পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Փ8Ե `-്.---- ------------ আহারে বিরত হইয়া, নিঃশ্বাস রোধ করিয়া, একাগ্র চিত্ত হইয়া, সমস্ত মনকে এক লক্ষ্যের প্রতি স্থির রাখিলেন ;– সেই লক্ষ্য—বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি। পাশ্ববৰ্ত্তী আশ্রমের পাঁচ জন তাপস, তাহার কঠোর তপশ্চরণে বিক্ষিত হইয়া তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিল। কিন্তু তথাপি তিনি পরম জ্ঞান লাভ করিতে পারিলেন না ; শরীরকে যতই নিগ্ৰহ করিতে লাগিলেন, তাহার চরম লক্ষ্য হইতে ততই দূরে চলিয়া যাইতে লাগিলেন। তখন তিনি প্রকাশুরূপে তাপস-জীবন পরিত্যাগ করিলেন ; তিনি বুঝিলেন, কঠোর তপশ্চরণ নিষ্ফল, উহা শরীরকে অবসন্ন করিয়া ফেলে, এবং উহার কুফল মন পর্যন্ত আসিয়া পৌছে। শিযদিগের নিন্দার ভাজন হইয়াও তিনি, শরীরকে সবল ও সতেজ করিবার জন্য আবার পর্য্যাপ্ত পরিমাণে আহার করিতে লাগিলেন। র্তাহার সঙ্গীরা তাহাকে পরিত্যাগ করিলেন ; তিনি এখন একাকী রছিলেন। এইবার তিনি উত্তম মার্গ প্রাপ্ত হইলেন ; ইঞ্জিয় মুখ হইতে বিরত হইয়া, বোধি-বৃক্ষের তলে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হইলেন । এইবার তাহার অস্তরে শেষ-যুদ্ধ-ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল, যাহাদিগকে তিনি জয় করিয়াছেন বলিয়া মনে করিয়াছিলেন, সেই সব পার্থিব প্রবৃত্তি ও কামনা তাহার অন্তরে আবার জাগরূক হওয়ায়, তিনি তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। যাহা আমাদের সকল দুঃখের মূল, সেই সব মায়ামোহের সহিত, জীবন-তৃষার সহিত, ভোগ-তৃষার সহিত যুদ্ধ আরম্ভ হইল। এখনও পর্য্যস্ত, সমস্ত পার্থিব স্বথ তাহার মানস-চক্ষের সমক্ষে উপস্থিত হইতেছিল ;–মান, যশ, প্রভুত্ব, আসক্তি, পারিবারিক সুখ । পরিশেষে, সৰ্ব্বাপেক্ষ ভীষণ আর এক সংগ্রামে তিনি প্রবৃত্ত হইলেন ; সংশয় আসিয়া তাহার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করিতেছিল। কিন্তু স্বকীয় সংকল্পে অটল থাকিয়া গৌতম সমস্ত সঙ্কটেই জয়লাভ করিলেন। তদনন্তর, একদিন রাত্রিকালে পরম জ্ঞান তাহার নিকট উপনীত হইল ; সেই জ্ঞানের বৈদ্যুতিক আলোকচ্ছটায় তাহার মন আচ্ছন্ন হইল। তাহার আত্মা, পরম্পরাক্রমে বিশুদ্ধ হইতে বিশুদ্ধতর অবস্থায় উপনীত হইল ; এবং অবশেষে প্রবাসী । করিতে লাগিলেন;–জিহাকে তালুদেশে সংসত্ত্ব করিয়া, পরম সত্য স্বকীয় পূর্ণ মহিমায় তাহার নিকট প্রকাশিত [ ৮ম ভাগ। হইল। ○ বৌদ্ধশাস্ত্রে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে –তিনি দিব্যচক্ষু লাভ করিলেন। জীব পরম্পরার উৎপত্তির কারণ, দুঃখের মূল, দুঃখমোচনের উপায়, তিনি স্পষ্টরূপে দেখিতে পাইলেন। এখন হইতে র্তাহার জীবনের গতি ফিরিল ; তাহার জীবন একটা সুনির্দিষ্ট পথ ধরিয়া চলিতে লাগিল। তিনি ধ্যান হইতে উঠিয়াই দেখিলেন তিনি বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন, তিনি পরম জ্ঞানলাভ করিয়াছেন, তখনই তিনি,—স্বয়ং যে স্বথের অংশভাগী হইয়াছেন, তাহা বিশ্বমানবকে