পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o wb-b’ তাহাই উহাদিগকে মহাকায় সরীস্পদিগের গ্রাস হইতে রক্ষা করিত। ক্ষিপ্রতী ও অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিযোগিতায় পুরাতন নূতনকে পরাভব করিতে পারিত না। ইহা ছাড়া এই সময়ে নুতন জাতিতে আর যে একটি শুভ লক্ষণ প্রকাশ পাইয়াছিল, তাহ পুরাতনকে আরো পশ্চাতে রাখিয়াছিল । পুরাতন জীবগণ বংশবিস্তারের জন্ত অণ্ড প্রসব করিত, তাহাদেরি সস্তানদিগের শরীরে যখন উষ্ণ শোণিতধারা বহিতে লাগিল, তখন এই সৌভাগ্যবান বংশধরগণ অণ্ড প্রসব অভ্যাস ত্যাগ করিয়া জীবন্ত শাবক প্রসব করিতে আরম্ভ করিল। এই ব্যাপারটি নূতন জীবগুলিকে মনুষ্যত্বের দিকে এত অধিক অগ্রসর করিয়াছিল যে, মূল জীবের মনুষ্যত্বলাভের আশায় এখানেই জলাঞ্জলি পড়িয়াছিল। নূতন জীব নিঃসহায় শিশুসন্তানগুলিকে প্রসব করিয়া প্রথম প্রথম বড়ই গোলযোগে পড়িত । শাবক গুলিকে শত্রুর কবল হইতে রক্ষা করা তাহাদের জীবনের একটা প্রধান কৰ্ত্তব্য হইয়া দাড়াইত। জীবতত্ত্ববিদগণ বলেন, সন্তানরক্ষার এই চেষ্টাই জীবগণকে উন্নতির পথ দেখাইয়া দিয়াছিল। অনেক সময় দেখা যায়, কোন বিশেষ উন্নতির জন্য যখন সকল অবস্থাই অমুকুল, তখন প্রকৃতি সেই উন্নতিপথ রোধ করিবার জন্ত মোহিনী বেশে আসিয়া জীবকে বিপথগামী করিয়া দেয়। নিঃসহায় শাবকগুলিকে রক্ষা করিবার উপায় উদ্ভাবনের জন্য যখন জীবগণ ব্যস্ত, তখন কাহারে উদরের নিম্নে চৰ্ম্মপুট নিৰ্ম্মাণ করিয়া বা কাহারে লাঙ্গুলে শাবক ঝুলাইয় রাখিবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়া স্বয়ং প্রকৃতি জীবগণের চিন্তা দূর করিতে আরম্ভ - করিয়াছিলেন। কাঙ্গারু প্রভৃতি জীব প্রকৃতির এই অযাচিত দান গ্রহণ করিয়া চিন্তার দায় হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছিল। অপর জীবগণ মোহিনী প্রকৃতির মায়ায় ধরা দেয় নাই। ইহারা নৈসর্গিক উপায় ত্যাগ করিয়া, স্বাধীন চিন্তার সাহায্যে শাবক রক্ষার উপায় উদ্ভাবন করিবার জন্ত চেঞ্জ আরম্ভ করিয়াছিল। শাবর্বদিগকে স্তন্তদান করিলেই পিতামাতার কর্তব্য শেষ হয় * না । শিক্ষা-প্রদানেরও প্রয়োজন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বংশধরদিগকে জানাইবার যে একটুও প্রবাসী। আবশ্বক আছে, ইহার পূৰ্ব্বে কোন জীবই তাহ ভাল [ ৮ম ভাগ । করিয়া অনুভব করে নাই। নিঃসহায় শিশুসন্তান প্রসব করিতে আরম্ভ করিয়া অবধি জীবগণ এই ব্যাপারটির প্রয়োজনীয়তা বুৰিতে আরম্ভ করিয়াছিল। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, এই জ্ঞান এবং পূৰ্ব্বোক্ত স্বাধীন চিন্তার চেষ্টা স্তন্যপায়াদিগকে মনুষ্যত্বের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর করিয়াছিল। আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে জাতি বা যে ব্যক্তি জীবনের সমগ্র আবশ্যকীয় সামগ্ৰী সৰ্ব্বদাই সন্মুথে প্রস্তুত দেখিতে পায়, তাহার ভবিষ্যৎ উন্নতির আশা আতি অল্পই থাকে। পক্ষিজাতি ও স্তন্যপারিগণ একই মাতৃগর্ভ হইতে প্রস্থত হইয়াছিল, এবং