পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(obo হইত, তবে কি আমরা এইরূপ দৃশু দেখিতে পাইতাম। উক্ত অভিজাতবংশের প্রবর্তক যে, প্রচ্ছন্ন বা অপ্রচ্ছন্ন লুণ্ঠনকারী ছিলেন, সত্যের অনুরোধে বাধ্য হইয়া এইরূপ সিদ্ধান্ত করিতে হয়। এই পৰ্য্যন্ত রাজ্যও ধনসংক্রান্ত আভিজাত্যের আলোচনা করা গেল। এই ক্ষণে ধৰ্ম্ম ও বিদ্যার আভিজাত্য বিষয়ে গুণাগুণের অনুসন্ধান করা যাউক । পিতা মাতার ধৰ্ম্মভাব যদি নিয়তরূপে সন্তানে সংক্রমিত হইত, তবে বিস্তা ও ধর্মের আভিজাত্য এই মরজগতে অতি আদরের জিনিষ হইয়া পড়িত; কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে অনেক স্থলে ইহার বৈপরীত্য দেখিতে পাওয়া যায়। দৈত্যকুলের প্রহলাদ ইহার উদাহরণ স্থল। অধিকন্তু রাজ্য ও ধনের আভিজাত্য যেরূপ অনভিজাতদিগের রুধির শোষণ না করিয়া পরিতৃপ্ত হয় না, তক্রপ এই অভিজাত্য নহে। বরং ইহা দ্বারা অনেক বিষয়ে সমাজের উপকার সংসাধিত হয়। যগুপি পুরাকালের পৌরোহিত্যও এরূপ করাল দৃপ্ত দেখাইয়াছে, তথাপি বর্তমান সময়ে উহা তিরোহিতপ্রায়। এক্ষণে আর কোন সভ্যসমাজে প্রকাশ্যভাবে পুরোহিতের যথেচ্ছাচার দৃষ্টিগোচর হয় না। স্মরণাতীত কাল হইতে আর্যভূমিতে যে, সন্ন্যাসীদিগের প্রতি লোকের শ্রদ্ধা ভক্তি চলিয়া আসিতেছে, তাহাও দৈনন্দিন সঙ্কোচনীতির অনুসরণ করিতেছে। প্রতীচ্য শিক্ষার প্রভাব যাহাদের উপর অক্ষুধ আছে তাহারা বড় সাধু সন্ন্যাসীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন না। যাহারা স্বয়ং অশিক্ষিত এবং শিক্ষিত লোকের ভাবে বঞ্চিত, তাহারাই তদীয় সেবায় আপনাদিগকে ধন্ত মনে করিয়া থাকে। ফলতঃ বর্তমান সময়ে এইরূপ অনেক সাধু সন্নাসী আছেন, যাহাঁদের মধ্যে আভিজাত্য ভিন্ন অন্ত কোন বিশেষ গুণ দেখিতে পাওয়া যায় না ; ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ সিদ্ধিরও অভিমান করিয়া থাকেন। অনেকে আবার স্বয়ং সিদ্ধির অভিমান না করিয়াও গুরুকে অথবা গুরুর গুরুকে সিদ্ধের সর্দার বলিয়া ঘোষণা করেন। সত্যের অমরোধে না বলিয়া থাকিতে পারলাম না যে, এইরূপ সাধু সন্ন্যাসীরা ভারতবাসীর গলগ্রহ ভিন্ন আর কিছুই নহেন। অবশুই সদাশয় মনীষী সন্ন্যাসীরা পৃথিবীর কল্যাণ করিয়া থাকেন, কিন্তু তাই বলিয়া কি নিরক্ষর ভেগাবও অর্থাৎ ভবঘুরে প্রবাসী। পরস্তু অল্পবেতনের কৰ্ম্মচারী হইয় তাহারা কিরূপে রাণীকৃত o [ ৮ম ভাগ । অরুণোদয় সময়ে সাধু সন্ন্যাসীরা যদি দেশের কল্যাণে ব্ৰতী । হয়েন, তবে এক মহান কাৰ্য্য সংসাধিত হইতে পারে। বঙ্গভূমির অনেক ভট্টাচাৰ্য্য মহোদয়ের স্বদেশের হিতসাধন করিতেছেন শুনিয়া সুখী হওয়া গেল। ভারতে মে জাতীয়তার অঙ্কুর উৎপন্ন হইয়াছে তাহাতে ভট্টাচাৰ্য্যদিগেরম্ভ কথাই নাই আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকে ভক্তিবারি সেচন পুৰ্ব্বক ঐ অঙ্কুর যাহাতে মহাবৃক্ষে পরিণত হয় তাহা করিতে হইবে। আবহমানকাল হইতেই আর্যভূমির সাশ৷ সন্ন্যাসী এবং ব্রাহ্মণগণ জনসাধারণকে কল্যাণের পথ দেখাইয়া আসিতেছেন। আশা করি বর্তমান সময়েও তাহারা এইরূপ করিবেন। রাজ্য ও ধনের আভিজাত্য প্রবর্তক ষেরূপ অন্তের প্রাপ্য অংশ আত্মসাত্ করিয়া আসিয়াছেন, সেইরূপ ধৰ্ম্ম ও বিদ্যার আভিজাত্য প্ৰবৰ্ত্তক নহেন। এই আভিজাত্যের } মূল অতীব পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক ; কিন্তু পশ্চাত ইহাও ক্রমনীতিতে বিকৃত হইয়া পড়িয়াছে। যখন প্রথম ও দ্বিতীয় আভিজাত্যের মূল শুদ্ধ ও নিষ্কলঙ্ক, পক্ষান্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ আভিজাত্যের মুলদেশের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করিলেও অষ্ঠায় এবং নৃশংসতার মাত্র অধিক হইতে ও অধিকতম দেখিতে পাওয়া যায় ; তখন আভিজাত্যের প্রবর্তক লইয়া যে অভিজাতের গৌরব করিয়া থাকেন, তাহা প্রথম ও দ্বিতীয় অভিজাত্যশালী ব্যক্তিদিগের পক্ষেই উচিত। তৃতীয় ও চতুর্থ আভিজাত্যের লোকদিগের পক্ষে বরং উহা স্মরণ করিয়া অধোবদন হওয়াই বিধেয়। দেখিতে পাই অনেকেই তাছাদের পূর্ব পুরুষ রাজকীয় উচ্চ কৰ্ম্মচারী বা বীরপুরুষ ছিলেন বলির অভিমানের বর্ষণ আরম্ভ করেন। অর্থের অধিকারী হইয়াছিলেন, তাহা কি প্রভূরা কখন ভাবিয়া দেখিয়াছেন ? পক্ষাস্তরে বীরত্বের গৌরব ঠিক বল যাইতে পারিত, যদি ঐ বীরপুরুষ স্বয়ং জমির সৃষ্টি করিয়া লইতেন। আর অন্তের জিনিষ কাড়িয়া লওয়াও যদি সন্মানের কারণ হয়, তবে দয়াদিগকে কেন আমরা সম্মান । করি না ? বৈষম্য ত কেবল লোকসংখ্যাতেই পাওয়া যা, অর্থাৎ দম্যর দল ছোট আর এই প্রকার বীরের দল বড়। l