পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ জমা রহিয়াছে। প্রাচীরগাত্রে হিন্দিভাষায় খোদিত একটা প্রস্তর ফলক রহিয়াছে কিন্তু ইহার অনেক স্থানের অক্ষর একবারেই অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে বলিয়া পাঠ করা যায় না। আলাওল বলিতেছিলেন এ দেশের ঐতিহাসিকগণ বলেন এক সময়ে এই নগরের অধিবাসিগণ কোন দেবতার শাপভ্রষ্ট হইয় প্রস্তর দেহে পরিণত হইয়াছে। উপরুক্ত মূৰ্ত্তিটা এই সহরের অধীশ্বর ছিলেন । এই স্থানে তিনি বাস করিতেন বলিয়া আজও সকলে স্থানটীকে রাজবাড়ী বলিয়৷ থাকে। আরও শুনা যায় এইরূপ অবস্থা প্রায় এক সহস্ৰ বৎসরের পূৰ্ব্বে ঘটিয়াছে। তথা হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া আমীরের নিকট পাচ দিবস অবস্থান করতঃ ভাকরাভিমুখে গমনের চেষ্টা করিতে লাগিলাম । - মহাম্মদ হাফিজল হোসেন । উদ্ভিদের দৃষ্টিশক্তি। বিজ্ঞানতপস্বী আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রমাণ করিয়াছেন যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, চেতনা আছে, অনুভূতি আছে, এমন কি চিন্তা করিবার শক্তিও তাহাদের আছে। উদ্ভিদ ও জীবে পরিণতি পরিমাণে মাত্র তারতম্য নতুবা মূলত উভয়েই প্রাণী। সংপ্ৰতি অধ্যাপক ডারুইন স্বতন্ত্রভাবে গবেষণা দ্বারা এই সত্যে উপনীত হইয়া ভারতীয় আচার্য্যের পোষকতা করিতেছেন। ভারতীয় প্রাচীন ঋষিগণ ওষধির মধ্যে ব্রহ্মসত্তা উপলব্ধি করিয়াছিলেন। সেই জ্ঞানের অনুভব তাহাদেরই বংশধর দ্বারা প্রথম প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণীকৃত হইয়া জগৎকে চমৎকৃত করিয়াছে। এক্ষণে প্রশ্ন উঠিয়াছে, উদ্ভিদ দেখিতে পায় কি না ? এই প্রশ্নের উত্তর দেথা’ শব্দের সংজ্ঞার উপর নির্ভর করিতেছে। কি পরিমাণ আলোকের অনুভূতি দৃষ্টি নামে অভিহিত হইতে পারে ? আলোক-উত্তেজনায় ইন্দ্রিয়-বিশেষের উপযুক্ত সঞ্চরণ দ্বারা সাড়া-দেওয়াই যদি “দেখা হয় তবে উদ্ভিদ নিশ্চয়ই দেখে। কিন্তু যদি বহিঃপদার্থের বিশিষ্ট মূৰ্ত্তির প্রকাশ ও অনুভূতি, দেখা হয়, তবে উদ্ভিদ-রাজ্য এখনো অন্ধ। উদ্ভিদের একজাতীয় পত্র-কোষ ঠিক আমাদের \ প্রবাসী । | [ ৮ম ভাগ । চক্ষুগোলকের মতই আলোকরশ্মি সকলকে কেন্দ্রীভূত ও পরিচালিত করিতে সক্ষম—এই তত্ব সংপ্রতি আন্তি । হইয়াছে। আলোকপাতে উদ্ভিজ্জের উত্তেজনা প্রকাশ ও তৎফলে তাহদের সঞ্চরণশীলতার পরিচয় স্বৰ্য্যমুখী ফুল স্বর্য্যের গতির সহিত ফিরিয়া ফিরিয়া বহুদিন পূর্কেই দি রাখিয়াছে। এক্ষণে এতদপেক্ষা অধিক কিছু জ্ঞান আমাদের হইয়াছে কি না দেখা যাক । কার্ণেগী ইন্সটিটু'শনের উদ্ভিজ্জ-গবেষণা বিভাগের ডিরেকটার ডাক্তার ম্যাকডুগাল (Dr. D. T. Mac dougal, Director of the Department of Botanical research of the Carnegie