পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ >8 জন্মস্থান পত্রফলক হইতে হয়ত কয়েক ইঞ্চি বা এক ফুট ব্যবধানেও থাকিতে পারে। প্রায় সকল গাছেই এই গতি আলোক অনুভবক্ষম অংশ হইতে দূরে অবস্থিত অবয়বের মধ্যেই উৎপন্ন হয়। ইহা পরীক্ষার জন্য যদি একটা চারার একটি মাত্র পাতা অনাবৃত রাখিয়া সৰ্ব্বাঙ্গ ঢাকিয় দেওয়া হয় এবং সেই অনাবৃত পাতার উপর আলোকপাত করা যায়, তবুও গাছের আবৃত অংশেই বক্রতা উৎপন্ন হইয়া থাকে। ইহা হইতে আমরা নিঃসংশয়ে অনুমান করিতে পারি যে গাছের আলোকগ্রহণক্ষম ইঞ্জিয় হইতে দূরস্থ অনুভূতি ক্ষেত্রে একটা সাড়া বা সংবাদ প্রেরিত হয় এবং তাহা হইতেই গতি উৎপন্ন হয়। মানুষের দৃষ্টিও এইরূপ –চোখ শুধু আলোক গ্রহণ করিয়া মস্তিষ্কে অমুভূতি পৌছাইয়া দেয়। অতএব উদ্ভিদেরও দর্শনক্ষমতা একেবারে অস্বীকার করিবার জো নাই। উদ্ভিদের বহিরিন্দ্রিয় সকল ও প্রাণ আছে কি না, তদ্বিষয়ে আমাদের আর্য্য পিতামহগণের কিরূপ ধারণা ছিল, তাহা মহাভারত হইতে জানা যায়। শাস্তিপর্কের অন্তর্গত মোক্ষধৰ্ম্মপৰ্ব্বাধ্যায়ের ১৮৪ অধ্যায়ে আছে :– "ভরদ্বাজ কহিলেন, ব্ৰহ্মন ! কি স্থাবর, কি জঙ্গম, সমুদায় পদার্থই যদি পঞ্চভূত দ্বারা নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে স্থাবর দেহে কি নিমিত্ত পঞ্চভূত লক্ষিত হয় না? দেখুন বৃক্ষলতাদি শ্রবণ, দর্শন, আঘ্ৰাণ, আস্বাদন বা স্পর্শ করিতে পারে না। উহাদের শরীরেও রুধিরাদি দ্রব পদার্থ, অগ্নিরূপ তেজ, অস্থিমাংসাদিরূপ পৃথিবী, চেষ্টারূপ বায়ু ও ছিদ্ররূপ আকাশ বিদ্যমান নাই ; তবে উহারা কিরূপে পাঞ্চভৌতিক বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে ? "ভৃগু কহিলেন, ব্রহ্মন বৃক্ষলতাদি স্থাবরগণ নিতান্ত ঘনীভূত বলিয়া স্থল দৃষ্টিতে উহাদের মধ্যে আকাশ লক্ষিত হয় না বটে, কিন্তু যখন প্রতিনিয়ত উহাদের ফলপুষ্পোদগম হইতেছে, তখন বিশেষ পর্য্যালোচনা করিয়া দেখিলে উহাদের মধ্যে যে আকাশ আছে, তাহা অবশুই প্রতীয়মান হইবে। যখন উত্তাপ দ্বারা উহাদের পত্র, ত্বক, ফল ও পুষ্প সমুদায় স্নান ও বিশীর্ণ হইয়া যায়, তখন আর উহাদিগের স্পৰ্শজ্ঞান বিষয়ে সংশয় কি ? যখন বায়ু, অগ্নি ও বজের শব্দে উহাদের ফল পুষ্প বিশীর্ণ হইয়া পড়ে, তখন নিশ্চয়ই বোধ করিতে প্রবাসী। SAMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS [ ৮ম ভাগ। হইবে যে, উহাদের শ্রবণ শক্তি বিদ্যমান রহিয়াছে। দর্শন হীন জন্তু কখনই স্বয়ং পথ চিনিয়া গমন করিতে পারে না। অতএব যখন লতাসমুদায় বৃক্ষের নিকট আগসন, উহাকে পরিবেষ্টন ও ইতস্ততঃ গমন করে, তখন উহাদের দর্শন শক্তি অবশুই স্বীকার করিতে হইবে। যখন বৃক্ষলতাদি পবিত্র ও অপবিত্রগন্ধ এবং বিবিধ ধূপ দ্বারা রোগবিহীন হইয়া পুষ্পিত হইতেছে, তখন তাহারা নিঃসন্দেহ আগ্রাণ করিতে পারে। যখন উহার মূলদ্বারা সলিল