উষ্ণ শোণিত-ধারায় উভয়েরই দেহ শক্তি শালী হইত। সুতরাং এই অবস্থায় উভয়েরই উন্নতি অবশুম্ভাবী বলিয়া মনে হইবারই কথা । কিন্তু পক্ষিজাতি উন্নতির পথ ধরিতে পারে নাই। পূৰ্ব্বোক্ত বিঘ্নটি আসি৷ পথ রোধ করিয়া দাড়াইয়াছিল। ইহারা অতি অল্পকাল মধ্যে শরীরের অনেক উন্নতি করিয়াছিল। অদ্যাপি ইহাদের উন্নতদেহের নিকট শ্রেষ্ঠ জীব মনুষ্যকেও পরাভব মানিতে । হয়। কিন্তু শরীর রক্ষার জন্য যাহা কিছু আবশ্বক তাহার সকল সম্মুখে প্রস্তুত পাইয় তাহারা বুদ্ধিচালনার কোন সুযোগষ্ট পায় নাই। ইহাই মনুষ্যত্বের সোপানে উঠিবার পথে কণ্টক রোপণ করিয়াছিল। দৈহিক পূর্ণতার সহিত কোন প্রকারে যদি বুদ্ধির পূর্ণত আসিয়া যোগ দিওঁ, তাহা হইলে পক্ষিজাতি যে কি আশ্চৰ্য্য জীবে পরিণত হইত তাহা আমরা কল্পনাই করিতে পারি না। • যাহা হউক সুপথগামী স্তন্যপাত্ত্বিগণ ইহার পর কোন । পথ অবলম্বন করিয়া মনুষ্যত্বের দিকে আরো অগ্রসর হইয়াছিল, এখন তাহার আলোচনা করা যাউক । এই পথ আবিষ্কারের জন্ত আধুনিক জীবতত্ত্ববিদগণকে বহু গবেষণা করিতে হইয়াছিল। গবেষণাকারীদিগের মধ্যে প্রায় সকলেই এখন একবাক্যে ৰলিতেছেন, মহাকার সরীস্বপ দ্বারা আচ্ছন্ন পৃথিবীতে ক্ষুদ্রকায় স্তন্যপায়ী জীবের আবির্ভাব হইলে, ঐ সকল বৃহৎজীবের আক্রমণ হইতে । রক্ষা পাইবার জন্য স্তন্যপায়াদিগকে নিরাপদ স্থান অনুসন্ধান করিতে হইয়াছিল। সে সময় বুগু ক্ষের श्रङांद झिण < ১২শ সংখ্যা । ] না। জীবতত্ত্ববিদগণ বলেন, সম্ভবতঃ এই সময়ে অধিকাংশ স্তন্যপায়ী জীবই আধুনিক অপোসম্ (Opossum) প্রভৃতি প্রাণীর আকার ধারণ করিয়া বৃক্ষচর হইয়া দাড়াইয়াছিল। ভূ-তত্ত্ববিদগণও এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন করিতেছেন। অতি প্রাচীন শিলাস্তরে যে সকল জীবের চিন্তু আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহাদের অনেকগুলিকেই বৃক্ষচর বলিয়া মনে रुम्न | বৃক্ষচর প্রাণীর দেহ পরীক্ষা করিলে, গাছ স্ট্রাকৃড়ান্টয়া ধরিবার জন্য তাহাতে কেবল দুইটিমাত্র সুব্যবস্থা দেখা যায়। কতকগুলি প্রাণী তাহদের দীর্ঘ নথ দিয়া শাখাপ্রশাখা আঁকড়াইয়া বৃক্ষবাস করে। অপর কতকগুলি তাহাদের অঙ্গুলিগুলিকে দীর্ঘ করিয়া ডাল ধরিবার সুবিধা করিয়া লয়। কোন প্রাকৃতিক অবস্থায় পড়িয়া সাধারণ স্তন্যপায়ী জীব ক্রমে দীর্ঘনখী বা দীর্ঘাঙ্গুলি প্রাণীতে পরিণত হইয়াছিল, তাহা এখন স্থির করিবার উপায় নাই। তবে সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণী হইতেই যে উক্ত দুই শ্রেণীর উৎপত্তি হইয়াছিল, তাহ সুনিশ্চিত, এবং প্রতিযোগিতায় নথিগণকে পরাস্ত করিয়া অঙ্গুলিযুক্ত বৃক্ষচরগণই যে, মনুষ্যত্বের দিকে অগ্রসর হইয়াছিল, তাহাও স্থির। নর্থীদিগের নখই উন্নতির অস্তুরায় হইয়াছিল। নখ দ্বারা ভাল করিয়া বৃক্ষশাখা আঁকড়াইয়া ধরা বড়ই কষ্টকর। দেহ পুষ্ট হইলে এই কাৰ্য্য একেবারে অসম্ভবই হইয়৷ *ায়। কিন্তু বৃহৎ অঙ্গুলিযুক্ত প্রাণী যতই পুষ্টাবয়ব হউক না কেন, অঙ্গুলি দ্বারা শাখা ধরিয়া সে অনায়াসে বৃক্ষে বিচরণ করিতে পারে। