পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৮ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন যে গল্প ও আমোদজনক পুস্তকই এদেশের পাঠকসাধারণের অধিকতর প্রিয়। এতদব্যতীত অপর শ্রেণীর পুস্তক আদেী আদরে গৃহীত श्ब्र नl । এস্থলে ইহাও উল্লেখ করা উচিত ষে কলিকাতা, হুগলী ও ঢাকা এই তিনস্থানে তিনটি নৰ্ম্ম্যাল বিদ্যালয় স্থাপিত হয় । এই সকল বিদ্যালয়ের ছাত্রদিগের ব্যবহারার্থ পদার্থ-বিদ্যা, প্রাণিবিস্কা, জ্যামিতি, ভূগোল, প্রভৃতি বিষয়ক অনেকগুলি বাঙ্গলা পুস্তক প্রণীত হয়। ইহা ভিন্ন ছাত্রবৃত্তি ও মাইনর পরীক্ষার উপযোগী পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা বিষয়ক অনেক পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। মেডিক্যাল স্কুল সমূহের পাঠ্য অস্থিবিদ্য, শরীরবিদ্যা, রসায়নবিদ্যাঘটত অনেকগুলি বৈজ্ঞানিক গ্রন্থও বাঙ্গল ভাষায় বিবৃত হইয়াছে। এই সকল গ্রন্থ প্রচারেও যে বাঙ্গল ভাষার অনেকটা উন্নতি হইয়াছে তধিয়ে কোনও সন্দেহ নাই। এখন আলোচনার বিষয় এই যে অৰ্দ্ধ শতাব্দীর সাধক কাল ধরিয়৷ বাম্বল ভাষায় বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ সকল প্রচারিত হইতেছে, কিন্তু ইহাতে বিশেষ কিছু ফললাভ হইয়াছে কি না। বিজ্ঞান বিষয়ক যে সকল পুস্তকের কিছু কাঢ়াত stt5 vt&j Text Book Committee iotişö তালিকাভুক্ত, মুতরাং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার সোপানস্বরূপ। একাদশ বা দ্বাদশ বর্ষীয় বালকদিগের গলাধঃকরণের জন্য যে সকল বিজ্ঞানপীঠ প্রচারিত হইয়াছে তন্দ্বারা প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের ইঃ কি অনিষ্ট সাধিত হইতেছে তাহা সঠিক বলা যায় না। আসল কথা এই, আমাদের দেশ হইতে প্রকৃত জ্ঞানপূহ চলিয়া গিয়াছে। জ্ঞানের প্রতি একটা আন্তরিক টান না থাকিলে কেবল বিশ্ব ~াবদ্ধালয়ের ২৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় বিশেষ ফললাভ হয় না। এই জ্ঞান-ম্পূহার অভাবেই যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বিদ্যালয়ুসমূহে বহুকাল হইতে বিজ্ঞান-অধ্যাপন ব্যবস্থা হইয়াছে, তথাপি বিজ্ঞানের প্রতি আন্তরিক অনুরাগসম্পন্ন ব্যুৎপন্ন ছাত্র আৰীে দেখিতে পাওয়া যায় না ; কেননা ইংরাজিতে একটা কথা আছে, ঘোড়াকে জলাশয়ের নিকট আনিলে কি হইবে । উছার যে তৃষ্ণ নাই। একজামিন প্রৰাসী । [ ৮ম ভাগ । পাশই যেখানকার ছাত্রজীবনের মুখ্য উদেখ, সেখানকার যুবকগণের দ্বারা অধীত বৈজ্ঞানিক বিদ্যার শাখা প্রশাখাদির উন্নতি হইবে এরূপ প্রত্যাশা করা নিতান্তই বৃথা। সেই সকল মৃতকল্প, স্বাস্থ্যবিহীন যুবকগণের যত্নে জাতীয় ভাষার উন্নতি-বিধান কম্বা যে কোনও প্রকার দুরূহ ও অধ্যবসায়মুলক কার্যের সাফল্য সম্পাদনের আশা নিতান্তই স্বপূৰ্বপরাহত। বস্তুত: এক্জামিন পাশ করিবার নিমিত্ত এরূপ হাস্তোদ্দীপক উন্মত্ততা পৃথিবীর অন্ত কুত্রাপ দেখিতে পাওয়া ধায় না। পাশ করিয়া সরস্বতীর নিকট চিরবিদায়গ্ৰহণ,— শক্ষিতের এরূপ জঘন্ত প্রবৃত্তি আর কোন দেশেই নাই। আমরা