পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩৬ সময়ে বক্তিয়ার খিলিজির মৃত্যু হয়। উত্তর বঙ্গের “রাজরাজন্যকগণের” দীর্ঘকাল পর্য্যস্ত বাহুবলে স্বাধীনতা রক্ষা করিবার কথা ধ্যাপক ব্লকম্যান স্পষ্টাক্ষরে ব্যক্ত করিয়া গিরাছেন। এই সকল প্রমাণ অতিবৃদ্ধ মুসলমান সৈনিকের অলৌকিক আখ্যায়িকার সামঞ্জস্ত রক্ষা করিতে পারে না । সে আখ্যায়িকায় যে “নওদিয়ার" রাজধানী ও “রায় লছমনিয়া” নামক নরপতির উল্লেখ আছে, তাহার সহিতও । শাসনলিপির সামঞ্জস্ত দেখিতে পাওয়া যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে কেহ কেহ অনুমান করিয়া লইয়াছিলেন,—“নওদিয়া” নবদ্বীপের অপভ্রংশ মাত্র, এবং “লছমনিয়াও” তবে লক্ষণসেনেরই অপভ্রংশ ! মিন্‌গজ লিখিয়া গিয়াছেন,—“রাজাদের অশীতিবর্ষে বক্তিয়ার খিলিজির দিগ্বিজয় স্বসম্পন্ন হইয়াছিল।” তদনুসারে আরও একটি অনুমানের আশ্রয় গ্রহণ করা অনিবাৰ্য্য হইয়া পড়িয়াছিল। কাহারও পক্ষে অশীতিবর্ষ পৰ্য্যস্ত রাজ্যভোগ করা সম্ভব বলিয়া বোধ হয় না ;– শৈশবে সিংহাসনে আরোহণ করিবার অনুমানও লক্ষ্মণসেনের পক্ষে স্বসঙ্গত হইতে পারে না। কারণ, তিনি যে পরিণত বয়সেই পিতৃসিংহাসনে আরোহণ করেন, তাহার নানা প্রমাণ ও কিংবদন্তী সংস্কৃত সাহিত্যে সুপরিচিত। বল্লাল ও লক্ষ্মণসেনের মধ্যে যে সকল কবিতাবিনিময় হইত, তাহা এখনও কণ্ঠে কণ্ঠে ভ্রমণ করিতেছে। এরূপ অবস্থায় একটি অসামান্ত অনুমানের অবতারণা করা অনিবাৰ্য্য হইয়া পড়িয়াছিল। সকল রাজার পক্ষেই সিংহাসনে আরোহণ করিবার সময় হইতে রাজ্যাদি গণন করিবার রীতি প্রচলিত ছিল ;–কেবল লক্ষ্মণসেনের পক্ষেই তাহার জন্মতিথি হইতে অব্দ গণনা করিবার একটি অসামান্ত রীতির অনুমান করিয় লওয়া হইয়াছিল ! “লক্ষণসংবৎ” নামক একটি অব্দগণনারীতি অদ্যাপি মিথিলায় কোন কোন স্থানে প্রচলিত আছে ;- এক সময়ে নানা স্থানে এই অন্ধ ধরিয়া শিলালিপি খোদিত হইত। ঐযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বুদ্ধগয়ার দুইখানি শিলালিপিতে এইরূপ অদ গণনার উল্লেখ দেখিয়া, তাহার সমালোচনা করিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন,—“৫১ লক্ষ্মণাব্দের পূৰ্ব্বে কোনও সময়ে লক্ষ্মণসেনদেবের দেহান্তর সংঘটিত হয়।” মুসলমান-ইতিহাসলেখক লক্ষ্মণসেনকে পলায়ন প্রবাসী । কলম্বে কলঙ্কিত করেন নাই ;–তদীয় রাঙ্ক্যান্ধের অশক্তি | বর্ষে দিগ্বিজয়ের উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন ;—আমরাই । JMSMSMMSMMSMMSMMSMMSMSMSMSMSMSMS তথ্যনির্ণয়ে অগ্রসর না হইয়া, অনুমানবলে “রায় লছমনিয়াকে" লক্ষ্মণসেন বলিয়া ধরিয়া লইয়া, অযথা কলঙ্কে স্বদেশের ইতিহাস মলিন করিয়া তুলিতেছি । ঃখ এই—যে বর্ষে এই সকল তথ্য আবিষ্কৃত হইয়া, লক্ষ্মণসেনের অলীক কলঙ্কের অপনোদন করিয়া দিয়াছে, ঠিক সেই বর্ষেই কলাসমিতির পক্ষ হইতে এক চিত্রকরের “পলায়ন কলঙ্ক” নামক একথানি সৰ্ব্বথা কাল্পনিক চিত্র প্রকাশিত হইয়াছে; আর—আর—সেই সুনিপুণ চিত্রকরএকজন বাঙ্গালী ! শ্ৰীঅক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। বিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী l ( পৌষের প্রবাসীতে প্রকাশিত অংশের পর। ) এমন তাপথনির আবিষ্কার হইলে কয়লার খনিগুলির কোন আবশুকতাই থাকিবে না ইহা বলা বাহুল্য। কা এইরূপ গভীর গহ্বরে তাপ-সৌদামিনী সংযোগে যে বৃহৎ শক্তির আবির্ভাব হইবে তাহা লক্ষ লক্ষ শতাব্দী অতীত হইলেও অফুরন্ত থাকিবে এবং তদ্বারা পৃথিবীর সর্বত্রই কল যন্ত্রাদি চালিত হইয়া অতি অল্প ব্যয়ে রসায়ন শাস্ত্রের সাহায্যে দ্রব্যাদি প্রস্তুত হইতে থাকিবে । আজকাল পৃথিবীর বিশেষ বিশেষ স্থানে বিশেষ বিশেষ দ্রব্য প্রস্তুত হয় কিন্তু ঐক্লপ শক্তি হস্তগত হইলে পৃথিবীর সর্বত্রই সমান সুবিধায় সকল প্রকার দ্রব্য একই ভাবে প্রস্তুত হইতে পারিবে। স্থান বিশেষের সুবিধা বা অসুবিধা বশত: তথাকার অধিবাসী অন্ত স্থানের অধিবাসী অপেক্ষা ভাল বা মন্দ অবস্থায় আজকাল বাস করে কিন্তু তখন এই ইস্তর বিশেষ ক্রমশঃ লোপ হইয়া আসিয়া পৃথিবীর সর্বত্র মানব সমাজে মঙ্গলময় সমতা স্থাপিত হইয়া আসিবে। কেহ আশঙ্কা করিতে পারেন বিজ্ঞান যখন মানবজগতের অধিপতি হইবে তখন বুঝি শিল্পসৌন্দর্য্যের মহিমাবিলুপ্ত হইয় গিয়া তাহাদের স্থলে রূঢ়তা, শুদ্ধতার অধিকার বিস্তৃত হইবে। কিন্তু বার্থেলো বলেন বিজ্ঞানের অভাবেই পৃথিবীতে এখনো কুংলিতের স্থান আছে। বিজ্ঞানরাজার শাসনদও চালিত। [ ৮ম ভাগ। | ১০ম সংখ্যা । ] ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)...~--------------------------WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) না হওয়াতেই ক্ষুদ্র শত্রুর আক্রমণে অভিভূত হইয়া মানব করিতেছে, যাহারা শ্রাবণের মূষলধারাকে মস্তকে করিয়া, এখনো পৃথিবীতে কুৎসিত আকারে পরিবর্তন করিতে বাধ্য হয়। বিজ্ঞানের অধিকারের সঙ্গে সঙ্গেই সকল অসৌন্দৰ্য্য দূর হইয়া যাইবে। দৃষ্টান্ত স্থলে বার্থেলো বলেন, ক্ষুংরক্ষিসের আক্রমণ হইতে উদ্ধার পাইবার জন্ত আহার সংগ্রহের উদেখে মানব পৃথিবীর মনোহর পাত্রকে কুৎসিত আকারে পরিণত করিয়া, ধরিত্রীর অঙ্গের অলঙ্কার, প্রকৃতির ভূষণ, লতা, গুল্ম, বিটপীশ্রেণীর ধ্বংস সাধন করিয়া, নয়নমনোহর সুবিস্তীর্ণ কাস্তারকে বিসদৃশ খণ্ডে খণ্ডে বিভাগ করত:, তাহার মসৃণ চিকুণ গাত্রকে মানবগাত্রের কুৎসিত ব্যাধি দদ্রপীড়ার স্থায় হলযন্ত্রাদি সংযোগে বন্ধুর করিয়া পৃথিবীর সৌন্দৰ্য্য নাশ করে। কিন্তু যে দিন বিজ্ঞানরাজা প্রকৃতি রাণীর স্থাতে হাত ধরিয়া স্বরাজ দর্শনে বহির্গত হইবেন, যে দিন মানব ক্ষুৎশক্রর অধীনতানিগড় ছিন্ন করিয়া স্বাধীনতার বৈজয়ন্তী উড়াইয় তাহাদিগকে অভ্যর্থনা করিবে সেদিন অম্বন্দর, কুৎসিত, মন্দ কিছুরই পৃথিবীতে আর স্থান থাকিবে না। আহার সংগ্রহের জন্য চাষ আবাদের আর প্রয়োজন না থাকিলে, পূৰ্ব্ববর্ণিত ‘শক্তি’ মানবের হস্তগত হইলে, ধরিত্রীর গাত্ৰ সৰ্ব্বদা নয়নানন্দ দায়ক শম্পশু্যামল হরিৎবসনাবৃত থাকিবে, পুষ্পালঙ্কারে সর্বদা সজ্জিত থাকিবে। বিটপীরাজিপরিবৃত কৌস্তুভখচিত মুকুটে সৰ্ব্বদা ভূষিতা