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, নখের এই অনুপযোগিতাই বৃক্ষচারী নথিগণকে ক্ষুদ্রাবয়ব করিম রাখিয়াছিল। অপরদিকে দীর্ঘ অস্কৃলিযুক্ত প্রাণিগণ ক্রমে দেহের সর্বাঙ্গ পুষ্ট করিয়া উন্নত হইয়া দাড়াইয়াছিল। যে সকল মানসিক শক্তি মনুষ্যকে ইতরপ্রাণী হইতে পৃথক করিয়া রাখিয়াছে, সেগুলির আলোচনা করিতে গেলে গণনাশক্তির কথা সৰ্ব্বাগ্রে আমাদের মনে পড়িয়া যায়। পাচটি জিনিসের সহিত আর পাঁচটি জিনিস যোগ করিলে,“এই নূতন জিনিস গুলি যে পূৰ্ব্বের দ্বিগুণ হইয় পড়িল, তাহ ধারণা করিবার শক্তি কেবল মনুষ্যজাতিরই निबन्न । ७हे স্বানে উয়েৰক লই৷ ডাক্তাব ওয়ালেস ও

  • to ot --

মনুষ্য স্বষ্টি । WbrS ডারুইন প্রভৃতি মহা পণ্ডিতগণ অনেক গবেষণা করিয়াছেন, কিন্তু কেহই স্থির সিদ্ধাস্তে উপনীত হইতে পারেন নাই । দুই একটি নব্য পণ্ডিত এই সম্বন্ধে গবেষণা করিয়া বলিতেছেন, পুষ্টাঙ্গ স্তন্যপারিগণ যখন পার্থী হইয়া বৃক্ষে বিচরণ করিতেছিল, সম্ভবতঃ সেই সময়েই ইহাদেব মস্তিষ্কে গণনাশক্তির উন্মেষ হইয়াছিল। শাখী প্রাণিগণ, যখন বৃক্ষ হইতে বৃক্ষাস্তরে - লাফাইয়া পড়িত, তখন তাহাদিগকে বিশেষ চেষ্টা করিয়া দূরত্বের একটা নিভূল হিসাব মনে স্থির রাথিতে হইত। এই হিসাবের ভূলে হয়তো প্রথমে অনেক প্রাণীকে ভূপতিত হইয়া জীবন বিসর্জন করিতে হইয়াছিল, কিন্তু শেষে তাহারা আর সে প্রকার ভূল করিত না। ইহা ছাড়া হস্ত পদের পেশীগুলিকে কত সঙ্কুচিত করিলে এক লম্ফে কতদূর পৌঁছান যায় শাখী স্তন্যপায়াদিগকে তাহারও একটা হিসাব করিতে হইত। শেষে হয়তো এই হিসাবগুলি তাহারা যন্ত্রবৎ করিত, কিন্তু তথাপি পূৰ্ব্বোক্ত ব্যাপারগুলিই যে স্তন্যপায়ীদিগের গণিত জ্ঞানের উন্মেষ করাইয়া দিয়াছিল তাহা আর অস্বীকার করা যায় না । যখন কোন প্রাণী একটি বিশেষ শক্তি হইতে বঞ্চিত হয়, প্রায়ই অপর আর একটি শক্তি সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাইয় সমগ্র শক্তি সমষ্টিকে পূর্ণ রাখে। ইহা একটা পরীক্ষিত প্রাকৃতিক নিয়ম। অন্ধের শ্রবণ ও স্পর্শশক্তির তীক্ষত৷ এবং বধিৱের দৃষ্টিশক্তির প্রাথর্ঘ্য চিরপ্রসিদ্ধ। এই প্রাকৃতিক নিয়মটিকে মনে রাথিয় বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, যখন মানবের অতি প্রাচীন পূৰ্ব্বপুরুষগণ স্তন্যপায়ীর আকারে বৃক্ষে বিচরণ করিতেছিল, তখন সেই সকল প্রাণীতে আরো কতকগুলি . মনুষ্যস্থলভ শক্তির সঞ্চার হইয়াছিল। অনেক ইতর প্রাণীর তুলনায় মানুষের দৃষ্টি ও ভ্রাণশক্তি অত্যন্ত অল্প। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, মানবের প্রাচীন পূৰ্ব্বপুরুষগণ যখন শার্থীর আকারে ছিল, তখন ধরাতলবিহারী প্রাণীদিগের স্তাৱ তাহাদের প্রাণ বা দৃষ্টিশক্তির চালনা করিতে হইত না। কাজেই ব্যবহারের অভাবে এগুলি ক্ৰমে অক্ষম হইয়া, গিয়া অপর শক্তির উন্নতি করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এই অক্ষমতা বৃক্ষচর প্রাণীকে মনুষ্যত্বের দিকে যে কত: অগ্রসর করিয়াছিল, তাহার ইয়ত্তা করা যায় না। ভ্ৰাণ- “