পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७१8 -------- ----- ------ ، از: تهم প্রাকৃতব্যাকরণ মধ্যে গৌড়ীয় ভাষার আসন প্রদত্ত হইয়াছে, দেখিতে পাওয়া নায়। সুতরাং দ্বাদশ শতাব্দীর পূৰ্ব্বেই যে গৌড়ীয় বঙ্গ-সাহিত্যের সৃষ্টি হইয়াছে তাহ অনুমান করা যাইতে পারে। এবং বৌদ্ধযুগে যে তাহার বিস্তার ও উন্নতি সাধিত হইয়াছিল তাহীও দেখান যাইতে পারে। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে, সামাজিক বিপ্লবে ভাষা বিপ্লব ও উপস্থিত হয়। এদেশের বিভিন্ন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের কলহ ও ধৰ্ম্মপ্রভাব সংস্থাপন প্রচেষ্ট হইতেই প্রধানত: বঙ্গসাহিত্যের বিস্তার ও পরিপুষ্ট সাধিত হইয়াছে। বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, মোসলমান প্রভৃতি সমস্ত ধৰ্ম্মের ও ধৰ্ম্মাবলম্বীর প্রভাবই বঙ্গসাহিত্যগঠনের পক্ষে প্রভূত সহায়তা করিয়াছে। নিম্নে সংক্ষেপে তদ্বিষয় বর্ণন করিতেছি ; কিন্তু গদ্য-সাহিত্য সম্বন্ধেই আমি বিশেষ ভাবে আলোচনা করিব । শ্ৰীশ্রীচৈতপ্ত মহাপ্রভূর আবির্ভাবের পর হইতে তৎশিষ্যগণের ভক্তিপ্রবণতায় আধুনিক বঙ্গ-সাহিত্য পরিপুষ্টি লাভ করিতে আরম্ভ করে। তৎপূৰ্ব্বে এদেশবাসী নরনারী যোগীপাল, মহীপাল, গোপীপাল প্রভৃতির গীত আনন্দের সহিত আলাপ করিত। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে পাল রাজগণের রাজত্বকালে এই গীতের জন্ম হয় এবং এক্ষণে প্রাচীন বিরাট সাহিত্যের ক্ষীণ আভাস প্রদর্শন করিতেছে মাত্র। বর্তমানকালে দেশমধ্য হইতে এই সকল গান এক রকম বিলুপ্ত হইতে বসিয়াছে, কেবল রংপুর ও দিনাজপুরের যোগীজাতিরা কিঞ্চিৎ সংগ্ৰহ করিয়া ব্যবসায় চালাইতেছে। নিম্নে এই সকল গানের স্থানবিশেষ উদ্ধত করিলাম, তাহ হইতেই সভ্য মহোদয়গণ দেশের তাৎকালিক অবস্থারও কথঞ্চিৎ পরিচয় প্রাপ্ত হইবেন । - ণিকচাদ দ্বাদশ শতাব্দীর পূৰ্ব্বে এ দেশের কোনো অংশে রাজত্ব করিতেন। মাণিকচন্দ্রের পুত্ৰ গোপীচন্দ্র পিতার পরিচয় প্রদান স্থলে এই মাত্র লিথিয়াছেন,— সুবর্ণচন্দ্র মহারাজা ধাড়িচন্দ্র পিতা। . তা পুত্র মাণিকচন্ধ শুন তার কথা। “ পরবর্তী অংশপাঠে অবগত হওয়া যায় যে, পাটকা নামক নগরে রাজার রাজধানী ছিল এবং তাছার পত্নীর নাম— ময়নামতী। ' . মাণিকচাদের গান যথা,— - প্রবাসী । ভাট হইতে আইল বাঙ্গাল লম্বা লম্ব দাড়ি, সেই বাঙ্গাল আসিয়া মুলকত কৈল্প কড়ী । আছিল দেড় বুড়ি খাজান লৈল পোনার গও। লাঙ্গল বেচাল্প"জোঙ্গাল বেচায় আরো বেচায় ফাল। খাজনার তাপেতে বেচায় ছধের ছাও আয়াল ॥ রাড়ী কাঙ্গাল দুঃখির বড় দুষ্ক হইল । থানে থানে তালুক সব ছন হইয়া গেল ॥ ছোট রায়ত উঠে বলে বড় রায়ত ভাই । প্রধানের বরাবর সবে চল যাই। কি আচ্ছ বলে প্রধান সকল । যেত রায়ত পরামর্শ করিয়া প্রধানের বাড়ী বৈলেচৈলে গেল। দিনাজপুর ও রংপুরের যোগীজাতি মাণিকচাদ ও গোপীচাদের গান গাওনা করে কিন্তু তাহারাও সমগ্র গীতের উদ্ধার সাধন করিতে পারে নাই। উত্তর-বঙ্গের কোনে সভ্য এবিষয়ে যত্নবান হইলে আমাদের প্রাচীন ও প্রথম অবস্থার সাহিত্যের উদ্ধার সাধন হইতে পারে। এই সকল গীত ও খন এবং ডাকের বচন প্রভৃতিই বাঙ্গল সাহিত্যের প্রথমকালের রচনা বলিয়। প্রত্নতত্ত্ববিদগণের ধারণা। কিন্তু পক্ষান্তরে অনেকের ধারণা যে, ইহা বাঙ্গলা সাহিত্যের আদিম রচনা নহে,—আদিমের নিকটবৰ্ত্তী মাত্র। ইহারো পূৰ্ব্বকালে বাঙ্গলা ভাষা রচিত হইয়াছে। একাল পর্য্যন্ত যে সমুদয় গ্রন্থ আবিষ্কৃত হইয়াছে হইতে রামাই পণ্ডিতের শুষ্ঠ পুরাণ, চণ্ডীদাসের চৈতন্থ: রূপ প্রাপ্তি’, রূপ গোস্বামীর কারিকা’, কৃষ্ণদাস গোস্বামীর ‘রাগময়ীকণা’ এবং সহজিয়া সম্প্রদায়ের কতিপয় গ্রন্থে প্রাচীন বাঙ্গলার গদ্য সাহিত্যের আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। পূৰ্ব্বোক্ত গ্রন্থ সাহায্যেই আমরা বঙ্গসাহিত্যের ক্রমবিকাশ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিতেছি । "শূন্ত পুরাণ’ বৌদ্ধ প্রভাব কালের পদ্মগন্ধময় গ্রন্থ। ইহার অধিকাংশই পষ্ঠ, সামান্ত অংশ মাত্র গদা৷ ঐতিহাসিক অনুসন্ধানে সপ্রমাণ হইয়াছে এই মুস্তকধানি প্রায় এক সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বে শিল্পচিত্ত ইয়াছে।’ - এড়ং পূৰ্ব্বে কোনো বাঙ্গালু লেখক o ৮ম ভাগ। - ১২শ সংখ্যা । ] পাইয়াছিলেন কিল অবগত হওয়া যায় না। পৃষ্ঠ পুরাণের গল্প রচনার নমুনা,— - “হে জঅসঙ্খ হে বিজঅসঙ্খ তুদ্ধি সংখ হইএ চিরাই। তুহ্মার জলে স্তান করেন শ্ৰীধৰ্ম্ম গোসাঞি। অভিসেক জলে স্তান মনধির কৈসের পাবন সইতের পাবন সচল অচল স্বষ্টি স্বজিলেন গোসাঞি ভকত বৎসল ।” বৌদ্ধ প্রভাবকালে রচিত শূন্তপুরাণে গদ্য সাহিত্যের অবতারণা হইলেও সে কালের অপর কোনো লেখকের গ্রন্থে তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় না। পরবর্তী বৈষ্ণব যুগেই গদ্য সাহিত্যের প্রচলন আরম্ভ হয়। বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস গদ্য রচনা করিয়া গিয়াছেন,— তাহাদের কণ্ঠে গম্ভ পস্তময় গীত ধ্বনিত হইত। (১) মুতরাং চৈতন্তরূপ প্রাপ্তি’ দ্বিজ চণ্ডীদাসের রচিত কি না, ভবিষয়ে সন্দেহ করিবার কারণ দেখা যায় না। এই সকল আদিম গ্রন্থ সম্বন্ধে একটা কথা উল্লেখ যোগ্য বিবেচনা করি। মাতৃ-ক্রোড়-শায়িত শিশু যেমন অতি কষ্টে আধ স্বাধ ভাষায় স্বীয় মনোভাব ব্যক্ত করে, চৈতন্তরূপ প্রাপ্তি’ প্রভৃতি সহজিয়া সম্প্রদায়ের সাধনপ্রণালী বিষয়ক পুস্তকগুলিতেও তেমনি অতি কষ্টে রহিয়া রহিয়া আলোচ্য তথ্য পরিব্যক্ত হইয়াছে। সভ্য মহোদয়গণ তাহার একটু পরিচয় গ্রহণ করুন,— জিহ রজকিনী তিহু রাগ মই। রাগআত্মা শ্ৰীমতীর এক হন। জিছ চেতনরূপ তিহু চণ্ডীদাস। কার দেহ। শ্ৰীমতীর অন্তরঙ্গা দেহ। রজকিনী কার দেহ। চণ্ডীদালের