পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b-o যাহার কিছু বলিবার নাই, করিবার নাই, ভাবিয়া যাহার কিনারা পাওয়া যায় না, কাদিয়া যাহার অন্ত হয় না, সেই দুঃখ যে কি দুঃখ, তাহা তোমরা বুঝিবে না—সে বুঝিয়া কাজ নাই। আমার ত সবই গেল কিন্তু তবু আপদ চুকিল না। আমার স্বামীপুত্রের মৃত্যুর পর হইতেই দেবররা আমার বিষয়ের প্রতি লোভ দিতেছিল। তাহারা জানিত আমার মৃত্যুর পরে বিষয়সম্পত্তি সমুদয় তাহাদেরই হইবে কিন্তু ততদিন পর্য্যন্ত তাহদের সবুর সহিতেছিল না। ইহাতে কাহারে দোষ দেওয়া চলে না ; সত্যই আমার মত অভাগিনীর বাচিয়া থাকাই যে একটা অপরাধ। সংসারে যাহাদের নানা প্রয়োজন আছে, আমার মত প্রয়োজনহীন লোক বিনাহেতুতে তাহাদের জায়গা জুড়িয়া বাচিয় থাকিলে লোকে সহ করে কেমন করিয়া ! মনোরমা যত দিন বাচিয়াছিল ততদিন আমি দেবরদের কোনো কথায় ভুলি নাই। আমার বিষয়ের অধিকার লইয়া যতদূর সাধ্য তাহদের সঙ্গে লড়িয়াছি। আমি যতদিন বাচি মনোরমার জন্য টাকা সঞ্চয় করিয়া তাহাকে দিয়া যাইব এই আমার পণ ছিল। আমি আমার কন্যার জন্য টাকা জমাইবার চেষ্টা করিতেছি ইহাই আমার দেবরদের পক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিয়াছিল—তাহাদের মনে হইত আমি তাহাদেরই ধন চুরি করিতেছি। নীলকান্ত বলিয়া কৰ্ত্তার একজন পুরাতন বিশ্বাসী কৰ্ম্মচারী ছিল সেই আমার সহায় ছিল । আমি যদি বা আমার প্রাপ্য কিছু ছাড়িয়া দিয়া আপসে নিম্পত্তির চেষ্টা করিতাম সে কোনোমতেই রাজি হইত না—সে বলিত আমাদের হকের এক পয়সা কে লয় দেখিব ! এই হকের লড়াইয়ের মাঝখানেই আমার - কস্তার মৃত্যু হইল। তাহার পরদিনেই আমার মেঝদেবর আসিয়া আমাকে বৈরাগ্যের উপদেশ দিলেন। বলিলেন, বৌদিদি ঈশ্বর তোমার যা অবস্থা করিলেন তাহাতে তোমার আর সংসারে থাকা উচিত হয় না। যে কয়দিন বাচিয়৷ থাক তীর্থে নিয়া ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে মন দাও আমরা তোমার খাওয়া পরার বন্দোবস্ত করিয়া দিব । - আমি আমাদের গুরুঠাকুরকে ডাকিয়া পাঠাইলাম। বসিলাম-ঠাকুর, জাহ দুঃখের হাত হইতে কি করিয়া م _2^ প্রবাসী। متمامی...م. - محم [ ৮ম ভাগ। বঁচিব আমাকে বলিয়া দাও—উঠতে বসিতে আমার কোথাও কোনো সাম্বন নাই—আমি যেন বেড়া-আগুনের মধ্যে পড়িয়াছি, যেখানেই যাই, যেদিকেই ফিরি, কোথাও আমার যন্ত্রণার এতটুকু অবসানের পথ দেখিতে পাই না। গুরু আমাকে আমাদের ঠাকুর ঘরে লইয়া গিয়া কহিলেন, এই গোপীবল্লভই তোমার স্বামী পুত্র কন্যা সবই। ইহার সেবা করিয়াই তোমার সমস্ত শূন্য পূর্ণ হইবে। আমি দিনরাত