পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہندسb যাইব । সে আমার জিনিষগুলি তুলিয়া লইয়া, আমায় ইসারায় ডাকিয়া অগ্রসর হইল। একটা স্থানে লইয়া গেল, তাহা গুদামের মত। আমার জিনিষগুলা সেই গুদামে দিল । কৰ্ম্মচারী আমাকে একটি সংখ্যাঙ্কিত টিনের চাকতি দিল । বুঝিলাম, আমার জিনিষ জিম্বায় রাখিল, চাকতি খানি আমার নিদর্শন। অতঃপর কুলিটা আমার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—“Neuf.” এ আবার কি বলে ? আমি বুঝিতেছি না দেখিয়া সে আবার বলিল—“নোফ নোফ"। আমি নিরাশ ভাবে ঘাড়টি নাড়িতে লাগিলাম। তখন সে পকেট হইতে নিজের ঘড়িটি বাহির করিল। ছোট কাটাটা যেখানে ছিল, কাচের উপর সেই স্থানটায় অঙ্গুলি স্পর্শ করিল। পরে, অঙ্গুলি কাচের উপর দিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর করিয়া, নয়টার অঙ্কে গিয়া থামিল এবং সঙ্গে সঙ্গে বলিল—“Neuf”—বলিয়া, রেলগাড়ী ছাড়িলে এঞ্জিনে যেমন শব্দ হয়, নিজের মুখে সেইরূপ শব্দের অনুকরণ করিতে লাগিল—পফু-পক্ষ-পক্ষ-পক্ষ। আমি হাসিয়া ফেলিলাম—বুঝিলাম নয়টার সময় গাড়ী ছাড়িবে। সেও একটু হাসিয়া, কোথায় অন্তৰ্দ্ধান করিল। নিকটে একটা বেঞ্চি ছিল, তথায় উপবেশন করিলাম। কিন্তু শীতে বেশীক্ষণ বসিয়া থাকা যায় না। উঠিয়া একটু এদিক ওদিক বেড়াইতে লাগিলাম। বাহিরে গিয়া, সহর বেড়াইতে সাহস হইল না—শেষে কি যাত্রা শুনিতে গিয়া নীলকমলের দশা হইবে ? ষ্টেশনের বাহিরেই, রাস্তার ওপারে একটা খাদ্যদ্রব্যের দোকান ছিল। কাচের জানালায় লেখা strē–English is spoken here–cofoxi arī খুলী হইল। যাই, কিছু খাদ্য সংগ্ৰহ করিয়া আনি। দোকানে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, একটি মাত্র যুবতী সেখানে বসিয়া আছে। বলিলাম—“আমায় একখানা রুটি, একটু মাখন আর কিছু ফল দাও।”—যুবতীটি ফরাসী ভাষায় কি বলিল, কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। তখন জিজ্ঞাসা করিলাম—“ত্মেমরা কি ইংরাজি কহ না ?” বলিয়, তাহাদের কাচের জানালায় সেই লেখাটির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিলাম। যুবতীটি একটু মৃদু হাস্ত করিয়া ফরাসীতে আরও কি বলিল। তখন মনোভাব বিনিময় সম্বন্ধে হতাশ হইয়া, ইসারায় দ্রব্যাদি ক্রয় করিলাম। প্রবাসী । একজন জবরদস্ত জন বুল, প্যারিসে দোকানে এইরূপ লেখ দেখিয়া, জিনিষ কিনিতে প্রবেশ করিয়াছিল। সেখানে স্ত্রী পুরুষ অনেক গুলি কৰ্ম্মচারী ছিল, কিন্তু কেহই এক বধ । ইংরাজি বুঝিল না। তথন জন বুল মহা খাপ্পা হইয়া স্থাক ডাক আরম্ভ করিল। গোলমাল শুনিয়া ক্রমে দোকানের মালিক উপর হইতে নামিয়া আসিল । “মহাশয়, আপনাদের কেমন ব্যবহার ? দোকানের বাহিরে | | কেবল সেই কিঙ্কিং | ইংরাজি