এদেশে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করি। জ্ঞানী ও গুণী হইয়াছি বলিয়৷ আত্মাদরে স্ফীত হই, অপরাপর দেশে সেই সময়েই প্রকৃত জ্ঞানচর্চার কাল আরম্ভ হয়। কারণ যে সকল দেশের লোকের জ্ঞানের প্রতি যথার্থ অনুরাগ আছে, তাহারা একথা সম্যক্ উপলব্ধি করিয়াছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার হইতে বাহির হইয়াই জ্ঞান-সমুদ্ৰ-মন্থনের প্রশস্ত সময়। আমরা দ্বারকেই গৃহ বলিয়া মনে করিয়াছি, সুতরাং জ্ঞান-মন্দিরের দ্বারেই অবস্থান করি, অভ্যন্তরস্থ রন্ধুরাজি দৃষ্টিগোচর না করিয়াই ক্ষুঃমনে প্রত্যাবৰ্ত্তন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক পঞ্জিকা পরীক্ষোত্তীর্ণগণের নামে । পরিপূর্ণ দেখিলে চক্ষু জুড়ায়। এক বৎসর হয়ত উদ্ভিদ বিস্কায় ১০ জন প্রথম শ্রেণীতে এমূ, এ, পাশ হইলেন। কিন্তু অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এখানেই নিৰ্ব্বাণপ্রাপ্ত হইল ; সে সমুদায় যুবকগণকে ২১ বৎসর পর আর বিদ্যামন্দিরের প্রাঙ্গণেও দেখিতে পাওয়া যায় না। পিপাসাশূন্ত জ্ঞানালোচনার এইত পরিণাম! জাপানের জ্ঞান-তৃষ্ণ আর আমাদের । যুবকগণের জ্ঞান-তৃষ্ণ এই দুই তুলনা করিলে অবাক হইতে হয়। প্রায় চারি বৎসর হইল আমি লণ্ডন নগরে একটা জাপ রসায়নবিংএর সহিত পরিচিত হই। তিনি অনেক কষ্টক্কচ্ছ, সহ করিয়া দুঃসহ দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রাম করিয়া লণ্ডনের কোন রসায়নাগারে মৌলিক গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। তাহার অসামান্ত দৃঢ়তার গুণে, “মন্ত্রের সাধন (কিম্বা শরীর পতন” এই জাতীয় চরিত্রের Ý) তিনটি নূতন ধাতু আবিষ্কার করিয়া | - ১১শ সংখ্যা । ] - সম্প্রতি সঞ্জীবনীতে কোন বাঙ্গালীযুবক জাপানে পদার্পণ করিয়াই যাহা লিখিয়াছেন তাহা এস্থলে উদ্ধৃত করা গেল :– “জাপানীদের জ্ঞানতৃক যেরূপ, অন্ত কোন জাতির সেরূপ আছে কি ন সন্দেহ। কি ছোট, কি বড়, কি ধনী, কি নিধন, কি বিদ্বান, কি মূৰ্খ, সকলেই নুতন বিষয় জানিতে এতদূর আগ্রহ প্রকাশ করিয়া ৰাকে যে ভাবিলে অবাক হইতে হয়। জাহাজ হইতে জাপানে পদাপণ wরিবার পূৰ্ব্বে যে আভাস পাইয়াছিলাম তাহতেই মনে করিয়াছিলাম SttB BBB BBBB BBBBD S S S S S চাকরাণীগুলি পৰ্য্যন্ত বাহিরের বিষয় সম্বন্ধে যতটা খোঙ্গ রাগে আমাদের দেশের অধিকাংশ ভদ্রমহিলাই তাহ জানেন না।" বস্তুতঃ একটু তলাইয়া দেখিলে অনায়াসেই বুঝিতে পারা যায় যে এই সংগ্রাম—দুঃখ দারিদ্র্য অতিক্রম করিয়া জ্ঞানামুধাবনের প্রবৃত্তি, দুইটি মহীয়সী আসক্তি দ্বারা পরিপুষ্ট। এই দুইটি প্রবৃত্তির কোনটি প্রথম এবং কোনটি দ্বিতীয় ইহা নিৰ্দ্ধারণ করা দুরূহ। জ্ঞান পৃহা প্রবৃত্তিদ্বয়ের একটি, জাতীয়জীবন প্রতিষ্ঠা অপরটি। এই দুইটির সমন্বয়েতেই জাপান আজ পাশ্চাত্য সভ্যতা ও জ্ঞানের সংগ্রামে অটুট। "আমি উপলক্ষ্যমাত্র, দেশের ও মানব সমাজের কল্যাণ আমার মুখ্য উদ্দেশু, স্বদেশ আমার জগতের ইতিহাসে শীর্ষস্থান অধিকার করুক এই বাণী জাপযুবকস্থদ্বয়ের ধমনীতে তাড়িৎপ্রবাহ সঞ্চার করিয়াছে। এই ভাব জাতীয় জীবনে ওতপ্রোতভাবে বিরাজমান। বাঙ্গালার