাবিতপূৰ্ব্ব পরিবর্তন সঙ্ঘটিত হইতে পারে তাহ আমরা প্রসিদ্ধ ইংরেজী মাসিক পত্র strand Magazineএর হুইট প্রবন্ধের সার সঙ্কলন . করিয়া প্রদর্শন করিব। "-- -