পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২৮ পুরিয়া যাইবে। সত্য বটে বড় বড় কলকারখানায় প্রস্তুত দ্রব্যের যাহা পড়ন পড়িবে সমস্ত খরচ থতাইলে ঐ সকল “পারিবারিক শিল্পশালায়" প্রস্তুত পণ্যের খরচ তাহা অপেক্ষা বেশী হইবার সম্ভাবনা ; কিন্তু এই সকল ক্ষুদ্র কারখানাগুলির শ্রমজীবীর পারিশ্রমিক ও ধনীর লাভ সমস্তই একহস্তে যাইবে, সমস্তই গৃহস্থ শিল্পশালাকৰ্ত্তা পাইবেন । সমস্ত আয়ই র্তাহার সংসারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যয় হইবে, তাহার ভাগ কাহাকেও দিতে হইবে না। আর এক কথা, এই সকল “পারিবারিক শিল্পশালায়" কারথানার কৰ্ত্তার পরিবারের সকল স্ত্রীলোকেই আরাম বিশ্রাম সময় বাদে তাহদের নিষ্কৰ্ম্ম সময় শিল্পশালার কাজে লাগাইতে পারিবেন ; এইরূপে পূৰ্ব্বে চরকা কাটিয়া গৃহস্থ মহিলার দেশের যে উপকার করিতেন, “পারিবারিক শিল্পশালা" সকল দেশে স্থাপিত হইলে, তাহারা তাহাতে কাজ করিয়া দেশের সেই উপকার করিতে পারিবেন। এই প্রথায়, দেশে “পারিবারিক শিল্পশালা" খোলা হইলে, তাহার লব্ধ আয়, বড় বড় ধনীর ধন বৃদ্ধি না করিয়া, চরিত্রহীন স্বজনভ্রষ্ট শ্রমজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি না করিয়া, প্রকৃত সমাজের সার অংশ, মধ্যশ্রেণীর উন্নতি সাধন করিবে। সমাজের অর্থাভাব ঘুচিবে, অন্নকষ্ট ঘুচিবে। অন্নাভাব জনিত মায়ীভয় সকল আর দেশকে প্ৰজলিত শ্মশানে পরিণত করিয়া রাথিতে পারিবে না। শ্ৰীক্ষীরোদচন্দ্র চন্দ্র। বৌদ্ধধর্মের বিশ্বপ্রেম। কপিলবাস্তু নগরের এক প্রাস্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত মহারাজ গুদ্ধোরন ঘণ্টা ঘোষণায় প্রচার করিয়াছেন—অদ্য হইতে সপ্তম দিৱসে কুমার সিদ্ধার্থ নগরোস্তান দর্শন করিতে যাইবেন ; নাগরিকগণ যেন সেজষ্ঠ প্রস্তুত থাকেন ;– নগরের অপ্রতিকর বস্তুসমূহ অপনীত করিয়া তাহারা যেন চতুদিকে প্রিয়দর্শন দ্রব্যসম্ভার সংগৃহীত রাখেন। শুদ্ধোদন পূৰ্ব্বেই জানিতে পারিয়াছিলেন যে, সিদ্ধার্থ সংসার পরিত্যাগ করিয়া যাইবেন, তজ্জন্তই তিনি সাবধান _ ন বোলপুর শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচৰ্য্যাশ্রমের অধ্যাপক-সমিতিতে পঠিত। প্রবাসী। . [ ৮ম ভাগ। হইতেছিলেন যে, যেন কোনও প্রকারে কুমারের হৃদয়ে । বৈরাগ্যভাব আসিয়া উপস্থিত না হয় । , • সপ্তম দিবসে সমস্ত নগর অলঙ্কত হইল। উষ্ঠানভূমি বহুবিধ কুসুমবিতানোজ্জল ও ছত্ৰধ্বজপতাকালঙ্কত হইয়৷ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। কুমাবের যে সকল পথ দিয়া গমন করিবার কথা, সেই সমস্ত সুবিস্তীর্ণ পথ সিক্ত, সন্মার্জিত, গন্ধোদকপরিষিক্ত ও বিকচকুসুমাবকীর্ণ হইয়। পরম শোভ ধারণ করিল। কদলীস্তম্ভ ও পূর্ণকুন্ত, এবং কনক কিঙ্কিনী দাম ও স্ফটিক মৌক্তিক হার সেই সমস্ত পথকে আরও সমুজ্জ্বল করিয়া তুলিল। কুমার চতুরঙ্গ সৈন্য ও অপরাপ যথাযোগ্য পরিবারে পরিবেষ্টিত হইয়া রথযোগে নগরের পূৰ্ব্বদ্বার দিরা বহিরুদ্ধান ভূমি সন্দর্শন কামনায় বহির্গত । হইলেন। মহোৎসব যেন শরীর পরিগ্রহ করিয়া নগর মধ্যে সঞ্চরণ করিতে লাগিল। নগরের সেই আনন্দোৎসব অবলোকন করিয়া মহারা শুদ্ধোদন ভাবিতেই পারেন নাই যে, কুমারের চক্ষে তেমন কোন বস্তু আকৃষ্ট হইবে, যাহাতে তাহার হৃদয়ে কোন উদ্বেগ বা বৈরাগ্য জন্মিতে পারে। কিন্তু সমগ্র জগতে৷ মঙ্গলের জন্য, আজীবন রাজভোগলালিত স্বথমাত্রপরিচিন্ত সিদ্ধার্থ তাহার মধ্যেও প্রাণিগণের ব্যাধি-জরা-মৃত্যুর ভী চিত্র সনদর্শন করিয়া বিচলিত হইয়া উঠিলেন। তখন হইত্ত্বে রাজকুমারের নিজের ভাবনা দূর হইল, তিনি পরের জন্ম ভাবনা আরম্ভ করিলেন--কেমন করিয়া ঐ দুঃখ জালা হইতে সকলকে উদ্ধার করিবেন। মহাধৰ্ম্ম প্রচারকের কোমল হৃদয়ে পরম রমণীয় বিশ্বপ্রেমের বীজয়ন্ধু এই প্রথম প্রবেশ লাভ করিল। রাজ্যভোগ তাহার নিকটে তুচ্ছ বলিয়া বো হইল, তিনি সমস্ত কাৰ্য্য পরিত্যাগ করিয়া দিবা-রাত্রি অধি চ্ছেদে চিন্তা করিতে লাগিলেন–কিপ্রকারে জীবগণের মঙ্গল করিতে পারিবেন। সঙ্গীত-প্রসাদে বা সুখ-শয়নে থাকিলেং তাহার ঐ এক চিন্তা চিরসহচরী হইয়া উঠিয়াছিল। তিনি মহাভিনিত্রমণ করিবার পূৰ্ব্বে জীবগণকে ছড়ি দেখিয়া ভাবিয়াছিলেন –“হায় ! জীবগণ সংসাররূপ মহা কারাগারে প্রক্ষিপ্ত হইয়া আছে, ইহাদের এই কারাগার বিনষ্ট করিয়া মুক্তির কথা উচ্চারণ করিব। তাহারা কৃষ্ণ শৃঙ্খলে গাঢ় নিবদ্ধ হইয়া রহিয়াছে, তাছা হইতে ইহাদিগন্ধে ৯ম সংখ্যা । ] প্রমোচিতৃ করিয়া দিব। হায়! লোক সংসারের অবিদ্যারূপ গহন অন্ধকারে আবৃত, তাহদের প্রজ্ঞাচক্ষু নাই ; আমি ইহাদের এই মহান্ধকারে মহান ধৰ্ম্মালোক উৎপাদন করিব ; আমি ইহাদের জ্ঞানপ্রদীপকে সমুদ্দীপ্ত করিয়া দিব ; ঔষধ প্রয়োগের দ্বারা মোহুতিমিরজালের কালু্য অপনয়ন করিয়া ইহাদের প্রজ্ঞাচক্ষুকে বিশোধিত করিয়া দিব ।" এই ভাব তাহার হৃদয়কে এতদূর অধিকার করিয়া ফেলিল যে, মহারাজ শুদ্ধোদনের সমস্ত প্রয়াসই বার্থ হইয়া গেল। বোধিসত্ত্বকে গৃহে রক্ষা করিবার জন্য প্রাকার প্রস্তুত হইল, পরিখা খাত হইল, দ্বার সমূহ দৃঢ়তর করা হইল, রক্ষিদল স্থাপিত হইল, শূর সমূহ প্রেরিত হইল, এবং নগরদ্বার ও চতুপথ সমূহে মহাসৈন্তব্যুহ নিয়োজিত হইল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না, তিনি সারথি ছন্দককে সঙ্গে লইয়া গৃহ হইতে মহাভিনিস্ক্রমণ করিলেন। প্রভূবংসল ছন্দক সিদ্ধার্থকে প্রত্যাবৃত্ত হইবার জন্ত অনুনয় বিনয় করিয়াছিল, । বহু উপদেশ প্রদান করিয়াছিল, কুমার তাহার প্রত্যুত্তরে বলিয়াছিলেন :– “ছন্দক, এই জগৎ ক্লেশ ও ব্যাধিতে আকুল হইয় দহমান হইতেছে ; ইহা মোহ-অবিদ্যার অন্ধকারে পতিত ইষ্টা অশরণ ও অনাথ ; ইহা জরা-ব্যাধি ও মৃত্যু ভয়ে পীড়িত ; এবং শক্রস্বরূপ জন্মজনিত দুঃখ সমূহে নিতান্ত আহত।...আমি ধৰ্ম্মনৌকা আনয়ন করিয়া ভবার্ণব উত্তীর্ণ হইব, এবং অনন্ত জগৎকে উত্তীর্ণ করাইব । ছন্দক, পৰ্ব্বতরাজ মেরুর দ্যায় আমার এই সঙ্কল্প নিশ্চল বলিয়া জানিবে।” - ভগবান শাক্যসিংহ সমগ্র জগতের দুঃখে ব্যথিতচিত্ত হইয়। তাছার অপনোদনের দুর্ভর ভার স্বীয় মস্তকে বহন পূৰ্ব্বক কঠোর পরিশ্রমে ও অবিশ্রান্ত উদ্যমে যে ধৰ্ম্মচিন্তামণি লাভ করিয়াছিলেন, তাহার প্রভাবে ভারতভূমি সেই সময়ে অদ্ভূতরূপে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছিল। তিনি মৃত্যুশয্যায় শান হষ্টয়াও, এবং মৃত্যুর পূৰ্ব্বক্ষণ পর্যন্তও যে ধৰ্ম্মকে প্রচার করিয়া গিয়াছেন, তিনি তাহাতে বলিয়া যাইতে ভুল করেন নাই যে, সেই অভিনব ধৰ্ম্মের মূল কি, এবং তাছার প্রাণই বাকি। তিনি যেমন বিশ্বজনের মঙ্গলের জন্ত নিজেকে উৎসর্গ *- -

  • ললিত বিস্তর, ১৭ অঃ।

বৌদ্ধধৰ্ম্মের বিশ্বপ্রেম। - (tՀՋ করিয়াছিলেন, সেইরূপ তাহার সেই অভিনব ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়া শিষ্যগণকেও শিক্ষা প্রদান করিয়া গিয়াছেন। সেই বহিরুদ্ধানভূমি সন্দর্শনের দিনে তাহার হৃদয়ে বিশ্বপ্রেমের যে বীজ রোপিত হইয়া কালক্রমে অঙ্কুরিত, বৰ্দ্ধিত, এবং শাখা-পল্লবে শোভিত ও পুপফলে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল, র্তাহার পর তদীয় শিষ্যগণ সেই স্বমস্থান বিশ্বপ্ৰেমতরুর সুশীতল ছায়ায় বিশ্রাম লাভ করিয়া বহু বহু গ্রন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন। তাহদের সেই সমস্ত গ্রন্থ ঐ সমুজ্জল তরুবকের দিগন্তবিসর্প সৌরভসন্তারে আমোদিত এবং তাহারা অদ্যাপি রোপণকৰ্ত্তার ধৰ্ম্মবৈভব প্রকাশ করিতে সম্পূর্ণ সমর্থ। আজ আমরা মহাযান-সম্প্রদায়েরই গ্রন্থ হইতে আলোচনা করিয়া দেখিবার চেষ্টা করিব যে, ঐ বিশ্বপ্রেম-প্রভাবে বৌদ্ধধৰ্ম্ম কত মধুর ও কত স্বন্দর হইয়া দাড়াইয়াছিল। "ভিক্ষু প্রকীর্ণক” নামক গ্রন্থে লিখিত আছে-একদিন কোন ব্যাধিপীড়িত ভিক্ষুকে ভগবান বৌদ্ধ বলিতেছেন— “ভিক্ষু, তুমি ভয় করিও না, ভয় করিও না। আমি তোমার পরিচর্যা করিব। কৈ তোমার চীবর দাও, আমি ধুইয়া দিতেছি।” ইহা শুনিয় তাহার সহচর প্রিয় ভিক্ষু আয়ুষ্মান আনন্দ বলিলেন–“ভগবন, আপনি এই অশুচিপদার্থযুক্ত চীবর ধুইবেন না, আমি ধুইব। ভগবান বলিলেন— “আনন্দ, যদি তাহাই হয়, তবে তুমি এই ভিক্ষুর চীবর ধুইয় দাও, আমি জল ঢালিয়া দিব।” এইরূপে আনন্দ সেই ভিক্ষুর চীবর ধুইয়া দিতেন, ভগবান জল ঢালিয়া দিতেন ; আনন্দ তাহাকে ভাল করিয়া বাহিরে আনিয়া স্নান করাইয়া দিতেন, আর ভগবান জল ঢালিয়া দিতেন। রাজকুমার সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ব লাভ করিয়া এই রূপেই জীবের সেবা আরম্ভ করেন। তিনি জীবগণকে লক্ষ্য করিয়া এক স্থানে বলিয়াছিলেন “যাহাদিগকে প্রসন্ন করিয়া বহু ব্যক্তি সিদ্ধিলাভ করিয়াছেন, এই সেই জীবগণ বিদ্যমান রহিয়াছে ; জীবগণ ছাড়া জগতে অপর কোন সিদ্ধক্ষেত্র নাই ।” ভগবান সম্যক সমৃদ্ধ ‘বোধিসন্ন প্রাতিমোক্ষে’ শারিপুত্রকে উপদেশ দিয়াছেন -“হে শারিপুত্র, বোধিসত্ত্বগণ চিত্তশুর ; তাহারা ( অন্তের জন্ত ) হস্ত পরিত্যাগী, নাসাপরিত্যাগী, শীর্ষ পরিত্যাগী, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিত্যাগী, পুত্র