দিবার জন্ত বহির্গত হইলেন। ইহাই তাহার ধৰ্ম্মপ্রচারের আরম্ভ কাল। জনশ্রুতি অনুসারে, সিদ্ধার্থের বয়স তখন ৩৬ বৎসর। তিনি বিভিন্ন নাম নিৰ্ব্বিশেষে গ্রহণ করিতেন; কখন কৌলিক নাম গৌতম, কথন শাক্যমুনি, কখন ভগবান, কখন তথাগত, কখন সত্যধৰ্ম্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিবার জন্ত সমুদ্যত “পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী মুনিদিগের দ্যায় একজন মুনি,” কখন বুদ্ধ—এইরূপ বিভিন্ন নামে পরিচিত হইতেন। যে ধৰ্ম্মপ্রচার ৪৫ বৎসর ধরিয়া চলিয়াছিল, সেই ধৰ্ম্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করিবার পূৰ্ব্বে, দীর্ঘ ধ্যানের ফলে বুদ্ধদেব যে বিজয়ানন্দ লাভ করিয়াছিলেন সেই আনন্দ কিছুকাল উপভোগ করিতে অভিলাষী হইলেন ; তদনন্তর, “মহাভগুগের জনশ্রুতি অনুসারে, তিনি ২৮ দিন এবং অন্তান্ত জনশ্রুতি অনুসারে ৪৯ দিন উপবাস-ব্রত পালন করেন। ললিতবিস্তরে আছে,—প্রথম ৭ দিনের পর, পাপাত্মা মার শাক্যমুনিকে মোহমুগ্ধ করিবার জন্য শেষ চেষ্টা ও প্রাণপণ চেষ্টা করে। ইহার পূৰ্ব্বে যখন তিনি কঠোর তপস্তা মগ্ন হইয়া পরম সত্যের অন্বেষণ করিতেছিলেন, তখন মার তাহাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করিবার জন্য অশেষ চেষ্টা করিয়াও সফলকাম হইতে পারে নাই । গৌতম বলিয়া উঠিলেন : “মার তোকে আমি জন্ম করিব! তোর প্রথম সৈন্ত কাম সমূহ দ্বিতীয় সৈন্ত অসন্তোষ, তৃতীয় সৈন্ত ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ; চতুর্থ সৈন্ত লোভ ; পঞ্চম সৈন্তআলপ্ত ও জড়তা ; ষষ্ঠ সৈন্ত-ভর ; সপ্তম সৈন্য সংশয়; অষ্টম সৈন্য ক্রোধ, কাপটা, যশস্পৃহা, প্রশংসা, মানসন্ত্রম, মিথ্যার্জিত খ্যাতি ; আত্মশ্লাঘ, পরনিন্দ ; এই দানব সৈন্ত তাহদের / . ১০ম সংখ্যা । ] সহিত মৈত্রীবন্ধনে বদ্ধ, যাহারা কৃষ্ণবর্ণ, যাহারা দহন করে। প্রমণ ও ব্রাহ্মণ উভয়ই উহাদের মধ্যে নিমজ্জিত। তোর এই সমস্ত সৈন্য যাহারা ত্রিলোক জয় করিয়াছে, তাহাদিগকে আমি জ্ঞানের দ্বারা চূর্ণ করিব, যেমন অদগ্ধ মৃৎপাত্র জলের " शब्र हूर्त श्ब्र।” (०२) বিবিধ প্রকারে তাহাকে আক্রমণ করিয়া, তাহার গৰ্ব্বকে উত্তেজিত করিয়া, সংশয়ের দ্বারা তাহার চিত্তকে বিচলিত করিবার চেষ্টা করিয়া, তদনন্তর মার, শেষ প্রলোভন পরম রূপসী রমণীর আকারে তাহার নিকট প্রেরণ করিলেন। বিজনে দীর্ঘকাল তপস্তা করিয়া তাহার দেহের তেজ নিঃশেষ হইয়াছে—এই সময়ে সেই সকল রমণী তাহদের ছলাকলার দ্বারা তাহার ধৰ্ম্মকে আক্রমণ করিবার চেষ্টা করিল। মার, স্বকীয় দুহিতাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিল : তোমরা বোধিসত্ত্বের নিকট গিয়া তোমাদের নারীমায়া প্রদর্শন কর এবং তিনি কামের বশবৰ্ত্ত কি না, পরীক্ষা করিয়া দেখ। তথন মার-কন্যাগণ, বোধিসত্ত্বের কাম উত্তেজিত করিবার জন্য নিম্নলিখিত গাথা বলিল । "বসন্ত কাল সমাগত, এই স্বন্দর ঋতুতে তরুগণ পুম্পিত হইয়াছে, এস বধু আমরা মুখ সম্ভোগ করি। তোমার সুন্দর দেহ, অতীব কমনীয়, রাজচক্ৰবৰ্ত্তীর চিত্ন-সমূহে সমলঙ্কত। আমরা