পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to 8 করিয়া বেড়াইতেন।” রাজা বিষঃমনে পুত্রকে প্রাসাদে লইয়া গেলেন। সেখানে বুদ্ধদেবের পত্নী যশোধর বুদ্ধদেবের জন্ত প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। যখন হটতে বুদ্ধদেব গৃহ হইতে প্রস্থান করেন, সেই অবধি যশোধরা একাকিনী বিষাদে কাল যাপন করিতেছিলেন। দুইজন শিষ্য সমভিব্যাহারে বুদ্ধদেব ( কেন না, কোন স্ত্রীলোকের গৃহে, কোন ভিক্ষু, সংঘ-নিয়মানুসারে, একাকী যাইতে পারে না) তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। অবশ্য যশোধরার হৃদয়ের কোপ ও অভিমান সঞ্চিত হইয়াছিল,—বুদ্ধদেব কি উচ্চ কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, তাহা তিনি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন নাই। যে পতিকে তিনি এত ভালবাসিতেন সেই প্রিয়তম পতি তাহার রূপলাবণাকে উপেক্ষা করিয়া তাহাকে পরিত্যাগ করিলেন, শুধু এই কথা ভাবিয়াই তিনি যারপর নাই কষ্ট পাইতেছিলেন। কিন্তু পীতবসনপরিহিত সন্ন্যাসবেশধারী মহাপুরুষ বুদ্ধকে দেখিবামাত্র, তিনি তাহার পদতলে গিয়া পড়িলেন এবং পতির জানু ধরিয়া, একটি কথাও উচ্চারণ না করিয়া নীরবে অজস্র অশ্রু বর্ষণ করিতে লাগিলেন। - বুদ্ধদেব তাহাকে ভূমি হইতে উঠাইয়া সাস্বনা করিতে লাগিলেন ; যশোধরা যে সকল পুণাত্রতের অনুষ্ঠান করিয়াছেন তজ্জন্ত তিনি মুক্তিলাভের অধিকারিণী হইয়াছেন, এই বলিয়া তাহাকে আশ্বাস দিলেন। উভয়ের সাক্ষাৎকার এইরূপে শেষ হইল। কিন্তু যশোধরা রমণী, তিনি যখন দেখিলেন, তাহার রূপলাবণ্য, তাহার অশ্রীবর্ষণ সকলই বুথ হইল, তখন তিনি ভাবিলেন--তিনি যে কাজ পারিলেন না, হয়ত তার পুত্রের দ্বারা সেই কাজ স্বসিদ্ধ হইবে । তিনি আশা করিয়াছিলেন, অপতাস্নেহ বুদ্ধদেবকে গৃহে আবার আবদ্ধ করিতে পরিবে। এই মনে করিয়া, তিনি তাহার পুত্রকে স্বন্দর বেশভূষায় ভূষিত করিয়া বুদ্ধের নিকট প্রেরণ করিলেন। শিশু বলিল –“পিতঃ ! আমি ত একদিন রাজা হইয়া শাক্যবংশের রাজসিংহাসনে উপবেশন করিব ; অতএব উত্তরাধিকার স্বত্রে আমার যাহা প্রাপ্য আমাকে তাহা প্রদান করুন।” গৌতম উত্তর করিলেন—“তোমার যাহা প্রাপ্য তাহা নশ্বর, দুঃখ তাহার পরিণাম— ; ওরূপ কোন বস্তু আমার দিবার নাই। আমি তোমাকে যাহা প্রবাসী । MMMMMMM MMMMMMSMMSMMSMMSMMSMSMMSMMSMMSMSMS [ ৮ম ভাগ। নাই।” তখন হইতে র্তাহার পুত্রকে আপনার নিকটে রাখিয়া সংধৰ্ম্মেৰ উপদেশ দিতে লাগিলেন। পরিশেষ্ট্রে তাহার পুত্র রাহুল একজন উৎসাহী ভিক্ষু হইয়া দাড়াইল৷ এই দৃষ্টাস্তুের অনুসরণ করিয়া আরও অনেক লোক দীক্ষা গ্রহণ করিল। বুদ্ধের পরিবারস্থ অনেক ব্যক্তি তাহাজে পদমর্যাদা পরিত্যাগ করিয়া ভিক্ষুর পীত বসন পরিধান করিল ; ইহাদের নাম,-আনন্দ, উপলী, অমুরুদ্ধ। দেবদত্ত জুডাস ইস্কারিয়টের অগ্রদূত বগিলেও হয়। জুডাস ইস্ক্যারিয়টের স্থায় দেবদত্ত স্বকীয় প্রভু বুদ্ধকে নিহত করিবার জন্য এবং সংঘ হইতে তাহার কর্তৃত্ব ছিনাই৷ লইবার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু বুদ্ধদেবের অক্ষয় দয়া ও সাধু সংকল্পের নিকট