Institution) বলেন—উদ্ভিদ-জীবনের পক্ষে সম্ভবত আলোকই সৰ্ব্বাপেক্ষা আবখ্যক উপাদান। কারণ, আলোক-রশ্মি হইতেই মুখ্যত উদ্ভিদে শক্তি সঞ্চিত হয় এবং বায়ু ও মৃত্তিক হইতে লৱ | আহাৰ্য্য সকলকে আলোকই উদ্ভিদ-জীবনের উপৰাে | করিয়া গঠন করে। আলোক হইতে শক্তি সঞ্চয় । উদ্ভিদ ইহার সর্বশরীরকে এমন করিয়া আলোকের অঙ্কি। মুখী করিয়া পাতিয়া দেয় যে সে যথোপযুক্তভাবে আলোর গ্রহণ করিতে পারে—যে হেতু আলোকের তীব্রতা ও উদ্ভিদ-শরীরে আলোকপাতের কোণের বিশিষ্টতার উপর আলোক-লব্ধ শক্তি নির্ভর করে। এবং এই আলোক পাতের কোণ ও তীব্রত নিৰ্দ্ধারণ করিবার ক্ষমতা উদ্ভিদের যে আছে তাহ প্রমাণ দেখিয়া অনুমান করিতে বাধা হইতে হয়। জানালা বা দেয়ালের ধারে যে সব গাছ থাকে তাহার এমন করিয়া ঝুঁকিয় আপনাদের পত্রতল প্রসারিত করি। দেয় যেন সব চেয়ে বেশি আলোটা আসিয়া পত্রতলের সহিত সমকোণ করিয়া পড়ে। উদ্ভিদের সৰ্ব্ব অবয়বই আলোক অনুভব করিতে সক্ষম নহে। কিন্তু তাহার সঞ্চাঙ্গই আলোকানুভূতির প্রতিক্রিয়ার সহিত সম্বন্ধযুক্ত। উদ্ভিদের অঙ্গবিশেষ আবৃত করিয়া ফু | প্রমাণ করা যাইতে পারে। . * যদি জানালাশোভা চারাগাছের কাণ্ডের গায়ে টিনের পাত জড়াইয়া আলোকের দিক হইতে ঘুরাইয় দেওয়া । তবে পরদিন দেথা যাইবে যে কাণ্ডটি আলোকের দিনে | ৯ম সংখ্যা । ] উদ্ভিদের দৃষ্টিশক্তি। SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMASMSMSMSMSMS 《 》○ বাকিয়া গিয়াছে। ইহা দ্বারা এই প্রমাণ হয় যে গাছ ভাবে, সেই কল গতিপ্রাপ্ত হয় এবং পত্রগুলিকে এমন কাণ্ডের সাহায্য ব্যতীতও আলোক প্রাপ্ত হয় এবং আলোকানুভূতুির প্রতিক্রিয়াতে ঢাকা কাও বাকিয়া যায়। তৎপরে সেই গাছের ফুলগুলি কালে ঢাকনি দিয়া ঢাকিয়৷ দিলেও দেখা যায় যে গাছ তাহার দৈনিক বরাদ আলোক সংগ্রহের জন্য ঠিক অভ্রান্তভাবেই আলোকের দিকে ঘুরিতে থাকে। অতএব বৃক্ষশরীরের অবশিষ্ট বহিরঙ্গ পাতাই উদ্ভিদের আলোকামুভূতির ইন্দ্রিয়। প্রায় সকল বৃক্ষের পত্রের একটা করিয়া লম্বা দাটা বা রোটা ও একটা চওড়া পাতা থাকে। এই পাতার প্রধান কাৰ্য্য আপনাকে বিস্তৃত করিয়া দিয়া রশ্মিসংগ্রহ করা ও সেই শক্তি পত্রহরিত উৎপাদনে নিয়োজিত করা । পাতার বেঁটা টিনের পাত বা কালো কাপড় দিয়া ঢাকিয়া দিলেও গাছ আলোকের দিকে ঘুরিতে পারে, কিন্তু পত্রফলক ঢাকিয় দিলে গাছ আর আলোকের সন্ধান পায় না, আলোকের দিকে ঘুরে না, গাছ তখন বাস্তবিকই অন্ধীকৃত। কোনো কোনো গাছ তাহাদের কাও ও পাতার বোট দিয়াও অল্প অল্প আলোক অনুভব করিতে পারে। যে সকল গাছের আলোকাসুভবশক্তি খুব তীব্র তাহাদের একটা পত্রফলক অণুবীক্ষণ দিয়া পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে বহিঃত্বককোষের উপরিপৃষ্ঠ বাহিরের দিকে ফোলা— যেন কুৰ্ম্মপৃষ্ঠ আতস কাচের