ঠাকুরঘরেই পড়িয়া রহিলাম। ঠাকুরকেই সমস্ত মন দিবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম—কিন্তু তিনি নিজে না লইলে আমি দিব কেমন করিয়া ? তিনি লইলেন কই ? নীলকান্তকে ডাকিয়া কহিলাম, নীলুদাদা, আমার | জীবনস্বত্ব আমি দেবরদেরই লিথিয়া দিব স্থির করিয়াছি। তাহারা থোরাকীবাবদ মাসে মাসে কিছু করিয়া টাকা দিবে। - নীলকান্ত কহিল, সে কখনো হইতেই পারে না। তুমি মেয়েমানুষ এ সব কথায় থাকিয়ে না। আমি বলিলাম, আমার আর সম্পত্তিতে প্রয়োজন কি ? নীলকান্ত কহিল, তা বলিলে কি হয়! আমাদের বা হক্‌ তাহ ছাড়িব কেন ? এমন পাগলামি করিয়ো না। নীলকান্ত হকের চেয়ে বড় আর কিছুই দেখিতে পা না। আমি বড় মুস্কিলেই পড়িলাম। বিষয় কৰ্ম্ম আমার কাছে বিষের মত ঠেকিতেছে ;–কিন্তু জগতে আমার ঐ একমাত্র বিশ্বাসী নীলকান্তই আছে তাহার মনে আনি ] কষ্ট দিই কি করিয়া ! সে যে বহু দুঃখে আমার ঐ এক ‘হকৃ’ বাচাইয়া আসিয়াছে। শেষকালে একদিন নীলকান্তকে গোপন করিয়া এক থানা কাগজে সহি দিলাম। তাহাতে কি যে লেখা ছিল | তাহা ভাল করিয়া বুঝিয়া দেখি নাই। আমি ভাবিয়া ছিলাম, আমার সই করিতে ভয় কি—আমি এমন কি রাথিতে চাই যাহা আর কেহ কাইয়া লইলে সহ ইল o না। সবই ত আমার শ্বশুরের, তাহার ছেলেরা পাইরে - পাক্ । লেখাপড়া রেজেক্ট হইয়া গেলে আমি নীলকাস্তকে


WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৪, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)

ডাকিয়া কৃছিলাম, নীলুদাদা, রাগ করিয়ে না, আমার বাহা কিছু ছিল লিথিয়া পড়িয়া দিয়াছি, আমার কিছুতেই প্রয়োজন নাই । নীলকান্ত অস্থির হইয়া উঠিয়া কহিল, অ্যা, করিয়াছ কি ! যখন দলিলের খসড়া পড়িয়া দেখিল সত্যই আমি আমার সমস্ত স্বত্বত্যাগ করিয়াছি তখন নীলকাস্তের ক্রোধের সীমা রহিল না। তাহার প্রভূর মৃত্যুর পর হইতে আমার ঐ ‘হক বাচানোই তাহার জীবনের একমাত্র অবলম্বন ছিল। তাহার সমস্ত বুদ্ধি সমস্ত শক্তি ইহাতেই অবিশ্রাম নিযুক্ত ছিল। এ লইয়া মাম্লা মকদ্দম, উকীলবাড়ি স্থাটাইটি, আইন খুজিয়া বাহির করা ইহাতেই সে মুখ পাইয়াছে—এমন কি, তাহার নিজের ঘরের কাজ দেখিবারও সময় ছিল না। সেই হক যখন নিৰ্ব্বোধ মেয়েমানুষের কলমের এক আঁচড়েই উড়িয়া গেল তখন নীলকান্তকে শান্ত করা অসম্ভব হইয়া উঠিল । সে কহিল, যাক এখানকার সঙ্গে আমার সমস্ত সম্বন্ধ চুকিল, আমি চলিলাম। অবশেষে নীলুদাদা এমন করিয়া রাগ করিয়া আমার কাছ হইতে বিদায় হইয়া যাইবে শ্বশুরবাড়ির ভাগ্যে এই কি আমার শেষ লিখন ছিল! আমি তাহাকে অনেক মিনতি করিয়া ডাকিয়া বলিলাম, দাদা, আমার উপর রাগ ক্টরিও না। আমার কিছু জমানে টাকা আছে তাহা হইতে তোমাকে এই পাঁচশো টাকা দিতেছি—তোমার ছেলের বে। যেদিন আসিবে সেইদিন.