জানিত। জন বুল রাগত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল-" | লিথিয়া রাথিয়াছেন ‘এখানে ইংরাজি কথিত হয় –কিন্তু । দেখিতেছি আপনার কৰ্ম্মচারীরা কেহই ইংরাজি বুঝেন - কে ইংরাজি কহে আমি জানিতে চাই।” দোকানদার মৃদুহান্ত করিয়া বলিল—“কেন মহাশয়, এইত আপনিই ইংরাজি কহিতেছেন। আমাদের অনেক খরিদারই আসিয়া ইংরাজি কহে। আমরা ত জানালায় এমন কথা লিখি নাই যে আমরা ইংরাজি কহিয়া থাকি।”—দ্যায়ের ফাকিতে জন বুল অপ্রতিভ হইয়া প্রস্থান করিল। যথা সময়ে কুলি আসিয়া আমায় গাড়ীতে উঠাইয়া দিল। নয়টার সময় গাড়ী ছাড়িল । আমার কামরায়, অন্তান্ত লোকের সঙ্গে, একটি ফরাসী যুবতীও উঠিয়াছিল। তাহা । গলায় একটি অতি স্বজ শিফ্ট বসনের রুমাল জড়ানো। গুটাইয়া গুটাইয়া একটি ফুলের মত করিল। করিয়া আবার গলায় পরিল। তাহার পর একটি ক্ষুদ্র ব্যাগ হইতে সে কিছু থাপ্ত এবং একটি বোতল বাহির করিল। খায় আর মাঝে মাঝে বোতলে মুখ দিয়া মদ্য পান করে। ক্রমে সমস্ত বোতলটি পার করিয়া, জানালা গলাইয়া সেটি বাহিরে । ফেলিয়া দিল। দেখিয়া আমি কিছু বিস্মিত হইয়াছিলাম। । তখনকার দিনে আমি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলাম, মন্থ মাত্রকেই ব্র্যাণ্ডি ও হুইস্কির মত তীব্র মনে করিতাম। জানিতাম না, ফরাসীরা জলের পরিবর্তে যে মদ্য ব্যবহার করে তাহা নিতান্তই লঘু। কোনও ষ্টেশনে পানীয় জলের কোনই বন্দোবস্ত দেখিলাম না। আমার সঙ্গে একটি গেলাস ছিল, T কিন্তু তাহার সদ্ব্যবহার করিবার অবসর পাই নাই। কমল নেবু থাইয়াই সারাপথ তৃষ্ণ নিবারণ করিতে হইয়াছিল। । বেলা ৩টার সময় ক্যালে বন্দরে পৌছিলাম। সেখানে টার ইংরাজি কহিতে পারে, আর কোনও অসুবিধাই রছিল না। ক্যালে হইতে ডোভার ২৬ মাইল। ইংলিশ চ্যানেল পার হইতে দুই ঘণ্টা লাগিয়াছিল। সমস্ত পথ কি বাতাস ! ডেকের উপর দাড়াইলে যেন উড়াইয়া জলে ফেলিয়া দেয়। সন্ধ্যা ৫টার সময় ডোভারে পৌছিলাম। ঘাটের উপরেই ত্ৰে সজ্জিত ছিল। আরোহণ করিলাম। কলিকাতা হইতে যে পরিবারের নামে আমি পরিচয়পত্র আনিয়াছিলাম, লগুনে র্যাহাদের গৃহে আমি অবস্থিতি করিব,—পূৰ্ব্ব হইতে পত্র লেখা ছিল যে ডোভারে পৌঁছিয়া আমার আগমনসংবাদ তাহাদিগকে তারযোগে জানাইব। গাড়ীতে উঠিলাম, ছাড়িবারও বেশী বিলম্ব নাই, তখন কোথায় তারঘর— কোথায় তারঘর যদি অন্বেষণে বহির্গত হই, তবে হয় ত গাড়ী ছাড়িয়া যাইবে। সুতরাং সে সাহস করিলাম না। একটা মুটেকে বলিলাম—“দেখ, একটা টেলিগ্রাফ লিখিয়া দিতেছি—পাঠাইয়া আসিতে পার ?”—সে বলিল, পারে। আমার কাছে খুচরা কিছুই ছিল না। টেলিগ্রামটি এবং একটি স্বর্ণমুদ্র ( মূল্য ১৫ ) তাহাকে দিয়া বলিলাম— "সময় থাকিতে বাকী টাকা আমায় আনিয়া দিতে পারিবে ত?”—সে বলিল—“নিশ্চয়।”