মত আলোকরশ্মিগুচ্ছকে কোষের অভ্যস্তরে কেন্দ্রীভূত করিয়া দেয় এবং নিম্নকোষে চালনা করিয়া পত্রহরিত হইতে আহাৰ্য্য সামগ্ৰী উৎপাদন করিতে নিয়োজিত করে। . . মনে কর এই বহিঃত্বক-কোষ যেন একটা ঘর ( পর পৃষ্ঠায় ক চিত্র দেখ )। তাহার ছাদ কুৰ্ম্মপৃষ্ঠ রোশনদান =(Skylight)-ওয়ালা ও মেঝে কাচের । যখন রশ্মিগুচ্ছ কুৰ্ম্মপৃষ্ঠ রোশন-দানের উপর পড়ে তখন তাহ কেন্দ্রীভূত হইয়া কাচমেঝে ভেদ করিয়া নীচের ঘরে যায় এবং পত্রহরিত টুইতে শর্কর ও অন্তান্ত পদার্থ প্রস্তুত করে। রোশনদানওয়ালা ঘরের পাশদেয়াল আলোক-অনুভবনশীল ; যদি বৃক্ষপত্র অর্থাৎ সমগ্র ইমারত নড়িবার সময় রশ্মি পাশদেয়ালে পড়িয়া আঘাত করে তবে একটি দূরস্থ নড়ন-সক্ষম কলে গিয়া সাড়া পৌছায়। তখন ধীরে ধীরে, কিন্তু অভ্রান্ত সতর্ক জায়গায় আনে যে রশ্মিগুচ্ছ রোশনদানের ভিতর দিয়া গিয় মেঝে ভেদ করিয়া নীচের থাস্তপ্রস্তুতকারী কোষে পৌছায়। এইরূপে গাছ প্রাত্যহিক আলোক সঞ্চয়ের জন্য আপনার সকল পত্রগুলিকে একটি বিশেষ অবস্থায় নড়াইয়া নড়াইয়া রাথিতে থাকে। যখন পত্রফলকের উপর তীব্র আলোক পতিত হয় এবং সেই তীব্রতা যদি গাছের পক্ষে ক্ষতিকর হয় তবে গাছ আলোকের দিক হইতে পত্রফলকের উপরিতল সরাইয়া লয়। আলোকের সামান্ত শক্তি পরিবর্তনও বুঝিতে সক্ষম এবং দ্রুত অথচ অভ্রান্তভাবে নড়িতে সমর্থ একটি কল বৃক্ষশরীরে থাকায় আপন৷ আপনি এই সকল কাৰ্য্য ঘটিয়া থাকে। গাছের এই আলোকের পরিমাণ আন্দাজ করিবার নিপুণতা খুব সহজেই পরীক্ষা করা যাইতে পারে ;–একটা ছোট দ্রুত পরিবর্ধনশীল চারাগাছ (যথা রাই সরিষার চারা ) কয়েক ঘণ্টা অন্ধকারে রাথিয় দিবার পর যদি ফটা বাতির আলো গাছের দুই বিপরীত দিকে রাখা যায় এবং একটা আলোককে অপরটা অপেক্ষ এক ইঞ্চিমাত্র নিকটস্থ করা যায় তবে চারাটি অসম উত্তেজনায় নিকটস্থ আলোর দিকে ঝুঁকিতে থাকিবে। কোনো কোনো গাছের অনুভবশক্তি এত প্রথর যে একগজ তফাতে রক্ষিত একটা বাতির আলোর তীব্রতার একের তিন লক্ষ ভাগের একভাগ তারতম্যও সেই সকল গাছ ধরিতে পারে। এই স্বঙ্গ তারতম্য ধরিতে মানুষের নগ্নচক্ষু সম্পূর্ণ অক্ষম। গাছ যে শুধু আলোক তারতম্যই ধরিতে সক্ষম এমন নহে, অধিকন্তু বর্ণ নির্ণয় করিবারও ক্ষমতা স্পষ্ট তাহাজের আছে। বর্ণপৰ্য্যায়ের (spectrum) বিভিন্ন অংশ গাছে . বিভিন্ন প্রকারের সাড়া উৎপন্ন করে। নীল ও লাল রং একই প্রকার সাড়া উৎপন্ন করে না । গাছ নীল আলোর দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে, কিন্তু লালের উপস্থিতিতে কোনো উত্তেজনা প্রকাশ পায় না। উপরি লিখিত পরীক্ষা সকল নিঃসন্দেহই প্রমাণ করিতেছে যে পত্রফলক আলোক হইতেই উত্তেজনা প্রাপ্ত হয় । কিন্তু সেই উত্তেজনাজাত গতির উদ্ভব পত্রফলকে হয়. না, বোটার গোড়া বা কাণ্ড হইতে হয়। সেই গতির