পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o হইলে, (কেন না, উহার অনুরূপ আমাদের মধ্যে কিছুই নাই) উছারা কতকগুলি বাছা-বাছা বিশিষ্ট লোকের সম্প্রদায় ; এই সম্প্রদায়ের লোকেরা বলিয়া থাকে এবং কথাটাও সত্য যে, প্রায় অধিকাংশস্থলেই, বংশের বিশুদ্ধতা ও জ্ঞানের শ্ৰেষ্ঠতা উহাদের মধ্যেই সংরক্ষিত হইয়াছে। ব্রাহ্মণ যে-কোন কাজে নিযুক্ত হইতে পারে,—ব্রাহ্মণ, মুটিয়ার কাজ করিতে পারে, বেণিয়ার পাচক হইতে পারে, কিংবা “পানি । পানি !” চীৎকার করিয়া, রেলওয়েষ্টেশানে রেল-যাত্রীদিগকে পানীয় জল যোগাইতে পারে—সবই করিতে পারে, কিন্তু • তবু তাহার প্রভু সৰ্ব্বাগ্রে তাহাকে ভক্তিভরে প্রণাম করিবে। দরিদ্র ব্রাহ্মণ কিংবা নিকৃষ্ট শ্রেণীর ব্রাহ্মণেরাই দেবালয়ের কাজে নিযুক্ত হয়। উৎকৃষ্ট শ্রেণীর ব্রাহ্মণ ধৰ্ম্মতত্বের কথাও ভাবে না, নীতির কথাও ভাবে না, যজ্ঞানুষ্ঠানের কথাও ভাবে না। তাহার যে কাজ তাহা নিম্নে বলিতেছি। ব্রাহ্মণই শ্রেষ্ঠ লোক-গুরু ; তিনি যাহা কিছু বলেন তাহা যেন গুরুর আসন হইতেই বলেন ; তাহার প্রভাব নিগুঢ় রহস্তময়, তাহার ককাই-চরম প্রমাণ ; তিনিই বিধান দেন, সন্মতি দেন, মন্ত্রের দ্বারা সমস্তই শোধন করিয়া লন । ব্রাহ্মণের অনুমোদন ব্যতীত কোন কাজ হইতে পারে না। পারিবারিক উৎসবাদিতে, জন্মে, বিবাহে, বালিকার যৌবন প্রাপ্তিতে, রোগে শোকে ; ব্রাহ্মণের উপস্থিতি, ব্রাহ্মণের উপদেশ, ব্রাহ্মণের মন্ত্রপাঠ অপরিহার্য্য ; কৃষিকৰ্ম্মের, বীজ বপনের, শস্ত কৰ্ত্তনের শুভদিনক্ষণ তিনিই নিৰ্দ্ধারণ করেন। বিভিন্ন ক্রিয়া কৰ্ম্মের অনুষ্ঠানে, তিনিই বেদমন্ত্র পাঠ করেন ; কেন না বেদমন্ত্র একমাত্র তাহারই জানিবার কথা ; কিন্তু কেহই তাহা বুঝে না, তিনি নিজেও বুঝেন না ; অথচ এই বেদমন্ত্ৰ পাঠের অধিকারই তাহার প্রতিপত্তি-ৰ্তাহার শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখিয়াছে। পরিবারের মধ্যেও তাহার অসীম প্রভাব। একজন হিন্দু আমাকে বলিয়াছিলেন :– “অধ্যয়নের জন্য আমার পুত্রকে বিলাত পাঠাইবার সঙ্কল্প করিয়াছিলাম। কিন্তু বিলাত যাইতে হইলে “কালাপানি” পার হইতে হয় ; আর “কালাপানি” পার হওয়া একটা মহাপাপ। আমার সঙ্কল্পের কথা জানিতে পারিয়া পুরোহিতেরা আমার মায়ের নিকট আসিয়া আপত্তি জানাইল। প্রবাসী । a - [ ৮ম ভাগ। | আমার এখানে তিনজন ব্রাহ্মণ আসিয়া থাকে ; একজন | আমার স্ত্রীর জন্ত, একজন আমার মেয়ের জন্ত, এবং আর একজন আমার নিজের জন্ত । বলিতে গেলে, উহারাই এখানকার প্রভু ; উহাদের প্রত্যেককে, মাসিক ৬ টাকা করিয়া আমার দিতে হয় ।” ছয় টাকা মাত্র । যখন ভাবি,এই মহাপুরুষের নৃপোচিত I বদান্ততার পাত্র, তখন ইহা অতি তুচ্ছ বলিয়া মনে হয়। ভারতবর্ষ, পুরোহিতের স্বর্গ বলিলেই হয়। পরান্নজীবিত এখানে পূর্ণ স্বাধীনতায় বিরাজ করিতেছে। পবিত্র পায়রাগুলার স্থায় ব্রাহ্মণও সাধারণের ব্যয়ে প্রতিপালিত এবং একইরূপ সন্মানের অংশভাগী। ত্রিবাছুরে খুব জঁাকালে জাকালে মুসজ্জিত পান্থশালা আছে, সেখানে শত শত ব্রাহ্মণ রাজার ব্যয়ে আতিথ্যসৎকার প্রাপ্ত হয়। এই