পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵՀ WikitanvirBot (আলাপ) ১৪:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)----------പ്പം.... দেশের জন্য আত্মত্যাগের দ্বারা মনুষ্যত্ব বিকাশের সুযোগ কোথায় ? যাহারা ভারতে ব্রিটিশ শাস্তির স্তাবক, যাহার ঐ শাস্তির জন্য আর সব ত্যাগ করিতে প্রস্তুত, তাহার এই কথাটা একবার অনুধাবন করিয়া দেখিবেন কি ? যদি মনুষ্যত্বই হারাইলাম তবে শাস্তিতে পশুজীবন যাপন করিয়া লাভ কি ? উপসংহারে আর একটা কথা বক্তব্য আছে। আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি ইংরাজ বণিকৃবেশে ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল। কেবল দৈবঘটনায় সে রাজবেশ ধরিয়াছে। কিন্তু আপনার ডাক কখনও ভুলে নাই। তবে এতদিন যে শাস্তির কথা শুনিয়াছি সে কেবল আপনার বণিকৃবৃত্তি নিৰ্ব্বিঘ্নে চলিতেছিল বলিয়া। যতদিন আমাদের শিল্পবাণিজ্য বিনষ্ট করিয়া ইংরাজের শ্ৰীবৃদ্ধি হইতেছিল ততদিন কোন গোলমাল হয় নাই। কিন্তু যেই বাণিজ্যের কণামাত্র ক্ষতির সম্ভাবনা হইয়াছে, অমনি ইংরাজ নিজ প্রকৃত মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছে। চুলোয় যাক তোমার শান্তি, চুলোয় যাক তোমার আইন আদালত। জজ মাজিষ্টর হইতে আরম্ভ করিয়া চেকীদার কনেষ্টবল পর্যন্ত সদলে রাজকাৰ্য্য ছাড়িয়া বিলাতী জিনিষের মোট ঘাড়ে করিয়াছে—চাই বিলাতী নৃন, চাই বিলাতী কাপড়। বিগত দুই বৎসরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করিয়াছে যে শাস্তি অশাস্তি, বাক্যের স্বাধীনতা অধীনতা, ও সব ফন্ধিকার। ইংলণ্ডের স্বার্থের জন্য প্রয়োজন হইলে ও সব পদদলিত করিতে মুহূৰ্ত্তও লাগিবে না। যখন প্রয়োজন হইল হিন্দুর বিপক্ষে মুসলমানকে উত্তেজিত করিয়া দেশময় অশাস্তির আগুন জালিয়া তুলিতে এক মুহূৰ্ত্তও লাগিল কি ? উদেশু হিন্দুকে এই কথা বলা–তুমি যে স্বরাজ চাও, আমি চলিয়া গেলে মুসলমানের হাতে তোমার কি ছৰ্দ্দশা তাহ দেখ ! দুঃখের বিষয় হিন্দুর উত্তরটা গায়ে বড় লাগিয়াছে। যাহা হউক, এ শাস্তির মূল্য কি তাহাও আমরা বুঝিয়াছি, এ শাস্তির অর্থ কি তাহাও আমরা জানিয়াছি। ইংলণ্ডের স্বার্থের জন্য ইহার জন্ম, ইংলণ্ডের স্বার্থের সঙ্গে ইহার যেখানে বিরোধ, সেখানে ইহার মৃত্যু। ইংরাজরাজ এখন স্ববেশে আবির্ভূত হইয়া এই শাস্তির অন্তর্নিহিত গৃঢ় ব্যাখ্যা প্রদান করিয়াছেন। - শ্ৰীধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী। [ ৮ম ভাগ। যুরোপে পদার্পণ ইংরাজি ১৯৭১সাল ১৮ই জানুয়ারি ভূমধ্যসাগর বক্ষে পিএ ও কোম্পানির "অষ্ট্রেলিয়া” নামক জাহাজ প্রানি ছুটতেছে। এই জানুয়ারি বোম্বাই ছাড়িয়াছিলাম,—আজ দুই সপ্তা কাল একাদিক্ৰমে মাত বমুগ্ধরার স্পর্শবিরহিত—প্রা ওষ্ঠাগত প্রায়। আজ জাহাজে আমার শেষরাত্রি। কা