পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Ꮈ•


বলতে আমার লজ্জা নেই, এদের ছুটিকে পাওয়ার পর থেকে ঠাকুরের পূজো আমি মনের সঙ্গে করতে পেরেছি—এরা যদি যায় তবে আমার ঠাকুর তখনি কঠিন পাথর হয়ে যাবে!” এই বলিয়া বস্ত্রাঞ্চলে হরিমোহিনী দুই চক্ষু মুছিলেন। স্বচরিতা নীচের ঘরে আসিয়া হারান বাবুর সম্মুখে দাড়াইল—কহিল “আপনার কি কথা আছে বলুন ! হারান বাবু কহিল—“বোস।” স্বচরিতা বসিল না, স্থির দাড়াইয়া রহিল। হারান বাবু কহিলেন, “মুচরিত, তুমি আমার প্রতি অন্যায় করচ।” সুচরিত কহিল “আপনিও আমার প্রতি অন্যায় করচেন।” হারান বাৰু কহিলেন, “কেন, আমি তোমাকে যা কথা দিয়েছি এখনো তা—” শুচরিতা মাঝখানে বাধা দিয়া কহিল—“ন্যায় অন্যায় কি শুধু কেবল কথায় ? সেই কথার উপর জোর দিয়ে আপনি কাজে আমার প্রতি অত্যাচার করতে চান ? একটা সত্য কি সহস্র মিথ্যার চেয়ে বড় নয় ? আমি যদি একশো বার ভুল করে থাকি তবে কি আপনি জোর করে আমার সেই ভূলকেই অগ্রগণ্য করবেন ? আঙ্গ আমার যখন সেই ভুল ভেঙেছে তখন আমি আমার আগেকার কোনো কথাকে স্বীকার করব না–করলে আমার অন্যায় হবে!” সুচরিতার যে এমন পরিবর্তন কি করিয়া সম্ভব হইতে পারে তাহা হারান বাৰু কোনো মতেই বুঝিতে পারিলেন না। তাহার স্বাভাবিক স্তব্ধতা ও নম্রতা আজ এমন করিয়া ভাঙিয়া গেছে ইহা যে র্তাহারই দ্বারা ঘটতে পারে তাহা অনুমান করিবার শক্তি ও বিনয় তাহার ছিল না। স্বচরিতার নূতন সঙ্গীগুলির প্রতি মনে মনে দোষারোপ করিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন—“তুমি কি ভুল করেছিলে ?” ” স্বচরিতা কহিল—“সে কথা কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করচেন ? পূৰ্ব্বে মত ছিল এখন আমার মত নেই এই কি যথেষ্ট নয় ?” প্রবাসী । o [ ৮ম ভাগ। [་(༡༥ ཤ་ཝ། ། ] SMMS MMMMMMMMS হারান বাবু কহিলেন–“ব্ৰাহ্মসমাজের কাছে যে আম ! দের জবাবদিহি আছে! সমাজের লোকের কাছে ভূষ্টি | বা কি বলবে আমিই বা কি বলব ?” - স্বচরিতা কছিল “আমি কোনো কথাই বল না। আপনি যদি বলতে ইচ্ছা করেন তবে বলবেন, স্বচরিতার বয়স অল্প, ওর বুদ্ধি নেই, ওর মতি অস্থির। যেমন ইচ্ছ তেমনি বলবেন । কিন্তু এ সম্বন্ধে এই আমাদের শেষ কথা । হয়ে গেল !” হারান বাবু কহিলেন, “শেষ কথা হতেই পারে না। পরেশ বাবু যদি—” বলিতে বলিতেই পরেশ বাবু আসিয়া উপস্থিত হইলেন; কহিলেন, “কি পানু বাৰু, আমার কথা কি বলচেন ?” সুচরিতা তখন ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইতেছিল। হারান বাবু ডাকিয়া কহিলেন, “স্বচরিতা যেয়োন, পরেশ বাবুর কাছে কথাটা হয়ে যাক।” স্বচরিতা ফিরিয়া দাড়াইল। হারান বাবু কহিলেন, “পরেশ বাবু, এত দিন পরে আজ স্বচরিতা বাচন ) বিবাহে ওঁর মত নেই! এত বড় গুরুতর বিষয় নিiে কি এত দিন ওঁর খেলা করা উচিত ছিল ? এই ৷ে কদৰ্য্য উপসর্গট ঘটুল এজন্তে কি আপনাকেও দায়ী হন্তে হবে না ?” পরেশ বাবু স্বচরিতার মাথায় হাত বুলাইয়া স্নিগ্ধশ্বরে। কহিলেন, “মা তোমার এখানে থাকবার দরকার নেই, তুমি যাও!” . এই সামান্ত কথাটুকু শুনিবাৰ্মাত্র এক মুহূর্তে অশ্রজনে স্বচরিতার দুই চোখ ভাসিয়া গেল এবং সে তাড়াতাড়ি । সেখান হইতে চলিয়া গেল । পরেশ বাবু কহিল, “স্বচরিতা যে নিজের মন ভাল করে না বুঝেই বিবাহে সন্মতি দিয়েছিল এই সন্দেহ অনেক । দিন থেকে আমার মনে छेन्नग्न হওয়াতেই সমাজের লোকের সামনে আপনাদের সম্বন্ধ পাকা করার বিষয়ে আমি আপনার অনুরোধ পালন করতে পারিনি।” t হারান বাবু কহিলেন, “স্বচরিতা তখন নিজের মন ঠিক বুঝেই সম্মতি দিয়েছিল, এখনই না বুঝে অগন্ধি দিচ্চে এ রকম সন্দেহ আপনার মনে