পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- १२ . কেন নহে? যে হেতু, এই ভাবটি বরাবর অক্ষুণ্ণ থাকে নাই। স্থানে স্থানে দেখা যায়, এই আদিম আদর্শটি ভাঙ্গিয়া গিয়াছে কিংবা রূপান্তরিত হইয়া উহার মধ্যে ব্যক্তিগত স্বত্বাধিকার ক্রমশ প্রবেশ করিয়াছে। এমন গ্রামও আছে যেখানে ভূমি অংশে অংশে বিভক্ত হইয়া আবার ব্যক্তিগত স্বত্বে ফিরিয়া আসিয়াছে। ইহা সত্ত্বেও, এই আংশিক বিলোপ সত্বেও,— অন্ত স্বত্বাধিকার আসিয়া প্রথম স্বত্বাধিকারের উপর চাপিয়া বলিলেও—মূল আদর্শের স্থল রেখাগুলি এখনও ধরিতে পারা যায়। এমন কি, যেখানে পৃথক স্বত্ব স্বল্প হইয়াছে, সেখানেও তাহার ফলভোগসম্বন্ধে এত অসংখ্য খুঁটিনাটি নিয়ম আছে, যে কাৰ্য্যতঃ উহা অবিভক্ত স্বত্বেরই সামিল হইয়া পড়িয়াছে। গ্রামের শাসনকাৰ্য্য যাহার হস্তে সেই পঞ্চায়তই, মৌসমের শেষে হিসাব নিষ্পত্তি করে, ফসল ভাগ করে। অনেক গ্রামই সমবেতভাবে খাজনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। স্থল কথা, ব্যক্তিগত পৃথক স্বত্ব উত্তর কালে স্বল্প হইয়াছে—এই পরিবর্তনটি হালের। প্রাচীন আদর্শের অবনতি হইয়াই এই ব্যক্তিগত স্বত্বের সৃষ্টি -জাৰ্য্যগণ কর্তৃক স্থাপিত আদিম গ্রামে, সমস্ত সমাজ সমবেতভাবেই অবিভক্ত ভূমির অধিকারী ছিল। মেন-সাহেব আরও এই কথা বলেন – ইহাত জানা কথা ফে আর্য্যজাতিগণ সমবেতভাবে একই ভূমি অধিকার করিত , তার সাক্ষী-পুরাতন জাৰ্ম্মণজাতির “সাময়িক যাত্রা”। ইহাও একটা নূতন প্রমাণ—জলন্ত প্রমাণ । একটা ইংরাজি কথা আছে—“লাফ দিয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া”—এস্থলে তাহাই হইয়াছে। মেন-সাহেব যখন ১৮৭০ অব্দে, এই অপরিপক্ক সিদ্ধান্তটি জনসমাজে প্রচার করেন, তখন বাস্তবিক তিনি এই বিষয়ের কি জানিতেন? উত্তর প্রদেশের গ্রামসম্বন্ধেই তাহার জানাগুন ছিল। রাজস্বের মোট সংস্থান ও তাহার পুনৰ্ব্বণ্টন—এই উভয়ের মধ্যে আপেক্ষিক সম্বন্ধ কিরূপ-ইহার উপরেই সমস্ত অনুশীলন.প্রতিষ্ঠিত ; কিন্তু দক্ষিণ ও মধ্য প্রদেশের গ্রামগুলি সম্বন্ধে এ বিষয়ের জ্ঞান তাহার যথেষ্টপরিমাণে ছিল না ; শিক্ষকের মুবিধার জন্ত ও ব্যবহারের জন্ত, যে সকল সংক্ষিপ্তসার গ্রন্থ ছিল, তাহা হইতেই তিনি যাহা-কিছু জ্ঞান লাভ কন্ধিয়াছিলেন। এখন ইংরাজদিগের এ বিষয়ে প্রবাসী।



অনেক জ্ঞান জন্মিয়াছে, তাহাদের বৈজ্ঞানিক কৌতুহল

আবার ফিরিয়া আসিয়াছে, এখন তাহদের রিপোর্টগুলি, নানাবিধ তথ্যে ফঁপিয়া উঠিয়াছে। যাহার উপর শাসনভার [ ৮ম ভাগ। সেই কালেক্টর এখন সেই আদিম বংশদিগের সমাজগঠনে । অনুশীলনে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। শি বৎসর পরে, কতকগুলি । নূতন সংজ্ঞা আমাদের গোচরে আসিয়াছে, কিন্তু এই গুলি ভাল করিয়া তলাইয়া দেখে এরূপ স্বগ্ন সমালোচক অধুন কেহ নাই। আর কিছু না হউক, যদি কেহ এই রঞ্চ খনিটি ভাল করিয়াতলাইয়া দেখেন, তা হইলে হয়ত দেখিতে s দেখিতে হঠাৎ প্রকাশ হইয় পড়িবে—কোন স্থানে একটা স্তর । শিরা ঝিকমিক্‌ করিতেছে! মেনের সিদ্ধান্ত প্রাচীন কালের সমাজগঠনসম্বন্ধে, কিন্তু ইংরাজসরকারের কৰ্ম্মচারী Baden Powell ইঙ্গ-ভারতের প্রচলিত রাজস্ব