সকল অতিথিশালায় উহারা দিব্য আরামে দিনপাত করে; একটা অতিথিশালায় থাকিয়া যখন ক্লাস্তি জন্মে কিংবা সেথানকার একঘেয়ে ভোজন অরুচিকর হইয়া উঠে, তখন উহারা আর একটা অতিথিশালায় চলিয়া যায়। দরিদ্র গ্রাম্য লোকেরাও রাজার ধরণ-ধারণ অনুকরণ করে। ব্রাহ্মণ-ভোজন একটা মহা পুণ্য কৰ্ম্ম। কিন্তু হায়, ইহাতেই লোকের সৰ্ব্বনাশ! এই ফলারে বামুনগুলা নিজ ক্ষুধার পরিমাণ বুঝিতে পারে না, উহাদের উদরে একটা দড়ি বাধ থাকে, দড়িটা ছিড়িয়া গেলেই উহার ভোজনে বিরত হইয়া উঠিয়া পড়ে। অথবা ভূত্যেরা, এক একটা কলাপাতার উপর থানিকটা চাউল, স্তুপাকার ফল ও মিষ্টান্ন রাখিয়া তাহা প্রত্যেক অতিথির হস্তে অৰ্পণ করে—অতিথিরা উহ। লইয়া তাড়াতাড়ি গৃহে চলিয়া যায়। আমি কোন জাপানী গৃহস্থের বার্ষিক শ্ৰাদ্ধ অনুষ্ঠানে ? উপস্থিত ছিলাম। সেখানেও এই প্রথা প্রচলিত দেখিলাম। \ এই স্মৃতি-বাসরে, কুলঙ্গির পর্দা খোলা হইল, এবং অভিনব রেশমি বঙ্গে বিভূষিত শুভঙ্কর দেবতাদের সম্মুখে লাল রঙ্গের সমস্ত মোম-বাতি জালাইয়া দেওয়া হইল। ত্রিশজন স্ত্রীপুরোহিত চারিদিকে ঘিরিয়া উবুহইয়া বসিয়া আছে, তাহদের { সম্মুখে এক একটি ক্ষুদ্র চায়ের পেয়ালা-হাতে এক একটি । ক্ষুদ্র ‘পাইপ’। উহারা ধীরে ধীরে একটি দীর্ঘ জপমালা টপিয়া টিপিয়া খুরাইতেছে- জপমালার বচিগুল বাদামের २ग्र नरेथा। ] মত বড়, জপমালাটা এত দীর্ঘ যে সমস্ত ঘরটি ঘুরির আসিতেছে। উহার আনন্দ আনন্দ ! বলিয়া গান করিতে লাগিল ; তাহার পর, একটু বিরাম ;--এই সময়ে সমস্ত পাইপ রোটু হইতে সবেগে ধূম উদগীরিত হইতে লাগিল। তাহার পর, সেই প্রকাও জপমালা অন্তৰ্হিত হইল। এই সময়ে প্রত্যেক পুরুতনীর নিকট এক একটা ক্ষুদ্র ধাতব খঞ্জনী ও এক একটা হাতুড়ী আনা হইল ; সমস্ত ধৰ্ম্মবস্থি---শ্রেনী এইবার তালে তালে বাজিতে লাগিল—সেই সঙ্গে,— “আনন্দ আনন্দ ! বুৎসু "–এই গান চলিতে লাগিল, এবং পাইপের আগুনও নিয়মিতরূপে জলিতে লাগিল । ইহা গৌরচন্দ্রিক মাত্ৰ ! এই সময়ে একদল পরিচারিকা প্রবেশ করিল। তাহার সাকে’-মদিরার বোতল, চায়ের জল-ভরা চা-দানী, লাল গালার কতকগুলা গুলি, কতকটা স্বপ—তাহাতে চিংড়ী ভাসিতেছে,– কতকগুলা শামূক, ক্টাচা লাল মাছের কতকগুল টুকরা, কতকগুলা সামুদ্রিক তৃণ, কতকগুলা পিষ্টক ও সুগন্ধী মিষ্টান্ন আনিল.প্রত্যেক গুরুত্নীর সম্মুখে এইগুলি রাশীকৃত হইল। এইবার পাইপ টানা বন্ধ হইল। পুরুত্নীরা স্বকীয় মণ্ডিত মস্তক নত করিয়া, শিষ্টতার বিবিধ মুখভঙ্গী সহকারে, "ওকৃ’ ফলের পোলার প্রমাণ পেয়ালায় ভরা, ধূমায়মান গরম সাকে-মদিরা পরস্পরকে দিতে লাগিল । ক্ষুদ্রাকার বুদ্ধাদের নির্বাপিত চোখগুলা জলিয়া উঠিল, সব মাথাগুলা মৰ্কটের মাথার মত নড়িতে লাগিল, আড়চোখে আমাকে দেখিতে লাগিল, কখনও বা ভুলক্রমে পূর্ণ দৃষ্টতে আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিল ,তাহার পর একটা হাসির গররা উঠিল—এবং বন্দুকের দেওড়ের মত উহ ক্রমেই প্রসারিত হইল। এই সময়ে পরিচারিকার। আবার আসিল এবং হাতের এক সাপটে সেই লাল গাল, ফল, পিষ্টক, লুপ সমস্ত একস্থানে রাশীকৃত করিল, তাহার