পরাভূত হইয় তাহার সমস্ত চেষ্টা বিফল হয়। এইরূপে শাক্যমুনি ৪৫ বৎসর ধরিয়া গ্রামে গ্রামে, প্রদেশে প্রদেশে, দৃষ্টান্ত কথার দ্বারা, ধৰ্ম্মোপদেশের দ্বারা-ধৰ্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন, লোকদিগকে নধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন। “মহা পরিনিৰ্ব্বাণস্বত্তে" স্তাহার অস্তিম মুহুর্তের বিবরণ বর্ণিত হইয়াছে। জরাক্রান্ত হইয় তিনি অনুভব করিতে লাগিলেন দিন দিন তাহার বলক্ষয় হইতেছে ; তিনি তাহার প্রিয়তম শিষ্যকে বলিলেনঃ—“দেখ আনন্দ, আমার দিন শেষ হইয়া আসিয়াছে, আমি বৃদ্ধ হইয়াছি।" আনন্দ অশ্রুবর্ষণ করিল এবং শিষ্যমণ্ডলীর মধ্যে আরও কিছুকাল থাকিবার জন্য র্তাহাকে অনুনয় করিল। বুদ্ধদেব বলিলেন ;–“আনন্দ, তোমাকে আমি কি উপদেশ দিই নাই যে, আমরা যাহাদিগকে ভালবাসি তাহদের সহিত একসময় বিচ্ছেদ হইবে, তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিতে হইবে—ইহাই জগতের নিয়ম ? সংযোগোৎপন্ন পদার্থ মাত্রেরই ক্ষয় অবগুম্ভাবী—অতএব মানুষ মরিবে না-লে তথাগতই হউক না, যেই হউক না-ইহা কি কখন সম্ভব ? কেহই চিরস্থায়ী হইতে পারে না। শুন, আমি সত্য বলিতেছি, তিন মাসের মধ্যে, তথাগত পরিনিৰ্ব্বাণে প্রবেশ করিবে। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, যে সত্য আমি অবগত হইয়া তোমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছি, তাহা সম্যকরূপে তোময় WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:২৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)------ দিতে পারি তাহা আধ্যাত্মিক ঐশ্বৰ্য্য। সে ঐশ্বধ আনি বোধিক্রমের মূলে বসিয়া উপাৰ্জন করিয়াছি—তাহার ক্ষ" o o l

. ১০ম সংখ্যা । ] কয়-যেন এই বিশুদ্ধ ধৰ্ম্ম স্থায়ী হয়—বহুকাল সংরক্ষিত হয়। যে এই বিশুদ্ধতার পথ অনুসরণ করিবে সে নিশ্চিতই ভৱসিন্ধু পার হইয়। সেই পরম স্থানে উপনীত হইবে রেখানে সকল দুঃখের অবসান হয় (৩৮)।” তাছার জীবনের শেষ দশায়, তাহার নির্দেশিত পথ অধ্যবসায় সহকারে অনুসরণ করিবার নিমিত্ত তাহার শিষ্যদিগকে ক্রমাগত বলিতেন। তাহার মৃত্যুর পর, সংশয় ও তর্ক বিতর্ক উপস্থিত হইবে বুঝিতে পারিয়া, তাছার শিখাদিগকে বয়ানগরে একত্র করিয়া তাহাদিগকে এই কথা বলিলেন :–“ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগের নিকট হইতে চলিয়া গেলে, বৌদ্ধ সমাজের প্রাচীনেরা, ভিক্ষু সন্ন্যাসীরা এইরূপ বলিবে ; আমি এই কথা কিংবা ঐ কথা বুদ্ধির নিজ মুখ হইতে শুনিয়াছি ; সাক্ষাৎ বুদ্ধের নিকট হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছি । ইহাই আমাদের গুরুর উপদিষ্ট সত্য, ইহাই আমাদের গুরুর মত, গুরুর সিদ্ধান্ত। এই সব কথা, বিনা পরীক্ষায় বিশ্বাসও করিবে না, কিংবা অবজ্ঞা সহকারে অগ্রাহ ও করিবে না। প্রত্যেক কথা তোমরা কোন প্রকার পূৰ্ব্বসংস্কারের বশবৰ্ত্ত না হইয়া মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিবে এবং আমার উপদিষ্ট বৌদ্ধধৰ্ম্মের মুখ্য লক্ষণাদির সহিত, সংঘের নিয়মাবলীর সহিত মিল করিয়া দেখিলে। এইরূপ তুলনা করিয়া-যদি অমুক প্রাচীনের কথা, অমুক ভিক্ষুর কথা আমার উপদিষ্ট ধৰ্ম্মের সহিত, সংঘের নিয়মের সহিত মিল না হয় তবে তাহ অগ্রাহ করিবে; এবং তাহার বিপরীত হইলে গ্রহণ করিবে। এই আমার উপদেশ (৩৯)।” তিনি ভ্রমণ করিতে করিতে কুলীনারা অভিমুখে যাত্রা করিলেন। তাহার দুৰ্ব্বলতার বৃদ্ধি হইল, দারুণ কষ্ট অনুভব করিতে লাগিলেন, অবশেষে পথের ধারে একটা গাছের তলায় বিশ্রাম করিতে বাধ্য হইলেন। তৃষ্ণায় কাতর হইয়া আনন্দের নিকট একটু জল চাহিলেন। আনন্দ উত্তর করিল, যে স্বল্পতোয় নদীতে একটু জল আছে, সার্থবাহরা সেই নদীর উপর দিয়া চলাচল করায় সেই নদীর জল কর্দমাক্ত হইয়া গ্রহণ কর। দিনে দিনে, দণ্ডে দণ্ডে তোমাদের জীবনকে l পড়িআছে। কিন্তু বুদ্ধদেব পুনঃ পুনঃ প্রার্থনা করায়, - বৌদ্ধধৰ্ম্ম । o ধর্মের ভাবে অনুপ্রাণিত কর, এই ধরে নিমগ্ন হইয়া, আমার স্থলাভিষিক্ত হইয়া তোমরা ইহাকে সৰ্ব্বত্র ব্যাপ্ত QQQ আনন্দ কমণ্ডলু ভরিয়া জল আনিল, এবং সেই জল অনাবিল ও স্বচ্ছ দেখিয়া বিস্থিত হইল। এই অদ্ভূত ঘটনার পর, যে সার্থবাহরা নদী পার হইয়াছিল তাহাদের অধিস্বামী পুরুস, বুদ্ধদেব আ সয়াছেন জানিতে পারিয়া, র্তাঙ্গার চরণে দণ্ডবং প্রণাম করিয়া, বহুমূল্য কিংখাব পরিচ্ছদ উপহার দিল। শাক্যমুনি উহার একখানি বস্ত্র লইয়া পরিধান করিলেন ; কিন্তু পরিবামাত্র উহা স্নান ও জৌলসবিহীন বলিয়া মনে হইল। श्रानना विश्रब्राडिळूङ श्हेब्रा ननिद्रा डैर्टिन : "अtछ, আপনার মুথ এরূপ ভাস্বর, এমন একটা প্রভা আপনার দেহ হইতে নিঃস্তত হইতেছে, যে উহার নিকট আপনার বহুমূল্য বস্ত্রখানি অতীব স্নান ও অনুজ্জল বলিয়া মনে হইতেছে।” বুদ্ধ উত্তর করিলেন —“আনন্দ, তুমি যাহা বলিতেছ তাহ সত্য। এই পার্থিব জীবন-পথে বুদ্ধ দুইবার রূপান্তরিত হইয়াছে। প্রথমবার, সেই রাত্রে য়ুখন বুদ্ধ পরম জ্ঞানলাভ করে ; দ্বিতীয়বার রাত্রিকালে যখন বুদ্ধ পরিনিৰ্ব্বাণে প্রবেশ করিবে। আর আনন্দ আজি তৃতীয় প্রহর রাত্রিতে, বুদ্ধ চিরশাস্তির মধ্যে প্রবেশ করিবে।” বস্তুতই শাক্যমুনির অস্তিম কাল আসন্ন। বুদ্ধদেব শিষ্মমণ্ডলী সমভিব্যাহারে, কায়ক্লেশে কুসীনারার অনতিদূরন্থ শালবনের অভিমুখে যাত্রা করিলেন। সেখানে পোছিয়াই তিনি দুইটি যমজ-তরুর মাঝখানে শুইয়া পড়িলেন। গাছ দুটি তৎক্ষণাৎ ফুলে ভরিয়া গেল ; এবং সেই সকল ফুল আসন্ননৃত্যু বুদ্ধদেবের উপর অশ্রচ্ছলে ঝরিয়া পড়িল ; প্রকৃতিদেবী স্বয়ং যেন ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিলেন। রাত্রিতে স্বৰ্গীয় সঙ্গীত শ্রত হইল। তখন বুদ্ধদেব বলিলেন —“দেখ, কি চমৎকার দৃশ্ন ! তথাগতের সন্মানার্থ . স্বৰ্গ মৰ্ত্তা রেষারিধি করিতেছে। কিন্তু এরূপ সন্মান তথাগতের সমুচিত নহে। আমার শিষ্যদিগের মধ্যে যাহারা চিত্তের মধ্যে সতত অবস্থিতি করিবে, আমার উপদেশ যথাযথরুপে পালন করিয়া সাধুভাবে জীবন যাপন করিবে, কেবল তাহাদিগের দ্বারাই আমি যথোচিতরূপে সন্মানিত হইব (৪০)।” যতই রাত্রি অধিক হইতে লাগিল, শাক্যমুনির শরীর ততই ক্ষীণ ও অবসর হইয়া পড়িল। রোরুম্ভ- : মান শিষ্যমণ্ডলীর মধ্যে, তাহার আত্মা সতত প্রশাস্ত ছিল।