প্রণালীটি ভাল করিয়া অনুশীলন করিয়াছেন। তাহার অনুশীলনের ফল, ১৮৯২ আন্ধে তিনি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। গ্রন্থের নাম “ইঙ্গভারতে । জমির বন্দোবস্ত প্রণালী,”—৩থণ্ডে সমাপ্ত। যে সকল বহু | বিস্তৃত রিপোর্টের কথা পূৰ্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি,এই উপলক্ষে, সেই সব রিপোর্ট র্তাহাকে অনেক ঘাটিয়া দেখিতে হইয়াছিল। পৌএল সাহেব তাহার মধ্য হইতে কোন মতবাদ কিংবা সিদ্ধান্ত বাহির করেন নাই, কিন্তু এমন কতকগুলি সুনিশ্চিত তথ্য আবিষ্কার করিয়াছেন, যাহা হইতে জানা যায় যে খুব আধুনিক কালেও সমবেত সাধারণ গ্রাম সমাজের অস্তিত্ব ছিল। ১৮৭০ অব্দে মেন-সাহেব এইমাত্র বলিতে পারিয়াছিলেন যে গ্রাম্যসমাজ গোড়ায় আৰ্য্যগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। কতকটা এই বিশ্বাসের উপরেই তাহার সিদ্ধান্ত স্থাপিত। কিন্তু আধুনিক গবেষণার ফলে,-ভারতীয় জাতিগণের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রকৃত তথ্য প্রকাশিত হওয়ায়, সে সম্বন্ধে আমাদের মতের একটু পরিবর্তন হইয়াছে। সকল বিজ্ঞানের মধ্যে জাতিতত্বের সিদ্ধান্তনির্ণয়ে বিশেষ সতর্কতা ও বিবেচনা আবখক হইলেও, এইটুকু নিশ্চয় করিয়া বলা যায় যে ভার তীয় জাতিদিগের দেহে আৰ্য্যরক্ত অতীব লঘুপরিমাণে মিশ্রিত হইয়াছিল। তাছাড়া যে সব জাতি আসিয়া দক্ষিণভারত ও মধ্যভারতে বসতি স্থাপন করে—নৰ্ম্মদ হইতে আরম্ভ করিয়া বিন্ধ্যাচল পৰ্য্যস্ত তাহার। সমস্তই দ্রাবিড়ীয়। আর্য্য ২য় সংখ্যা । ] - গণের ধারাবাহিক প্রবাহ বিদ্ধ্যাচলে আসিয়া আটকাইয়া পড়িয়াছিল, কেবল কতকগুলি দুঃসাহসিক লোক ও ব্রাহ্মণ ধৰ্ম্মপ্রচারক এই বাধা লঙ্ঘন করিয়া দাক্ষিণাত্যে প্রবেশ করে। তাছাড়া আৰ্য্যজাতির আর একটি দল, সিন্ধুনদ বাহিয়া পশ্চিম প্রদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং সেখান হইতে ক্রমশ অবতরণ করিয়া বোম্বায়ের দিক দিয়া উচ্চ দাক্ষিণাত্যে আসিয়া উপনীত হয়। কিন্তু হিন্দুস্থানেই, অর্থাৎ পাঞ্জাব ও গাঙ্গেয় উপত্যকাতেই আৰ্য্যনরপতিগণের ও ব্রাক্ষণিক সভ্যতার পূর্ণ প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। এ কথা যেন মনে থাকে, আৰ্য্যগণ জেতৃ-জাতি—শ্রেষ্ঠ জাতি হইলেও, তাহদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। তাহারা কৃষিপ্রণালী উদ্ভাবন করে নাই, তাহাদের আগমনের পূৰ্ব্বে, গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষি প্রচলিত ছিল। শুধু তাহা নহে, এই শ্রেষ্ঠ আৰ্য্যজাতির প্রধানেরা কৃষিকাৰ্য্যকে অবজ্ঞা করিত, কেবল দেশের সাধারণ লোক বৈশ্বেরাই কৃষিকার্য্যে ব্যাপৃত ছিল। তাহার পর একটা সুদীর্ঘ অন্ধকারের যুগ। এই সময়ে আর্য্যৰূপতিগণ প্রায় সকলেই অন্তৰ্হিত। আর্য্যবংশের যাহারা অবশিষ্ট রছিল, তাহারাও দেশ হইতে দূরীকৃত হইল। আবার কতকগুলি নূতন দল আসিয়া হিন্দুস্থানে উপনিবেশ স্থাপন করিল ; নিঃশেষিতপ্রায় আৰ্য্যদের সহিত যাহারা কুটুম্ব স্বত্রে আবদ্ধ ছিল সেই রাজপুতের দল—এবং অন্যান্ত দল,—যেমন হিন্দ-শিীয় বংশের জাষ্ট্র’ ও ‘গুজার, দাক্ষিণাত্যের r | - দ্রাবিড় জাতি, বৈশুজাতির