মুজাত, দেবমানবের স্বথ বিধানার্থই আমরা জন্মগ্রহণ করিয়াছি, ঐ উদ্দেশ্যেই আমরা প্রাণধারণ করিতেছি। শীঘ্ৰ উথান কর, উত্থান করিয়া সুন্দর যৌবন উপভোগ কর ; পরম জ্ঞানলাভ করা বড়ই কঠিন ; সে চিন্তা পরিত্যাগ কর। সাজসজ্জায় মুসজ্জিত, অলঙ্কারে বিভূষিত এই দেখ দেব-কন্যারা তোমার উদেশে আসিয়াছেন। কীটদষ্ট কাষ্ঠথও যতই শুদ্ধশীর্ণ হউক না কেন, কোন মনুষ্য এইরূপ সৌন্দর্ঘ্যে বিমুগ্ধ না হইবে ? উহাদের মুচিকুণ কেশরাশি সরস মুগন্ধে পরিষিক্ত ; উহাদের কিরাট ও কর্ণবলয় বিভূষিত মুখমণ্ডল প্রস্ফুটিত পুপ সদৃশ, উহাদের সুন্দর ললাট, উহাদের মুখ স্বরঞ্জিত, উহাদের নেত্র প্রস্ফুটিত পদ্মদলের স্থায় বিশাল, উহাদের আনন পূর্ণচন্দ্রের দ্যায়, উহাদের ওষ্ঠ পঙ্ক বিম্বের স্থায়, উহাদের মুন্দর দস্তুরাজি শঙ্খের দ্যায়, যুথিকার স্থায়, তুম্বারের স্থায় শুভ্র। উহাদের দিকে চাহিয়া দেখ, סי বৌদ্ধধৰ্ম্ম। " Q8。 --WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) সুখেরই ধ্যান করিতেছে। দেথ প্রভু, উহাদের পয়োধর কেমন কঠিন, কেমন তুঙ্গ, কেমন পীন ; ঐ দেখ উহাদের সুন্দর ত্ৰিবলী রেখা, উহাদের সুগঠিত বিশাল নিতম্ব, উহার বাস্তবিকই প্রিয়দর্শন। উহার মরাল-গতি ; উহার কেমন ধীর পদক্ষেপে চলিতেছে ; উহার কেমন লালিতাসহকারে কথা কহে ; উহাদের প্রেমের ভাষা একেবারে হৃদয়ে পৌঁছে ; বেশভূষায় বিভূষিতা এই সকল রূপসী ললনা, বিলাস-লীলায় স্থপণ্ডিত। গীত বাদ্য নৃত্যে ইহারা সুনিপুণ, এই সকল গুণবতী রূপসীরা সুপের উদ্দেশেই জন্মগ্রহণ করিয়াছে। এই সকল প্রেমবিক্ষুব্ধ-ললনাদিগকে যদি তুমি প্রত্যাখ্যান কর, তাহা হইলে এই পৃথিবীতে আসাই তোমার বিষম दिज्वनां ।।” তখন বোধিসত্ত্ব সম্মিতমুখে এইরূপ উত্তর করিলেন : “হায়! বাসনাই দুঃখের সদৃশ, এবং এই দুঃখমূল বাসনাই ধ্যান, অলৌকিক শক্তি এবং জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের তপস্তাকে বিনষ্ট করে ; নারীর কামনায় তৃপ্তি নাই,—এইরূপ ঋষিরা বলিয়াছেন। আমি জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞদিগের তৃপ্তি উৎপাদন করিব। লবণাস্তু পানে যেমন তৃষ্ণ বৃদ্ধি হয়, সেইরূপ যাহারা বাসনাকে পোষণ করে তাহাদেরও তৃষ্ণার নিবৃত্তি হয় না। যাহারা বাসনায় আসক্ত হয় তাহাদের দ্বারা, কি আপনার, কি পরের— কাহারও হিতসাধিত হয় না। কিন্তু আমি আপনার ও পরের হিতসাধনে নিরতিশয় ইচ্ছুক হইয়াছি। তোমার শরীর ফেনের ছায়, জলবুদবুদের স্তায় ; উহা মায়ার দ্বার রঞ্জিত,—উহা যদৃচ্ছাক্রমে আবির্ভূত ও তিরোহিত হইয়া - থাকে। যেমন স্বপ্নলব্ধ মুখ চিরস্থায়ী নহে, সেইরূপ জ্ঞানহীন অবিবেকী জনের চিত্ত সৰ্ব্বদাই বিপথে গমন করে। চক্ষু সংহত-রক্ত গোলাকার স্ফোটকের স্থায় ; উদর, ঘৃণিত মূত্রপুরীষের আবার, কৰ্ম্মজ স্বাভাবিক কলুষরাশি হইতে উৎপন্ন,—দুঃখের যন্ত্র বিশেষ। অজ্ঞান ব্যক্তিদেরই মন বিচলিত হয়, জ্ঞানীদের তাহা কদাপি হয় না ; অজ্ঞান ব্যক্তিরাই শরীরকে সুন্দর বলিয়া মিথ্যা কল্পনা করে.কটিদেশ হইতে অপ্রিয় দুর্গন্ধ নিঃস্থত হয় ; জানু,