পর ঐ সমস্ত সযত্নে কাপড়ে বাধিয়া লইয়া গেল। এই গায়িকাবৃন্দ আবার গম্ভীরভাব ধারণ করিয়া খাদ্যের পুটুলিটি বগলে করিয়া সংযতভাবে প্রস্থান করিল—বোধ হয় ঐ খাদ্য তাহাদের সপ্তাহকাল চলিবে । আর কিছু না হউক, এই হিন্দু গ্রাম্যতন্ত্র, একটা নূতন মতবাদ খাড়া করিবার পক্ষে সহায়তা করিয়া গৌরবের ভাগী সমসাময়িক ভারত । - qx হইয়াছে। ཝ་ཤ་ཥ་ཐོས་ན་ཞི་བ་ཨོ་༢༠ ཙོri་ཆ་, কেহ কেহ, এইভাবে ইহার আলেচনা করে, যেন ইহা শুধু একটা সামান্ত তর্কের বিষয় মাত্র, তাহার অধিক কিছুই নহে। এই কৃষিমধুচক্রের জীবন-প্রণালী, ইহার নিঃসঙ্গ শাসন-স্বাতন্ত্রা,ইহার অন্তৰ্ব্বত্তী লোকদিগের ঘনিষ্ঠ দলবদ্ধন ও ঘনসংহতি, যাহার বিষয় আমি পূৰ্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি এবং ভূসম্পত্তির প্রকৃতি –এই সমস্ত আলোচনা করিয়া কতকগুলি সিদ্ধাস্তবাগীশ, কলম্বসের স্তায় “পাইয়াছি, পাইয়াছি” বলিয়া উঠিলেন ; কালগণনায়, সমবেত ভূসম্পত্তি-ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তির পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী, তাহারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন. জাৰ্ম্মণদিগের পুরাতন “সামরিক যাত্রা-প্রণালী” এখন মৃত! কিন্তু এই দেখ, এইখানে আমাদের চক্ষের সমক্ষে—গ্রাম-সমবায়ের একটা প্রত্যক্ষ জীবন্ত বাস্তব দৃষ্টান্ত দেখিতে পাইতেছি! এই সিদ্ধান্তটি চিরকালের মত সপ্রমাণ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত যতই প্রামাণিক হয় তুর্ভাগ্যক্রমে ততই যেন বহুল আক্রমণের বিষয় হইয় পড়ে। এই সফল-জমকালো তুষার-রাণী” নিৰ্ম্মিত না হইতে হইতেই উহাদিগকে আবার কন্দুকের আঘাতে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয়। লোকে আরও কাছে আসিয়া যখন দেখে, তখন মনে হয় উহা নেত্র-বিভ্রম বই আর কিছুই নহে । ধ্বংসকর্তা করিলেন কি ?—না, তিনি সেই একই উপাদান লইয়া আর একটা সিদ্ধান্ত গঠন করিভৈ-প্রবৃত্ত হইলেন ; কালের অগ্রপশ্চাৎ লইয়াই ইহার যা কিছু নূতনত্ব, তা ছাড়া আর কোন নূতনত্ব নাই। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, কালের হিসাবে, সমবেত ভূসম্পত্তি পুৰ্ব্ববৰ্ত্ত না হইয়া, ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তিই পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী হইল। গ্রামে ভূসম্পত্তির যৌথ-বন্দোবস্ত ছিল,—এই চিত্তাকর্ষক সিদ্ধান্তটি, ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে আদিম ব্যবস্থাদির ইতিহাস লেখক প্রচলিত করেন। তিনি বলেন, গোড়ায় একটা মূল-আদর্শ বিদ্যমান ছিল ; স্থান বিশেষে এক্ষণে যে বৈচিত্র্য লক্ষিত হয়, তৎসমস্তই সেই মূল-আদর্শের উপর স্থাপিত বলিয়া সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। যে ভূসম্পত্তির উপর কোন গ্রাম অধিষ্ঠিত, সেই গ্রামই সেই ভূসম্পত্তির অধিকারী কিংবা সেই ভূসম্পত্তির ফলভোগী। অবশ্য এই সামবারিক বন্দোবস্তটি সৰ্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ নহে। Summer Maine