আমার আশীৰ্ব্বাদ জানাইয়া এই টাকা হইতে তাহার গহনা গড়াইয়া দিয়ে। নীলকান্ত কহিল, আমার আর টাকায় প্রয়োজন নাই। আমার মনিবের সবই যথন গেল তথন ও পাচশো টাকা লইয়া আমার মুখ হইবে না। ও থাক্‌ ! এই বলিয়া আমার স্বামীর শেষ অকৃত্রিম বন্ধু আমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল। আমি ঠাকুরঘরে আশ্রয় লইলাম। আমার দেবরর বলিল, তুমি তীর্থবাসে যাও । আমি কহিলাম আমার শ্বশুরের ভিটাই আমার তীর্থ, আর আমার ঠাকুর যেখানে আছে সেখানেই আমার আশ্রয়। গোরা। . 8b->


কিন্তু আমি যে বাড়ীর কোনো অংশ অধিকার করিয়া থাকি তাছাও তাহাদের পক্ষে অসহ হইতে লাগিল। তাহারা ইতিমধ্যেই আমাদের বাড়ীতে জিনিষপত্র আনিয়া কোন ঘর কে কিভাবে ব্যবহার করিবে তাহ সমস্তই ঠিক করিয়া লইয়াছিল। শেষকালে তাহারা বলিল তোমার ঠাকুর তুমি লইয়া যাইতে পার আমরা তাহাতে আপত্ত্বি করিব না। যখন তাহাতেও আমি সঙ্কোচ করিতে লাগিলাম তথন তাহারা কহিল, এখানে তোমার খাওয়া পরা চলিবে কি করিয়া ? আমি বলিলাম-কেন, তোমরা যা খোরাকী বরাদ কবিয়াছ তাহাতেই আমার যথেষ্ট হইবে। তাহারা কহিল, কই থোরাকির ত কোনো কথা নাই! তাহার পর আমার ঠাকুর লইয়া আমার বিবাহের ঠিক চউত্রিশ বৎসর পরে একদিন শ্বশুর বাড়ী হইতে বাহির হইয়া পড়িলাম। নীলুদাদার সন্ধান লইতে গিয়া শুনিলাম তিনি আমার পূৰ্ব্বেই বৃন্দাবনে চলিয়া গেছেন। গ্রামের তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে আমি কাশীতে গেলাম। কিন্তু পাপমনে কোথাও শাস্তি পাইলাম না। ঠাকুরকে প্রতিদিন ডাকিয়া বলি, ঠাকুর, আমার স্বামী আমার ছেলেমেয়ে আমার কাছে যেমন সত্য ছিল তুমি আমার কাছে তেমনি সত্য হয়ে ওঠ !—কিন্তু কই, তিনি ত আমার প্রার্থনা শুনিলেন না! আমার বুক যে জুড়োয় না, আমার সমস্ত শরীর মন যে কাদিতে থাকে! বাপরে বাপ ! মানুষের প্রাণ কি কঠিন! সেই আটবৎসর বয়সে শ্বশুর বাড়ী গিয়াছি তাহার পরে একদিনের জন্যও বাপের বাড়ী আসিতে পাই নাই। তোমার মায়ের বিবাহে উপস্থিত থাকিবার জন্ত অনেক । চেষ্টা করিয়াছিলাম, কোনো ফল হয় নাই। তাহার পর বাবার চিঠিতে তোমাদের জন্মের সংবাদ পাইলাম, আমার বোনের মৃত্যুসংবাদও পাইয়াছি। মায়ের কোলছাড়া তোদের যে আমার কোলে টানিব ঈশ্বর, এপর্য্যস্ত এমন সুযোগ ঘটান নাই । তীর্থে ঘুরিয়া যখন দেখিলাম মায়া এখনো মন ভরিয়াআছে, কোনো একটা বুকের জিনিষকে পাইবার জন্ত