পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હરક প্রবাসী । [ ৮ম ভাগ। অনুসরণ করুন না, বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী, মহারাষ্ট্র, आजाबी করি, তা হইলে এ অঞ্চপতন হইতে आशाੇ। - যিনি যে প্রদেশবাসীই হউন না কেন, তাহাদিগের সকলেই "ভারতীয় এই সাধারণ নামের সমান ভাবে অধিকারী। ভারতীয়ত্বই তাহাদিগের একত্ববিধায়ক মহৎ গুণ, বা নৈয়ারিকের ‘জাতি’। আমরা কিসে ভিন্ন তাহা না দেখিয়া, কিসে অভিন্ন জানিতে বুঝিতে শিক্ষা করাই আমাদিগের জাতীয় শিক্ষার মূলমন্ত্র হওয়া উচিত। যে দিন হইতে আমরা সমস্ত বৈসাদৃশু বিশ্বত হইয়া ভারতবাসীমাত্রকেই ভাই বলিয়া আলিঙ্গন করিতে দ্বিধা বোধ করিব না, সেই দিন হইতেই বুঝিব ভারতীয় জাতি গঠিত হইয়াছে। তখন ইংরাজ কেন, সমস্ত জগৎ আমাদিগের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলেও আমাদিগকে স্বরাজের স্বত্ববঞ্চিত করিতে সমর্থ হইবে না। উপরে যেরূপ প্রদর্শিত হইয়াছে, এক রামচন্দ্র হইতেই খেত্রি’ ও ‘ছত্রি’ বিবদমান জাতিদ্বয়ের উৎপত্তি, সেই রূপ মনু হইতেই কি আমরা সকলে উৎপন্ন হইয়া মানব আখ্যা ধারণ করি নাই ? যাহাদের মধ্যে এই প্রধান একত্ববীজ বর্তমান, অন্তান্ত ক্ষুদ্র বিসদৃশ ভাব যতই প্রবল হউক না, ইহার নিকট তাহদের সমস্ত শক্তি সম্যকরূপেই পরাহত।. ইঃখের বিষয় আমরা মূল ভুলিয়া গিয়া শাখার বিভিন্নতা লইয়া মূর্থের স্তায় বিবাদ করিয়া মরি। মূলের দিকে দৃষ্টি পড়িলেই কিন্তু সব কলহ মিটিয়া যায়, অন্ধ অভিমান যখনই তাহাতে বাধা দেয়, তখনই অধোগতি ঘটতে আরম্ভ হয়—তখনই (এক রামচন্দ্রের বংশধর হইয়াও) এক ভ্রাতা অপর ভ্রাতাকে হেয় প্রতিপয় করিতে বদ্ধপরিকর হন। সুতরাং এই জাতীয় ক্ষুদ্র সংকীর্ণত ভুলিয়া গিয়া আমাদিগকে ভারতীয়ত্বে আত্মবিসর্জন করিয়া তাহাতেই তন্ময় থাকিতে হইবে, তবেই আমরা কিছু করিতে পারিব—মহাজাতি বলিয়া পরিচয় দিবার উপযোগী হইব। এই জন্য লবকোট কুশাবতীর উপাখ্যান উপন্তস্ত করিয়া ঐতিহাসিক প্রমাণ দ্বারা দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি, এককাণ্ডের শাখাদ্বয় এক্ষণে কিরূপ বিভিন্নজাতীয় বৃক্ষরূপে প্রতীয়মান হইতেছে, এবং অন্তদৃষ্টি"ও একপ্রাণতার অভাববশতই আমরা তাহদিগকে এ যাবৎ কিরূপ পৃথকৃচক্ষেই দেখিয়া আসিতেছি। অতঃপরও যদি আমরা এই ভেদনীতির অনুসরণ করিয়া আত্মকলহের বীজ প্রতি হৃদয়ে প্রচ্ছন্ন রাথিতে চেষ্ট৷ বাসন লিড়ম্বনামাত্র—আমাদিগের জাতীয় উন্নতিবিধানের পথ কণ্টকাবৃত। অতএব হে ভারতবাসী ভাতৃগণ । অনে, বিরোধী ধৰ্ম্ম, বিরুদ্ধ ব্যবহার, বিভিন্ন ভাষা, পৃথক প্রকৃতি দিকে লক্ষ্য না করিয়া, আমরা সকলেই ভারতসন্তান এই অভিন্ন একত্ব হৃদয়ঙ্গম করিয়া পরম্পরের সহিত সহৃদয়তা ও সহানুভূতি প্রদর্শন জন্য ক্রমশঃ বলসঞ্চয় করিতে বদ্ধপরিকর হই । - বারাণসীপ্রবাসী ললিতমোহন মুখোপাধ্যায়। কঃ পন্থা । ১৫১৬ বৎসরের কথা, পালামেীএর জঙ্গলের মধ্যে এক দিন বৈকালে, এইরূপ প্রথম গ্রীষ্মের বৈকালে , কএকজন বাঙ্গালী বসিয়া গল্প করিতেছিল। বাঙ্গালী গল্পপ্রিয়, সমাজপ্রিয়, বাঙ্গালী যেখানে থাকে সেই থানেই পাঁচজনে একত্র বসিয়া গল্প গুজব করিয়া থাকে ; বিদেশী বাঙ্গালীর জীবনে এই একটু মুখ, তাহার ক্লাস্তিপূর্ণ পরিশ্রমময় জীবনে এই একটু আরাম। ছোট নাগপুরের জঙ্গলের মধ্যে পালামেীকে একটা স্থ বাঙ্গালী উপনিবেশ বলিলে চলে। - অন্ততঃ যে সময়ের ক বলিতেছি তখন ঠিক তাই ছিল। আজকাল পালামেীএ । কলের গাড়ী চলিতেছে, তখন কলের গাড়ীর পথ হয় নাই। তখন সাধারণতঃ লোকে গয়া হইতে গরুর গাড়ী কৰি । ছোটনাগপুরের সেই ভয়ানক পাহাড় জঙ্গলের মধ্যয়ি | কএক দিন ধরিয়া যাইয়া পালামে গিয়া পহুছিত। এই ছিল সাধারণ পথ। কখন কখন দৃশুপ্রিয় নূতনপ্রিয় কোন কোন বাঙ্গালীকে একা করিয়া বারুণডিহিরির পথে, কথন পালামে জেলার বাণিজ্যপ্রধান স্থান গাড়োয় হইয়া রোটাস দুর্গ দেখিয়া, সমস্ত সাহাবাদ জেলার স্বয়ম্য দৃপ্ত দেখিয়া, পশ্চিমের কলের গাড়ীর পথে যাতায়াত করিতে শুনা যাইত, কিন্তু সে অতি কচিৎ। সাধারণ পথ গার পথ ছিল। পথের দুর্গমতা, স্থানের স্বাস্থ্য দেখিয়া, চুই চারি ঘর বাঙ্গালী পালামেীএ ঘর বাড়ী করিয়া বগা _- এই প্রবন্ধ গত মাঙ্কে লিখিত হয়। ৯ম সংখ্যা । ] করিতেছিলেন। এই সকল বাসিদ বাঙ্গালীর মধ্যে ৮ শশিভূষণ মুখোপাধ্যায় মহাশয় প্রধান । শশীবাবু তখন চত। প্রাক্ষ্মরণীয় শশীবাবুর নাম উল্লেখে আর কেহ না হোক তদানীন্তন পালামেীবাসী বাঙ্গালী মাত্রেই সন্তুষ্ট ইষ্টবেন। যে সময়ের কথা বলিতেছি তখন আবাল বৃদ্ধ বনিতা লইয়া পালামেীএ বাঙ্গালীর সংখ্যা প্রায় দুইশত श्छेtव। তখনকার বৈকালি বৈঠক প্রায়ই সরকারী প্রধান চিকিৎসক (Civil Surgeon) কুঞ্জবাবুর বাসায় বসিত, কখন কখন শশীবাবুর বাড়ীতে । যেদিনের কথা বলিতেছি, সেদিন আসর কুঞ্জবাবুৰ বাসায়। যেমন হইয়া থাকে,—পারিবারিক কথা, দেশের সমাচার, কৰ্ম্মস্থানের সাহেবকৃত তিরস্কার, শেষ গিয়া পড়িল কথা বাঙ্গালার ভাবী উন্নতিতে,—বিদ্যাশিক্ষা,বিলাত যাওয়া, জমাট বাধিল দেশের কলকারখানায় ; রিষড়ার কল, বরাহনগরের কল, চামদানীর কল, বোধ হয় নিমতলার মড় পোড়ান কলের কথাও হইয়া থাকিবে । সকলেরই একমত, সকলেরই একরায়, সকলেই এক আশায় আশ্বস্ত ; দেশের ভবিষ্যৎ বড়ই পরিস্কার, বড়ই আশাপ্রদ। অন্তদিন অপেক্ষ সেদিন অধিকক্ষণ বৈঠক চলিল, শেষে সভা ভঙ্গ হইল। যদি পুরাতন হিসাব থাকে ডাক্তার বাবু বলিতে পারেন তাহার তামাকু খরচ সেদিন দ্বিগুণ হইয়াছিল কি না। আর বাসার ঠাকুর ও গৃহস্থ পরিবারের গৃহিণীর বলিতে পারেন সেদিন রাত্রে অনশনে অথবা অৰ্দ্ধাশনে থাকিতে