যুবক ! সমগ্র ভারতের যুবক ! তোমাদের হৃদয়তন্ত্রী কি এ সঙ্গীতে বাজিয়া উঠে না ? তোমাদের কি জগতের জ্ঞানকোষে অর্পণ করিবার কিছুই নাই ? তোমরা কি চিরকাল পরমুখাপেক্ষী হইয়া থাকিবে ? এখন একবার ফ্রান্সের দিকে তাকাইয়া দেখা যাউক । ফরাসীবিপ্লবের কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে এই জ্ঞানপিপাসা কি প্রকার বলবতী হইয়াছিল তাহ বাকল ( Buckle ) সবিস্তারে বর্ণনা করিয়াছেন। যখন লাবোয়াসিয়ে, লালাও, বাফে প্রভৃতি মনীষিগণ প্রকৃতির নবতত্ত্ব সকল আবিষ্কার করিয়া সরল ও সরস ভাষায় জনসাধারণের নিকট প্রচার করিতে লাগিলেন তখন ফরাসী সমাজে ধনীর রম্য হৰ্ম্মো ও বিজ্ঞান সমিতিতে যে সকল বৈজ্ঞানিক 勋 রিত্রের পর্ণকুটারে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। }হার পূৰ্ব্বে %ੇ বঙ্গসাহিত্যে-বিজ্ঞান । তিনি বৈজ্ঞানিক জগতে অক্ষ কৰি আহৰণ করিয়াছেন। ৬২৯ হইত তাহা শুনিবার জন্য দুই চারিজন বিশেষজ্ঞ মাত্র উপস্থিত হইতেন। কিন্তু এই নুতন বার্তা শুনিবার জন্য সকল শ্রেণীর লোক ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিল। যে সকল সম্রাস্ত মহিলাগণ ইতর লোকের সংস্পর্শে আসিলে নিজকে অপবিত্র জ্ঞান করিতেন তাহারাষ্ট পদমর্যাদা ভুলিয়া লেকচার শুনিবার জন্য নগণ্য লোকের সহিত ঘেসাঘেসি করিয়া বসিবার একটু স্থান পাইলেই চরিতার্থ হইতেন। সম্প্রতি এক ধুরা উঠিয়াছে যে বহু অর্থব্যয়ে যন্ত্রাগার ( Laboratory ) 2qG R1 &ęt• fqGr& fo{«I &5 R1 i কিন্তু বাঙ্গলা দেশের গ্রামে ও নগরে, উদ্ধানে ও বনে, জলে ও স্থলে, প্রাস্তরে ও ভগ্নস্ত,পে, নদী ও সরোবরে, তরুকোটরে ও গিরিগহ্বরে, অনন্ত পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অভ্যন্তরে জ্ঞান-পিপাস্কর যে কত প্রকার অনুসন্ধেয় বিষয় ছড়াইয়া রহিয়াছে তাহ কে নির্ণয় করিবে ? বাঙ্গলার দয়েল, বাংলার পাপিয়া, বাঙ্গলার ছাতারের জীবনের কথা কে লিখিবে ? বাঙ্গলার মশা, বাঙ্গলার সাপ, বাঙ্গলার মাছ, বাঙ্গলার কুকুর, ইহাদের সম্বন্ধে কি আমাদের জানিবার কিছুই বাকী নাই ? এদেশের সোদাল, বেল, বাবল ও শ্রেওড়ার কাহিনী শুধু কি ইউরোপীয় লেখকদিগের কেতাব পড়িয়াই আমাদিগকে শিখিতে হইবে ? বনে, জঙ্গলে ও উপবনে ষে সকল তরু, লতা ও গুল্ম জন্মে তাহার গ্রাম্য নাম ও পরিচয় পাইতে হইলে শতাধিক বর্ষের লিখিত রক্সবর্গের (Roxburgh) "ফ্লোরা ইণ্ডিকা” (Flora Indica) এখনও আমাদিগকে উদ্‌ঘাটন করিতে হয়। ইহা কি আমাদের পক্ষে লজ্জার বিষয় নহে ? এদেশের ভিন্ন ভিন্ন কৃষিপ্রণালী, প্রাচীন ভিন্ন ভিন্ন ক্রীড়াপদ্ধতি, এসবের ভিতরে কি আমাদের জ্ঞাতব্য কিছুই । থাকিতে পারে না ? রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞাদি শাস্ত্র সম্বন্ধে যাহাই হউক না কেন, প্রাণিতত্ব, উদ্ভিদবিদ্যা এবং ভূতত্ত্ববিস্কার মৌলিক গবেষণা যে বিরাট যন্ত্রাগারের অভাবে কতরু দূর চলিতে পারে তাহা সকলেই স্বীকার করিবেন। ছুরি, কাচি, অণুবীক্ষণ ইত্যাদি সরঞ্জাম কিনিতে ১•• টাকার অধিক মূল্য লাগে না ; কিন্তু গোড়াইতেই গলম্ব, জ্ঞানের পুণ্য পিপাসা কোথায় ? -