প্রাতে জাহাজ মাসেলস্ বন্দরে পৌছিবে। সেখানে-এৰু বেলা থাকিয় জাহাজ আবার লণ্ডন অভিমুখে যাত্রা করিৰে। কতক লোক মাসেলসে নামিবে,—বাকী লওনযাত্রী সমস্তু পথই জাহাজে যাইবে। ধন্ত তাহারা—যাহারা নামিবে না। ধন্ত তাহাদের ধৈর্য্য। সমুদ্রকে নমস্কার—আমি স্থলস প্রাণী, জীবনের অষ্টাবিংশতি বৎসর স্থলে কাটাইয়াছি—স্বৰে কাটাইয়াছি –কিন্তু জলে দুই সপ্তাহেই আমাকে অঞ্জি করিয়া তুলিয়াছে। জাহাজে কি আমার বেশী শারীরিক কষ্ট হইয়াছিল - তাহাত নহে। বোম্বাই ছাড়িয়া অবধি সমুদ্র বেশ শা মূৰ্ত্তিই ধারণ করিয়াছিল। শীতকালে আরব্যসাগর শাস্ত্রী থাকে,–বর্ষাকালেই যাহা কিছু গোলযোগ। বোম্বাই ছাড়িবার পর দশম দিবসে লোহিত সাগর পার হইয়া পোঃ সেদে পৌছিলাম, তখনও পর্যন্ত একদিনের তরেও সমৃদ্ধ পীড়া অনুভব করি নাই। পোর্ট সের ছাড়িলে—দিন ই | মাত্র—সমুদ্রে ঢেউ একটু বেশী হইয়াছিল, জাহাজ একটু বেণী দুলিয়াছিল,—একটু অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিলাম। “সমুদ্র পীড়া" বলিতে যাহা বুঝায়, ঠিক তাহ হয় নাই। ক্যাবিনে । শয্যার উপর চুপটি করিয়া পড়িয়া থাকিতাম, খাদ্যদ্রব্যের গন্ধও সহ করিতে পারিতাম না। ষ্টিউয়ার্ড (থানসাম) ছই একটি আপেল ফল আনিয়া দিত, তাহাই খাইতাম, এক আধ গেলাস নেবুর সরবৎ আনিয়া দিত, তাছাই পান করিতাম ; এবং একটি ফাউণ্টেন পেন লইয়া, “ষোড়শী"ন্তে প্রকাশিত “কাশীবাসিনী" নামক গল্পটি রচনা করিতাম। দুই দিন পরে, যখন ইতালী সমীপবৰ্ত্ত হইল, তখন সমুদ্রও শাস্ত হইল, আমিও গা-ঝাড়া দিয়া “চাঙ্গ” হইয় উঠলাম। জাহাজে আমার ত কষ্ট হয় নাই। তথাপি জাহাজ আমার কারাগার স্বরূপ মনে হইতেছিল, নামিতে পাইলে বাচি। ২য় সংখ্যা । ] o svě জানুয়ারি রাত্রি দশটার সময় তাই প্রফুল্ল মনে শয়ন করিতে গেলাম। কলা প্রভাতে আমার মুক্তি। “রাজা ও রাণী"র কয়েক লাইন ক্রমাগত মনে হইতে লাগিল— - একি মুক্তি, একি পরিত্রাণ ! কি আনন্দ হৃদয় মাঝারে —অবলার— না—না-অবলাসংক্রান্ত কোনও গোলযোগ জাহাজে উপস্থিত হয় নাই। পাঠক অনুগ্রহ করিয়া উদ্ধৃতাংশ হইতে শেষ কথাটি কাটিয়া দিবেন, ইহা ভুলিয়া বলিয়াছি। জাহাজে ক্রট অবলার সহিত কিঙ্কিং ঘনিষ্ঠত হইয়াছিল বটে,— এবং তিনি আমাকে কিঞ্চিৎ উপহারও দিয়াছিলেন বটে,— কিন্তু বয়সে তিনি প্রবীণা,–এবং তাহার উপহার একশিশি সুগন্ধি নয়, ঔষধের বড়ি মাত্র। তিনি ও তাহার স্বামী রাষ্টম—আমাকে বলিয়াছিলেন–“বিলাতের শীতে প্রথম প্রথম তোমার সন্দি কাসি উপস্থিত হইবে, সোরথোট’ হইতে পারে, এই ঔষধ তখন এক এক বড়ি থাইও।” দুর্ভাগ্যবশত: পৌঁছিয়া আমার সর্দি কাসি কিছুই হয় নাই। কিন্তু তথাপি মাঝে মাঝে এক একটা সেই বড়ি থাইতাম । রোগ নাইবা হইল, তাহ বলিয়া কি ভাল ঔষধটা নষ্ট করিতে আছে ? শয়ন করিলাম, কিন্তু ভাল নিদ্রা হইল না। মাঝে মাঝে কাকনিদ্রা