হইয়াছিল কি না। সেইদিন বৈঠকের তর্কবিতর্কে যোগ দেন নাই কেবলমাত্র উপস্থিত একজন ভদ্রলোক, তিনি নীরবে সভাস্থলে বসিয়াছিলেন। সভা ভঙ্গ হইলে তিনি নীরবে বাসায় চলিয়া গেলেন। তিনি পূৰ্ববিভাগের লোক ; পালামে তখন নুতন জেলা হইয়াছে, তিনি সরকারী ইমারত সকল প্রস্তুত করিতে আসিয়াছিলেন। পরদিন বৈকালে ডাক্তার বাবুর বাসায় ঐ বাবুট উপস্থিত আরও দুই একজন উপস্থিত, মজলিস তখন পুরা হয় নাই, সকলে আসিয়া জুটিতে তখনও পারে নাই। বাবুট স্বভাবতঃ অতি ধীর প্রকৃতির লোক, তিনি আস্তে আস্তে আরম্ভ করিলেন ;–তিনি বলিলেন —“আপনারা যে কল

|l কঃ পন্থাঃ । কারখানার কাল অত প্রশংসা করিলেন তাহাতে দেশের কি ৫২৫ সৰ্ব্বনাশ হইতেছে তাছা আপনারা জানেন না তাই অত কথা বলিলেন ; আমার বাড়ী চামদানী, কলকারখানার দেশের যে কি অনিষ্ট ঘটতেছে তাহা আমরা স্বচক্ষে দেখিতেছি। যে চরিত্র মানুষের সর্বস্বধন, যে চরিত্র জাতীয় জীবনের প্রধান উপাদান, আমরা এই কল কারখানার দায়ে তাহা খোয়াইতে বসিয়াছি ; দেশ নিরন্ন, ম্যালেরিয়াতে অনেক পরিবার নির্বংশ হইয়াছে, হয়তো কোন সংসারে দুই একটা বিধবা আছে, তাহদের দিনাস্তে অন্ন জুটে না, গৃহে সম্বল এক আধপানি ভাঙ্গা পাথর, আর যাহা কিছু বিক্রয়ের উপযুক্ত ছিল, তাহ পূর্বেই বিক্রয় করিয়া খাইয়াছে ; এখন আর পেটে অন্ন নাই, শরীরে একথও জীর্ণ ছিন্ন নেকড়া ভিন্ন বস্ত্র নাই, গৃহস্থের মেয়ে সাধারণে ভিক্ষা করিতে যাইতে পারে না, আর ভিক্ষা চাহিলেই বা দেয় কে ? অনেক দিন অনশনে যায়। এখন আর দেশে কার্টুন কাটা নাই বা এমন কোন সংবৃত্তি নাই যাহা অবলম্বন করিয়া গরীব ভদ্র লোকের মেয়ে ঘরে বসিয়া আপনার জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করিতে পারে। সম্মুখে চামদানীর কল। ধৰ্ম্মপথ ত্যাগ কর, ঘর হইতে পা বাড়াও, পাপস্রোতে গা ঢাল, আর তোমার অন্ন বস্ত্রের কষ্ট নাই, স্বচ্ছন্দে দিন কাটিয়া যাইবে। দৃষ্টাত্ত অতি ভয়ানক । অভাগিনী দেখিতেছে, তাহার পাড়ার কত হতভাগিনী তাহারই মত অন্ন বস্ত্রের অভাবে, তাহারই মত নানা কষ্টে ছিল, আজ তাহাদের আর কোন কষ্ট নাই। এইরূপে দেশ উৎসন্ন যাইতেছে।” ভদ্রলোক নীরব। উপস্থিত সকলেই নীরব । কথা ভাবিবার বটে। বৃদ্ধি পাইতেছে আর ধৰ্ম্মের সংসার উৎসন্ন যাইতেছে, তাহ নয়। দেশে যে কেবল কল কারখানায় নৈতিক পতন হইতেছে আর আর্থিক উন্নতি হইতেছে তাহা নয়। দেশ সকল প্রকারেই উৎসন্ন যাইতেছে। স্বজনবর্জিত, সমাজরহিত স্থানে, দেশের যত যুবক যুবতী, আসিয়া ছুটতেছে, তাহাদের পরিশ্রমলব্ধ অর্থ সঞ্চয় করে ব্লা সদব্যয় করে এমন পরামর্শ দেয় কে ? যে স্বাস্থা তাহদের সর্বস্বৰ্ধন, যাহার সাহায্যে তাহদের এই স্বত্থ, এই আপাত মধুর মুখ, তাহ রক্ষা করিতে পরামর্শ দেয় কে ? তাহাম্বের কেবল যে দেশে পাপের সংসার -