থাকিবে, পৃথিব্যভ্যন্তর-উদ্ধৃত জলে সিক্ত হইয়া এই রুক্ষ্ম মোদিনী মনোহর উদ্ধানবীথিকায় পরিণত হইবে এবং মানব সেখানে সভ্যযুগের স্তায় অমিত মুখস্বচ্ছন্দের অধিকারী হইয়া সোণার দেশে বাস করিবে । কেহ বা আশঙ্কা করিতে পারেন পৃথিবীর এই অবস্থা ঘটলে মানবসমাজের বন্ধনীশক্তি যে শারীরিক পরিশ্রম তাহা শিথিল হইয়া যাইবে এবং মানব সকল অলস হইয়া পড়িবে। কিন্তু বার্থেলো বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে উচ্চ নীচ ভেদ থাকা হেতু, অধিকারী অনধিকারী পার্থক্য থাকা বশত: একদিকে যেমন ক্লেশকর পরিশ্রমের নিষ্পেষণে পেষিত ইষ্টা মানবসমাজের কতক অংশ হীনপ্রভ হইয়া পড়িতেছে, অপরদিকেও কতকগুলি বিলাসমন্দিরের আমোদে সৰ্ব্বদা নিমজ্জিত থাকিয় আপনাদিগকে অপদার্থ করিয়া ফেলিতেছে। ঐ যে নিদাঘে রৌদ্রাতপক্লিষ্ট শরীরে কৃষককুল ক্ষেত্র কর্ষণ বজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী। ףסאd ঘর্ঘরনাদা বজ্রসম্পাতকে বুক পাতিয়া লইয়া, অঙ্কুরগুচ্ছ কৰ্দমে রোপণ করিবে, যাহার হেমন্তাবসানে শিশিরনিহার পীড়িত আড়ষ্ট হস্তে শস্ত সংগ্ৰহ করিবে তাহারা তাহাদের পরিশ্রমের কতটুকু অংশের পুরষ্কারের অধিকারী? আর ঐ সন্ধ্যাসমীরণ-ব্যাকুল-হৃদয় ধনী রাজকুমারতুল্য-পালিত অশ্বকুমার যুগল চালিত রথারোহণে যখন রাজপথের উপর দিয়া অশনিনিনাদে চলিয়া যায়, যখন বোধ হয় সেই শকট দরিদ্র কুলি-কুলের রক্তাক্ত হস্তপ্রস্তুত পথের উপর দিয়া নহে, তাহাদের পাতা বক্ষকে দলন করিয়া দৌড়িয়া যায়, তাহারাই বা তাহদের কোন পরিশ্রমের পুরস্কারের ফলে ঐ সম্ভোগের অধিকারী ? বিজ্ঞানের দণ্ড চালিত হইলে এই বৈষম্য বিদূরিত হইয়া পরিশ্রমের সমতা স্থাপিত হইৰে ; নিজ নিজ পরিশ্রমে মানব নিজ নিজ উন্নতির জন্তই ব্যস্ত হইবে, নিজের সুখসম্ভোগ স্বীয় পরিশ্রমের উপরই নির্ভর করিবে। তখনই পরিশ্রমের ক্লেশকরতা দূরে গিয়া মুখ করত। আসিবে । Love's Labour যথার্থই এতদিন মানবসমাজে lost বা নষ্ট হইয়া আসিয়াছে কিন্তু বিজ্ঞানের রাজ্য স্থাপিত হইলে যে কোন পরিশ্রম তাহা সকলই প্রেমের ভালবাসার পরিশ্রম হইবে, সকলই আনন্দও মুখদায়ক হইবে। তখন যে যত পরিশ্রম করিবে তাহার পূর্ণফলভোগী নিজেই হইবে এবং স্বীয় পরিশ্রম ব্যতিরেকে কি জ্ঞান কি নীতি, কি সৌন্দর্য্য মুখভোগ, কোন পথেই কেহ কোন উন্নতি লাভ করিতে পারিবে না। তখনই মানব প্রকৃত পক্ষে সত্য শিব স্বন্দর যাহা, তাহারই উপাসক হইবে ও তাহারই জন্ত শ্রম করিবে । যুদ্ধ বিগ্রহ মারামারি কাটাকাটি বিবাদ কলহের স্থানও . তখন পৃথিবীতে ক্রমশঃ সঙ্কীর্ণ হইতে সঙ্কীর্ণতর হইয়৷ আসিবে। ভবিষ্য মানবসমাজে যুদ্ধের কোন আবশুকই থাকিবে না। বৰ্ব্বর যুগের কথা ছাড়িয়া দিলেও আজকাল ( বর্তমানে ) যে যুদ্ধবিগ্ৰহাদি দেখিতে পাওয়া যায়—তাহাদের সকলেরই এক মূল কারণ উদর-চিন্তা r এই যে সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় রক্তবন্ত বহিয়া গেল বা পূৰ্ব্বপ্রভাতে রুষ-জাপ-বলপরীক্ষার অগ্নিকুণ্ডে কত মানব যে পতঙ্গের স্থায় আপনাদিগকে আহুতি দিল তাহার সকলেরই মূল