অন্তরক্ষা দেহ ।” ইত্যাদি রূপ গোস্বামীর ‘কারিকা হইতে একটু নমুনা উদ্ধত করিতেছি –“অৰ্থ বস্তু নির্ণর। প্রথম ঐকৃষ্ণের গুণ নির্ণয়। শব্দ গুণ, গন্ধ গুণ, রূপ গুণ, রসগুণ, স্পর্শগুণ এই পাঁচগুণ। এই পঞ্চগুণ শ্ৰীমতী রাধিকাতেও বসে।” মুরসিদের বার মাস নামক একখানি প্রাচীন অমুদ্রিত লিখিার প্রা। গ্রন্থ আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাছার স্থানে স্থানে গদ্য রচনা দেখিতে পাওয়া যায়। পুস্তকখানি মোসলমান গ্রন্থকারের, সুতরাং ঠান্ড হইতে একটু নমুনা উদ্ধত করা প্রয়োজন – “জীবের ষ্ট্রয়, কিসে । + o o সেনক্ষত্তর-পং মাথা ঠুক। ধ_ উত্তরবঙ্গ সাহিত্য-সম্মিলন। vast পঞ্চবিংশতি তত্বে। স্থিতি পঞ্চভূত আর বেদমায়াশক্তি ? স্বত (?)। পিতার চাইর ঃ মাতার চাইর ঃ (এইভাবে ২৫ তত্ত্বের নাম উল্লিখিত হইয়াছে। তারপর—) ১ অপগুণ গৌরবর্ণ জিহাতে স্থিতি। তার প্রতিক্ষ্য পঞ্চগুণ - * মর্জাঞ্চ মল মুত্রঞ্চ পঞ্চমং অপপঞ্চ ইতি ৫।” আশ্চর্য্যের বিষয়, সেকালের মোসলমান লেখকও সংস্কৃতের আলোচনা করিতেন। অতঃপর ‘ব্রজ কারিকা’ নামক একখানি বৈষ্ণব গ্রন্থের আলোচনা করিতেছি। ইহার পদ ছত্র প্রভৃতি কিছু দীর্ঘ,–যেন শিশুর মুখের আড়ষ্টভাব ক্রমেই সারির আসিতেছে। গ্রন্থের ভাষা স্থানে স্থানে অস্পষ্ট হইলেও আলোচনার যোগ্য । যথা— “শ্রীপঞ্চমী তিন দিবস থাকিতে শ্ৰীমতী বাপের ঘরে জান। মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাস পর্য্যস্ত দোলযাত্র পুর্ণ হয়, যাবৎ তাবৎ বৃকভানুপুরে থাকেন। তথা থাকিয়া নিত্য খেলেন পাশা”। ইত্যাদি পুৰ্ব্বোক্ত গ্রন্থসমূহ মোসলমান-শাসন-আমলে রচিত হইলেও, তাহাতে একটাও অ-সংস্কৃত বা বৈদেশিক শৰা প্রয়োগ দেখিতে পাওয়া যায় না। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সহজিয়াগণই বাঙ্গল গঙ্কের প্রথম স্রষ্ট। খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দী হইতে এই গদ্য রচনার নমুনা পাওয়া গিয়াছে। সহজিয়া সম্প্রদায়ের রোপিত বীজ হইতেই বর্তমান কালের এই মহান মহীরুহের উৎপত্তি। প্রথম কালের এই গ্রন্থ সমূহে ভাষার লালিত্য, বাক্যের সম্পূর্ণতা না থাকিলেও গ্রন্থকারের মনোভাব ব্যক্তির কোনো প্রতিবদ্ধক উপস্থিত হওয়া প্রমাণ হয় না । যে ভিত্তি স্বধৃঢ় করিতে আরম্ভ করেন, তাহার আংশিক - পরিণতি সহস্ৰ বৎসর পর অষ্টাদশ লিঙে রচিত ‘বেদাদিতত্ত্ব নির্ণয়’ প্রভৃতি গ্রন্থে আমরা দেখিতে পাই। ‘বেদাতিত্ব নির্ণয়’ গ্ৰন্থখানি জনৈক বৈষ্ণব পণ্ডিত কর্তৃক রচিত। গ্রন্থকার স্বদীর্ঘ বাক্যাবলী দ্বারা দর্শন, বিজ্ঞান, চিকিৎসা-শাস্ত্র প্রভৃতির বিবিধ তথ্য আলোচনা করিয়াছেন। . দর্শন বিজ্ঞান প্রভৃতির কঠোর বিষয়ও যে বাঙ্গল গদ্য ভাষায় আলোচিত হইতে পারে, তাহার প্রথম নিদর্শন - এই গ্রন্থে পাইয়া কোন ব্যক্তি না প্রহৃষ্ট হইবেন ? ' এইরূপে সহজিয়াগণ গদ্য সাহিত্যের ।