পান করিতে সমর্থ হয়, তখন নিশ্চয়ই উহাদিগের রসনেক্রিয় বিদ্যমান আছে। যেমন মুখস্থার উৎপলনাল গ্রহণ করিয়া জল শোষণ করা যায়, তদ্রুপ পাদপগণ পবনসহযোগে মূলদ্বারা সলিল পান করে। এইরূপে যখন উহাদিগকে মুখ দুঃখ সংযুক্ত এবং ছিন্ন হইলে পুনরায় প্ররোহিত দেথা যায়, তখন অবশুই উহাদের জীবন স্বীকার করিতে হইবে । উহাদিগকে অচেতন বলিয়া নির্দেশ করা কদাপি কৰ্ত্তব্য নহে। বৃক্ষাদি স্থাবর পদার্থ মূল দ্বারা যে জলগ্ৰহণ করে, অগ্নি ও বায়ু সেই জল জীর্ণ করিয়া থাকে। ঐ জলের পরিপাক হওয়াতেই ঐ সকল স্থাবর পদার্থ লাবণ্যবিশিষ্ট ও পরিবৰ্দ্ধিত হয়।” চারু বন্দোপাধ্যায়। চিত্র পরিচয় । ক-পত্রপৃষ্ঠে বহিঃকোষ। মনুষ্যচক্ষুর অনুরূপ। থ—পত্রকোষের সংস্থান। গ—পত্রফলকে তিৰ্য্যকপাতিত আলোকউত্তেজনার সাড়া বোট বাহিয়া অনুভব-ক্ষেত্রে গতি উৎপন্ন করিতেছে। --ു.-l.-ുബ ৯ম সংখ্যা । ] --১৪:২৫, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)WikitanvirBot (আলাপ) ঔপন্যাসিক সাহিত্যে নব রীতি। মানুষের মনকে বাদ দিয়া ঘটনাপরম্পরার সমষ্ট লইয়া উপন্যাস রচিত হইলে উহা সাধারণ পাঠকের নিকট গ্রহণীয় হইতে পারে কিন্তু উন্নত সমাজের নিকট ঐন্ধপ উপন্যাস সমাদর লাভ করিতে পারে না। যে অনুভূতি চিন্তাশক্তি ও ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করিয়া আমরা সংসার-ক্ষেত্রে বিচরণ করিতেছি, মানব চরিত্র চিত্রণের সময় যদি মানবমনের সেই সকল অদ্ভুত ক্রিয়াকে বাদ দিয়া কতকগুলি মানুষকে উপন্যাসের মধ্যে অঙ্কিত করিতে চেষ্টা করা যায় তাঙ্গ হইলে সে মানুষগুলি যে নিতান্ত প্রাণবিহীন জড়পদার্থবং প্রতীয়মান হইবে ইহা আর বিচিত্র কি ? শিক্ষার দ্বারা যাহাদের রুচি পরিমার্জিত হইয়াছে ও র্যাহাদের মন শিক্ষার গুণে গভীরতম বিষয় সমূহের মধ্যে প্রবেশ লাভের অধিকার পাইয়াছে তাহাদের নিকট শুধু ঘটনাসমূহের সমষ্টি উপন্যাস নামে গৃহীত হইতে পারে না, হইলেও তাহার মূল্য স্বল্প মাত্র। বিগত শতাব্দীতে এবং বর্তমান সময়ে ইংলণ্ডের শিক্ষিত সমাজে জৰ্জ ইলিয়টের উপন্যাস সকল যেরূপ সমাদৃত হইয়াছে এরূপ আর অতি অন্ন লোকেরই হইয়াছে। ভারতবর্ষে যাহারা ইংরাজী শিক্ষালাভ করিয়াছেন তাহাদের মধ্যেও জর্জ ইলিয়াটের খুব আদর। এমন কি যাহার উপন্যাস পাঠের বিরোধী এমন লোককেও জর্জ ইলিয়টের উপন্যাস সকল মনোবিজ্ঞানের হিসাবে পড়িতে দেখা গিয়াছে। জর্জ ইলিয়টের কোনো কোনো উপন্যাসকে উপন্যাস হিসাবে বাস্তবিক উচ্চ স্থান দেওয়া যায় না— যেমন রমোলা। কিন্তু দোষ ক্রট ও অসম্পূর্ণতা সত্বেও তাহার গ্রন্থ সকলের মধ্যে উচ্চতর এমন কোনো বস্তু আছে যাহার জন্য সেগুলি সৰ্ব্বত্র সমাদর লাভ করিয়াছে। সে বস্তু মানব-মনের অভিব্যক্তি । , যে সকল লেখক লেখনী-তুলিকায় মানব মনের চিত্র প্রতিফলিত করিয়া শিক্ষিত সমাজের বিশ্বয়োৎপাদন করিয়াছেন-রবীন্দ্রনাথ তাহদের মধ্যে একজন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। এ স্থলে এ কথাও বলা প্রয়োজন যে উপন্যাস লিবে তাহার সকল গ্রন্থ যে আদর্শস্থানীয় তাহ নহে। ঔপন্যাসিক সাহিত্যে নব রীতি । ©☾ SSMSSSMSSSMSSSMAMMAAAASASASS --WikitanvirBot (আলাপ)ാকিন্তু একজন প্রতিভাবান লেখক যাহা লিখিবেন তাহার সবটুকুই স্বন্দর, নিখত হইবে এরূপ আশা করাও অঙ্গায়। বরং এইরূপ লেখকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রট ভুলিয়, তাহার রচনার বিশেষত্বটুকু কি পরিমাণে বিকশিত হইতেছে সেদিকে দৃষ্টি রাখাই বাঞ্ছনীয়। রবিবাবুর রচনার মধ্যে আমরা বুঝিতে পারি এবং বুঝিতে পারি না এমন অনেক ক্রট ও অসম্পূর্ণতা থাকিতে পারে কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যের সারথিরূপে, বিশেষতঃ ঔপন্যাসিকরূপে তিনি কি নূতন রীতি প্রচার করিয়াছেন আজ অতি সংক্ষেপে তাহার আলোচনা করিতে চেষ্টা করিব। বক্ষ্যমান বিষয়টা অতি গুরুতর সংক্ষেপে তাহার আলোচনাও অসম্ভব । কিন্তু তথাপি এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে উপন্যাসের মধ্যে মানব মনের বহিঃপ্রকাশ অপেক্ষ অন্তঃপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের রচনার একটা বিশেষত্ব। বঙ্কিমচন্দ্র তাহার ও পরবর্তী বহুযুগের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের সিংহাসন অধিকার করিয়া থাকিবেন তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এ কথা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে ষে বঙ্কিমচন্দ্র অপেক্ষ রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসের মধ্যে মানব মনের ব্যবসা অনেকটা বেশী করিয়াছেন। কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইবার পূৰ্ব্বে মানব মন কেমন সংগ্রাম করে, কত আবর্তের মধ্যে হাবুডুবু গায়, যদি তাহা ভাল করিয়া দেখিতে ও বুঝিতে হয় তবে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস পড়িতেই হইবে। মনোবিজ্ঞানে বিশ্লেষিত মনের চিত্র যখন আমাদের নিকট নিতান্ত ছায়াময় (abstract) বলিয়া মনে হয় তখন যদি এক একটা মনোবৃত্তি জীবন্ত মানুষে অর্পণ করিয়া আমরা তাছাদের কাৰ্য্যকলাপ পর্য্যবেক্ষণ করিবার সুযোগ পাই তাহা হইলে - দর্শনশাস্ত্র একটা জটিল পদার্থ না হইয়া আমাদের নিতান্ত পরিচিত বিষয় হইয় পড়ে । - বিগত কয়েক বৎসরের মধ্যে রবিবাবু যে দুখানি উপন্যাস রচনা করিয়াছেন সে দুখানির মধ্যেই তাহার এই রীতি বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছে। চোখের বালি ও নৌকা ডুবি সম্বন্ধে অনেকের অনেক মত থাকিতে পাঞ্জে কিন্তু উপন্সাসের আখ্যানবস্তু লইয়া আলোচনা করা বর্তমান প্রবন্ধের উদেণ্ড নয়। উপন্যাসের হিসাবে এই দুইখানকে যে খুব উচ্চস্থান দেওয়া যায় না এরূপ মনে করিবারও যথেষ্ট কারণ