আসে, মাঝে মাঝে জাগিয়া উঠি । রাত্ৰি পাচটার সময় জাগিয়া দেখি, জাহাজের গতি বড় ধীর। এঞ্জিনের যে একটা ধম্ ধম্ করিয়া শব্দ হয়, তাহা অতি ধীরে, দেরিতে দেরিতে হইতেছে। তবে পৌছিলাম বুঝি ? তড়া করিয়া উঠিয়া পড়িলাম। রাত্রি-বসনের উপর ড্রেসিং গাউন পরিয়া, চটি জুতা পায়, ডেকের উপর ছুটিলাম। গিয়া দেখি, আরোহীর মধ্যে একজন ইংরাজ বালকমাত্র দাড়াইয়া আছে, আর নাবিকেরা আছে। অন্ধকার—কিছুই দেখা যায় না। কেবল দূরে একটা লাইট হাউস। আলোকটা নিরবচ্ছিন্ন নহে। জলে আর নিবিয়া যায়, ঘন ঘন এইরূপ হইতেছে কখনও শ্বেত, কখনও লোহিত, কখনও নীল, এইরূপ বর্ণ পরিবর্তনও হইতেছে। আমি এবং সেই বালকটি তাহাই দেখিতে লাগিলাম। বালকটি বলিতে লাগিল—Isn't it pretty নাবিকগণকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, মাসেলস আর তিন চারি মাইল মাত্র ব্যবধান আছে। জাহাজ অতি ধীরে, য়ুরোপে পদার্পণ । बश्व अिउन्ड (م سb ১৪:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~~-------------------- অগ্রসর হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে রাত্রির অন্ধকারও কমিতে লাগিল । ঘণ্টা থানেক পরে, জাহাজ একবারেই থামিয়া গেল। দূরে পাহাড়ের মত দেখা যাইতেছে। তথন সামান্য আলোকও হইয়াছে, একজন নাবিককে জিজ্ঞাসা করিলাম— “মার্সেল কোথা ?” সে তটভূমি দেখাইয়া বলিল—“ঐ।” “কৈ ?” “ঐ যে ” “ও ত দেখিতেছি পাহাড়ের মত। সহর কৈ ?” “ঐ সহর।” “বাড়ী ঘর কৈ ?” “সব আছে। কুয়াসায় ঢাকা আছে।” বিশ্বাস হইল না। তটভূমি ত বেশ স্পষ্টই দেখিতেছি— কুয়াসা ত কৈ দেখিতেছি না। ঐখানেই সহর আছে, ইহাও কি বিশ্বাসযোগ্য কথা ? কিন্তু ক্রমে ক্রমে দেখিলাম, তাহাই হইল। যেন ইত্ৰজালের প্রভাবে, অল্পে অল্পে, যেখানে কিছুই ছিল না, সেখানে সহর ফুটিয়া উঠিল। ক্রমে একটি দুইটি করিয়া পুরুষ আরোহী ডেকে দেখা দিতে লাগিলেন। সকলেই আমার স্তায় "আনড্রেস অবস্থায়, কারণ ৮টার পূৰ্ব্বে মহিলাগণের ডেকে আসিবার অধিকার নাই ! শুনিলাম বন্দর হইতে পাইলট বোট আসিবে, আসিয়া আমাদের জাহাজকে বন্দরে লইয়া যাইবে। যখন সাড়ে সাতটা, তখন বেশ আলো হইল, পাইলট বোট আসিল। বন্দরে পৌছিতে ৮টা বাজিয়া গেল। আমি ইতিপূৰ্ব্বেই, বেশ পরিধান করিয়া, জিনিষপত্র গুছাইয়া, প্রস্তুত হইয়া ছিলাম। জাহাজ যখন তীরে লাগিল, নামিবার জন্ত সিঁড়ি পড়িল, ঠিক সেই সময়ে জাহাজের প্রাতরাশের ঘণ্টা বাজিল। দেখিলাম দলে দলে নরনারী ভোজন কক্ষে গিয়া থাইতে বসিলেন। আমি নামিবার জন্ত এতই ব্যাকুল হইয়াছিলাম যে সে বিলম্ব আমার সহিল না। পূৰ্ব্বেই একটু চা ও দুই চারি খানি বিস্কুট খাইয়া ছিলাম। প্রাতরাশ বাদ দিয়া, পূৰ্ব্বকথিত কাপ্তেন ও তাহার পত্নীর নিকট বিদায় লইয়া নামিয়া পড়িলাম। তীরে টমাস কুকের পরিচ্ছদধারী একজন কৰ্ম্মচারী ছিল।