উদয় হচ্চে না ?” পরেশ বাবু কহিলেন, “দুটোই হতে পারে কিন্তু এ বৃকম সন্দেহের স্থলে ত বিবাহ হতে পারে না।” হারান বাবু কহিলেন, “আপনি সুচরিতাকে সৎ দেবেন না ?” পরেশ বাবু কহিলেন, “আপনি নিশ্চয় জানেন সুচরিতাকে আমি কখনো সাধ্যমতে অসৎ পরামর্শ দিতে পারি নে!” হারান বাবু কছিলেন, “তাই যদি হত, তাহলে স্বচরিতার এ রকম পরিণাম কখনই ঘটতে পারত না। আপনার পরিবারে আজ কাল যে সব ব্যাপার আরম্ভ য়েছে এ যে সমস্তই আপনার অবিবেচনার ফল এ কথা আমি আপনাকে মুখের সাম্নেই বলচি!” পরেশ বাবু ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “এ ত আপনি ঠিক কথাই বলচেন,-আমার পরিবারের সমস্ত ফলাফলের দায়িত্ব আমি নেব না ত কে নেবে ?” - o হারান বাবু কছিলেন, “এজন্যে আপনাকে অনুতাপ বরত হবে—সে আমি বলে রাখচি৷” পৰেশ বাবু কহিলেন, “অনুতাপ ত ঈশ্বরের দয়া। অপরাধকেই ভয় করি, পামু বাবু, অনুতাপকে নয়।” স্বচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া পরেশ বাবুৰ হাত ধরিয়া কলি, “বাবা, তোমার উপাসনার সময় হয়েচে ।” * পরেশ বাবু কহিলেন, “পায় বাবু, তবে কি একটু লবেন ?” হারান বাবু কহিলেন, “না”। o বলিয়া দ্রুতপদে চলিয়া আগে আত্মশাসন পরে রাজ্য শাসন । বরিশাল, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৩১৫। শ্রীচরণকমলেষু— ৯ বর্তমান মাসের “প্রবাসী"তে আপনার প্রবন্ধ পড়িয়া প্রতিশয় আনন্দিত হইলাম। আপনি যে আমার অকিঞ্চিৎকর বচন উপলক্ষ্য করিয়া এমন একটা উপাদেয় ও শিক্ষাপ্রদ প্রবন্ধ "প্রবাসী"তে প্রকাশিত করিয়াছেন, ইহাতে আমি আগে আত্মশাসন পরে রাজ্যশাসন। go ax

যেমন অত্যন্ত শ্লাঘা বোধ করিতেছি, “প্রবাসীর” পাঠকগণও তেমনি নিরতিশয় উপকৃত হইয়াছেন। আমার বন্ধুগণ উহা পড়িয়া মোহিত হইয়াছেন। আপনার প্রবন্ধটা মনোযোগ পূর্বক বারংবার পড়িয় আমার মনে কয়েকটা প্রশ্নের উদয় হইয়াছে। কিন্তু আমি সেগুলি পত্রিকায় উপস্থিত করিতে সঙ্কুচিত হইতেছি—কারণ, আপনি ব্রাহ্মসমাজের পূজনীয়, ঋষিকল্প আচাৰ্য্য, আর আমি উহার একজন নগণ্য সভ্য। সুতরাং আমার প্রশ্নগুলি এই পত্র সাহায্যে জানাইতেছি। আপনি যদি এগুলির উত্তর স্বরূপ একটা প্রবন্ধ “প্রবাসী"তে প্রকাশ করেন, তবে আমার, এবং সঙ্গে সঙ্গে অপরেরও, পরম উপকার হইবে। অনুগ্রহ করিয়া আমার ধৃষ্টতা মার্জনা করিবেন, এই প্রার্থনা। ১ । “যতোধৰ্ম্মস্ততোজয়ঃ”, এই কথাটা বোধ হয় কুরুপাগুবদিগের সময় হইতেই চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু সেকালে ধৰ্ম্ম বলিতে যাহা বুঝাইত, এখনও কি আমরা তাই বুঝি ? - ২। বিভিন্নদেশে, বিভিন্নযুগে, ধৰ্ম্মের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দেখিতে পাওয়া যায়। স্বাধীন ও পরাধীন দেশের ধৰ্ম্ম এক নয়। ভবিষ্যতে পৃথিবীতে যে সনাতন ধৰ্ম্মের জয় হইবে বলিয়। আপনি বিশ্বাস করেন, তাহার সংজ্ঞা ও আকার কি ? ৩। ইয়ুরোপীয় সভ্যতা দানব সভ্যতা ; ভারতেই মানব সভ্যতার উদ্ভব হইবে—বা হইয়াছে, ইহা আমি স্বীকার করি। কিন্তু ঐ মানব সভ্যতা কিপ্রকারে জয়যুক্ত হইবে ? ভারতবর্ষ আত্মশাসন-ক্ষমতা লাভ না করিলে কি উহা জয়লাভ করিতে পরিবে ? ৪। মানবী সভ্যতার ভাবী জয় যদি ভারতবর্ষের আত্মশাসন-ক্ষমতা লাভের উপর নির্ভর করে, তবে সেই ক্ষমতা লাভের পায় কি কি ? & I - - - - ৬ । এযাবৎ কোনও দেশের স্বাধীনতালাভচেষ্টাতেই বিশুদ্ধ ধৰ্ম্মের জয় দেখিতে পাই না। ভারতবর্ষে সম্প্রতি যে আন্দোলনতরঙ্গ প্রবাহিত হইতেছে, সরল ধৰ্ম্মপিপাস্থ ব্যক্তিগণ তাহা হইতে দূরে থাকিবেন, না যতদিন সম্ভব যোগ রক্ষা করিয়া বাকী কার্যের ভার অপরের হস্তে স্তস্ত করিবেন ?