—বলিয়া ছুট দিল। এ দিকে ট্রেন ছাড়িতে আর বেশী বিলম্ব নাই। লোকটাও আসে না। পূৰ্ব্বে শুনিয়াছিলাম,--বড় বিষয়ে যাহাই হউক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে ইংলণ্ডের সাধারণ লোক অনেকটা সাধু। তাহারা সুবিধা পাইলে ব্যাঙ্ক, ভাঙ্গে বটে কিন্তু দুই চারি টাকা চুরি করাটা অত্যন্ত হেয়ঞ্জান করে। সেই সাহসেই আমি লোকটাকে বিশ্বাস করিয়াছিলাম। কিন্তু এখনও আসে না কেন ? দিল বুঝি ফাকি !—শেষ মুহুর্তে দেখিলাম সে ছুটিয়া চুটিয়া আসিতেছে। বলিল ছয় পেনি লাগিয়াছে—বাকী সাড়ে উনিশ শিলিং আমায় গণিয়া দিল । আমি তাহাকে ছয় পেনি বখশিস করিয়া বিদায় দিলাম, ট্রেনও ছাড়িল । o লণ্ডনের চেয়ারিং ক্রশ ষ্টেশনে যথন পৌছিলাম, তখন ছয়টা বাজিতে দশ মিনিট বাকী আছে। রাত্রি হইয়াছে। ষ্টেশনে বিছাৎ আলোক জলিতেছে। আর এত লোক —o enسb দাড়াইয়া আছে—অসম্ভব জনতা। তখন ভাবিয়াছিলাম, প্রত্যহই বুঝি এইরূপ হয়। ----- পরে শুনিলাম, তাহার অল্পক্ষণ পরেই জৰ্ম্মণ-সম্রাটের পৌছিবার কথা ছিল, তিনি মহারাণীকে দেখিতে আসিতেছেন,—তাহারই প্রতীক্ষায় সেদিন ষ্টেশনে অত: জনতা হষ্টয়াছিল,—আমার প্রতীক্ষায় নহে। একজন মুটিয়া আমার জিনিষপত্র একখানি ফোরহুইলারে উঠাইয়া দিল। লণ্ডনে ক্যাব প্রধানতঃ দুই প্রকার—হ্যানসম ও ফোর-হুইলার। হ্যানসমের মাত্র দুইখানি চাকা—দুই জন লোকের বসিবার স্থান, বেশ দ্রুত চলে। ফোর-হুইলারের চারি খানি চাকা, গতি অপেক্ষাকৃত মন্থর,-চারিজন লোকের বসিবার স্থান,— মালপত্র বেণী থাকিলে ফোর-হুইলারেই স্ববিধা। গাজী লওনের জনসংঘ ভেদ করিয়া ছুটিল। আমি দুই পার্থের দৃশু দেখিতে দেখিতে, অন্ধ ঘটায়, ঠিকানায় পৌছিলাম। বাড়ীর সম্মুখে গাড়ী দাড়াইল। গাড়োয়ানকে বলিলাম? “নামিয়া বাড়ীর লোককে ভাক—আমার এই কার্ড লও।”— গাড়োয়ান নামিয়া দরজায় “নকার” ঠক ঠক করিতে লাগিল। দাসী আসিয়া দরজা খুলিয়া দিল—কার্ড লইয়া গেল। কার্ড পাইয়া, বাড়ীর সকলে একবারে সদলে দ্বারে আসিয়া উপস্থিত। তাহাদের আদর অভ্যর্থনায় আমার সমস্ত সঙ্কোচ দূর হইল। একটি যুবক, छ्हेः शूदउँौ ७ একজন প্রবীণকে দেখিলাম। তাঁহাদের ড্রয়িং রুমে গিয়া বসিলাম। একটি যুবতী বলিলেন—“ষ্টেশনে বাবার সঙ্গে দেখা হয় নাই ? তিনি যে আপনাকে আনিতে গিয়াছেন ? আমি বলিলাম–“কৈ না—কাহারও সহিত ত দেখা হয় নাই।” - “আপনি কয়টার গাড়ীতে আসিয়া পৌঁছিয়াছেন ?" “পাচটা পঞ্চাশ মিনিটের গাড়ীতে।” “তবে যে ডোভার হইতে আপনি টেলিগ্রাম করিয়াছিলেন ছয়টার সময় আজি পৌছিব গু তাইত বাবা আপনাকে miss করিয়াছেন।” পাচ-টা-পঞ্চা—শ–মিনিট আবার কে লেখে, আমি সোজা স্বজি ছয়টা লিথিয়া দিয়াছিলাম। আমাকে কেন্থ ষ্টেশনে আনিতে যাইবেন ইহা আমার উদ্দেশুওঁ ছিল না,—