কতকগুলি ভগ্নাবশিষ্ট লোক, রাজপুত, উত্তর প্রদেশের জাষ্ট্র ও গুজার,—এখনকার গ্রাম্যসমাজের ইহারাই মুখ্য উপাদান । ইহা যদি সত্য হয়, তবে কি এ কথা বলা যাইতে পারে "কিংবা বিশ্বাস করা যাইতে পারে যে, আর্য্যভিত্তির উপরেই এই সকল গ্রাম্যসমাজ প্রতিষ্ঠিত ? তাহার বিপরীতে বাডেন-পেীএল বরং এই কথা বলেন, আর্য্যবংশীয়েরা কিছুই নূতন উদ্ভাবন করে নাই, তাহাদের পূৰ্ব্বে গ্রামের যেরূপ বন্দোবস্ত ছিল উহারা তাহার কিছুই পরিবর্তন করে নাই। কথাটা একটু বেশী মাত্রায় বলা হইয়াছে। তাহার মতে, এবিষয়ে আৰ্য্য-প্রভাব কিছুমাত্র প্রকটত হয় নাই। আর্যোরা গাঙ্গেয় উপত্যকায় যে সভ্যতা প্রবর্তিত করে, তাহা সমস্ত ভারতে বিস্তৃত হ ইয়াছিল। ইহা কি সম্ভব, এই সৰ্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ ধৰ্ম্মব্যবস্থা ও সামাজিক (א সমসাময়িক ভারত । දෘව ব্যবস্থার যেটি মুখ্য বিষয়—সেই গ্রামের আর্থিক বন্দোবস্ত, তাহাকে এই সভ্যতা একেবারেই স্পর্শ করিল না! আর্য্যগণকর্তৃক গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এই কথাটা হালকাভাবে বলা হইয়াছে। গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, অথচ যদি আমরা বলি-দলিল আদি প্রমাণের অভাবেই যদি আমরা বলি যে-আর্য্যেরা এবিষয়ে কোন প্রভাব প্রকটিত করে নাই— তবে ইহা কি একটা পরস্পরবিরুদ্ধ বাক্য হইয়া দাড়ার না ? কৃষকদিগের মধ্যে আর্য্যের ভাগ কি পরিমাণ ছিল তাহা জানা নাই। তাহদের কার্যের সমস্ত খুঁটিনাটি বিবরণ— কতটা প্রভাব তাহারা প্রকটত করিয়াছিল—এ বিষয়ে দলিলাদি একেবারেই মূক। আরও সঠিক তথ্যাদি যতদিন না হস্তগত হয় ততদিন সকলেই যে পথে চলিতেছে আমাদেরও সেই পথ কাজেই অনুসরণ করিতে হইবে। উৎপত্তির কথাটা এখন থাক্‌-কেননা, আর যাই হউক, ইহা যে একটা সংশয়-সস্কুল বিষয় তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। গ্রাম্য স্বত্বাধিকার সম্বন্ধে আমাদের কি বক্তব্য ? যে সকল তথ্য আমাদের হস্তগত হইয়ছে- তাহ হইতে সাধারণ ভূসম্পত্তির অস্তিত্ব কি সপ্রমাণ হয় ? বি-পৌএল, তাহার হিসাবের মধ্যে সরকারী জরিপ-কাগজের শ্রেণীবিভাগ গ্রহণ করিয়াছেন, অর্থাৎ তিনি গ্রামগুলিকে দুই বর্গে বিভক্ত করিয়াছেন ; যেখানে ভূস্বামীরা ব্যক্তিগত হিসাবে কর দেয় সেই দক্ষিণ ও মধ্য প্রদেশের গ্রাম এবং যাহারা সমবেতভাবে খাজনার দায়িত্ব গ্রহণ করে সেই অল্পসংখ্যক উত্তর প্রদেশের গ্রামসমূহ। এই প্রথম বর্গের গ্রামগুলির সম্বন্ধে পূৰ্ব্বে কিছুই জানা ছিল না : ১৮৭০ অব্দের কাছাকাছি কোন সময় হইতে উহাদের সম্বন্ধে রীতিমত অনুশীলন আরম্ভ হয়। ইহা সত্বেও উহাদের সম্বন্ধে একটা সিদ্ধান্ত খাড়া করা হইয়াছিল। আসল কথা, এই সকল গ্রামের কর্ষণীয় ভূমিখণ্ড গুলি পৃথক ছিল এবং উহাদের কৃষিকাৰ্য্যও পৃথক ভাবেই নিৰ্ব্বাহিত হইত। দলিলাদির অবিদ্যমানে ইহা বিশ্বাস করিবার সম্পূর্ণ হেতু আছে যে, ঐ সকল গ্রামের বন্দোবস্ত বরাবর এই রূপই ছিল। উত্তর প্রদেশের মত, কতকগুলি জাতি আসিয়া ঐ গ্রামগুলি পত্তন করে। কিন্তু ক্রমে উহাদের "জাতীয়” বন্ধন শিথিল হইয়া যায়। পূর্কেই বলিয়াছ এই সকল জাতি দ্রাবিড়বংশোদ্ভৱ। দ্রাবিড়ীয়